অ্যান্টার্কটিকার জলবায়ু নজিরবিহীন হারে উষ্ণ হয়ে উঠছে। পাতলা হয়ে আসা বরফ আর সমুদ্রে তলিয়ে যাওয়া যন্ত্রপাতি সামাল দিতে বিজ্ঞানীরা এখন রীতিমতো লড়াই করছেন।
গত বিশ বছর ধরে সাইমন মর্লি অ্যান্টার্কটিকার সমুদ্র বরফে গর্ত কেটে তাতে ডুব দিয়েছেন। সেখানে পানির নিচের অদ্ভুত আর রঙিন প্রাণীদের, যেমন সামুদ্রিক স্পঞ্জ আর সি স্কোয়াট নিয়ে অধ্যয়ন করেছেন। জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে এখন সেই বরফ এতটাই পাতলা হয়ে পড়ছে যে, তার ওপর দিয়ে চলাফেরা করা আর নিরাপদ থাকছে না।
ব্রিটিশ অ্যান্টার্কটিক সার্ভের (বিএএস) সামুদ্রিক জীববিজ্ঞানী মর্লি বলেন, ‘আগে শীতকালে একশ বা তারও বেশি ডাইভ দিতে পারতাম। গত বছর আমার সহকর্মীরা বড়জোর পাঁচ থেকে দশটা ডাইভই দিতে পেরেছেন।’
এখন বরফ এক অদ্ভুত ‘ক্যাচ-২২’ পরিস্থিতি তৈরি করছে। ‘এটি এতটাই পুরু যে নৌকা নামানো যাচ্ছে না, আবার এত পাতলাও নয় যে করাত দিয়ে গর্ত কেটে ডাইভ দেওয়া যাবে,’ তিনি ব্যাখ্যা করেন। তবে তিনি জানান, একটি উপায় হলো– শীতকালে প্রস্তুত নৌকা হাতে রাখা, যাতে বরফ একটু সরে গেলে দ্রুত নামানো যায়।
আমরা সাধারণত অ্যান্টার্কটিকাকে এক চিরবরফাচ্ছন্ন পৃথিবী হিসেবে কল্পনা করি। বাস্তবতা বদলে যাচ্ছে। এখানে বরফের পরিমাণ দ্রুত কমছে, ভূমিতে উদ্ভিদ ছড়িয়ে পড়ছে। বাতাসের তাপমাত্রাও বাড়ছে।
যারা অ্যান্টার্কটিকার পরিবেশ আর সেখানকার প্রাণীদের নিয়ে গবেষণা করেন, তারা এসব পরিবর্তন স্পষ্টভাবে দেখতে পাচ্ছেন– কারণ এর প্রভাব সরাসরি তাদের গবেষণার ওপর পড়ছে। ২০০৫ সাল থেকে অ্যান্টার্কটিকায় কাজ করা মর্লি বলেন, ‘যে হিমবাহে আমি স্কি শেখার প্র্যাকটিস করতাম, সেই হিমবাহটা আর নেই, একেবারে উধাও হয়ে গেছে।’ দক্ষিণ জর্জিয়া দ্বীপে এখন নগ্ন মাটি আর আগাছার মতো ঘাস গজিয়ে উঠছে।
অ্যান্টার্কটিকার বরফ বিজ্ঞানীদের কাছে অতীতের জলবায়ুর ইতিহাস জানার এক গুরুত্বপূর্ণ উৎস। হাজার হাজার বছরের প্রাচীন বরফস্তরের ভেতর থাকা বাতাসের অস্তিত্ব বিশ্লেষণ করে তখনকার তাপমাত্রা আর বায়ুমণ্ডলের গঠন বোঝা যায়। হিমবাহ পিছু হটে ও বরফ গলে যাওয়ায় এই মহামূল্যবান রেকর্ড হারিয়ে যাওয়ার শঙ্কা তৈরি হয়েছে। তাই সময় ফুরিয়ে যাওয়ার আগে যতটা সম্ভব তথ্য সংগ্রহের জন্য বিজ্ঞানীরা মরিয়া হয়ে উঠেছেন।
মর্লি তাঁর দেখা প্রাণীদের স্মরণ করে বলেন, ‘অবিশ্বাস্য স্পঞ্জ, অ্যানিমোনি আর সি স্কোয়াটের বাগান– অসাধারণ। পানির নিচের এই স্বর্গও এখন ঝুঁকির মুখে।’ বরফ কমে যাওয়ার ফলে, ওপর থেকে আলো প্রবেশ করছে বেশি, যার কারণে অ্যালগি বা শৈবালের বিস্তার ঘটছে, তা স্পঞ্জ প্রজাতির জীবদের ঢেকে ফেলছে–বলছেন মর্লি। মে মাসে তিনি ও তাঁর সহকর্মীরা এক গবেষণাপত্রে দেখিয়েছেন, এই প্রাণীরা জলবায়ু পরিবর্তনের আরেক বিপদে পড়েছে– বিশাল বরফের খণ্ড সাগরতলে ধাক্কা দিয়ে এই প্রাণীদের আবাস ধ্বংস করে দিতে পারে যে কোনো সময়।
ব্রিটিশ অ্যান্টার্কটিক সার্ভের আরেক গবেষক, বরফ বিশেষজ্ঞ জেরেমি উইলকিনসন জানান, তাঁকেও এখন আর্কটিক অঞ্চলের গবেষণাগুলোর পদ্ধতি পাল্টাতে হয়েছে। আগে তারা বরফের ওপর জলরোধী স্যুটকেস রেখে তাতে বাতাসের গতি ও তাপমাত্রা পরিমাপের যন্ত্র বসিয়ে এক বছরের পর্যবেক্ষণ চালাতেন। এখন বরফ এত দ্রুত গলে যাচ্ছে যে, তারা সেটি আর করতে পারেন না– বরফ গলে যন্ত্রপাতি সাগরে তলিয়ে যায়। তাই এখন তাদের সব যন্ত্র ভেসে থাকার উপযোগী করে তৈরি করা হচ্ছে।
অন্যদিকে, অ্যান্টার্কটিকায়, দক্ষিণ গোলার্ধের শীতকালেও সমুদ্র বরফের অভাব দেখে চমকে গেছেন নিউজিল্যান্ডের এনআইডব্লিউএ সংস্থার সামুদ্রিক পদার্থবিজ্ঞানী নাটালি রবিনসন। তিনি ও তাঁর সহকর্মীরা উপগ্রহচিত্র ব্যবহার করে ম্যাকমারডো সাউন্ড এলাকায় বরফের গঠন পর্যবেক্ষণ করে বলেন, ‘২০২২ সালে এমন এক বরফ-গঠনের ঋতু পেয়েছিলাম, যা কেউ কোনোদিন দেখেনি। আগস্টের শেষ পর্যন্তও সেখানে পানির ওপরে বরফ জমেনি।’
পরে কিছু বরফ গঠিত হলেও তা এতটাই পাতলা ছিল যে, পরিকল্পিত গবেষণা চালানো যায়নি। মাত্র ১.
গত সাত বছর ধরে তিনি বরফের নিচে গঠিত প্লেটলেট আইসের ওপর গবেষণা করতে চেয়েছিলেন–এটি বরফ কণায় পূর্ণ একরকম ঝুলন্ত কাঠামো; যার মাঝে সমুদ্রজল ভরা থাকে। তিনি ও তাঁর দল বিশেষ ধরনের বরফ-কোরিং যন্ত্র তৈরি করেছেন, যাতে এই ভঙ্গুর বরফ সযত্নে তোলা যায় এবং তার গঠন ও প্রাণীর অবস্থান পর্যবেক্ষণ করা যায়।
তাদের মূল লক্ষ্য ছিল রস আইস শেলফের কাছে বরফ সংগ্রহ করা। প্রতিকূল আবহাওয়ার কারণে তাদের স্কট বেসের কাছাকাছি অঞ্চলে বরফ সংগ্রহ করতে হয়। রবিনসন বলেন, ‘এটি ছিল একেবারেই ভিন্ন এক সাগরের অঞ্চল, যা আমাদের পরিকল্পনার মধ্যে ছিল না।’
সমস্যা কেবল বরফ গঠনের অভাবে নয়, দক্ষিণ মহাসাগরে ঝড়ের প্রবণতাও বাড়ছে বলে মনে করছেন তিনি, যা বরফকে স্থিরভাবে জমতে দিচ্ছে না। ঝড়ো বাতাস বাড়ার আরও প্রভাব আছে। তিনি বলেন, ‘এভাবে বাতাস যদি বেশি হয়, তাহলে যেকোনো গবেষণামূলক মাঠপর্যায়ের কাজ অনেক কঠিন হয়ে যাবে।’
গত ২২ বছরে অ্যান্টার্কটিকায় তাঁর অভিজ্ঞতা থেকে রবিনসন বুঝেছেন, জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব কতটা গভীর। তিনি একে ‘চোখ খুলে দেওয়ার মতো’ বলে বর্ণনা করেন। তবে একটি বিষয়ে তিনি আশান্বিত- মানুষের মনোভাবের পরিবর্তন। তিনি বলেন, ‘জলবায়ু পরিবর্তন নিয়ে অবিশ্বাস বা অস্বীকৃতি আগের তুলনায় অনেক কমে গেছে। এটাই অন্তত আমার জন্য আশাজাগানিয়া।’
সময় দ্রুত ফুরিয়ে যাচ্ছে। কিছু গবেষণা হয়তো আর ভবিষ্যতে করা সম্ভব হবে না, যদি বিশাল বরফের সমুদ্র চিরতরে হারিয়ে যায়। এ প্রসঙ্গে রবিনসন বলেন, ‘আমরা এখন এই বড় রকমের পরিবর্তনগুলো ঘটার আগে দৌড়ে তথ্য সংগ্রহ করছি।’ v
বিবিসি’র ক্রিস বারানিউকের প্রতিবেদনের আলোকে
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: স গ রহ ন বরফ বরফ র বরফ গ জলব য় র ওপর র বরফ
এছাড়াও পড়ুন:
গরুর হাটে ছাগলকাণ্ডের ছায়া, দুশ্চিন্তায় বড় খামারিরা
গত বছর ঈদুল আজহার আগে ১২ লাখ টাকার এক ছাগল দেশজুড়ে শোরগোল ফেলেছিল। রাজধানীর ‘সাদিক এগ্রো’ থেকে ছাগলটি কিনেছিলেন জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার ছেলে। মুহূর্তেই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এই ছাগল নিয়ে মাতামাতি শুরু হয়। ছাগলকাণ্ড ঘিরে যেন বেরিয়েছিল কেঁচো খুঁড়তে সাপ! দেশজুড়ে তৈরি হয় দুর্নীতির বিরুদ্ধে ক্ষোভের বিস্ফোরণ। একে একে বেরিয়ে আসে দুর্নীতবাজ কর্মকর্তা ও রাজনীতিবিদের নানা অপকীর্তির তথ্য।
ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর বছর ঘুরে আবার কোরবানির ঈদ সামনে। তবে এবার দামি গরু কিংবা ছাগলের বিজ্ঞাপনের চাকচিক্য নেই। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে নেই কোরবানির পশু নিয়ে বাগাড়ম্বর। খামারে খামারে নেই আগের সেই রোশনাই। পশুর হাটে হাটে এক ধরনের সতর্কতা, শঙ্কা। যার পেছনে রয়েছে ছাগলকাণ্ডের ছায়া। এ বাস্তবতায় বড় খামারির মধ্যে আছে উদ্বেগও।
এবার কোরবানির ঈদ ৭ জুন। প্রস্তুত হচ্ছে পশুর হাট। তবে বড় গরু নিয়ে বেকায়দায় আছেন খামারিরা। যেসব বড় গরু সাধারণত বিত্তবানের কাছে বিক্রি হতো, সেসব ক্রেতার অনেকেই আত্মগোপনে। পাশাপাশি আতঙ্কে আছেন ধনাঢ্য ক্রেতারাও। ফলে এবার চাহিদা বেশি ছোট ও মাঝারি আকারের গরুর।
বড় গরু বোঝা
মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের তথ্য বলছে, কোরবানির জন্য প্রস্তুত হয়েছে ১ কোটি ২৪ লাখ ৪৭ হাজার গবাদি পশু।
এর মধ্যে গরু-মহিষ ৫৬ লাখ ২ হাজার এবং ছাগল-ভেড়া ৬৮ লাখ ৩৮ হাজার। চাহিদা অনুযায়ী প্রায় ২০ লাখ পশু উদ্বৃত্ত থাকতে পারে। প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের তথ্য বলছে, গত বছর গরুর চেয়ে ছাগল ও ভেড়ার কোরবানি বেশি হয়েছে। ২০২৩ সালে গরু-মহিষ কোরবানি হয়েছে ৪০ লাখ ৫৩ হাজার, আর ছাগল-ভেড়া ৫০ লাখ ৩৮ হাজার। অথচ ২০১৯ সালে গরু-মহিষ কোরবানি ছিল ৫৭ লাখের বেশি।
খামারিরা বলছেন, যারা একসময় কোরবানির হাটে লাখ লাখ টাকা ঢালতেন– রাজনীতিক, প্রভাবশালী আমলা, প্রবাসী পরিবার কিংবা বড় ব্যবসায়ী; তাদের অনেকেই এখন আত্মগোপনে। কেউ দুর্নীতির মামলায়, কেউ হয়তো পরিস্থিতি বুঝে সতর্ক। রাজনৈতিক পট পরিবর্তন, দুর্নীতির তদন্ত, গণঅভ্যুত্থানের পর দামি পশু কেনা অনেকেই এখন ‘ঝুঁকিপূর্ণ সিদ্ধান্ত’ মনে করছেন। খামারিরা বলছেন, এ বছর বড় গরুর চাহিদা নেই বললেই চলে। অনেকেই সস্তা ও ছোট পশুর দিকেই ঝুঁকছেন। সব মিলিয়ে ছাগলকাণ্ডের রেশ গিয়ে ঠেকেছে গোয়ালঘরে, কোরবানির হাটের দরকষাকষিতে, এমনকি খামারির সংসারেও।
পাবনার সাঁথিয়ার শামুকজানি গ্রামের খামারি মনজেল হোসেন ‘মোহন রাজ’ নামে ষাঁড়টি তিন বছর ধরে লালনপালন করছিলেন। আক্ষেপের সুরে তিনি বলেন, খাওয়া-দাওয়া, পরিচর্যা করে ৯৫ হাজার টাকায় কেনা গরুটাকে বিশাল আকৃতি দিয়েছি। কিন্তু ১০ লাখের আশায় রাখা গরুটি শেষ পর্যন্ত ৬ লাখ টাকায় এক গরু ব্যাপারীর কাছে দিতে বাধ্য হয়েছি।
রাজশাহীর খড়খড়ির খামারি আনোয়ার হোসেন ৬০টি বড় গরু প্রস্তুত করেছেন। শাহিওয়াল, ব্রাহমা ও দেশি জাতের। বললেন, আগে যারা ৮-১০ লাখে গরু কিনতেন, তারা এখন যোগাযোগই করছেন না। অনলাইনেও সাড়া নেই।
মেহেরপুর সদরের হরিরামপুর গ্রামের খামারি ইলিয়াস আলীর ২৩টি গরু। আগে যেগুলোর একেকটির দাম ছিল ৭ থেকে ১৫ লাখ টাকা, এখন সেই গরু কেউ নিতে আসছেন না। গত বছরের ছাগলকাণ্ডের পর এবার সবাই সতর্ক। ব্যাপরীরা বড় গরু নিতেই চাচ্ছেন না।
পাবনা সদরের খামারি রিপন হোসেন বলেন, গতবার বড় গরু বিক্রি করতে গিয়ে ফেঁসে গিয়েছিলাম। এবার ৩৫টি ছোট গরু রেখেছিলাম। ১ থেকে ২ লাখের মধ্যে এগুলো বিক্রি হয়ে গেছে।
চুয়াডাঙ্গার নিয়াজ উদ্দিন বলেন, আমি এবার ছোট জাতের ১১টি গরু এনেছি। এগুলোর দাম দেড় থেকে আড়াই লাখ। বড় গরু নিয়ে এখন ভিডিও কিংবা চটকদার বিজ্ঞাপন দিলে প্রশ্নের মুখে পড়তে হয়।
রাজধানীর মোহাম্মদপুরের বেশ কয়েকটি খামার ঘুরে দেখা গেছে, আগের মতো জমকালো অবস্থা নেই। ৯-১০ মণ ওজনের গরু আছে। ফলকে দাম লেখা ৮-৯ লাখ টাকা। কিন্তু কেউ এসে দামও জানতে চাচ্ছেন না।
রাজধানীর গাবতলী হাট ঘুরেও ছোট-মাঝারি গরুর সরবরাহ বেশি দেখা গেছে। গরু ব্যবসায়ী হেলাল উদ্দিন বলেন, মানুষ বড় গরুতে ভয় পায়। এই ভয় শুধু টাকার না– সামাজিক, প্রশাসনিক, সব ধরনের ভয় কাজ করছে। ছোট গরু মানেই এখন ‘নিরাপদ’।
বড় গরুতে খরচ বাড়লেও লাভ নেই
খামারিরা বলছেন, খরচ বাড়লেও লাভের মুখ দেখা কঠিন হয়ে গেছে। প্রাণী খাদ্যের দাম বেড়েছে ৪০ থেকে ৮৭ শতাংশ। ভুসি, খৈল, ভুট্টা, খড়–সবকিছুর দাম বেড়েছে।
পাবনার রাইয়ান ডেইরি ফার্মের ব্যবস্থাপক ইকবাল মৃধা বলেন, প্রতিটি গরুর পেছনে দিনে ৫০০-৫৫০ টাকা খরচ হয়। দেড় বছরে ২ লাখের বেশি খরচ পড়ে। যে ভুসির বস্তা আগে ১ হাজার ৬০০ টাকায় পেতাম, এখন তা ২ হাজার ২০০ টাকা।
চুয়াডাঙ্গার খামারি নিয়াজ উদ্দিন বললেন, ১১টি গরু আছে, খরচ আকাশছোঁয়া। লাভ দূরে থাক, মূলধন তুলতেই হিমশিম খেতে হবে। প্রাণী খাদ্য ও পরিবহন খরচ বেড়েছে। বড় গরু পালনে আগে ছিল বিনিয়োগ, এখন সেটা বোঝা। উৎপাদন খরচের সঙ্গে বিক্রির সমন্বয় হচ্ছে না। সরকারিভাবে দাম নিয়ন্ত্রণ না এলে এই খাত টিকে থাকবে না।
এদিকে অন্য বছর অনলাইন প্ল্যাটফর্মে কোরবানির গরু নিয়ে প্রচার ছিল। এবার এখনও অনলাইন হাট জমেনি। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক উদ্যোক্তা বলেন, আগের বছর যেখানে বড় গরুর বিজ্ঞাপন ছিল ৩০-৪০ ভাগ, এবার তা ১০ ভাগের নিচে। এ বছর বড় গরুর বিক্রি আশানুরূপ হচ্ছে না। ছোট-মাঝারি গরুর প্রতি মনোযোগ বেশি।
ছিনতাই-ডাকাতির নতুন আতঙ্ক
বাজার আর দামে অনিশ্চয়তার পাশাপাশি নতুন করে ভয় ঢুকেছে পরিবহনে। বর্ষাকালীন ঈদের মৌসুমে পশুবাহী ট্রাক অনেক সময় দীর্ঘ যানজটে পড়ে। সেই সঙ্গে মহাসড়কে ডাকাতি-ছিনতাইয়ের ঘটনা বেড়েছে। খাগড়াছড়ির খামারি আব্দুর রহমান বলেন, জেলার বাইরের ব্যাপারীরা ছিনতাই ও ডাকাতির ভয়ে খামারে আসতেই চান না। এবারের ঈদ বর্ষাকালে। মহাসড়কে যানজট, কাদাযুক্ত গ্রামীণ রাস্তা আর ছিনতাইকারীর তৎপরতা মিলিয়ে বিক্রির পরিবেশ অত্যন্ত নাজুক।
বিশেষজ্ঞ মত
কৃষি অর্থনীতিবিদ ড. জাহাঙ্গীর আলম খান বলেন, কোরবানির হাট কখনও ছিল ধর্মীয় আবেগের জায়গা, কখনও সামাজিক প্রতিপত্তির। এখন সেখানে জায়গা নিয়েছে আতঙ্ক, হিসাবনিকাশ আর সম্ভাব্য জবাবদিহির ভয়।
তিনি বলেন, বড় গরুর পরিচর্যায় সময়, শ্রম, অর্থ সবই ব্যয় করেছেন খামারিরা। কিন্তু এবার সেই গরুর ক্রেতা নেই। বড় গরুর খামারিদের দীর্ঘমেয়াদি লাভ নিশ্চিত করতে হলে দরকার পরিকল্পিত বাজার ব্যবস্থাপনা, নিরাপদ পরিবহন ও সরকারি সহায়তা। পাশাপাশি দরকার ভয় দূর করা। সামর্থ্য থাকলে বড় গরু কিনতে যেন কোনো বাধা দেওয়া না হয়। কারণ, দেশে হাজার হাজার বাণিজ্যিক খামার গড়ে উঠেছে, যারা শুধু কোরবানি ঘিরে বড় গরু উৎপাদন করে। তারা লোকসানে পড়লে সার্বিক মাংস উৎপাদন ব্যাহত হবে।
সরকারি উদ্যোগ
মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ উপদেষ্টা ফরিদা আখতার বলেন, আমরা এ বছর সরবরাহ ব্যবস্থায় বিশেষ নজর দিয়েছি। প্রত্যন্ত অঞ্চল থেকে ঢাকায় পশু আনতে সড়ক, নৌ ও রেলপথে ব্যবস্থা থাকবে। অনলাইন প্ল্যাটফর্মেও বড় গরু বিক্রির সুযোগ থাকছে। হাটগুলোতে ভেটেরিনারি সার্জনের উপস্থিতি নিশ্চিত করা হবে, যেন গরুর স্বাস্থ্য নিয়ে বিভ্রান্তি না থাকে।
স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী বলেন, ঈদের সময় হাটের শৃঙ্খলা রক্ষায় প্রতিটি ট্রাকে নির্দিষ্ট হাটের তথ্য থাকতে হবে। রাস্তায় পশু নামানো যাবে না। আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় মহাসড়কে বাড়তি পুলিশ মোতায়েন থাকবে।