রাজবাড়ীর ৪৪টি সায়রাত জলমহালের মধ্যে ১৭টিতে শুষ্ক মৌসুমে পানি থাকে না। ফলে একদিকে মাছ উৎপাদন বাধাগ্রস্ত হচ্ছে, অপরদিকে সরকার বিপুল অঙ্কের রাজস্ব থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। সংশ্লিষ্ট পক্ষগুলোর দাবি, দীর্ঘদিন ধরে এসব জলমহালের খনন বা সংস্কার হয় না। যে কারণে দরপত্র আহ্বান করা হলেও ইজারা নিতে আগ্রহ কমছে। তারা এ বিষয়ে ব্যবস্থা নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন। যদিও প্রশাসনের পক্ষ থেকে খনন বা সংস্কার বিষয়ে কোনো মন্তব্য মেলেনি। 
প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, সরকারের যেসব জলমহাল থেকে ভূমি কর ছাড়া অন্যান্য বিবিধ কর আদায় করা হয় সেগুলোকে সায়রাত জলমহাল বলা হয়। সম্প্রতি এই প্রতিবেদক জেলার সায়রাত জলমহালগুলোর বিষয়ে জানতে তথ্য অধিকার আইনে আবেদন করেন। এর পরিপ্রেক্ষিতে পাওয়া তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, জেলার সবচেয়ে বেশি ১৯টি জলমহালের অবস্থান বালিয়াকান্দি উপজেলায়। এ ছাড়া সদর উপজেলা, পাংশা ও কালুখালীতে আছে আটটি করে জলমহাল। গোয়ালন্দ উপজেলায় আছে মাত্র একটি।
এ তালিকায় আছে রাজবাড়ী পৌরসভার লক্ষীকোল রাজারবাড়ি-সংলগ্ন পুকুরটি। শূন্য দশমিক ৯৪১২ একরের পুকুরটি থেকে গত তিন বছরেও কোনো রাজস্ব আদায় হয়নি। সম্প্রতি সেখানে গিয়ে স্থানীয় লোকজনকে গোসল করতে দেখা যায়। সেখানে দিনমজুর অজিত সরকার বলেন, বর্ষাকালে পুকুরটি পানিতে টইটম্বুর থাকে। এর পর থেকে পানি কমতে থাকে। তবে সারাবছরই পানি থাকে।
সদর উপজেলার খানখানাপুর ইউনিয়নের চরখানখানাপুর গ্রামে বালিয়াকুম জলমহালের অবস্থান। সরকারি হিসাবে এর আয়তন ১৬ দশমিক ৭০ একর। খালটিতে পানি থাকলেও অনেক কম। ওপর দিয়ে জালের দড়ি টাঙানো। জেলে তারক আলী জানান, বালিয়াকুম আগে অনেক বড় ছিল। আশপাশে পুকুর খননের ফলে ছোট হয়ে গেছে। আগে এখানে রুই, কাতলা, বোয়াল, শোল, টাকি, পুঁটি, ট্যাংরা, চিংড়িসহ দেশি প্রজাতির প্রচুর মাছ পাওয়া যেত। বর্ষাকালে বালিয়াকুম টইটম্বুর হয়ে যায়। চার মাসেরও বেশি পানি থাকে। অন্য সময় কম পানি থাকে। কিন্তু কয়েক বছরেও কেউ ইজারা নিয়েছেন বলে শোনেননি।
এ দুটির পাশাপাশি সদরের কৈজুরি, জালদিয়া, হাজারখালী ও বানিয়ারী এ চারটি জলমহাল তিন বছরে ইজারার কোনো তথ্য সরকারের কাছে নেই। কারণ হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে, শুষ্ক মৌসুমে পানি থাকে না। এ ছয়টি জলমহালে এ বছর (১৪৩২) ইজারা হয়েছে বলে উল্লেখ আছে। এ ছাড়া বিনোদপুর হাট-বাজারসংলগ্ন পুকুরটি নিয়ে দেওয়ানি মামলা চলছে। সদরের একমাত্র জলমহাল হিসেবে গত তিন বছরে (১৪২৯, ১৪৩০ ও ১৪৩২) রাজস্ব আদায় হয়েছে পদ্মা নদীর কোল জলমহাল গোদারবাজার কোল থেকে। ৭৫ দশমিক ৬২ একর আয়তনের জলমহালটি থেকে এই সময়ের মধ্যে আদায় হয়েছে মাত্র ৩১ হাজার ৫০০ টাকা।
এই জলমহালের সাবেক ইজারাদার আল আমিন মন্টু বৃহস্পতিবার সমকালকে বলেন, ওই জলমহালটি ইজারা নিলে তেমন লাভ হয় না। তাই এবার ইজারার প্রক্রিয়ায় অংশ নেননি। 
সদরের সুলতানপুর ইউনিয়নের কৈজুরি ও জালদিয়ার জলমহালগুলোর অবস্থা আরও খারাপ। আশপাশের মাটি ভেঙে খাল দুটির বেশির ভাগ জায়গা ভরাট হয়ে গেছে। এ বিষয়ে সুলতানপুর ইউপি চেয়ারম্যান আশিকুর রহমান সজিব বলেন, বর্ষার পানিতে খাল দুটি ভরে যায়। কিন্তু পানি থাকে অল্প কিছুদিন। এ কারণে কেউ জলমহাল দুটি ইজারা নিতে চান না। মাছ চাষের উপযোগী করতে এগুলো খনন করা প্রয়োজন।
এবার পদ্মা নদীর গোদারবাজার কোল ইজারা নিয়েছেন রাজবাড়ী জেলা মৎস্যজীবী সমিতির সভাপতি উত্তম কুমার সরকার। তিনি বলেন, সদর উপজেলায় যেসব জলমহাল আছে, সেগুলোর দরপত্র কিনতে কারও আগ্রহ হয় না বলে শুনেছেন। জলমহালগুলোর সংস্কারের দাবি তাঁর।
একই সময়ে গোয়ালন্দের একমাত্র জলমহাল উজানচর বদ্ধ জলমহাল থেকে রাজস্ব আয় হয়েছে ৯ লাখ ৯০ হাজার টাকা। এটির আয়তন ২৬ দশমিক ৩৬ একর। এ ছাড়া কালুখালীর গতমপুর থেকে জৌকুড়া পদ্মা নদীর কোল জলমহাল (১১৭.

৬৬ একর) থেকে তিন লাখ ৯০ হাজার টাকা, মরাগঙ্গা নদীর কোল (৭৫ একর) থেকে দুই লাখ টাকা ও চরনারায়ণপুর দিঘি (তিন একর) থেকে আয় হয়েছে আট লাখ ৮২ হাজার টাকা। উপজেলার বাকি পাঁচটি জলমহাল থেকে রাজস্ব আদায়ের তথ্য নেই। কারণ হিসেবে উল্লেখ আছে, ১৪২৬ বাংলা সনের পর জলমহালগুলোর শ্রেণি বদল করে খাল করা হয়েছে। 
পাংশা উপজেলার আটটি জলমহালের মধ্যে মালুভাগ্যবান পুকুর (৪.৪০ একর) থেকে গত তিন বছরে রাজস্ব আয় হয়েছে ৪২ লাখ ৯০ হাজার টাকা। কাজিয়াল নদী (বদ্ধ) জলমহাল (৩১.৯৪ একর) আয় সাত লাখ ৬০ হাজার টাকা ও সিরাজপুর হাওর (বদ্ধ) জলমহাল (১৯৩.০৮ একর) থেকে আয় হয়েছে তিন লাখ ১৫ হাজার টাকা। বাকি পাঁচটি জলমহালে রাজস্ব আয়ের তথ্য নেই। কারণ উল্লেখ করা হয়েছে, এগুলোতে শুষ্ক মৌসুমে পানি থাকে না। মাছ উৎপাদনের কোনো তথ্যও উল্লেখ করা হয়নি।
বালিয়াকান্দির ১৯টি জলমহালের মধ্যে ১৩টি থেকে গত তিন বছরে রাজস্ব আয় হয়েছে ৭৯ লাখ ৪৪ হাজার ৮৫ টাকা। এ বছরের দরপত্রের কোনো তথ্যই মেলেনি। বাকি ছয়টি জলমহাল থেকে রাজস্ব আয় না হওয়ার কারণ সম্পর্কে বলা হয়েছে, শুষ্ক মৌসুমে এগুলোতে পানি থাকে না।
জেলা মৎস্য কর্মকর্তা নাজমুল হুদার ভাষ্য, বছরের তিন মাস পানি থাকলেই মাছ চাষ সম্ভব। মাছের উৎপাদন হলে সবারই লাভ। এসব জলমহালের ক্ষেত্রে তাদের করণীয় তেমন কিছু নেই। তারা শুধু পরামর্শ ও মতামত দিতে পারেন। আগামী সভায় বিষয়টি তুলে ধরবেন। খালগুলো খনন করলে উপকার পাওয়া যেত।
জেলা প্রশাসক সুলতানা আক্তার বলেন, ২০ একরের নিচের জলমহালগুলো উপজেলা অফিস থেকে ইজারা দেওয়া হয়। অন্যগুলো দেওয়া হয় অনলাইনের মাধ্যমে। কিছু জলমহাল উন্নয়ন প্রকল্পের অন্তর্ভুক্ত। নিয়ম মেনেই জলমহাল ইজারা দেন।

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: গত ত ন বছর জলমহ ল থ ক জলমহ ল র র জলমহ ল য় হয় ছ উল ল খ দশম ক সরক র উপজ ল

এছাড়াও পড়ুন:

স্কুলের খেলার মাঠে পশুর হাট, জানেন না প্রধান শিক্ষক

ঈদুল আজহা উপলক্ষে শিবপুরে বিদ্যালয়ের খেলার মাঠ কোরবানির পশুর হাটের জন্য ইজারা দেওয়া হয়েছে। ইজারাদারও হাটের জন্য প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছেন। পশুর হাটের কারণে মাঠে নিয়মিত খেলাধুলা ব্যাহত হবে। এ নিয়ে শিক্ষক, ছাত্র ও ক্রীড়ামোদীদের মধ্যে অসন্তোষ বিরাজ করছে। 
ঈদুল আজহা উপলক্ষে উপজেলার ১৮টি স্থানে অস্থায়ী কোরবানির পশুর হাট ইজারা দেওয়ার জন্য ১৮ মে নোটিশ দেন ইউএনও। নোটিশের ৫ নম্বরে শিবপুর সরকারি পাইলট মডেল উচ্চ বিদ্যালয়ের ধানুয়া খেলার মাঠও রয়েছে। নোটিশে ১২০ জন দরপত্র সংগ্রহ করেন। এর মধ্যে শিবপুর সরকারি পাইলট মডেল উচ্চ বিদ্যালয়ের ধানুয়া খেলার মাঠে পশুর হাট বসানোর জন্য ১৬ জন দরপত্র সংগ্রহ করেন। শেষ দিন ২২ মে দরপত্র জমা দেন ৮ জন। সর্বোচ্চ দরদাতা ফারুক খান ৫ লাখ ৬৫ হাজার টাকায় স্কুলের খেলার মাঠে পশুর হাট বসানোর জন্য ইজারা পান। ৩০ মে, ৩ জুন ও ৬ জুন পশুর হাট বসানো হবে। ইজারার টাকা বিদ্যালয়ে জমা না দিয়ে সরকারি কোষাগারে জমা করা হয়। 

স্কুল মাঠের নিয়মিত খেলোয়াড় ধানুয়া গ্রামের সাব্বির হোসেন জানান, এই মাঠে প্রতিদিন ফুটবল খেলেন তারা। খেলাধুলা করার আর কোনো মাঠ নেই। এই মাঠে গরুর হাট বসানো ঠিক হয়নি। এতে মাঠ নোংরা হবে এবং বাঁশের কঞ্চি থেকে যাবে, যা পরে দুর্ঘটনার কারণ হবে।
তবে খেলার মাঠ ইজারার বিষয়ে কিছুই জানেন না বলে দাবি করেছেন শিবপুর সরকারি পাইলট মডেল উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক নূর উদ্দিন মো. আলমগীর। উপজেলা বিএনপির সভাপতি ও মাছিমপুর ইউপি চেয়ারম্যান আবুল হারিস রিকাবদার কালা মিয়ার ভাষ্য, মাঠটি পরিত্যক্ত। 
ইউএনও ফারজানা ইয়াসমিন জানান, এখানে ১৫ বছর ধরে হাট বসানোর রেকর্ড আছে। মাঠটি বিদ্যালয় থেকেও দূরে। হাটশেষে ইজারাদার মাঠ পরিষ্কার করে দেবেন শর্তে ইজারা দেওয়া হয়েছে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • কথা ছিল ক্যাবিনেটে বসে ঘোষণা করব প্রেমের দরপত্র
  • ঢাকা উত্তরে পশুর হাট শুরুর বাকি ৩ দিন, চূড়ান্ত হয়েছে মাত্র দুটি
  • পশুর হাট শুরুর বাকি ৪ দিন, চূড়ান্ত হয়েছে মাত্র দুটি
  • ১০০ কম্পিউটার চালু হচ্ছে না 
  • স্কুলের খেলার মাঠে পশুর হাট, জানেন না প্রধান শিক্ষক
  • সর্বোচ্চ ২৫ কোটি টাকা দরপ্রস্তাব, দরদাতাকে চেনেন না কেউ
  • ইজারা হয় না ঐতিহ্যবাহী তিন হাটের, সুবিধা নেন নেতারা
  • ‘সমঝোতায়’ সিসিকের পশুর হাট বিএনপি-ছাত্রদলের