ঢাকা উত্তরে গরুর ৮ হাটের ইজারাদারই বিএনপি নেতা
Published: 1st, June 2025 GMT
পবিত্র ঈদুল আজহায় ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনে (ডিএনসিসি) ৯টি অস্থায়ী পশুর হাটে ইজারাদার নিয়োগপ্রক্রিয়া চূড়ান্ত করা হয়েছে। এর মধ্যে আটটি হাটেরই ইজারাদার বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনের নেতারা। তবে উত্তর সিটির একমাত্র স্থায়ী গাবতলী পশুর হাটের ইজারাদার এখনো চূড়ান্ত না হলেও কোরবানি ঈদে এ হাটেও পশু বিক্রি হবে।
সব মিলিয়ে গাবতলী হাটসহ গতকাল শনিবার বিকেল পর্যন্ত ঢাকা উত্তরে মোট ১০টি হাট বসানোর সিদ্ধান্ত হয়েছে। এ ছাড়া আরও তিনটি হাটের দরপত্রের শিডিউল আজ রোববার দুপুরে খোলার কথা রয়েছে। সরকার নির্ধারিত দরের চেয়ে বেশি দর পাওয়া গেলে এ বছর কোরবানিতে ঢাকা উত্তর সিটিতে পশুর হাট বসবে মোট ১৩টি।
আগামী ৭ জুন দেশে পবিত্র ঈদুল আজহা উদ্যাপনের ঘোষণা দিয়েছে জাতীয় চাঁদ দেখা কমিটি। ঈদের চার দিন আগে থেকে রাজধানীতে পশুর হাট বসে। ঈদের দিনও কোরবানির পশুর কেনাবেচা হয়। সে হিসাবে কোরবানির হাট শুরু হওয়ার কথা আগামী ৩ জুন।
হাট পরিচালনায় আকতার হোসেন সার্বিকভাবে তাদের সঙ্গে রয়েছেনইজারাদার মজিবুল্লা ইজারাদার বিএনপির নেতারাপ্রথম দফায় ১০টি অস্থায়ী পশুর হাটের জন্য গত ২৯ এপ্রিল দরপত্র আহ্বান করেছিল ডিএনসিসি কর্তৃপক্ষ। এর মধ্যে আফতাবনগরে বাড্ডা ইস্টার্ন হাউজিং ও খিলক্ষেতে বনরূপা হাটের ইজারা উচ্চ আদালতের নির্দেশে বাতিল হয়েছে। প্রথম দফায় মাত্র তিনটি হাটের জন্য সরকার নির্ধারিত দরের চেয়ে বেশি দর পাওয়া গিয়েছিল। এর মধ্যে একটি হাটের সর্বোচ্চ দর দুই প্রতিষ্ঠানের সমান ছিল।
রাজধানীর খিলক্ষেত থানাধীন মস্তুল চেকপোস্ট–সংলগ্ন খালি জায়গায় হাটের ইজারা পেয়েছে সুরমি ইন্টারপ্রাইজ। প্রতিষ্ঠানটির মালিক মজিবুল্লা খন্দকার। তবে ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক আকতার হোসাইন নেপথ্যে থেকে হাট পরিচালনা করছেন বলে জানা গেছে।
এ বিষয়ে ইজারাদার মজিবুল্লা প্রথম আলোকে বলেন, ‘হাট পরিচালনায় আকতার হোসেন সার্বিকভাবে তাদের সঙ্গে রয়েছেন।’
তেজগাঁও পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট–সংলগ্ন খালি জায়গায় হাটের ইজারা পেয়েছে জায়ান এন্টারপ্রাইজ। প্রতিষ্ঠানটির মালিক মোহাম্মদ মনিরুজ্জামান।
প্রথম আলোকে মনিরুজ্জামান জানান, তিনি তেজগাঁও শিল্পাঞ্চল থানা যুবদলের সদস্যসচিব।
রাজধানীর খিলক্ষেত থানাধীন মস্তুল চেকপোস্ট–সংলগ্ন খালি জায়গায় হাটের ইজারা পেয়েছে সুরমি ইন্টারপ্রাইজ। প্রতিষ্ঠানটির মালিক মজিবুল্লা খন্দকার। তবে ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক আকতার হোসাইন নেপথ্যে থেকে হাট পরিচালনা করছেন বলে জানা গেছে।প্রথম দফায় সুরাহা না হওয়ায় ছয়টি হাটের জন্য দ্বিতীয় দফায় দরপত্র আহ্বান করা হয় গত ২৪ মে। আর দরপত্রের শিডিউল খোলা হয় গত ২৭ মে। এ দফায়ও কালশী বালুর মাঠের খালি জায়গার হাটে সরকারি নির্ধারিত দর পাওয়া যায়নি।
দ্বিতীয় দফায় ভাটারা সুতিভোলা খালসংলগ্ন খালি জায়গায় হাটের জন্য মাত্র একটি দরপত্র জমা পড়ে। এতে সরকারি দর দিয়েই এ হাটের ইজারা পেয়েছে তামিম এন্টারপ্রাইজ। প্রতিষ্ঠানটির মালিক ঢাকা উত্তর সিটির ৪০ নম্বর ওয়ার্ড বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক রফিকুল ইসলাম।
এদিকে উত্তরা দিয়াবাড়ি হাটের ইজারা পেয়েছেন এস এম খোকন। তিনি ঢাকা মহানগর উত্তর স্বেচ্ছাসেবক দলের সাংগঠনিক সম্পাদক। তাঁর প্রতিষ্ঠানের নাম এস এম ব্রাদার্স। তবে দরপত্রের শিডিউল খোলার দিন পে-অর্ডারের মূল কপির পরিবর্তে ফটোকপি দেওয়া নিয়ে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ দরদাতা চায়না বাংলা ট্রেডিংয়ের প্রতিনিধিরা নগর ভবনে হট্টগোল করেছিলেন।
মিরপুর-৬ নম্বর সেকশনে ইস্টার্ন হাউজিংয়ের খালি জায়গায় হাটের ইজারা পেয়েছে সোহাগ এন্টারপ্রাইজ। এর মালিক রতন মিয়া একজন ব্যবসায়ী। হাট ইজারায় রতন মিয়ার সঙ্গে স্থানীয় বিএনপি নেতারা সহযোগিতা করছেন ও যুক্ত বলে জানা গেছে।
ঢাকা উত্তর সিটির অন্যতম বৃহত্তর অস্থায়ী হাট উত্তরা দিয়াবাড়ি হাট। এ হাটটি ইজারা হয়েছে ১০ কোটি ১ লাখ টাকায়।মোহাম্মদপুর বছিলা হাটের ইজারা পেয়েছে আহাদ এন্টারপ্রাইজ। প্রতিষ্ঠানটির মালিক জামাল মৃধা। তিনি মোহাম্মদপুর থানা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক।
উত্তরা-১০ নম্বর সেক্টর রানাভোলা অ্যাভিনিউ–সংলগ্ন খালি জায়গার হাটের ইজারা পেয়েছে আতিকুর রহমান অ্যান্ড কোং। প্রতিষ্ঠানটির মালিক আতিকুর রহমান মহানগর উত্তর বিএনপি সাবেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক।
প্রথম দফায় দরপত্র আহ্বানের পর আদালতের নির্দেশে দুটি হাট বসানোর কার্যক্রম বাতিলের পর নতুন আরও দুটি হাটের জন্য দরপত্র আহ্বান করেছিল ঢাকা উত্তর সিটি। এর মধ্যে উত্তরখানের কাঁচকুড়া বাজার–সংলগ্ন রহমান নগর হাটের ইজারা পেয়েছে আরহাম এন্টারপ্রাইজ। এর মালিক আরশাদুল কবির।
আরশাদুল কবির প্রথম আলোকে জানান, হাট পরিচালনায় সার্বিক সহযোগিতায় আছেন তেজগাঁও কলেজ ছাত্রদলের সাবেক সহসভাপতি শাহ মিরাজ।
এদিকে খিলক্ষেত এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের নিচের খালি জায়গার হাট ইজারা পেয়েছে ক্ল্যাসিক ট্রেড ইন্টারন্যাশনাল। এর মালিক মো.
ঢাকা উত্তর সিটি কর্তৃপক্ষ যে নয়টি অস্থায়ী হাটের ইজারা চূড়ান্ত করেছে, এসব হাট থেকে সংস্থাটির ২৫ কোটি ২৪ লাখ ৮০ হাজার টাকা আয় হচ্ছে। ১ কোটি সাড়ে ৭ হাজার টাকা সরকারি দরের মস্তুল হাটের জন্য সর্বোচ্চ দর পাওয়া গেছে ১ কোটি ৫১ লাখ টাকা। তেজগাঁও পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট হাটের সরকারি দর ছিল ৬৪ লাখ ২ হাজার ৪০০ টাকা। এ হাটে দর পাওয়া গেছে ২ কোটি ১৭ লাখ টাকা।
ঢাকা উত্তর সিটির অন্যতম বৃহত্তর অস্থায়ী হাট উত্তরা দিয়াবাড়ির হাট। এ হাটের সরকারি দর ছিল ৮ কোটি ৯০ লাখ টাকা। দ্বিতীয় দফায় দরপত্র আহ্বানের পর এ হাটটি ইজারা হয়েছে ১০ কোটি ১ লাখ টাকায়।
প্রথম দফায় দুজন দরদাতার দর সমান হওয়ায় দ্বিতীয় দফায় দরপত্রে মিরপুর-৬ ইস্টার্ন হাউজিং হাটের জন্য ২ কোটি ৫৫ লাখ টাকা সর্বোচ্চ দর পাওয়া যায়। এ হাটের সরকারি দর ছিল ১ কোটি ৩৮ লাখ ১৬ হাজার ৭৮৬ টাকা।
মোহাম্মদপুর এলাকার বছিলা ৪০ ফুট সড়ক হাট ইজারা হয়েছে সরকারি দরের চাইতে ৫১ লাখ টাকা বেশি দরে ২ কোটি ৭১ লাখ টাকায়। উত্তরা-১০ নম্বর সেক্টর-সংলগ্ন রানাভোলা অ্যাভিনিউ খালি জায়গার হাট ইজারা হয়েছে ৯৫ লাখ ২১ হাজার টাকায়। যা সরকারি দরের চাইতে ১৪ লাখ ১ হাজার টাকা বেশি। তবে সরকার নির্ধারিত ৩ কোটি ৭০ লাখ টাকাতেই ইজারা হয়েছে ভাটারা সুতিভোলা খালের পাশে খালি জায়গার হাটের। দ্বিতীয় দফায় দরপত্র আহ্বানের পর এ হাটে মাত্র একটি দর জমা পড়ে।
প্রথম দফায় পরিকল্পনায় ঢাকা ১০টি অস্থায়ী হাটের মধ্যে দুটি বাতিল হলে নতুন আরও দুটি জায়গায় হাট বসাতে দরপত্র আহ্বান করেছিল ডিএনসিসি কর্তৃপক্ষ। এর একটি খিলক্ষেত এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের নিচের হাট। ৫০ লাখ টাকা মূল্যের এ হাট ইজারা হয়েছে ১ কোটি ৫১ লাখ টাকায়। আর ৮ লাখ ২০ হাজার টাকা মূল্যের কাঁচকুড়া বাজার-সংলগ্ন রহমাননগর হাটটি ১৩ লাখ ৬১ হাজার টাকায় ইজারা হয়েছে।
ঝুলে আছে গাবতলীঢাকা উত্তর সিটির একমাত্র স্থায়ী গাবতলীর পশুর হাট ইজারার জন্য সর্বোচ্চ ২৫ কোটি টাকা দর পাওয়া গেছে। দ্বিতীয় দফায় দরপত্র আহ্বানের পর গাবতলী হাটের জন্য সর্বোচ্চ এ দর দিয়েছে টিএইচ এন্টারপ্রাইজের মালিক আলী হায়দার। কোরবানির হাটসহ আগামী এক বছরের (আগামী বছরের ১৩ এপ্রিল বা বাংলা সনের চৈত্রের শেষ) জন্য এ হাটের ইজারাদার নিয়োগ করা হবে। তবে গতকাল পর্যন্ত হাটের বিষয়ে কোনো চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেয়নি ঢাকা উত্তর সিটি।
গাবতলী হাট ইজারার জন্য প্রথম দফায় দরপত্র আহ্বান করা হয়েছিল গত ৩ মার্চ। ১৯ মার্চ বিকেলে দরপত্র খুলে পাঁচটি দরপত্র পাওয়া গিয়েছিল। সরকার–নির্ধারিত মূল্য ১৪ কোটি ৬১ লাখ ৭৯ হাজার ৩০০ টাকার বিপরীতে তখন সর্বোচ্চ দর পাওয়া গিয়েছিল সোয়া ২২ কোটি টাকা। তবে দরপত্র প্রক্রিয়ায় ভুল থাকার কথা উল্লেখ করে তখন হাটটি ইজারা দেননি ঢাকা উত্তর সিটির প্রশাসক মোহাম্মদ এজাজ। তাঁর সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ওই হাটে এখন পর্যন্ত খাস বা সিটি করপোরেশনের নিজ উদ্যোগে অর্থ আদায় চলছে।
দ্বিতীয় দফায় এ হাটের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ দরদাতা প্রতিষ্ঠান এরফান ট্রেডার্স। তারা দর দিয়েছে ১৫ কোটি ৭১ লাখ টাকা। এর মালিক দারুস সালাম থানা বিএনপির আহ্বায়ক এস এ সিদ্দিক (সাজু)।
এ ছাড়া দুই দফায় দরপত্র আহ্বানের পরেও কাঙ্ক্ষিত দরদাতা পাওয়া যায়নি মিরপুরের কালশী বালুর মাঠের হাটটির জন্য। এ হাটের সরকারি দর ৮০ লাখ টাকা। কিন্তু সর্বোচ্চ দর পাওয়া গেছে ৩০ লাখ টাকা। তাই তৃতীয় দফায় এ হাটের জন্য দরপত্র আহ্বান করা হয়েছে। যা আজ খোলা হবে।
এদিকে ওই হাটের জন্য ৩০ লাখ টাকা দর দিয়েছেন মাসুদুর রহমান। তিনি মহাগর উত্তর স্বেচ্ছাসেবক দলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক। ইজারা চূড়ান্ত না হলেও মাসুদুর রহমানের লোকজনকে গত শুক্রবার হাট বসানোর প্রস্তুতি নিতে দেখা গেছে। বৃষ্টির কারণে কালশী বালুর মাঠে পানি জমে থাকায় পাশের আর্টিকেল কনডোমিনিয়াম সিটি-১ এলাকায় হাট বসানোর প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন মাসুদুরের লোকজন।
দুই দফায় দরপত্র আহ্বানের পরেও কাঙ্ক্ষিত দরদাতা পাওয়া যায়নি মিরপুরের কালশী বালুর মাঠের হাটটির জন্য।এ ছাড়া ঢাকা উত্তর সিটি এলাকায় আরও দুটি জায়গায় হাট বসানোর জন্য দরপত্র রোববার খোলা হবে। হাট দুটি হচ্ছে মেরুল বাড্ডা কাঁচাবাজার ও রামপুরার পূর্ব হাজীপাড়ার ইকরা মাদ্রাসার খালি জায়গা।
ঢাকা উত্তর সিটির সম্পত্তি কর্মকর্তা ফারজানা খানম মুঠোফোনে প্রথম আলোকে বলেন, দুটি হাটের সিদ্ধান্ত আগেই চূড়ান্ত হয়েছিল। শনিবার আরও সাতটি হাটের সিদ্ধান্ত হয়েছে। ইজারা যাঁরা পেয়েছেন, তাঁদের টাকা জমা দিতে চিঠিও দেওয়া হয়েছে। গাবতলী হাটের সর্বোচ্চ দরদাতা প্রতিষ্ঠানের কাগজপত্র যাচাইপ্রক্রিয়ার মধ্যে রয়েছে। রোববার আরও তিনটি হাটের দরপত্রের শিডিউল খোলা হবে।
উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: সরক র ন র ধ র ত হ ট র সরক র প রথম আল ক হ ট র জন য আকত র হ স ইজ র দ র হ ট ইজ র এর ম ল ক র জন য দ খ লক ষ ত র ব এনপ র রহম ন ব এনপ র দর র চ দর দ য় ক রব ন কর ছ ল গ বতল
এছাড়াও পড়ুন:
বৃষ্টিতে গলে পড়ছে ভবনের ইট
টোকা দিলে খসে পড়ছে পলেস্তারা। কাঁচা ইটের গাঁথুনি দেওয়ায় বৃষ্টির পানিতে গলে পড়ছে। দেয়ালের উচ্চতা ১০ ফুট দেওয়ার কথা; কিন্তু দেওয়া হয়েছে সাড়ে ৯ ফুট। অনিয়ম ধরিয়ে দিলেই অশালীন আচরণ করেন ঠিকাদার আবু জাফর তালুকদার।
অনিয়মের এ অভিযোগ করেন পটুয়াখালীর বাউফলের দাসপাড়ার মুক্তিযোদ্ধা শাহজাহান মৃধা ও পৌরশহরের শেরেবাংলা সড়কের মৃত আব্দুল মন্নান সিকদারের ছেলে মো. রিয়াজ সর্দার। বীর নিবাসের সুফলভোগীদের পক্ষে গত ২৪ মার্চ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বরাবর এ অভিযোগ করেন তারা।
অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে ইউএনও সরেজমিন নির্মাণাধীন বীর নিবাস পরিদর্শন করেন। এ সময় তিনি বেশ কিছু অনিয়মের প্রমাণ পান। এর মধ্যে রয়েছে প্রকল্পের অনুমোদিত প্রাক্কলন ব্যয়ে স্বচ্ছতার অভাব, নকশা পরিবর্তন ও নিম্নমানের সামগ্রী ব্যবহার। এরপর ২৩ এপ্রিল অনিয়মের বিষয়ে তিন কার্যদিবসের মধ্যে ঠিকাদারকে জবাব দিতে বলা হয়। ঠিকাদার নোটিশের জবাব না দিয়ে কাজ বন্ধ করে ফেলে রেখেছেন। এতে দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে মুক্তিযোদ্ধা পরিবারগুলোকে।
তালুকদার এন্টারপ্রাইজের স্বত্বাধিকারী আবু জাফর বলেন, দরপত্র অনুযায়ী কাজ করছি। এরপরও অভিযোগ করা হচ্ছে। নোটিশের জবাব কেন দেননি– প্রশ্ন করলে উত্তর না দিয়ে এড়িয়ে যান।
প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তার কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, মুক্তিযোদ্ধা মন্ত্রণালয়ের উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় অসচ্ছল বীর মুক্তিযোদ্ধা ও তাদের পরিবারের থাকার জন্য ২ কোটি ৭৭ লাখ ৫০ হাজার টাকা ব্যয়ে ১৫টি বাড়ি নির্মাণের উদ্যোগ নেওয়া হয়। কাজটি পায় মেসার্স তালুকদার এন্টারপ্রাইজ। কাজ শুরু হয় ২০২৫ সালের ২৫ মার্চ। মেয়াদ শেষ হওয়ার কথা ৩০ জুন। কাজের অগ্রগতি মাত্র ৪৫ ভাগ।
দরপত্র অনুযায়ী বীর নিবাসটি দৈর্ঘে ৩২ ফুট এবং প্রস্থে ২৪ ফুট হওয়ার কথা। ৪ ফুট ১২ ইঞ্চি ভিটির ওপর ১০ ফুট উঁচু করে ইটের দেয়ালের ওপর রড দিয়ে ছাদ ঢালাই দেওয়া হবে। প্রতিটি ঘরের জন্য ১৮ লাখ ৫০ হাজার টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়। বরাদ্দ পেয়ে ঠিকাদার আবু জাফর প্রথমেই পৌর শহরের মুক্তিযোদ্ধা মৃত আবদুল মান্নান সর্দার ও দাসপাড়া গ্রামের মুক্তিযোদ্ধা শাহজাহান মৃধার বাড়িতে কাজ শুরু করেন। এর আগে মালপত্র পরিবহন বাবদ ১০ হাজার টাকা করে নেন। টাকা দেওয়ার পর তাদের পুরোনো টিনের ঘর ভেঙে ইটের গাঁথুনি দেওয়া শুরু করেন। ছয় বস্তা বালুতে এক বস্তা সিমেন্ট দেন। ব্যবহার করেন দুই নম্বর ইট। বালুর মানও ছিল খুবই খারাপ। এভাবে কাজ করায় গাঁথুনি ঠিকমতো হয়নি। বৃষ্টি হলেও ইট গলে হলুদ পানি বের হচ্ছে। অনিয়মে বাধা দিলে ক্ষিপ্ত হয়ে মুক্তিযোদ্ধার সন্তান রিয়াজ সর্দারের সঙ্গে ঠিকাদার অশালীন আচরণ করেন। একপর্যায়ে কাজ বন্ধেরও হুমকি দেন।
মো. রিয়াজ জানান, কাজ শুরুর আগে ঠিকাদার ট্রলি ভাড়া বাবদ ১০ হাজার টাকা নেন। এরপরও নিম্নমানের সামগ্রী দিয়ে কাজ করছেন। আক্ষেপ করে তিনি বলেন, সরকার ঘর দিয়েছে। কিন্তু সেই ঘরে শান্তিতে থাকতে পারব কিনা জানি না। সব মালপত্র নিম্নমানের। জানানোর পর ঠিকাদার আজেবাজে কথা কয়। কাজ ফেলে চলে যাবে বলে হুমকি দেয়।
দাসপাড়ার মুক্তিযোদ্ধা শাহজাহান মৃধা বলেন, তাদের জন্য বরাদ্দ ওই ঘরের নির্মাণকাজে নিম্নমানের ইট, বালুসহ অন্যান্য নির্মাণসামগ্রী ব্যবহার করা হয়েছে। বুঝতে পেরে তিনবার ইট পরিবর্তন করেও ঠিক করতে পারিনি। দেয়াল থেকে ভিটির উচ্চতা কম। ঢালাইয়ের রড কত মিলি দেওয়া হয়েছে, ফোনে ঠিকাদারকে জিজ্ঞাসা করলে ক্ষিপ্ত হয়ে বলেন, ‘আপনার পাওয়ার দেহি বাড়ছে, বেশি ট্যাং ট্যাং করেন’– এই বলে ফোন কেটে দেন।
উপজেলা প্রকল্প কর্মকর্তা মস্তফা মৃদুল মুরাদ জানান, কাজের মান নিম্নমানের হওয়ায় তার কাজ বন্ধ করে দিয়েছি।
মুক্তিযোদ্ধা মন্ত্রণালয়ের উন্নয়ন প্রকল্পের পটুয়াখালী জেলার দায়িত্বে থাকা উপপ্রকৌশলী আবদুর রহমান বলেন, অভিযোগ পেয়ে কাজ বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আমিনুল ইসলাম বলেন, অভিযোগের সত্যতা পেয়ে ঠিকাদারকে নোটিশ দেওয়া হয়েছে।