রোগ প্রতিরোধী সুগন্ধিযুক্ত নতুন জাতের ধান উদ্ভাবন
Published: 29th, May 2025 GMT
সুগন্ধিযুক্ত ও জিঙ্ক সমৃদ্ধ ধানের নতুন জাত উদ্ভাবনের কথা জানিয়েছেন গাজীপুর কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের (গাকৃবি) একদল গবেষক। বিশ্ববিদ্যালয় উদ্ভাবিত ৯০তম নতুন জাতের নাম দেওয়া হয়েছে ‘জিএইউ ধান-৩’। বৃহস্পতিবার এ তথ্য জানানো হয়েছে। গবেষণা দলের প্রধান ছিলেন কৌলিতত্ত্ব ও উদ্ভিদ প্রজনন বিভাগের প্রজননবিদ অধ্যাপক ড. নাসরীন আক্তার আইভী।
বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারী রেজিস্ট্রার (জনসংযোগ) মোহাম্মদ আব্বাস উদ্দিন জানান, বিশ্ববিদ্যালয়ের নাম পরিবর্তনের পর এটিই প্রথম নতুন জাত হিসেবে নিবন্ধিত হলো, যা গাকৃবির গবেষণায় এক নতুন মাইলফলক হিসেবে বিবেচিত। জাতটি সুগন্ধিযুক্ত ও জিঙ্ক সমৃদ্ধ হওয়ায় পুষ্টি ও মানের দিক থেকে এটি একটি ব্যতিক্রমী সংযোজন হিসেবে পরিগণিত হচ্ছে।
সংশ্লিষ্টরা জানান, এ জাত উদ্ভাবনের মাধ্যমে গাকৃবির উদ্ভাবিত জাতের সংখ্যা ৯০টিতে পৌঁছাল। গাকৃবির গবেষণা মাঠে চার বছর গবেষণা ও ফলন পরীক্ষার পর ২০২১ ও ২০২২ সালে বিভিন্ন এলাকায় কৃষকের মাধ্যমে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা হয়। পরবর্তী সময়ে বীজ প্রত্যয়ন এজেন্সি কর্তৃক প্রস্তাবিত ফলন পরীক্ষায় সন্তোষজনক ফলাফলের সুপারিশের পরিপ্রেক্ষিতে জাতীয় বীজ বোর্ড গত ২০ এপ্রিল জিএইউ ধান-৩ এর ছাড়পত্র দেয়।
এ ধানে উফশী ধানের সব বৈশিষ্ট্য বিদ্যমান। এর জিঙ্ক ও লৌহ মানুষের শরীরকে রোগ প্রতিরোধী করে। জীবাণু ও ভাইরাস থেকে রক্ষা করে। হিমোগ্লোবিন তৈরির মাধ্যমে শক্তি উৎপাদনে সাহায্য করে। দানা চিকন ও লম্বা এ ধান কম সময়ে পরিপক্ব হয়।
এর গাছের আকার বড়, কাণ্ড মোটা ও কুশির সংখ্যা বেশি হওয়ায় অধিক পরিমাণ খড় পাওয়া যায়, যা পশুর খাদ্য চাহিদা পূরণে ভূমিকা রাখবে। এটি গড়ে ১৫ শতাংশ বেশি ফলন দিতে সক্ষম, যা বাংলাদেশের মতো কৃষিভিত্তিক দেশে উপযোগিতা অনেক।
গাকৃবি সূত্র বলছে, এ জাতের ফলন হেক্টরপ্রতি সাড়ে পাঁচ টন থেকে ছয় টন। এতে অ্যামাইলেজ নামক এনজাইমের পরিমাণ শতকরা ২৬ ভাগ, যা শরীরে শর্করা জাতীয় খাবার সহজে ভেঙে শক্তি সরবরাহ ও হজম প্রক্রিয়ায় সাহায্য করে। জিঙ্কের পরিমাণ বেশি, যা শিশু ও গর্ভবতী নারীদের জন্য উপকারী।
এ ছাড়া জলবায়ু সহনশীলতা ও রোগ-পোকা প্রতিরোধ ক্ষমতা থাকায় দেশের বৈচিত্র্যময় পরিবেশে চাষের জন্য উপযোগী ও লাভজনক জাত। গবেষক দলের প্রধান অধ্যাপক ড.
উপাচার্য অধ্যাপক ড. জি কে এম মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, খাদ্য নিরাপত্তা ও পুষ্টির জন্য এটি অবদান রাখবে।’
উৎস: Samakal
এছাড়াও পড়ুন:
এআই দিয়ে তৈরি নির্বাচনকেন্দ্রিক বিভ্রান্তিকর ভিডিও প্রচার বেড়েছে
দেশে এখন আলোচনার অন্যতম বিষয় আগামী সংসদ নির্বাচন। আগামী বছরের ফেব্রুয়ারিতে এ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে পারে বলে অন্তর্বর্তী সরকার ও বিএনপির দিক থেকে আসা এক যৌথ ঘোষণার পর এ নিয়ে আলোচনা বেড়েছে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে। এ সুযোগে বিভ্রান্তিকর ও ভুয়া ছবি-ভিডিওর প্রচারও বেড়েছে অনেক। বিশেষ করে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) দিয়ে তৈরি বিভ্রান্তিকর ভিডিও ছড়িয়েছে সবচেয়ে বেশি।
ফ্যাক্ট চেক বা তথ্য যাচাইকারী উদ্যোগ ডিসমিসল্যাব আজ বুধবার এক প্রতিবেদনে এসব তথ্য তুলে ধরেছে। চলতি বছরের দ্বিতীয় প্রান্তিক এপ্রিল থেকে জুন পর্যন্ত সময়ে বাংলাদেশের আটটি ফ্যাক্টচেকিং ওয়েবসাইটে প্রকাশিত রিপোর্ট থেকে ১ হাজার ১৩টি কনটেন্ট (আধেয়) বিশ্লেষণ করে এ প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে ডিসমিসল্যাব।
ডিসমিসল্যাব বলছে, শুধু ছবিই নয়, গুগলের এআই ভিডিও জেনারেটর প্রযুক্তি ভিও-থ্রি ব্যবহার করে তৈরি করা ভিডিও ছড়ানো হয়েছে। এ বছরের প্রথম প্রান্তিকের চেয়ে দ্বিতীয় প্রান্তিকে বিভ্রান্তিকর তথ্য ছড়ানোর হার বেড়েছে ১৭ শতাংশ, যার ৪৪ শতাংশই ছিল রাজনীতিসংশ্লিষ্ট। এর মধ্যে জাতীয় সংসদ নির্বাচনসংক্রান্ত বিষয় ছিল অন্যতম।
প্রতিবেদনে বলা হয়, ২০২৪ সালের শুরু থেকে ২০২৫ সালের প্রথম প্রান্তিক পর্যন্ত এআই-নির্মিত বিভ্রান্তিকর তথ্য মূলত ছবির মাধ্যমে ছড়ানো হতো। তবে ২০২৫ সালের দ্বিতীয় প্রান্তিকে এসে ভিডিও কনটেন্ট ছবিকে ছাড়িয়ে যায়। প্রথম প্রান্তিকের তুলনায় দ্বিতীয় প্রান্তিকে ভিডিওর মাধ্যমে বিভ্রান্তিকর তথ্য ছড়ানোর হারও বেড়েছে। প্রথম প্রান্তিকে যেখানে বিভ্রান্তিকর কনটেন্টের ৪২ শতাংশ ছিল ভিডিও, সেখানে দ্বিতীয় প্রান্তিকে তা বেড়ে দাঁড়ায় ৪৮ শতাংশে।
ভিডিও ও ফটোকার্ডে বেশি অপতথ্য
বিভ্রান্তিকর প্রচারণা আরও দৃষ্টিনন্দন ও বিশ্বাসযোগ্য করে তুলতে ভিডিও ও ডিজাইনকৃত ফটোকার্ডের ব্যবহার আগের চেয়ে অনেক বেড়েছে বলে উল্লেখ করেছে ডিসমিসল্যাব। তারা আরও বলেছে, সংবাদমাধ্যমের ফটোকার্ড অনুকরণ করে বিভ্রান্তিকর তথ্য ছড়ানোর প্রবণতাও এখনো বিদ্যমান। প্রথম প্রান্তিকে এ ধরনের ফটোকার্ডের মাধ্যমে ছড়ানো বিভ্রান্তিকর কনটেন্টের সংখ্যা ছিল ১০০টি। দ্বিতীয় প্রান্তিকে সেই সংখ্যা বেড়ে হয় ১৭৬, যার ৮৫ শতাংশই ছিল রাজনীতি নিয়ে।
বিভ্রান্তিকর তথ্য ছড়ানোয় রাজনৈতিক বিষয় শীর্ষে রয়েছে। চলতি বছরের প্রথম প্রান্তিকে সাতটি নির্বাচনকেন্দ্রিক বিভ্রান্তিকর কনটেন্ট শনাক্ত হয়েছিল, সেখানে দ্বিতীয় প্রান্তিকে তা বেড়ে হয় ৫৫টি।
আওয়ামী লীগের পতনের পর অন্তর্বর্তী সরকারের কাছে দ্রুত নির্বাচনের দাবি জানানোয় সবচেয়ে সক্রিয় বিএনপি। ফলে দলটির শীর্ষ নেতারা বিভ্রান্তিকর প্রচারণার শিকার হয়েছেন।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদের নামে একটি ভুয়া ফটোকার্ড ছড়িয়ে পড়ে। সেখানে তাঁকে উদ্ধৃতি দিয়ে বলা হয়, ‘ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচন না হলে বিএনপি অংশ নেবে না।’ বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের নামেও ভুয়া বিবৃতি ছড়ানো হয়েছে। এমনকি বাংলাদেশের নির্বাচন নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের নামেও ভুয়া ফটোকার্ড ছড়ানো হয়।
অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসকে নিয়েও দ্বিতীয় প্রান্তিকে ছড়িয়েছে নানা ভুয়া দাবি। নির্বাচনে আওয়ামী লীগের সম্ভাব্য অংশগ্রহণ নিয়েও বিভ্রান্তিকর প্রচার হয়েছে।
নারীনেত্রীদের লক্ষ্য করে অপতথ্য
প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, নির্বাচনকেন্দ্রিক বিভ্রান্তিকর প্রচারণার বাইরেও নানা রাজনৈতিক দলের নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে দুর্নীতি ও অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে জড়িত থাকার ভুয়া অভিযোগ ছড়ানো হয়েছে। বিএনপি, জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) নেতাদের নিয়ে এসব ভুয়া কার্ড ছড়ানো হয়।
নারী রাজনীতিকেরাও এসব বিভ্রান্তিকর কনটেন্টের শিকার হয়েছেন জানিয়ে ডিসমিসল্যাব বলেছে, কনটেন্টগুলো বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই ছিল উদ্দেশ্যপ্রণোদিত চরিত্রহননের প্রচেষ্টা। অশ্লীল ছবি ও ভিডিও ব্যবহার করে, সেগুলো এনসিপি নেত্রীদের নামে চালিয়ে দেওয়া হয়েছে।
প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, রাজনৈতিক বিভ্রান্তি ছড়াতে এআই দিয়ে ছবি ও ভিডিও তৈরি করে প্রচার হয়েছে। যেমন একটি ডিপফেক ভিডিওতে দাবি করা হয়, ‘প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস পদত্যাগ করেছেন।’ আরেকটি ডিপফেক ভিডিওতে বলা হয়, ‘ডোনাল্ড ট্রাম্প ড. ইউনূসের প্রশংসা করেছেন।’
বিভ্রান্তিকর তথ্য ছড়ানোয় আন্তর্জাতিক বিষয়ও ছিল আলোচিত। ডিসমিসল্যাব জানিয়েছে, গত মে মাসে ভারত-পাকিস্তান সংঘাতের ঘটনায় বাংলাদেশেও তথ্যযুদ্ধ ছড়িয়ে পড়ে। পাকিস্তান বা ভারতের পক্ষ নিয়ে নানা ভুয়া ভিডিও ছড়ায় ওই সময়। এমনকি কিছু ভুয়া কনটেন্ট মূলধারার গণমাধ্যমেও প্রচার হয়।
এ ছাড়া ইরান-ইসরায়েল সংঘাত নিয়েও বিভ্রান্তিকর তথ্য ছড়ানো হয়। ইরানের পক্ষ নিয়ে ইসরায়েলে প্রচুর ক্ষয়ক্ষতির হচ্ছে—এ ধরনের বিভ্রান্তিকর কনটেন্ট ছড়ানো হয়েছে। ২০১৪ সালে গাজায় ইসরায়েলি বিমান হামলায় একটি বিদ্যুৎকেন্দ্রে আগুন লাগার ভিডিওকে ইসরায়েলি বিদ্যুৎকেন্দ্র ধ্বংস বলে চালিয়ে দেওয়া হয়।