হজযাত্রীদের যেসব স্বাস্থ্যসতর্কতা মেনে চলা উচিত
Published: 29th, May 2025 GMT
হজের বিভিন্ন আনুষ্ঠানিকতা পালন করা পরিশ্রমসাধ্য। পাশাপাশি ভৌগোলিক, জলবায়ু ও আবহাওয়াগত পরিবর্তন শুরুতে শরীরের ওপর প্রভাব ফেলে। সংশ্লিষ্ট এলাকায় বিপুল জনসমাগমে চাপ সামলে চলাও অনেক কঠিন। পরিবেশের সঙ্গে খাপ খাওয়াতে হজযাত্রীদের বেশ অসুবিধায় পড়তে দেখা যায়। সব মিলিয়ে অনেকে নানা স্বাস্থ্য সমস্যায় পড়েন।
বিমান ভ্রমণে অনভ্যস্ততার কারণে হজযাত্রীরা বমি, মাথাব্যথা, শ্বাসকষ্ট, উচ্চ রক্তচাপ, হৃদরোগের সমস্যায় ভুগে থাকেন। জেদ্দা বিমানবন্দরে নামার পরপরই আবহাওয়ার বড় পরিবর্তনের মুখোমুখি হন তারা। আমাদের দেশের আবহাওয়ায় আর্দ্রতা একটু বেশি। সৌদি আরবের তাপমাত্রা সাধারণত ৪০-৫০ ডিগ্রি সেলসিয়াস পর্যন্ত হয়ে থাকে। কিন্তু বাতাসে জলীয় বাষ্প বা আর্দ্রতা কম থাকে।
অতিরিক্ত গরমে ডায়রিয়া, বমি ও মাত্রাতিরিক্ত ঘামে পানিশূন্যতা দেখা দেয়। সরাসরি সূর্যের আলো গায়ে লাগায় এর ক্ষতিকর অতিবেগুনি রশ্মির প্রভাবে মুখমণ্ডল, বাহু ও বুকের চামড়ায় সানবার্ন হতে পারে।
খাদ্যাভ্যাসের পরিবর্তনের জন্য পাকস্থলী ও অন্ত্রের নানা রকম সমস্যা হয়ে থাকে। বয়স্ক হজযাত্রীরা ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হন বেশি। প্রয়োজনীয় পরিমাণে ফল ও শাকসবজি না খেয়ে কেবল প্যাকেটজাত খাবার গ্রহণ করায় কোষ্ঠকাঠিন্য একটি অতি সাধারণ সমস্যা হিসেবে দেখা যায়।
হজের বিভিন্ন আনুষ্ঠানিকতা পালনের জন্য সবচেয়ে বেশি পরিশ্রম ও অনাকাঙ্ক্ষিত পরিস্থিতির শিকার হতে হয়। এ সময় জ্বর ও সাধারণ ব্যথা প্রায় সবাইকে কাবু করে ফেলে। এর জন্য প্যারাসিটামল জাতীয় ওষুধ সঙ্গে রাখা ভালো। পাতলা পায়খানা ও আমাশয় হলে যাতে সহজে পরিত্রাণ পাওয়া যায় তার জন্য পর্যাপ্ত পরিমাণ ওরাল রিহাইড্রেশন স্যালাইন বা খাওয়ার স্যালাইন সঙ্গে রাখা উচিত।
হজের দিনগুলোতে সবচেয়ে কঠিন কাজগুলো করতে হয়। এ ক্ষেত্রে সতর্কতামূলক কিছু বিষয় সহায়ক ভূমিকা রাখতে পারে। সরাসরি সূর্যের আলো গায়ে না লাগানো, একটানা দীর্ঘক্ষণ না হেঁটে কিছুক্ষণ বিশ্রাম নিয়ে হাঁটা, অত্যধিক জনবহুল পরিবেশ এড়িয়ে চলা, প্রয়োজন অনুপাতে বিশ্রাম ও ঘুমানো। নিয়মিত হাঁটার অভ্যাস করতে হবে। চশমা বা কন্ট্যাক্ট লেন্স ব্যবহার করলে সতর্কতামূলক অতিরিক্ত আরও একটি সঙ্গে নেওয়া ভালো।
অসুস্থ ও দুর্বল ব্যক্তিদের জন্য ইলেকট্রিক কার ও হুইলচেয়ারের ব্যবস্থা
মক্কার মসজিদুল হারামে হজ ও ওমরাহর তাওয়াফ ও সাঈ করা অসুস্থ, বয়স্ক বা শারীরিকভাবে দুর্বল ব্যক্তিদের জন্য কঠিন হতে পারে। তাদের কষ্ট লাঘব করতে মসজিদুল হারামে ইলেকট্রিক কার ও হুইলচেয়ারের বিশেষ সেবা চালু আছে।
তাওয়াফ করার জন্য ভাড়া ৭০-১৫০ সৌদি রিয়াল। সাঈ করার জন্য ভাড়া ১০০-২০০ সৌদি রিয়াল। তবে এ ভাড়া পরিবর্তনশীল। মসজিদুল হারামের বিভিন্ন গেট– ফাহাদ গেট, কিং আবদুল আজিজ গেট ইত্যাদি ছাড়াও কর্মচারীদের কাছ থেকে এই সেবা সম্পর্কে তথ্য পাওয়া যাবে।
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: হজ হজয ত র র জন য সমস য
এছাড়াও পড়ুন:
বৃষ্টিস্নাত রমনায় সবুজের উল্লাস
রমনা উদ্যানের গাছগুলো বৃষ্টিতে ভিজছে, ভিজছে মাটি ও মাটির ওপরের ঘাসগুলো। বর্ষায় রমনার রূপ হয় দেখার মতো। চারদিকে কেবল সবুজ আর সবুজ। বসন্তের মতো ফুল নেই তো কী হয়েছে? আছে শ্যামল রূপ, আছে অপার স্নিগ্ধতা। বুকভরে ধুলাহীন নিশ্বাস নেওয়ার অবকাশ, প্রকৃতির উদার আমন্ত্রণ।
‘পাগলা হাওয়ার বাদল-দিনে’ ঢাকার রমনা পার্কের গাছের পাতাগুলো এখন আরও সবুজ। টলটলে জলের নয়নাভিরাম ঝিলটা টইটম্বুর। ধুলাময়লাহীন পায়ে চলার পথ। আর গাছের পাতার ফাঁকে রয়েছে অজস্র ফুল। কোনোটা লাল, কোনোটা বেগুনি আবার কোনোটা সাদা। বৃষ্টির মধুর আশকারা পেয়ে রমনা পার্কে এখন সবুজের উল্লাস।
এই পার্কটিকে ঢাকার ফুসফুস বলা হয়। এর যথেষ্ট কারণ আছে অবশ্য। এ রকম প্রগাঢ় নিরেট সবুজ এ শহরে কমই আছে। রমনা তাই ঢাকার জনজীবনের স্পন্দন। এটি কেবল একটি পার্ক নয়, বরং নাগরিক জীবনের পরম আনন্দ-আশ্রয়।
সম্প্রতি ‘বৃষ্টি নেশাভরা’ এক বিকেলে অরুণোদয় ফটক দিয়ে রমনা পার্কে প্রবেশ করলাম। অনেকে শরীরচর্চায় ব্যস্ত। কেউ দল বেঁধে করছেন, কেউ একাকী। কোনো দল ব্যায়াম করে ভোরে, কেউ আবার বিকেলে বা সন্ধ্যায়। আবার অনেকে আছেন দুই বেলাই হাঁটাহাঁটি করেন। হাঁটা সেরে কেউ কেউ লেকের পাশে এসে দুদণ্ড জিরিয়ে নেন। লেকে চলছিল বোট।
বর্ষার ফুলের উৎসব
বর্ষা এলেই রমনা পার্ক যেন রঙের নতুন ভাষা শেখে। আমাদের ঋতুচক্র অনুযায়ী, বসন্ত ও গ্রীষ্মকালেই এ দেশে ফোটে অধিকাংশ ফুল। তবে বর্ষারও নিজস্ব কিছু ফুল আছে, আর গ্রীষ্মের কিছু ফুল টিকে থাকে বর্ষা পর্যন্ত। সেদিন রমনায় গিয়ে এমনই কিছু ফুল চোখে পড়ল—বৃষ্টিভেজা পাতার ফাঁকে তাদের রং যেন আরও উজ্জ্বল হয়ে উঠেছিল। মনে হলো, প্রকৃতির এই নিঃশব্দ উৎসবেও কত কথা লুকিয়ে থাকে!
রমনার গোলাপবিথি সেদিন দর্শনার্থীদের সবচেয়ে বেশি মনোযোগ কাড়ছিল। সারি সারি ঝোপে ফুটে আছে হরেক রঙের গোলাপ—লাল, সাদা, হলুদ, কমলা, গাঢ় গোলাপি। বর্ষার ভেজায় যেন আরও সতেজ, আরও তাজা হয়ে উঠেছে প্রতিটি পাপড়ি। নরম আলো আর বৃষ্টিজলে ভেজা ফুলগুলোর সৌন্দর্য মোহিত করেছে পথচলার মানুষকে। কেউ থেমে দাঁড়িয়ে ছবি তুলছেন, কেউ ভিডিও করছেন—মুঠোফোনে বন্দী হচ্ছে বর্ষার রঙিন রমনা।
এটি কেবল একটি পার্ক নয়, বরং নাগরিক জীবনের পরম আনন্দ-আশ্রয়।