৩২ মণ ওজনের ‘লায়নের’ দাম হাঁকানো হচ্ছে ১৫ লাখ
Published: 31st, May 2025 GMT
নাজমুল হোসাইন নিজের প্রিয় গরুটির নাম রেখেছেন ‘লায়ন’। চার বছর ধরে বড় করেছেন এটিকে। তাঁর দাবি, এবারের কোরবানির ঈদে শেরপুরের সবচেয়ে বড় ও দামি গরু এটি। ৩২ মণ ওজনের এই গরুর দাম হাঁকানো হচ্ছে ১৫ লাখ টাকা।
ষাঁড়টির মালিক নাজমুল হোসাইন শেরপুর সদর উপজেলার কৃষ্ণপুর দড়িপাড়া গ্রামের বাসিন্দা। পেশায় তিনি একজন ওয়েল্ডিং মিস্ত্রি। প্রতিদিন স্থানীয় কুসুমহাটি বাজারে ওয়েল্ডিংয়ের কাজ করেন। আর বাড়িতে থাকেন মা-বাবা ও ভাগনে মাহবুবুর আবিদ। লায়নের প্রতিদিনের যত্নের ভার তাঁদের কাঁধেই।
পরিবারের সদস্যরা বলেন, দিন শেষে নাজমুল যখন বাড়ি ফেরেন, গোয়ালঘরে ঢুকে হাঁক দিতেই স্বভাবসুলভ ভঙ্গিতে হাম্বা ডেকে জবাব দেয় লায়ন। আদর না পেলে খাবারের দিকে তাকিয়েও দেখে না প্রাণীটি। লায়নকে তাঁরা পরিবারের একজন সদস্য বলে মনে করেন। মাহবুবুর বলেন, ‘লায়ন আমার ভাইয়ের মতো। সে আমার হাতেই বড় হয়েছে। ওকে ছাড়া থাকার কথা ভাবতেই পারি না।’
লায়নের জন্মও এই বাড়িতেই। দেশি জাতের সঙ্গে শাহিওয়াল-ফ্রিজিয়ানের ক্রসে লায়নের জন্ম হয়। লালচে রঙের এই গরুর ওজন এখন ৩২ মণ, উচ্চতা ৬৬ ইঞ্চি। এটির দাঁত হয়েছে ছয়টি। প্রতিদিন ২ কেজি খড়, ১ কেজি খইল, ৫ কেজি ভুসি, ৪ হালি কলা ও ১ কেজি খুদের ভাত খাওয়ানো হয়। লায়নের খাবারের পেছনে তাঁদের দিনে খরচ হয় ৫০০ থেকে ৬০০ টাকা।
নাজমুল হোসাইন বলেন, গত কোরবানির ঈদেও তিনি লায়নকে বিক্রির জন্য প্রস্তুত করেছিলেন। কিন্তু আশানুরূপ দাম না পাওয়ায় সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসেন। অনেকে জবাই করে খাওয়ার প্রস্তাব দিলেও তিনি তা মেনে নিতে পারেননি। তাঁর ইচ্ছা ছিল, একদিন কোরবানির হাটে জেলার সেরা গরুটি তুলবেন। এবার যেন সে স্বপ্নই সত্যি হয়েছে।
শেরপুর সদর উপজেলায় এবারের কোরবানির জন্য প্রায় ৯ হাজার পশু প্রস্তুত জানিয়ে উপজেলার প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা পলাশ কান্তি দত্ত বলেন, এবারের কোরবানির হাটে জেলার মধ্যে নাজমুল হোসাইনের লায়নই সম্ভবত সবচেয়ে বড় ও আকর্ষণীয় গরু।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ক রব ন র
এছাড়াও পড়ুন:
৫০ শয্যার থানচি হাসপাতাল চলছে একজন চিকিৎসকে
বান্দরবানের থানচি উপজেলার প্রায় ৩০ হাজার মানুষের একমাত্র ভরসার জায়গা ৫০ শয্যার উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স। দীর্ঘদিন ধরে চিকিৎসক, নার্স ও প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতির সংকটে এই হাসপাতাল কার্যত অচল হয়ে পড়েছে। বর্তমানে পুরো হাসপাতাল চালাচ্ছেন মাত্র একজন চিকিৎসক। গত পাঁচবছরে চিকিৎসাধীন ও রেফার্ড করা ২৪ জন রোগী মারা গেছেন।
হাসপাতাল সূত্র জানায়, ১৯৯৫ সালে ৩১ শয্যার থানচি স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স যাত্রা শুরু করে। পরে এটি ৫০ শয্যায় উন্নীত হয়। এই উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ১২ জন চিকিৎসক থাকার কথা থাকলেও কর্মরত আছেন মাত্র দুইজন। তাদের মধ্যে একজন ব্লাড ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে দীর্ঘদিন চিকিৎসাধীন। এ কারণে রোগীদের সেবা দিতে পারছেন না। ১৮ জন নার্স পদে রয়েছেন মাত্র চারজন। চারজন মিডওয়াইফ থাকার কথা, নেই একজনও।
আরো পড়ুন:
ফরিদপুরে পাগলা ঘোড়ার কামড়ে আহত ২০
বক্তব্য দেওয়ার সময় অসুস্থ হয়ে পড়লেন কাদের সিদ্দিকী
প্রাথমিক থেকে শুরু করে জরুরি চিকিৎসার জন্য এই হাসপাতালে ছুটে যান পাহাড়ি ও বাঙালিরা। তাদের অভিযোগ, হাসপাতালটি ৫০ শয্যায় উন্নীত হলেও আধুনিক চিকিৎসা সুবিধা যোগ হয়নি। প্রয়োজনীয় সংখ্যক চিকিৎসক না থাকায় গর্ভবতী নারী, শিশু ও বৃদ্ধ রোগীরা সবচেয়ে বেশি ভোগান্তিতে পড়ছেন।
দুর্গম এলাকার রোগীরা অনেক সময় নদীপথ কিংবা পাহাড়ি রাস্তা পাড়ি দিয়ে হাসপাতালে এলেও কাঙ্ক্ষিত চিকিৎসা সেবা পান না। বরং তাদের বান্দরবান সদর হাসপাতালে রেফার্ড করা হয়। অনেক সময় বান্দরবানে যাওয়ার পথে রোগীরা মারা যান। এ কারণে জরুরি ভিত্তিতে চিকিৎসক, নার্স ও প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি সরবরাহের দাবি জানিয়েছেন তারা।
হাসপাতালের পরিসংখ্যানবীদ পঙ্কজ বড়ুয়া জানান, ২০২০ থেকে ২০২৫ সাল পর্যন্ত এখানে ভর্তি হয়েছেন ৫ হাজার ১৯৮ জন রোগী। এর মধ্যে ৪৫৬ জনকে রেফার্ড করা হয় বান্দরবান সদর হাসপাতালে। হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা গেছেন ১৭ জন রোগী।
থানচি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের অ্যাম্বুলেন্স চালক মংক্যসিং মারমা বলেন, “২০১৯ সালে চাকরিতে যোগদান করার পর থেকে অন্তত সাতজন রেফার্ড করা রোগী মাঝপথে আমার গাড়িতেই মারা গেছেন।”
শৈসাই মং মারমা তিন বছর আগে বিনা চিকিৎসায় তার মাকে মারা যেতে দেখেছেন। তিনি জানান, তার মা শৈমেপ্রু মারমা (৩৪) অন্তঃসত্ত্বা ছিলেন। ২০২২ সালের ১৪ নভেম্বর হঠাৎ তিনি অচেতন হয়ে পড়েন। রেমাক্রী বাজার থেকে নদীপথে থানচি স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যান মাকে। কিছুক্ষণের মধ্যেই তাকে জেলা সদর হাসপাতালে রেফার্ড করা হয়। ভাড়া গাড়িতে জেলা হাসপাতালে যাওয়ার সময় চিম্বুক বারো মাইল এলাকায় তার মা মারা যান।
লেংরু ম্রো নামে চার সন্তানের মা হারিয়েছেন স্বামীকে। তিনি জানান, তার স্বামী রেং য়ুং ম্রো (৪৫) কিডনি জটিলতা নিয়ে থানচি হাসপাতালে যান। সঙ্গে সঙ্গে সেখান থেকে তাকে বান্দরবান সদর হাসপাতালে রেফার্ড করা হয়। থানচি থেকে বান্দরবান যাওয়ার মাঝপথে মারা যান তার স্বামী।
স্থানীয় বাসিন্দা মংমে মারমা বলেন, “হাসপাতালে চিকিৎসক, ওষুধ ও যন্ত্রপাতির সংকট দীর্ঘদিন ধরেই চলছে। বিশেষজ্ঞ ডাক্তার বদলি হলেও অনেকেই থানচিতে যোগ দেন না, ডিপুটেশনে থেকে যান সদর হাসপাতালে। ফলে এ অঞ্চলের পাহাড়ি ও বাঙালি প্রায় ৩০ হাজার মানুষ স্বাস্থ্যসেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন।”
রিয়েং ম্রো নামে অপর বাসিন্দা বলেন, “পাহাড়ে বসবাসকারীদের অধিকাংশ গরিব। জেলা সদর হাসপাতালে রোগী নিয়ে যাওয়া ব্যয়বহুল ও কষ্টকর। রেমাক্রি, বড় মোদক, তিন্দু থেকে থানচি সদরে রোগী আনতেই অনেক টাকা খরচ হয়ে যায়। এরপর আবার বান্দরবান সদর হাসপাতালে রেফার্ড করলে সাধারণ মানুষ কীভাবে চিকিৎসা করাবে?”
থানচি উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা (ইউএইচএফপিও) ডা. মো. ওয়াহিদুজ্জামান মুরাদ বলেন, “বর্তমানে হাসপাতালে আমিসহ দুইজন চিকিৎসক রয়েছেন। একজন ব্লাড ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে দীর্ঘদিন ধরে চিকিৎসাধীন। তিন রোগীদের সেবা দিতে পারছেন না। ফলে পুরো হাসপাতাল পরিচালনার দায়িত্ব আমাকে একাই সামলাতে হচ্ছে।”
তিনি আরো বলেন, “জনবল ও সরঞ্জাম সংকটের কারণে গুরুতর রোগীদের রেফার্ড করা ছাড়া উপায় থাকে না। দীর্ঘ পথের কারণে অনেকেই জীবিত অবস্থায় সদর হাসপাতালে পৌঁছাতে পারেন না।”
বান্দরবান জেলা সিভিল সার্জন ডা. মোহাম্মদ শাহীন হোসাইন চৌধুরী বলেন, “শুধু বান্দরবান নয়, পুরো তিন পার্বত্য জেলাতেই চিকিৎসক সংকট তীব্র আকার ধারণ করেছে। নতুন করে ৪৮তম বিসিএসের ডাক্তার পদায়ন না হওয়া পর্যন্ত এই সংকট পুরোপুরি সমাধান করা সম্ভব হচ্ছে না। তারপরও বিভাগীয় প্রধানকে বিষয়টি চিঠির মাধ্যমে জানানো হয়েছে। ইতোমধ্যে চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজের আট-দশজন চিকিৎসককে বান্দরবানে বদলি করার জন্য প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি।”
ঢাকা/মাসুদ