Samakal:
2025-09-18@06:20:28 GMT

শতবর্ষী পাঠাগারে তালা

Published: 31st, May 2025 GMT

শতবর্ষী পাঠাগারে তালা

পাঠাগার জ্ঞানের আলো ছড়ায়। বইয়ের সঙ্গে পাঠকের মেলবন্ধন সৃষ্টি করে। এ কাজটি করে আসছিল গোপালগঞ্জের শতবর্ষী আলোকবর্তিকা ‘নজরুল পাবলিক লাইব্রেরি’। কিন্তু এটি দীর্ঘদিন বন্ধ রয়েছে। ফলে বই-পাঠক সম্পর্ক ছিন্ন হয়ে গেছে। ইতিহাস ও গৌরব হারাতে বসেছে গ্রন্থাগারটি।
গোপালগঞ্জ জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের পাশে অবস্থিত এ লাইব্রেরি প্রাঙ্গণে রয়েছে কদমগাছসহ বিভিন্ন গাছের সমাহার। ছায়ার ঘেরা লাইব্রেরির দরজায় ঝুলছে কয়েকটি তালা। দীর্ঘ তিন বছর ধরে এটি রয়েছে বন্ধ। ছয় বছর ধরে নেই লাইব্রেরিয়ান।
১৯২০ সালে গ্রন্থাগারটি প্রতিষ্ঠা করা হয়। দেশভাগের আগে ঢাকা ও কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকরাও বিভিন্ন রেফারেন্সের বইয়ের জন্য এখানে আসতেন। কালের সাক্ষী এই লাইব্রেরিটি সংস্কার করে আধুনিকায়নের দাবি জানিয়েছেন পাঠকরা।
লাইব্রেরিতে এখন দেশি-বিদেশি প্রায় ১৪ হাজার বই রয়েছে। এখানে ধ্রুপদি সাহিত্যের বইয়ের মধ্যে রয়েছে– হোমারের ইলিয়াড, ওডিসি, দান্তে রচনাবলির বাংলা অনুবাদ। আছে পারস্যের কবি ফেরদৌস রচিত শাহনামা। আছে পুরাণ, রবীন্দ্র ও নজরুল রচনাবলিসহ মূল্যবান অনেক বই।
বহু বছর ধরে লাইব্রেরিতে নতুন বই সংযোজন না করায় পুরোনো বইগুলো পাঠককে আকৃষ্ট করতে পারছে না। দৈনিক পত্রিকা না রাখায় ঐতিহ্যবাহী এ গ্রন্থাগার থেকে অনেক আগেই মুখ ফিরিয়ে নেন পাঠক। এমনকি বিচ্ছিন্ন রয়েছে এর বিদ্যুৎ সংযোগ। জানালা ভেঙে ভবনটি জরাজীর্ণ হয়ে পড়েছে।
গোপালগঞ্জ সরকারি বঙ্গবন্ধু কলেজের অর্থনীতি বিভাগের প্রধান অধ্যাপক হাবিবুর রহমান বলেন, দেশভাগের পর পাঠাগারটির কার্যক্রম ঝিমিয়ে পড়ে। লাইব্রেরিয়ান প্রতাপ চন্দ্র বিশ্বাসও ভারতে চলে যান। ১৯৫৬ সালে পাঠাগারের দায়িত্ব বুঝে নেন শিক্ষক মঈন উদ্দিন। ১৯৫৮ সালে মুসলিম লীগ নেতারা করোনেশন পাবলিক লাইব্রেরির নাম পরিবর্তন করে উর্দু কবি আল্লামা ইকবালের নামে নামকরণের উদ্যোগ নিলে মঈন উদ্দিন স্থানীয় ছাত্র-জনতাকে ঐক্যবদ্ধ করেন। আন্দোলনের মুখে কাজী নজরুলের নামে লাইব্রেরিটির নামকরণ করা হয়। এখন এটি বন্ধ। জ্ঞানপিপাসুদের কাছে যা খুবই কষ্টের।
পাঠক সজীব বিশ্বাস জানান, প্রায়ই অবসর সময়ে জ্ঞানচর্চার জন্য এই পাঠাগারে আসতেন। এখন নতুন বইয়ের সংগ্রহ নেই। তাই আর এখানে আসা হয় না।
পাঠক রেজওয়ান আহমেদ চৌধুরী বলেন, এ গ্রন্থাগারে আধুনিকতার ছোঁয়া লাগেনি। লাইব্রেরিযান নিয়োগ করে প্রতিদিন এটি খোলার ব্যবস্থা করতে হবে। সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা পেলে এখানে আবার প্রাণচাঞ্চল্য ফিরে আসবে।
শিক্ষার্থী সোমা হালদার বলেন, জেলার সবচেয়ে সমৃদ্ধ লাইব্রেরি বন্ধ থাকায় পড়াশোনার পাশাপাশি জ্ঞানচর্চায় বাধার সৃষ্টি হচ্ছে। তিনি দ্রুত এটি খুলে দেওয়ার দাবি জানান।
উদীচী গোপালগঞ্জ জেলা সংসদের সভাপতি নাজমুল ইসলাম বলেন, লাইব্রেরিটি এক সময় গোপালগঞ্জবাসীর জ্ঞান ও সাহিত্যচর্চার কেন্দ্রবিন্দু ছিল। এখানে দুষ্প্রাপ্য অনেক বই রয়েছে। শতবর্ষী এ আলোকবর্তিকাকে সচল করতে জেলা প্রশাসককে উদ্যোগ নিতে হবে।
জেলা প্রশাসক মুহম্মদ কামরুজ্জামান জানান, তারা আর্কাইভস ও গ্রন্থাগার অধিদপ্তরের সঙ্গে যোগাযোগ করেছেন। এ লাইব্রেরিতে বিদ্যুৎ সংযোগ ও জানালাসহ প্রয়োজনীয় সংস্কারের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া এখানে একজন লাইব্রেরিয়ান ও কর্মচারী দেওয়া হবে। লাইব্রেরিটি প্রতিদিন বিকেল ৩টা থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত খোলার সিদ্ধান্ত হয়েছে।

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: গ রন থ গ র গ প লগঞ জ বইয় র

এছাড়াও পড়ুন:

ট্রাম্পকে ইউক্রেনের পাশে থাকার আহ্বান রাজা চার্লসের

বিশ্বের সবচেয়ে জটিল কিছু সংকট সমাধানে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের ব্যক্তিগত প্রতিশ্রুতির প্রশংসা করেছেন ব্রিটিশ রাজা তৃতীয় চার্লস। একই সঙ্গে তিনি ‘স্বৈরাচারের (রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন) বিরুদ্ধে ইউক্রেনের প্রতি মার্কিন সমর্থন’ দেওয়ার জন্য ট্রাম্পের প্রতি আহ্বান জানান। খবর বিবিসির।

বুধবার (১৭ সেপ্টেম্বর) মার্কিন প্রেসিডেন্টের সফরের প্রথম দিনে উইন্ডসর ক্যাসলে আয়োজিত রাষ্ট্রীয় নৈশভোজে দেওয়া বক্তৃতায় এ কথা বলেন রাজা।

আরো পড়ুন:

যুক্তরাষ্ট্রে বন্দুক হামলায় ৩ পুলিশ নিহত

সম্পদ বৃদ্ধি নিয়ে প্রশ্ন করায় সাংবাদিকের ওপর ক্ষেপলেন ট্রাম্প

জবাবে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প যুক্তরাজ্য ও যুক্তরাষ্ট্রের বিশেষ সম্পর্কের প্রশংসা করে বলেন, এ সম্পর্ককে ‘বিশেষ’ শব্দ দিয়ে যথাযথভাবে বোঝানো যায় না।

উইন্ডসর ক্যাসলে ১৬০ জন অতিথির জন্য আয়োজিত জাঁকজমকপূর্ণ এই নৈশভোজে রাজার বক্তৃতায় দুই দেশের গভীর বন্ধন এবং সাংস্কৃতিক, বাণিজ্যিক ও সামরিক সম্পর্ক ধরে রাখার প্রয়োজনীয়তার ওপর জোর দেওয়া হয়।

ট্রাম্পের রাষ্ট্রীয় এ সফর চলবে আজ বৃহস্পতিবারও। এদিন নানা অনুষ্ঠানে মার্কিন ফার্স্ট লেডি মেলানিয়া ট্রাম্পের সঙ্গে অংশ নেবেন ব্রিটিশ রানি ক্যামিলা ও প্রিন্সেস অব ওয়েলস।

রাজকীয় অ্যাপায়ন শেষে ট্রাম্পের আজকের কর্মসূচি রাজনৈতিক আলোচনায় রূপ নেবে। আজ বৃহস্পতিবার ট্রাম্প ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী কিয়ার স্টারমারের সঙ্গে তার সরকারি বাড়ি চেকার্সে বৈঠক করবেন। বৈঠক শেষে যৌথ সংবাদ সম্মেলনও হবে। 

বুধবারের (১৭ সেপ্টেম্বর) রাষ্ট্রীয় ভোজ ছিল আড়ম্বর ও রাজনীতির সমন্বয়ে সাজানো এক বিশেষ আয়োজন। ভোজে রাজা, রানি ও রাজপরিবারের জ্যেষ্ঠ সদস্যদের উপস্থিতিতে ট্রাম্পকে স্বাগত জানানো হয় উইন্ডসরে।

উইন্ডসর ক্যাসলের মনোরম প্রাঙ্গণে পৌঁছে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প ও মেলানিয়া রাজকীয় ঘোড়ার গাড়ি থেকে নামেন। সেখানে সুশৃঙ্খলভাবে সাজানো সেনাদলের অভিবাদন গ্রহণ করেন তারা। 

যুক্তরাজ্যের কর্মকর্তাদের মতে, বিদেশি কোনো রাষ্ট্রপ্রধানকে স্বাগত জানানোর জন্য দেশটিতে আয়োজিত স্মরণকালের সবচেয়ে বড় সামরিক সংবর্ধনা ছিল এটি।

যুক্তরাষ্ট্রের অতিথিকে স্বাগত জানাতে প্রিন্স ও প্রিন্সেস অব ওয়েলসও উপস্থিত ছিলেন। তারা প্রেসিডেন্ট ও মেলানিয়ার সঙ্গে উষ্ণ ও বন্ধুত্বপূর্ণ এক বৈঠকও করেন।

ভোজসভায় বক্তৃতা করতে গিয়ে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প প্রিন্স উইলিয়ামের প্রশংসা করেন। তিনি বলেন, ভবিষ্যতে তিনি হবেন ‘অসাধারণ সফল নেতা’। প্রিন্সেস অব ওয়েলস ক্যাথরিনকে তিনি আখ্যা দেন ‘উজ্জ্বল, সুস্বাস্থ্যের অধিকারী ও সুন্দরী’ হিসেবে।

ট্রাম্পের ঐতিহাসিক এ দ্বিতীয় রাষ্ট্রীয় সফর প্রমাণ করেছে রাজা ও তাঁর মধ্যে সম্পর্ক বেশ ভালো। সফরে আনুষ্ঠানিক কুচকাওয়াজে তাঁদের মধ্যে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্কের মুহূর্তও দেখা গেছে।

এরপর রাজপ্রাসাদে ট্রাম্প দম্পতিকে স্বাগত জানান রাজা তৃতীয় চার্লস ও রানি ক্যামিলা। ট্রাম্প যখন রাজার সঙ্গে শুভেচ্ছা বিনিময় করছিলেন, তখন প্রথম বিশ্বযুদ্ধের সময়ের ছয়টি কামান থেকে একযোগে ৪১ বার তোপধ্বনি করা হয়। একই সময়ে টাওয়ার অব লন্ডন থেকে একই রকম তোপধ্বনি হয়।

ট্রাম্প দম্পতিকে স্বাগত জানানোর এ আয়োজনে অংশ নেন ব্রিটিশ সামরিক বাহিনীর ১ হাজার ৩০০ সদস্য। ছিল শতাধিক ঘোড়া।

যুক্তরাজ্যের কর্মকর্তাদের মতে, বিদেশি কোনো রাষ্ট্রপ্রধানকে স্বাগত জানানোর জন্য দেশটিতে আয়োজিত স্মরণকালের সবচেয়ে বড় সামরিক সংবর্ধনা ছিল এটি।

বিবিসি বলছে, রাজকীয় অনুষ্ঠানের পাশাপাশি, বাণিজ্য ও আন্তর্জাতিক সহযোগিতার ক্ষেত্রে মার্কিন প্রেসিডেন্টকে প্রভাবিত করার প্রচেষ্টা থাকবে।

যুক্তরাজ্যে রাষ্ট্রীয় সফর হলো একধরনের নরম শক্তির কূটনীতি, যা গুরুত্বপূর্ণ আন্তর্জাতিক অংশীদারদের সঙ্গে সম্পর্ক গড়ে তোলার জন্য রাজকীয় আকর্ষণ ব্যবহার করে, যার মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রের চেয়ে গুরুত্বপূর্ণ আর কেউ নেই।

যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী স্টারমার যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে আর্থিক সেবা, প্রযুক্তি এবং জ্বালানি খাতে ঘনিষ্ঠ সমন্বয় গড়ে তুলে যুক্তরাজ্যকে আমেরিকান বিনিয়োগের প্রধান গন্তব্য হিসেবে উপস্থাপন করতে চেষ্টা করছেন। এর মাধ্যমে তিনি নিজ দেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি বৃদ্ধি করতে চাইছেন।

মার্কিন প্রেসিডেন্টের সফর শুরু হওয়ার সাথে সাথে, মার্কিন প্রযুক্তি সংস্থাগুলোর সঙ্গে যুক্তরাজ্যে ৩১ বিলিয়ন পাউন্ড বিনিয়োগের একটি বড় প্রযুক্তি চুক্তি ঘোষণা করা হয়েছে। যার মধ্যে মাইক্রোসফট থেকে ২২ বিলিয়ন পাউন্ড বিনিয়োগও অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। এতে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা, কোয়ান্টাম কম্পিউটিং এবং পারমাণবিক শক্তিতে সহযোগিতা দেখা যাবে। 

ট্রাম্পের সফরের আগে গুগলের মূল প্রতিষ্ঠান অ্যালফাবেট যুক্তরাজ্যের কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা গবেষণায় ৫ বিলিয়ন পাউন্ড বিনিয়োগের ঘোষণা দিয়েছে।

আজ বৃহস্পতিবার ট্রাম্প-স্টারমারের বৈঠক থেকে কয়েক বিলিয়ন ডলারের ব্যবসায়িক চুক্তির ঘোষণাও আসবে বলে আশা করা হচ্ছে।

ঢাকা/ফিরোজ

সম্পর্কিত নিবন্ধ