ঢাকা উত্তরে পশুর হাট শুরুর বাকি ৩ দিন, চূড়ান্ত হয়েছে মাত্র দুটি
Published: 31st, May 2025 GMT
পবিত্র ঈদুল আজহার চার দিন আগে থেকে রাজধানীতে পশুর হাট বসে। ঈদের দিনও কোরবানির পশুর কেনাবেনা হয়। সব মিলিয়ে পাঁচ দিন হাটগুলো জমজমাট থাকে। আগামী ৭ জুন দেশে পবিত্র ঈদুল আজহা উদ্যাপনের ঘোষণা দিয়েছে জাতীয় চাঁদ দেখা কমিটি। এই হিসাবে কোরবানির হাট শুরু হওয়ার কথা ৩ জুন। তবে এখনো হাটগুলোর ইজারাদার নিয়োগ চূড়ান্ত করতে পারেনি ঢাকা উত্তর সিটি (ডিএনসিসি) কর্তৃপক্ষ।
সংস্থাটির সম্পত্তি বিভাগের কর্মকর্তারা জানান, এ বছর একটি স্থায়ী (গাবতলী) হাটের পাশাপাশি ১০টি অস্থায়ী হাট বসানোর সিদ্ধান্ত হয়েছে। তবে গত বৃহস্পতিবার মাত্র দুটি হাটের ইজারা চূড়ান্ত করা গেছে। হাট দুটি হচ্ছে ডিএনসিসি ৪৩ নম্বর ওয়ার্ড এলাকায় মস্তুল চেকপোস্ট–সংলগ্ন খালি জায়গার হাট এবং তেজগাঁওয়ে ঢাকা পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট–সংলগ্ন খালি জায়গা (পলিটেকনিক মাঠ)।
হাটগুলোর ইজারাদার নিয়োগে দেরি হওয়ায় হাট বসানোর প্রস্তুতি নিয়ে দুশ্চিন্তায় রয়েছেন দরপত্র দেওয়া ব্যক্তিরা। তাঁরা বলছেন, হাটের প্রস্তুতির জন্য কমপক্ষে দুই সপ্তাহ সময়ের প্রয়োজন। পাশাপাশি প্রচারণার বিষয় রয়েছে। সারা দেশের গবাদিপশুর ব্যবসায়ী কিংবা পাইকারদেরও জানানোর বিষয় রয়েছে।
গত সপ্তাহের শেষ কর্মদিবস বৃহস্পতিবার রাজধানীর একমাত্র স্থায়ী হাট গাবতলীর বিষয়েও কোনো সিদ্ধান্ত নিতে পারেনি ডিএনিসিসি। পাশাপাশি রাজধানীর অন্যতম বৃহত্তম উত্তরা দিয়াবাড়ি হাটের (অস্থায়ী) বিষয়েও সিদ্ধান্ত নেওয়া সম্ভব হয়নি। দুই দফা দরপত্র বিজ্ঞপ্তি দেওয়ার পরও সরকার নির্ধারিত দর পাওয়া যায়নি মিরপুরের কালশী বালুর মাঠের হাটের জন্য।
বৃহস্পতিবার বিকেলে হওয়া হাটের দরপত্র মূল্যায়ন কমিটির সভায় ৬টি অস্থায়ী হাটের বিষয়ে সিদ্ধান্ত এসেছে। তবে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত ও অনুমোদনের জন্য সুপারিশ প্রশাসকের দপ্তরে পাঠানো হয়েছে। আগামীকাল রোববারের মধ্যে হাটগুলোর ইজারাপ্রক্রিয়া চূড়ান্ত হয়ে যাবে বলে জানিয়েছেন সম্পত্তি বিভাগের কর্মকর্তারা।
হাটগুলোর ইজারাদার নিয়োগে দেরি হওয়ায় হাট বসানোর প্রস্তুতি নিয়ে দুশ্চিন্তায় রয়েছেন দরপত্র দেওয়া ব্যক্তিরা। তাঁরা বলছেন, হাটের প্রস্তুতির জন্য কমপক্ষে দুই সপ্তাহ সময়ের প্রয়োজন। পাশাপাশি প্রচারণার বিষয় রয়েছে। সারা দেশের গবাদিপশুর ব্যবসায়ী কিংবা পাইকারদেরও জানানোর বিষয় রয়েছে।প্রথম দফায় ১০টি অস্থায়ী হাটের জন্য গত ২৯ এপ্রিল দরপত্র আহ্বান করেছিল ডিএনসিসি কর্তৃপক্ষ। এর মধ্যে দুটি হাট—বাড্ডা ইস্টার্ন হাউজিং, আফতাবনগর ও খিলক্ষেত বনরূপা হাটের ইজারা উচ্চ আদালতের নির্দেশে বাতিল হয়েছে। বাকি হাটগুলোর মধ্যে দুটি ছাড়া কোনো হাটের জন্য সরকার নির্ধারিত দরের চেয়ে বেশি দর পাওয়া যায়নি।
মিরপুর-৬ নম্বর ইস্টার্ন হাউজিং হাটের পাওয়া সর্বোচ্চ দর সরকারি দরের চেয়ে বেশি হলেও দুজন দরদাতার দেওয়া দরের পরিমাণ একই ছিল। তাই ওই হাটসহ ৬টি হাটের জন্য গত ২৪ মে দ্বিতীয় দফায় দরপত্র আহ্বান করা হয়। এর পাশাপাশি আরও দুটি নতুন হাট কাঁচকুড়া ও খিলক্ষেত এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের নিচে খালি জায়গার হাটের জন্য দরপত্র আহ্বান করা হয়।
কোন হাটে কত দরইজারাদার চূড়ান্ত হওয়া দুটি হাটের মধ্যে মস্তুল হাটটি ইজারা হয়েছে ১ কোটি ৫১ লাখ টাকায়। এই হাটের সরকারি দর ছিল ১ কোটি সাড়ে ৭ হাজার টাকা। হাটটির ইজারাদার সুরমি এন্টারপ্রাইজের মজিবুল্লাহ খন্দকার। আর তেজগাঁও পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট হাটের জন্য সরকারি দর ছিল ৬৪ লাখ ২ হাজার ৪০০ টাকা। সর্বোচ্চ ২ কোটি ১৭ লাখ টাকা দর দিয়ে হাটের ইজারা পেয়েছেন জায়ান এন্টারপ্রাইজের মালিক মোহাম্মদ মনিরুজ্জামান।
দ্বিতীয় দফায় দরপত্র আহ্বান করা ৬টি হাটের মধ্যে একমাত্র কালশী বালু মাঠের হাটটির জন্য কাঙ্ক্ষিত দর পাওয়া যায়নি। এই হাটের জন্য সরকার নির্ধারিত দর ছিল ৮০ লাখ টাকা। কিন্তু সর্বোচ্চ দর পাওয়া গেছে ৩০ লাখ টাকা। এই দর দিয়েছেন মাসুদুর রহমান নামের এক ব্যক্তি। দরপত্র মূল্যায়ন কমিটির সভার পর কালশী হাটের জন্য তৃতীয় দফায় দরপত্র আহ্বানের সিদ্ধান্ত হয়েছে বলে জানা গেছে।
দ্বিতীয় দফায় দরপত্র আহ্বান করা বাকি ৫টি হাটের মধ্যে ৮ কোটি ৯০ লাখ টাকা সরকারি মূল্যের উত্তরা দিয়াবাড়ি হাটের জন্য দর পাওয়া গিয়েছিল ১০ কোটি ১ লাখ টাকা। দরটি দিয়েছিলেন এসএম ব্রাদার্স নামের একটি প্রতিষ্ঠান। তবে দরপত্রের শিডিউলের সঙ্গে প্রতিষ্ঠানটি পে-অর্ডারের মূল কপির পরিবর্তে ফটোকপি জমা দিয়েছিলেন। এ নিয়ে দরপত্র খোলার দিন দ্বিতীয় সর্বোচ্চ দরদাতা (৭ কোটি ৫২ লাখ টাকা) চায়না বাংলা ট্রেডার্স নামের একটি প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধিরা হট্টগোল করেন। এ হাটের বিষয়ে মূল্যায়ন কমিটিতে কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি। বিষয়টি প্রশাসকের কাছে সিদ্ধান্তের জন্য পাঠানো হয়েছে।
আরও পড়ুনসর্বোচ্চ ২৫ কোটি টাকা দরপ্রস্তাব, দরদাতাকে চেনেন না কেউ২৯ মে ২০২৫প্রথম দফায় দুজন দরদাতার দেওয়া দর সমান হওয়ায় মিরপুর-৬ ইস্টার্ন হাউজিং হাটের দ্বিতীয় দফায় দর আহ্বান করা হয়। দ্বিতীয় দফায় ২ কোটি ৫৫ লাখ টাকা দর দিয়েছেন সোহাগ এন্টারপ্রাইজ নামের একটি প্রতিষ্ঠান। হাটটির সরকারি দর ছিল ১ কোটি ৩৮ লাখ ১৬ হাজার ৭৮৬ টাকা। প্রথম দফায় একই দর দেওয়া মার্সি করপোরেশন দ্বিতীয় দফায় ২ কোটি ২২ লাখ টাকা দর দিয়ে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ দরদাতা হয়।
এ ছাড়া সরকার নির্ধারিত ৩ কোটি ৭০ লাখ টাকার ভাটারা সুতিভোলা খালের পাশে খালি জায়গার হাটের জন্য দ্বিতীয় দফায় মাত্র একটি দরপত্র জমা পড়ে। প্রতিষ্ঠানটি সরকার নির্ধারিত মূল্যের সমপরিমাণ টাকায়, অর্থাৎ ৩ কোটি ৭০ লাখ টাকায় দর দিয়েছে।
সরকার নির্ধারিত ২ কোটি ২০ লাখ টাকার মোহাম্মদপুরের বছিলা হাটের জন্য আহাদ এন্টারপ্রাইজ নামের একটি প্রতিষ্ঠান ২ কোটি ৭১ লাখ দর পাওয়া যায়। আর ১০ নম্বর সেক্টর–সংলগ্ন রানাভোলা অ্যাভিনিউ খালি জায়গার হাটের জন্য দর পাওয়া যায় ৯৫ লাখ ২১ হাজার টাকা। দরটি দিয়েছে আতিকুর রহমান অ্যান্ড কোং নামের একটি প্রতিষ্ঠান। সরকারি দর ছিল ৮১ লাখ ২০ হাজার টাকা।
আরও পড়ুনআগামী বছর থেকে কোরবানির পশুর হাটে হাসিল হবে ৩ শতাংশ২৫ মে ২০২৫প্রথম দফায় পরিকল্পনায় ঢাকা ১০টি অস্থায়ী হাটের মধ্যে দুটি বাতিল হওয়ার পর নতুন আরও দুটি জায়গায় হাট বসাতে দরপত্র আহ্বান করে ডিএনসিসি কর্তৃপক্ষ। এর একটি খিলক্ষেত এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের নিচের হাট, সরকারি দর ৫০ লাখ টাকা। এ হাটের জন্য ক্ল্যাসিক ট্রেড ইন্টারন্যাশনাল নামের একটি প্রতিষ্ঠান দর দিয়েছে ১ কোটি ৫১ লাখ টাকা। আর কাঁককুড়া বাজার–সংলগ্ন রহমাননগর হাটের সরকারি দর ছিল ৮ লাখ ২০ হাজার টাকা। এ হাটের জন্য আরহাম এন্টারপ্রাইজ নামের একটি প্রতিষ্ঠান সর্বোচ্চ ১৩ লাখ ৬১ হাজার টাকা দর দিয়েছে।
হাটের ইজারাদার চূড়ান্ত করতে এত দেরি হওয়ার বিষয়ে বক্তব্য জানতে ডিএনসিসির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তার অতিরিক্ত দায়িত্বে থাকা সংস্থাটির সচিব মুহাম্মদ আসাদুজ্জামানকে ফোন করা হয়েছিল। যোগাযোগ করা হয়েছিল প্রধান সম্পত্তি কর্মকর্তা মোহাম্মদ শওকত ওসমানের মুঠোফোনেও। কিন্তু দুজনের কেউই ফোন ধরেননি। খুদে বার্তা পাঠিয়েও কোনো সাড়া পাওয়া যায়নি।
ইজারাপ্রত্যাশী ব্যক্তিরাও নাম প্রকাশ করে কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি। তবে তাঁরা বলেন, কে ইজারা পাচ্ছেন, সেটা নিশ্চিত না হওয়ায় হাটের প্রস্তুতি নেওয়া যাচ্ছে না। অন্যান্য বছরে এই সময়ের মধ্যে যাবতীয় প্রস্তুতি প্রায় শেষ পর্যায়ে থাকে।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: সরক র ন র ধ র ত র হ ট র জন য হ ট র জন য দ হ ট র ইজ র র ইজ র দ র র প রস ত ত ন ম র একট কর মকর ত ম হ ম মদ দর দ য় ছ র জন য ক র জন য স ড এনস স র সরক র দর ছ ল ন ত হয় দরদ ত হওয় য়
এছাড়াও পড়ুন:
পায়রা বন্দরসহ দুই প্রকল্পের ক্রয় প্রস্তাব অনুমোদন
পায়রা বন্দরের জন্য সংশ্লিষ্ট পরিসেবাসহ দুটি শিপ টু শোর ক্রেন সরবরাহ এবং নারায়ণগঞ্জের খানপুরে অভ্যন্তরীণ কন্টেইনার এবং বাল্ক টার্মিনাল নির্মাণ প্রকল্পে কাজের ক্রয় প্রস্তাবে অনুমোদন দিয়েছে সরকারি ক্রয় সংক্রান্ত উপদেষ্টা পরিষদ কমিটি। প্রস্তাব দুটিতে ব্যয় হবে ৪৫০ কোটি ১১ লাখ ১০ হাজার ২৫৪ টাকা।
মঙ্গলবার (২৯ জুলাই) সচিবালয়ে মন্ত্রি পরিষদ বিভাগের সম্মেলন কক্ষে অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমদের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সভায় কমিটির সদস্য ও উর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
সভা সূত্রে জানা যায়, পায়রা সমুদ্র বন্দরের প্রথম টার্মিনাল এবং আনুষঙ্গিক সুবিধাদি নির্মাণ (২য় সংশোধিত)’ প্রকল্পের আওতায় সংশ্লিষ্ট পরিসেবাসহ দুটি শিপ টু শোর ক্রেন সরবরাহ এবং স্থাপন কাজের জন্য দরপত্র আহ্বান করা হলে ৪টি প্রতিষ্ঠান দরপ্রস্তাব দাখিল করে। দরপত্রের সব প্রক্রিয়া শেষে টিইসি কর্তৃক সুপারিশকৃত রেসপনসিভ সর্বনিম্ন দরদাতা প্রতিষ্ঠান যৌথভাবে (১) এইচপি এবং (২) এনজে, চায়না প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করবে। এতে ব্যয় হবে ১৬২ কোটি ২ লাখ ১১ হাজার ৫৬৮ টাকা।
নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের ‘নারায়ণগঞ্জের খানপুরে অভ্যন্তরীণ কন্টেইনার এবং বাল্ক টার্মিনাল নির্মাণ (১ম সংশোধিত)’ প্রকল্পের প্যাকেজ নম্বর দুইয়ের পূর্ত কাজের ক্রয় প্রস্তাবে অনুমোদন দিয়েছে কমিটি। এ জন্য উন্মুক্ত দরপত্র পদ্ধতিতে দরপত্র আহ্বান করা হলে ২টি প্রতিষ্ঠান দরপত্র দাখিল করে। দরপত্রের সকল প্রক্রিয়া শেষে টিইসি কর্তৃক সুপারিশকৃত রেসপনসিভ সর্বনিম্ন দরদাতা প্রতিষ্ঠান যৌথভাবে (১) স্পেক্ট্রা ইঞ্জিনিয়ার্স এবং (২) এসএস রহমান ইন্টারন্যানাল লিমিটেড প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করবে। এতে ব্যয় হবে ২৮৮ কোটি ৮ লাখ ৯৮ হাজার ৬৮৬ টাকা।
ঢাকা/হাসনাত//