জি এম কাদেররা এখনো কীভাবে প্রকাশ্যে ঘোরে, জানতে চান সারজিস আলম
Published: 30th, May 2025 GMT
জাতীয় পার্টিকে আওয়ামী লীগের দোসর ও সুবিধাবাদী ভণ্ড আখ্যা দিয়ে দলটিকে প্রতিহতের ডাক দিয়েছেন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপির) উত্তরাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক সারজিস আলম। তিনি বলেছেন, জাতীয় পার্টি বিরোধী দলে থেকে সব ধরনের সুযোগ-সুবিধা নিয়েছে এবং আওয়ামী লীগকে সরকারি দলের বৈধতা দিয়েছে।
লালমনিরহাটের পাঁচ উপজেলায় পথসভা ও লিফলেট বিতরণ কার্যক্রম শেষে গতকাল বৃহস্পতিবার রাত ১০টার দিকে জেলা শহরের মিশন মোড়ে পথসভায় এ কথাগুলো বলেন সারজিস আলম।
সারজিস আলম বলেন, ‘জাতীয় পার্টির সবচেয়ে বড় ভণ্ডদের মধ্যে একজন হচ্ছেন জি এম কাদের। এই জি এম কাদের ইলেকশনের ১৫ থেকে ২০ দিন আগে ইন্ডিয়া যেত, ক্ষমতার নেগোসিয়েশন করত, অর্থের নেগোসিয়েশন করত। বাংলাদেশে এসে বিড়ালের মতো চুপ হয়ে যেত, ইলেকশন হতো, ডামি ইলেকশনে জাতীয় পার্টি বিরোধী দল হতো, আওয়ামী লীগকে তারা সরকারি দলের সমর্থন দিত।’ তিনি বলেন, ‘এই জি এম কাদেররা এখনো কীভাবে প্রকাশ্যে ঘোরে? এই জাতীয় পার্টি, এই যে ডামি আওয়ামী লীগ যারা, তারা এখনো কীভাবে বাইরে?’
অসৎ পথে উপার্জন বন্ধের আহ্বান জানিয়ে এনসিপি নেতা সারজিস বক্তব্যে বলেন, ‘আপনি বিভিন্নভাবে লাখ টাকা, কোটি টাকা অসৎভাবে উপার্জন করেন। পরে দেখেন, আপনার সন্তান আর পড়াশোনা পারে না। তাকে পড়াতে হচ্ছে মাসে ৫০ হাজার টাকা দিয়ে এই মিডিয়ামে, সেই মিডিয়ামে, তা–ও পাস করে না। আপনি দেখবেন একজন রিকশাচালক চাচাকে, মাসে একবারও হাসপাতালে যেতে হয় না, বছরে একবারও পুরো শরীর চেক আপ করতে হয় না। আর আপনার পেটে একবার শব্দ হলে সিঙ্গাপুরে যেতে হচ্ছে চিকিৎসার জন্য। এই যে মানসিক অশান্তি, এর চেয়ে রিকশাচালক চাচার মানসিক শান্তি অনেক বেশি।’
এর আগে গতকাল রাত পৌনে ৯টার দিকে রংপুর নগরের সেনপাড়ায় জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান জি এম কাদেরের বাড়িতে হামলা হয়। হামলাকারীরা জি এম কাদেরের বাড়ি দ্য স্কাই ভিউয়ের জানালার কাচ ভাঙচুর ও একটি মোটরসাইকেলে অগ্নিসংযোগ করে। জাতীয় পার্টির কো-চেয়ারম্যান ও রংপুর সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র মোস্তাফিজার রহমানের অভিযোগ, এনসিপি ও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতা-কর্মীরা এই হামলার সঙ্গে জড়িত।
আরও পড়ুনরংপুরে জি এম কাদেরের বাড়িতে হামলা, অভিযোগ বৈষম্যবিরোধীদের বিরুদ্ধে১৬ ঘণ্টা আগে.উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
গণঅভ্যুত্থান না হলে নির্বাচনের স্বপ্নই দেখতে পারতেন না: নাহিদ
‘দেশ গড়তে জুলাই পদযাত্রা’ কর্মসূচির ২৮তম দিনে জামালপুরে ১১ জন শহীদের পরিবারের সঙ্গে সাক্ষাৎ, পদযাত্রা ও পথসভা করেছেন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) কেন্দ্রীয় নেতারা।
সোমবার (২৮ জুলাই) সকালে জেলা পরিষদের ডাকবাংলোতে শহীদদের পরিবারের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন এনসিপির আহ্বায়ক নাহিদ ইসলামসহ অন্য নেতারা। সেখানে থেকে হরিজন পল্লীতে যান তারা। পরে শহরের তমাল মোড় থেকে ফৌজদারি মোড় পর্যন্ত পদযাত্রায় অংশ নেন এনসিপির কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দ ও জামালপুরের সাত উপজেলা থেকে আসা নেতাকর্মীরা। ফৌজদারি মোড়ে পথসভায় বক্তব্য রাখেন এনসিপির নেতারা।
পথসভায় এনসিপির আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম বলেন, “অনেকে বলছে, আমরা নাকি নির্বাচন বানচালের চেষ্টা করছি, নির্বাচন পিছিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করছি। গণঅভ্যুত্থান না হলে আপনারা নির্বাচনের স্বপ্নই দেখতে পারতেন না। কোটা আন্দোলন থেকে যদি সরকার পতনের দিকে আন্দোলন না নিয়ে যেতাম, তাহলে শেখ হাসিনার আমলে নির্বাচনের জন্য আরো চার বছর অপেক্ষা করতে হতো।”
আরো পড়ুন:
বিকেলে এনসিপির পদযাত্রা-সমাবেশ, প্রস্তুত ময়মনসিংহ
ফেনীতে টেকসই বাঁধ নির্মাণের দাবিতে পদযাত্রা
তিনি বলেন, “গণঅভ্যুত্থানের শক্তি এখনো রাজপথে আছে। আমরা গণঅভ্যুত্থানের সময় সর্ম্পূণভাবে সংগঠিত ছিলাম না। আমাদের কোনো রাজনৈতিক দল ছিল না। ফলে, আমরা অনেক কিছুই করতে পারিনি। কিন্তু, আমরা সর্বাত্মক চেষ্টা করেছি অন্তর্বতী সরকারকে ও এই সময়ের রাজনীতিকে গণঅভ্যুত্থানের দিকে ধাবিত করতে। আমাদের চেষ্টা এখনো জারি আছে।”
জুলাই আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক নাহিদ ইসলাম বলেন, “জাতীয় সংসদকে দুই ভাগ করে ভোটের অনুপাতে উচ্চ কক্ষ নির্ধারণ করতে হবে, যাতে জবাবদিহিমূলক ক্ষমতার ভারসাম্য নিশ্চিত করা যায়। সেই উচ্চ কক্ষের বিষয়ে ঐক্যমত না হওয়ায় জুলাই সনদ আটকে আছে। জুলাই সনদের মাধ্যমে সর্বদলীয়ভাবে ৫ আগস্ট উদযাপন করা হবে।”
তিনি বলেন, ‘সংস্কারের জন্য রাজনৈতিক দলগুলোকে নিয়ে আলোচনা চালাচ্ছে ঐক্যমত কমিশন। সেখানে জাতীয় নাগরিক পার্টি অংশ নিচ্ছে। গণঅভ্যুত্থানের পরে সামনে যে নির্বাচন আসছে, সেই নির্বাচনে মৌলিক সংস্কার শেষে আমরা অংশগ্রহণ করতে চাই। কারণ, বিচার, সংস্কার ও নতুন সংবিধান এই গণঅভ্যুত্থানে আমাদের অন্যতম দাবি। সংস্কারের মাধ্যমে পুরনো আইনগুলো পরিবর্তন করতে হবে, যাতে বাংলাদেশে আর কখনোই নির্বাচন কমিশনে দলীয়করণ না হয়, পুলিশে দলীয়করণ না হয়, প্রশাসন ও বিচার ব্যবস্থায় দলীয়করণ না হয়। আমরা সবখানে নিরপেক্ষতা চাই। ইতোমধ্যে পুলিশ কমিশনে সবাই একমত হয়েছে। এজন্য ধন্যবাদ জানাই।”
পথসভায় আরো বক্তব্য রাখেন—জাতীয় নাগরিক পার্টির সিনিয়র যুগ্ম সদস্য সচিব ডা. তাসনিম জারা, যুগ্ম সদস্য সচিব লুৎফর রহমান, কেন্দ্রীয় সদস্য মশিউর রহমান শুভ, জাতীয় যুবশক্তির যুগ্ম আহ্বায়ক হিফজুর রহমান বকুলসহ অনেকে।
এনসিপির পদযাত্রা ও সমাবেশ উপলক্ষে জামালপুরে নিরাপত্তা জোরদার করা হয়। পথসভা শেষে ময়মনসিংহের উদ্দেশে যাত্রা করেন এনসিপির নেতাকর্মীরা।
ঢাকা/শোভন/রফিক