মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের শুল্কনীতি নিয়ে সৃষ্ট অনিশ্চয়তার ফলে এশিয়ার পুঁজিবাজার আবারও চাপে পড়েছে। শুক্রবার এশিয়ার অধিকাংশ শেয়ারবাজারে সূচকের ধারা ছিল নিম্নমুখী। মূলত শুল্ক আরোপ স্থগিতের রায়ের বিরুদ্ধে হোয়াইট হাউসের আপিল টিকে যাওয়ায় এই পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে।

গত সপ্তাহে মার্কিন আন্তর্জাতিক বাণিজ্য আদালত ট্রাম্পের আরোপিত শুল্ককে স্থগিত ঘোষণা করেন। রায়ের তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় বাজারে কিছুটা ইতিবাচক সাড়া দেখা গেলেও হোয়াইট হাউস রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করায় তা স্থগিত হয়। এতে বাজারে আবারও অনিশ্চয়তা তৈরি হয় এবং তার জেরে সূচকের পতন হয়। খবর রয়টার্সের

গতকাল জাপানের নিক্কেই ২২৫ সূচক ১ দশমিক ১ শতাংশ কমে যায়। সরকারি তথ্যানুযায়ী, মে মাসে জাপানে খাদ্য ও জ্বালানিবহির্ভূত মূল্যস্ফীতি বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৩ দশমিক ৬ শতাংশ; এটি প্রত্যাশার চেয়েও বেশি। বিশ্লেষকদের মতে, এই ঘটনায় ব্যাংক অব জাপানের সুদহার বৃদ্ধির সম্ভাবনা জোরালো হয়েছে। এতে বাজারে আবারও চাপ তৈরি করেছে।

এদিকে সামগ্রিকভাবে মে মাসে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের শেয়ারবাজার চাঙা অবস্থায় আছে। এই মাসে শুল্কজনিত নানা অনিশ্চয়তার মধ্যেও শেয়ারবাজারে চাঙা ভাব ছিল। তবে ডলার ইনডেক্স বা বিশ্বের প্রধান ছয়টি মুদ্রার বিপরীতে ডলারের মান টানা মাস কমেছে। আজ মাসের শেষ দিনে বিশ্ববাজারে অপরিশোধিত তেল ও সোনার দাম কমেছে। খবর অয়েল প্রাইস ও গোল্ড প্রাইস ডট অর্গের

দক্ষিণ কোরিয়ার কোসপি সূচক কমেছে শূন্য দশমিক ৯ শতাংশ, হংকংয়ের হ্যাংসেং ১ দশমিক ৪ শতাংশ ও সাংহাই কম্পোজিট সূচক শূন্য দশমিক ৩ শতাংশ কমেছে। এর আগে বৃহস্পতিবার ওয়াল স্ট্রিটের সূচকগুলো কিছুটা ঊর্ধ্বমুখী ছিল। এসঅ্যান্ডপি ৫০০ সূচক বেড়েছে শূন্য দশমিক ৪ শতাংশ; ডাও জোনস শূন্য দশমিক ৩ শতাংশ ও নাসডাক কম্পোজিট শূন্য দশমিক ৪ শতাংশ বৃদ্ধি পায়। মূলত ট্রাম্পের শুল্ক নীতিকে অবৈধ ঘোষণার পর এই উত্থান দেখা যায়। তবে টোকিও ও সিউলের বাজার সূচক শুরুতে প্রায় ২ শতাংশ বাড়লেও পরে তা ধীর হয়ে পড়ে যায়।

প্রযুক্তি খাতের শেয়ারের দাম বাড়ায় কিছুটা ওয়াল স্ট্রিটে ইতিবাচক ধারা ছিল। চিপ কোম্পানি এনভিডিয়া প্রত্যাশার চেয়ে বেশি আয় ও মুনাফা করেছে। ফলে কোম্পানির শেয়ারদর ৩ দশমিক ২ শতাংশ বেড়ে যায় এবং এসঅ্যান্ডপি ৫০০ সূচকের উত্থানে বড় ভূমিকা রাখে।

বাণিজ্য আদালতের রায়ে বলা হয়, ট্রাম্প ১৯৭৭ সালের ইন্টারন্যাশনাল ইমার্জেন্সি ইকোনমিক পাওয়ার্স অ্যাক্টের আওতায় যে শুল্ক আরোপ করেছেন, তা সংবিধানসম্মত নয়। এই আইন প্রেসিডেন্টকে শুল্ক আরোপের ক্ষমতা দেয় না; এই ক্ষমতা কেবল কংগ্রেসের। তাই আদালত ট্রাম্পের পদক্ষেপকে ক্ষমতার সীমা লঙ্ঘন বলে উল্লেখ করে।

প্রথমে এই রায়ে আন্তর্জাতিক বাজারে কিছুটা স্বস্তি দেখা দিলেও হোয়াইট হাউসের আপিল এবং আদালতের রায় স্থগিত হওয়ায় অনিশ্চয়তা বৃদ্ধি পায়। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ট্রাম্প প্রশাসনের অন্যান্য শুল্ক—যেমন ইস্পাত, অ্যালুমিনিয়াম ও গাড়ি—অন্য আইনের আওতায় হওয়ায় সেগুলোয় এই রায়ের প্রভাব পড়বে না। গত বৃহস্পতিবার যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল সার্কিট আদালত জানান, সরকারের আপিল বিবেচনায় নিয়ে তারা বাণিজ্য আদালতের রায় স্থগিত রাখছেন। মামলার বাদীপক্ষকে ৫ জুন এবং ট্রাম্প প্রশাসনকে ৯ জুনের মধ্যে জবাব দিতে বলা হয়েছে।

ট্রাম্প প্রশাসনের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, তারা রায় নিয়ে বিচলিত নন এবং আপিলে জয়ী হওয়ার বিষয়ে আশাবাদী। প্রয়োজনে প্রেসিডেন্টের অন্যান্য নির্বাহী ক্ষমতা ব্যবহারের ইঙ্গিতও দেওয়া হয়েছে।

এক বিবৃতিতে ট্রাম্প বিচার বিভাগকে ‘আমেরিকাবিরোধী’ আখ্যা দিয়ে বলেন, ‘আশা করি, সুপ্রিম কোর্ট এই ভয়ংকর ও দেশের জন্য হুমকিস্বরূপ রায় বাতিল করবে।’ তিনি আরও লেখেন, ‘এই রায়ে বলা হয়েছে, শুল্ক আরোপের আগে আমাকে কংগ্রেসের অনুমতি নিতে হবে! যদি এই রায় বহাল থাকে, তবে প্রেসিডেন্সিয়াল ক্ষমতা ধ্বংস হয়ে যাবে।’

এ পরিস্থিতিতে ইউবিএস গ্লোবাল ওয়েলথ ম্যানেজমেন্টের গ্লোবাল ইকুইটিজ বিভাগের প্রধান বিনিয়োগ কর্মকর্তা উলরিকে হফম্যান-বুরচার্ডি বলেন, ‘ট্রাম্প এখনো ভিন্ন উপায় অবলম্বন করে দীর্ঘ মেয়াদে বিপুল পরিমাণে শুল্ক আরোপে সক্ষম।’

অন্যদিকে যুক্তরাষ্ট্রের সাম্প্রতিক অর্থনৈতিক প্রতিবেদনে মিশ্র বার্তা পাওয়া যাচ্ছে। বছরের প্রথম প্রান্তিকে অর্থনীতি পূর্বাভাসের তুলনায় কম সংকুচিত হয়েছে, যদিও বেকার ভাতার আবেদন বেড়েছে।

ট্রাম্পের শুল্কনীতির বিরুদ্ধে পাঁচটি ছোট ব্যবসায়ী জোটের পক্ষ থেকে মামলা করেছিল লিবার্টি জাস্টিস সেন্টার। তাদের মতে, এই শুল্কের কারণে ব্যবসাগুলো সরবরাহকারীদের হারিয়েছে এবং তাদের ব্যয়বহুল সরবরাহব্যবস্থায় পরিবর্তন আনতে হয়েছে। আইনজীবী জেফরি শ্যাব বলেন, ‘এসব ব্যবসা অস্তিত্বের সংকটে পড়েছে।’

অন্য এক মামলায় আদালত ট্রাম্পের ১০ শতাংশ পাল্টা শুল্ক এবং ২৫ শতাংশ ফেন্টানিল-সম্পর্কিত শুল্ককেও আইনের অপব্যবহার হিসেবে আখ্যা দিয়েছে, তবে সে রায় কেবল খেলনা কোম্পানির ক্ষেত্রে প্রযোজ্য।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: শ ন য দশম ক শ য় রব জ র শ ল ক আর প এই র য় ব যবস ক ষমত

এছাড়াও পড়ুন:

দুই জাতীয় প্রতিযোগিতায় বিইউবিটির গৌরবোজ্জ্বল সাফল্য

বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি অব বিজনেস এন্ড টেকনোলজি (বিইউবিটি) সাম্প্রতিক সময়ে দুটি জাতীয় পর্যায়ের প্রতিযোগিতায় অসাধারণ সাফল্য অর্জন করে বিশ্ববিদ্যালয়ের সুনামকে আরও একধাপ এগিয়ে নিয়েছে। শনিবার অনুষ্ঠিত ‘ডিবেট ফর ডেমোক্রেসি’ ছায়া সংসদ বিতর্ক প্রতিযোগিতায় বিইউবিটির ডিবেটিং ক্লাব চ্যাম্পিয়ন হওয়ার গৌরব অর্জন করে। ফাইনাল পর্বে বিইউবিটি আনন্দ মোহন কলেজকে পরাজিত করে‌।

বিতর্কের বিষয় ছিল- ‘রাজস্ব আহরণ বৃদ্ধি করা আসন্ন বাজেটের প্রধান লক্ষ্য হওয়া উচিত।’ এই বিতর্কে বিইউবিটি বিরোধী দলের ভূমিকায় অংশগ্রহণ করে যুক্তিনিষ্ঠ বিশ্লেষণ, শক্তিশালী উপস্থাপন এবং বুদ্ধিদীপ্ত বক্তব্যের মাধ্যমে শ্রেষ্ঠত্ব প্রমাণ করে।

অন্যদিকে, শুক্রবার অনুষ্ঠিত ৭ম ওয়ার্ল্ড ইনভেনশন কমপিটিশন অ্যান্ড এক্সিবিশনের জাতীয় পর্বে বিইউবিটির কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের শিক্ষার্থীদের উদ্ভাবনী প্রকল্প ‘এগ্রো ডক্টর’ আইটি ও রোবোটিকস বিভাগে রৌপ্য পদক অর্জন করে।

৫১তম ব্যাচের তিনি শিক্ষার্থী ফজলে রাব্বী, কামরুল ইসলাম ও মো. সাকিলের উদ্ভাবিত প্রকল্প ‘এগ্রো ডক্টর’ প্রযুক্তিনির্ভর এমন একটি সমাধান, যা কৃষকদের ফসলের রোগ নির্ণয়ে সহায়তা করে। এটি অটোমেশন ও মেশিন লার্নিং প্রযুক্তি ব্যবহার করে, টেকসই কৃষি ও সফল ফলনের নিশ্চয়তা প্রদান করে।

এই সাফল্যের পর বিইউবিটির উভয় দল বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য প্রফেসর ড. এ বি এম শওকত আলীর সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করে। উপাচার্য তাঁদের অভিনন্দন জানিয়ে বলেন, ‘এই অর্জনসমূহ শুধুমাত্র ব্যক্তিগত নয়, বরং বিইউবিটির সম্মান এবং বাংলাদেশের শিক্ষার গৌরব। আশা করি, বিইউবিটির তরুণেরা দেশ ও জাতির জন্য আরও সৃজনশীল ও দক্ষ নেতৃত্ব গড়ে তুলবে।’

ডিবেটিং ক্লাবের সদস্যরা বলেন, ‘এই জয় আমাদের যুক্তিবোধ, দলগত কাজ ও নেতৃত্বের একটি অনন্য প্রমাণ। আমরা ভবিষ্যতে আন্তর্জাতিক মঞ্চেও নিজেদের জায়গা করে নিতে চাই।’ অপরদিকে টিম ‘এগ্রো ডক্টর’- এর সদস্যরা বলেন, ‘আমাদের উদ্ভাবনী প্রযুক্তি দেশের কৃষি খাতে গুরুত্বপূর্ণ পরিবর্তন আনতে পারে। এই সাফল্য আমাদের আরও উদ্ভাবনে উৎসাহিত করবে।’

বিইউবিটি ভবিষ্যতেও জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে নিজেদের সক্ষমতা প্রমাণ করে বাংলাদেশকে গর্বিত করার প্রত্যয় ব্যক্ত করেছে। সংবাদ বিজ্ঞপ্তি

সম্পর্কিত নিবন্ধ