পাঠাগার জ্ঞানের আলো ছড়ায়। বইয়ের সঙ্গে পাঠকের মেলবন্ধন সৃষ্টি করে। এ কাজটি করে আসছিল গোপালগঞ্জের শতবর্ষী আলোকবর্তিকা ‘নজরুল পাবলিক লাইব্রেরি’। কিন্তু এটি দীর্ঘদিন বন্ধ রয়েছে। ফলে বই-পাঠক সম্পর্ক ছিন্ন হয়ে গেছে। ইতিহাস ও গৌরব হারাতে বসেছে গ্রন্থাগারটি।
গোপালগঞ্জ জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের পাশে অবস্থিত এ লাইব্রেরি প্রাঙ্গণে রয়েছে কদমগাছসহ বিভিন্ন গাছের সমাহার। ছায়ার ঘেরা লাইব্রেরির দরজায় ঝুলছে কয়েকটি তালা। দীর্ঘ তিন বছর ধরে এটি রয়েছে বন্ধ। ছয় বছর ধরে নেই লাইব্রেরিয়ান।
১৯২০ সালে গ্রন্থাগারটি প্রতিষ্ঠা করা হয়। দেশভাগের আগে ঢাকা ও কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকরাও বিভিন্ন রেফারেন্সের বইয়ের জন্য এখানে আসতেন। কালের সাক্ষী এই লাইব্রেরিটি সংস্কার করে আধুনিকায়নের দাবি জানিয়েছেন পাঠকরা।
লাইব্রেরিতে এখন দেশি-বিদেশি প্রায় ১৪ হাজার বই রয়েছে। এখানে ধ্রুপদি সাহিত্যের বইয়ের মধ্যে রয়েছে– হোমারের ইলিয়াড, ওডিসি, দান্তে রচনাবলির বাংলা অনুবাদ। আছে পারস্যের কবি ফেরদৌস রচিত শাহনামা। আছে পুরাণ, রবীন্দ্র ও নজরুল রচনাবলিসহ মূল্যবান অনেক বই।
বহু বছর ধরে লাইব্রেরিতে নতুন বই সংযোজন না করায় পুরোনো বইগুলো পাঠককে আকৃষ্ট করতে পারছে না। দৈনিক পত্রিকা না রাখায় ঐতিহ্যবাহী এ গ্রন্থাগার থেকে অনেক আগেই মুখ ফিরিয়ে নেন পাঠক। এমনকি বিচ্ছিন্ন রয়েছে এর বিদ্যুৎ সংযোগ। জানালা ভেঙে ভবনটি জরাজীর্ণ হয়ে পড়েছে।
গোপালগঞ্জ সরকারি বঙ্গবন্ধু কলেজের অর্থনীতি বিভাগের প্রধান অধ্যাপক হাবিবুর রহমান বলেন, দেশভাগের পর পাঠাগারটির কার্যক্রম ঝিমিয়ে পড়ে। লাইব্রেরিয়ান প্রতাপ চন্দ্র বিশ্বাসও ভারতে চলে যান। ১৯৫৬ সালে পাঠাগারের দায়িত্ব বুঝে নেন শিক্ষক মঈন উদ্দিন। ১৯৫৮ সালে মুসলিম লীগ নেতারা করোনেশন পাবলিক লাইব্রেরির নাম পরিবর্তন করে উর্দু কবি আল্লামা ইকবালের নামে নামকরণের উদ্যোগ নিলে মঈন উদ্দিন স্থানীয় ছাত্র-জনতাকে ঐক্যবদ্ধ করেন। আন্দোলনের মুখে কাজী নজরুলের নামে লাইব্রেরিটির নামকরণ করা হয়। এখন এটি বন্ধ। জ্ঞানপিপাসুদের কাছে যা খুবই কষ্টের।
পাঠক সজীব বিশ্বাস জানান, প্রায়ই অবসর সময়ে জ্ঞানচর্চার জন্য এই পাঠাগারে আসতেন। এখন নতুন বইয়ের সংগ্রহ নেই। তাই আর এখানে আসা হয় না।
পাঠক রেজওয়ান আহমেদ চৌধুরী বলেন, এ গ্রন্থাগারে আধুনিকতার ছোঁয়া লাগেনি। লাইব্রেরিযান নিয়োগ করে প্রতিদিন এটি খোলার ব্যবস্থা করতে হবে। সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা পেলে এখানে আবার প্রাণচাঞ্চল্য ফিরে আসবে।
শিক্ষার্থী সোমা হালদার বলেন, জেলার সবচেয়ে সমৃদ্ধ লাইব্রেরি বন্ধ থাকায় পড়াশোনার পাশাপাশি জ্ঞানচর্চায় বাধার সৃষ্টি হচ্ছে। তিনি দ্রুত এটি খুলে দেওয়ার দাবি জানান।
উদীচী গোপালগঞ্জ জেলা সংসদের সভাপতি নাজমুল ইসলাম বলেন, লাইব্রেরিটি এক সময় গোপালগঞ্জবাসীর জ্ঞান ও সাহিত্যচর্চার কেন্দ্রবিন্দু ছিল। এখানে দুষ্প্রাপ্য অনেক বই রয়েছে। শতবর্ষী এ আলোকবর্তিকাকে সচল করতে জেলা প্রশাসককে উদ্যোগ নিতে হবে।
জেলা প্রশাসক মুহম্মদ কামরুজ্জামান জানান, তারা আর্কাইভস ও গ্রন্থাগার অধিদপ্তরের সঙ্গে যোগাযোগ করেছেন। এ লাইব্রেরিতে বিদ্যুৎ সংযোগ ও জানালাসহ প্রয়োজনীয় সংস্কারের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া এখানে একজন লাইব্রেরিয়ান ও কর্মচারী দেওয়া হবে। লাইব্রেরিটি প্রতিদিন বিকেল ৩টা থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত খোলার সিদ্ধান্ত হয়েছে।
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: গ রন থ গ র গ প লগঞ জ বইয় র
এছাড়াও পড়ুন:
ঋণ নেওয়ার আগে যে ১০টি বিষয় অবশ্যই জানা উচিত
নানা কারণে আপনার ঋণ নেওয়ার প্রয়োজন হতে পারে। অনেক সময় মানুষ ব্যক্তিগত ঋণ, গৃহঋণ নেয়। আবার গাড়ি কেনার জন্যও অনেকে ঋণ নেন। ক্রেডিট কার্ডের মাধ্যমেও ঋণ নেওয়া হয়।
কিন্তু অনেকেই ঋণের সঙ্গে সম্পৃক্ত কিছু মৌলিক শব্দ সম্পর্কে জানেন না। ব্যাংকের কর্মকর্তারা যখন এসব শব্দ বলেন, তখন অনেক কিছুই বোঝেন না ঋণ নিতে ইচ্ছুক গ্রাহকেরা। ফলে নিয়মকানুন না জেনেই ঋণ নেন। এতে নানা অপ্রত্যাশিত ঝামেলা তৈরি হয়। তাই ঋণ নেওয়ার আগে কিছু গুরুত্বপূর্ণ বিষয় বোঝা খুব দরকার।
১. আসল টাকা (প্রিন্সিপাল)
আপনি যে পরিমাণ টাকা ঋণ নিচ্ছেন, সেটিই আসল। এর ওপরই সুদ ধরা হয়। কিস্তি পরিশোধের সঙ্গে আসল ধীরে ধীরে কমতে থাকে।
২. সুদের হার (ইন্টারেস্ট রেট)
ঋণ নেওয়ার আগে সবচেয়ে ভাবতে হয় সুদের হার নিয়ে। সুদের হার বেশি হলে খরচ বেড়ে যায়। ঋণের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো সুদের হার। এটি স্থিরও হতে পারে, আবার বাজারদরের ওপর নির্ভর করে বাড়তে-কমতেও পারে।
৩. মাসিক কিস্তি (ইএমআই)
ঋণের সুদ ও আসল পরিশোধ বাবদ প্রতি মাসে যে নির্দিষ্ট টাকা আপনাকে দিতে হবে। সেটি হলো ইএমআই বা ঋণের কিস্তি।
৪. ঋণের মেয়াদ
কত বছরের মধ্যে ঋণ শোধ করতে হবে, সেটিই হলো ঋণের মেয়াদ। মেয়াদ বেশি হলে কিস্তি ছোট হয়। কিন্তু মোট সুদের টাকা বেড়ে যায়। ছোট মেয়াদে কিস্তি বড় হয়। কিন্তু মোট সুদের টাকা কমে।
৫. অ্যানুয়াল পারসেন্টেজ রেট (এপিআর)
শুধু সুদ ও আসল নয়, বরং ঋণের সব খরচ (যেমন ফি, চার্জ) মিলিয়ে আসল ব্যয় কত হবে, তার হিসাব হলো অ্যানুয়াল পারসেন্টেজ রেট (এপিআর)। এটিই প্রকৃত খরচ বোঝায়।
৬. আগাম পরিশোধ (প্রিপেমেন্ট)
ঋণের বোঝা কমাতে অনেকে ঋণের সুদ ও আসলের টাকা আগেই শোধ করে দিতে চান। এতে সুদের খরচ কমে যায়।
৭. প্রসেসিং ফি
আপনি ঋণের জন্য কোনো ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠানে আবেদন করলেন। কিন্তু ঋণ আবেদন মঞ্জুর থেকে শুরু করে ছাড় কার্যক্রম পরিচালনার জন্য কিছু মাশুল দিতে হয়। এটিই প্রসেসিং ফি। এটি কখনো ঋণের টাকা থেকে কেটে নেওয়া হয়, আবার কখনো আলাদা দিতে হয়।
৮. স্থগিতকাল (মোরাটোরিয়াম)
বিশেষ পরিস্থিতিতে কিছুদিনের জন্য কিস্তি বন্ধ রাখার সুযোগকেই বলে স্থগিতকাল। তবে এই সময়েও সুদ জমতে থাকে। অনেক সময় ঋণ পরিশোধের জন্য বিশেষ কিস্তি ভাগও করে দেওয়া হয়।
৯. জামানত (কোলেটারাল)
ঋণের নিরাপত্তা হিসেবে আপনার সম্পদ (যেমন বাড়ি, সোনা, জমি) ব্যাংকে বন্ধক রাখা হয়। কিস্তি না দিলে ব্যাংক ওই সম্পদ বিক্রি করে টাকা তুলে নেয়।
১০. লোন-টু-ভ্যালু রেশিও
আপনি যত টাকা ঋণ নিচ্ছেন আর জামানতের মূল্য কত—এই অনুপাতকে বলে লোন টু ভ্যালু রেশিও (এলটিভি)। এর অনুপাত যত কম হয়, ব্যাংকের ঝুঁকি তত কম।