Samakal:
2025-06-02@07:38:10 GMT

শতবর্ষী পাঠাগারে তালা

Published: 31st, May 2025 GMT

শতবর্ষী পাঠাগারে তালা

পাঠাগার জ্ঞানের আলো ছড়ায়। বইয়ের সঙ্গে পাঠকের মেলবন্ধন সৃষ্টি করে। এ কাজটি করে আসছিল গোপালগঞ্জের শতবর্ষী আলোকবর্তিকা ‘নজরুল পাবলিক লাইব্রেরি’। কিন্তু এটি দীর্ঘদিন বন্ধ রয়েছে। ফলে বই-পাঠক সম্পর্ক ছিন্ন হয়ে গেছে। ইতিহাস ও গৌরব হারাতে বসেছে গ্রন্থাগারটি।
গোপালগঞ্জ জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের পাশে অবস্থিত এ লাইব্রেরি প্রাঙ্গণে রয়েছে কদমগাছসহ বিভিন্ন গাছের সমাহার। ছায়ার ঘেরা লাইব্রেরির দরজায় ঝুলছে কয়েকটি তালা। দীর্ঘ তিন বছর ধরে এটি রয়েছে বন্ধ। ছয় বছর ধরে নেই লাইব্রেরিয়ান।
১৯২০ সালে গ্রন্থাগারটি প্রতিষ্ঠা করা হয়। দেশভাগের আগে ঢাকা ও কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকরাও বিভিন্ন রেফারেন্সের বইয়ের জন্য এখানে আসতেন। কালের সাক্ষী এই লাইব্রেরিটি সংস্কার করে আধুনিকায়নের দাবি জানিয়েছেন পাঠকরা।
লাইব্রেরিতে এখন দেশি-বিদেশি প্রায় ১৪ হাজার বই রয়েছে। এখানে ধ্রুপদি সাহিত্যের বইয়ের মধ্যে রয়েছে– হোমারের ইলিয়াড, ওডিসি, দান্তে রচনাবলির বাংলা অনুবাদ। আছে পারস্যের কবি ফেরদৌস রচিত শাহনামা। আছে পুরাণ, রবীন্দ্র ও নজরুল রচনাবলিসহ মূল্যবান অনেক বই।
বহু বছর ধরে লাইব্রেরিতে নতুন বই সংযোজন না করায় পুরোনো বইগুলো পাঠককে আকৃষ্ট করতে পারছে না। দৈনিক পত্রিকা না রাখায় ঐতিহ্যবাহী এ গ্রন্থাগার থেকে অনেক আগেই মুখ ফিরিয়ে নেন পাঠক। এমনকি বিচ্ছিন্ন রয়েছে এর বিদ্যুৎ সংযোগ। জানালা ভেঙে ভবনটি জরাজীর্ণ হয়ে পড়েছে।
গোপালগঞ্জ সরকারি বঙ্গবন্ধু কলেজের অর্থনীতি বিভাগের প্রধান অধ্যাপক হাবিবুর রহমান বলেন, দেশভাগের পর পাঠাগারটির কার্যক্রম ঝিমিয়ে পড়ে। লাইব্রেরিয়ান প্রতাপ চন্দ্র বিশ্বাসও ভারতে চলে যান। ১৯৫৬ সালে পাঠাগারের দায়িত্ব বুঝে নেন শিক্ষক মঈন উদ্দিন। ১৯৫৮ সালে মুসলিম লীগ নেতারা করোনেশন পাবলিক লাইব্রেরির নাম পরিবর্তন করে উর্দু কবি আল্লামা ইকবালের নামে নামকরণের উদ্যোগ নিলে মঈন উদ্দিন স্থানীয় ছাত্র-জনতাকে ঐক্যবদ্ধ করেন। আন্দোলনের মুখে কাজী নজরুলের নামে লাইব্রেরিটির নামকরণ করা হয়। এখন এটি বন্ধ। জ্ঞানপিপাসুদের কাছে যা খুবই কষ্টের।
পাঠক সজীব বিশ্বাস জানান, প্রায়ই অবসর সময়ে জ্ঞানচর্চার জন্য এই পাঠাগারে আসতেন। এখন নতুন বইয়ের সংগ্রহ নেই। তাই আর এখানে আসা হয় না।
পাঠক রেজওয়ান আহমেদ চৌধুরী বলেন, এ গ্রন্থাগারে আধুনিকতার ছোঁয়া লাগেনি। লাইব্রেরিযান নিয়োগ করে প্রতিদিন এটি খোলার ব্যবস্থা করতে হবে। সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা পেলে এখানে আবার প্রাণচাঞ্চল্য ফিরে আসবে।
শিক্ষার্থী সোমা হালদার বলেন, জেলার সবচেয়ে সমৃদ্ধ লাইব্রেরি বন্ধ থাকায় পড়াশোনার পাশাপাশি জ্ঞানচর্চায় বাধার সৃষ্টি হচ্ছে। তিনি দ্রুত এটি খুলে দেওয়ার দাবি জানান।
উদীচী গোপালগঞ্জ জেলা সংসদের সভাপতি নাজমুল ইসলাম বলেন, লাইব্রেরিটি এক সময় গোপালগঞ্জবাসীর জ্ঞান ও সাহিত্যচর্চার কেন্দ্রবিন্দু ছিল। এখানে দুষ্প্রাপ্য অনেক বই রয়েছে। শতবর্ষী এ আলোকবর্তিকাকে সচল করতে জেলা প্রশাসককে উদ্যোগ নিতে হবে।
জেলা প্রশাসক মুহম্মদ কামরুজ্জামান জানান, তারা আর্কাইভস ও গ্রন্থাগার অধিদপ্তরের সঙ্গে যোগাযোগ করেছেন। এ লাইব্রেরিতে বিদ্যুৎ সংযোগ ও জানালাসহ প্রয়োজনীয় সংস্কারের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া এখানে একজন লাইব্রেরিয়ান ও কর্মচারী দেওয়া হবে। লাইব্রেরিটি প্রতিদিন বিকেল ৩টা থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত খোলার সিদ্ধান্ত হয়েছে।

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: গ রন থ গ র গ প লগঞ জ বইয় র

এছাড়াও পড়ুন:

শতবর্ষী পাঠাগারে তালা

পাঠাগার জ্ঞানের আলো ছড়ায়। বইয়ের সঙ্গে পাঠকের মেলবন্ধন সৃষ্টি করে। এ কাজটি করে আসছিল গোপালগঞ্জের শতবর্ষী আলোকবর্তিকা ‘নজরুল পাবলিক লাইব্রেরি’। কিন্তু এটি দীর্ঘদিন বন্ধ রয়েছে। ফলে বই-পাঠক সম্পর্ক ছিন্ন হয়ে গেছে। ইতিহাস ও গৌরব হারাতে বসেছে গ্রন্থাগারটি।
গোপালগঞ্জ জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের পাশে অবস্থিত এ লাইব্রেরি প্রাঙ্গণে রয়েছে কদমগাছসহ বিভিন্ন গাছের সমাহার। ছায়ার ঘেরা লাইব্রেরির দরজায় ঝুলছে কয়েকটি তালা। দীর্ঘ তিন বছর ধরে এটি রয়েছে বন্ধ। ছয় বছর ধরে নেই লাইব্রেরিয়ান।
১৯২০ সালে গ্রন্থাগারটি প্রতিষ্ঠা করা হয়। দেশভাগের আগে ঢাকা ও কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকরাও বিভিন্ন রেফারেন্সের বইয়ের জন্য এখানে আসতেন। কালের সাক্ষী এই লাইব্রেরিটি সংস্কার করে আধুনিকায়নের দাবি জানিয়েছেন পাঠকরা।
লাইব্রেরিতে এখন দেশি-বিদেশি প্রায় ১৪ হাজার বই রয়েছে। এখানে ধ্রুপদি সাহিত্যের বইয়ের মধ্যে রয়েছে– হোমারের ইলিয়াড, ওডিসি, দান্তে রচনাবলির বাংলা অনুবাদ। আছে পারস্যের কবি ফেরদৌস রচিত শাহনামা। আছে পুরাণ, রবীন্দ্র ও নজরুল রচনাবলিসহ মূল্যবান অনেক বই।
বহু বছর ধরে লাইব্রেরিতে নতুন বই সংযোজন না করায় পুরোনো বইগুলো পাঠককে আকৃষ্ট করতে পারছে না। দৈনিক পত্রিকা না রাখায় ঐতিহ্যবাহী এ গ্রন্থাগার থেকে অনেক আগেই মুখ ফিরিয়ে নেন পাঠক। এমনকি বিচ্ছিন্ন রয়েছে এর বিদ্যুৎ সংযোগ। জানালা ভেঙে ভবনটি জরাজীর্ণ হয়ে পড়েছে।
গোপালগঞ্জ সরকারি বঙ্গবন্ধু কলেজের অর্থনীতি বিভাগের প্রধান অধ্যাপক হাবিবুর রহমান বলেন, দেশভাগের পর পাঠাগারটির কার্যক্রম ঝিমিয়ে পড়ে। লাইব্রেরিয়ান প্রতাপ চন্দ্র বিশ্বাসও ভারতে চলে যান। ১৯৫৬ সালে পাঠাগারের দায়িত্ব বুঝে নেন শিক্ষক মঈন উদ্দিন। ১৯৫৮ সালে মুসলিম লীগ নেতারা করোনেশন পাবলিক লাইব্রেরির নাম পরিবর্তন করে উর্দু কবি আল্লামা ইকবালের নামে নামকরণের উদ্যোগ নিলে মঈন উদ্দিন স্থানীয় ছাত্র-জনতাকে ঐক্যবদ্ধ করেন। আন্দোলনের মুখে কাজী নজরুলের নামে লাইব্রেরিটির নামকরণ করা হয়। এখন এটি বন্ধ। জ্ঞানপিপাসুদের কাছে যা খুবই কষ্টের।
পাঠক সজীব বিশ্বাস জানান, প্রায়ই অবসর সময়ে জ্ঞানচর্চার জন্য এই পাঠাগারে আসতেন। এখন নতুন বইয়ের সংগ্রহ নেই। তাই আর এখানে আসা হয় না।
পাঠক রেজওয়ান আহমেদ চৌধুরী বলেন, এ গ্রন্থাগারে আধুনিকতার ছোঁয়া লাগেনি। লাইব্রেরিযান নিয়োগ করে প্রতিদিন এটি খোলার ব্যবস্থা করতে হবে। সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা পেলে এখানে আবার প্রাণচাঞ্চল্য ফিরে আসবে।
শিক্ষার্থী সোমা হালদার বলেন, জেলার সবচেয়ে সমৃদ্ধ লাইব্রেরি বন্ধ থাকায় পড়াশোনার পাশাপাশি জ্ঞানচর্চায় বাধার সৃষ্টি হচ্ছে। তিনি দ্রুত এটি খুলে দেওয়ার দাবি জানান।
উদীচী গোপালগঞ্জ জেলা সংসদের সভাপতি নাজমুল ইসলাম বলেন, লাইব্রেরিটি এক সময় গোপালগঞ্জবাসীর জ্ঞান ও সাহিত্যচর্চার কেন্দ্রবিন্দু ছিল। এখানে দুষ্প্রাপ্য অনেক বই রয়েছে। শতবর্ষী এ আলোকবর্তিকাকে সচল করতে জেলা প্রশাসককে উদ্যোগ নিতে হবে।
জেলা প্রশাসক মুহম্মদ কামরুজ্জামান জানান, তারা আর্কাইভস ও গ্রন্থাগার অধিদপ্তরের সঙ্গে যোগাযোগ করেছেন। এ লাইব্রেরিতে বিদ্যুৎ সংযোগ ও জানালাসহ প্রয়োজনীয় সংস্কারের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া এখানে একজন লাইব্রেরিয়ান ও কর্মচারী দেওয়া হবে। লাইব্রেরিটি প্রতিদিন বিকেল ৩টা থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত খোলার সিদ্ধান্ত হয়েছে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • মুরগির খোপেই দিন কাটে শতবর্ষী লালবড়ুর