ঘুমের মধ্যেই শেষ রিয়াজ রহিমার গোটা পরিবার
Published: 2nd, June 2025 GMT
কয়েক দিনের টানা বৃষ্টিতে সিলেটসহ উত্তর-পূর্ব ও দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলের জনজীবন চরম দুর্ভোগে পড়েছে। সিলেটের গোলাপগঞ্জে গভীর রাতে টিলাধসে একই পরিবারের চারজন মারা গেছেন। চট্টগ্রাম ও ময়মনসিংহে জলাবদ্ধতা, পাহাড়ধস ও সড়কধসের ঘটনায় থমকে গেছে স্বাভাবিক চলাচল। রাঙামাটি-চট্টগ্রাম সড়কসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে পাহাড়ধসের কারণে যানবাহন চলাচল বন্ধ হয়ে গেছে। নদনদীর পানি বিপৎসীমার ওপরে প্রবাহিত হওয়ায় নতুন নতুন এলাকা প্লাবিত হচ্ছে। আবহাওয়া অধিদপ্তরের পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, আজ সোমবার ময়মনসিংহ, বরিশাল, চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগের অনেক স্থানে বৃষ্টি হতে পারে।
শনিবার রাত ২টার দিকে সিলেটের গোলাপগঞ্জ উপজেলার লক্ষ্মণাবন্দ ইউনিয়নের বখতিয়ারঘাট এলাকায় টিলা ধসে পড়ায় এক পরিবারের চারজন নিহত হন। টিলার পাদদেশে একটি আনারস বাগানের পাশের ঘরে ঘুমিয়ে ছিলেন রিয়াজ উদ্দিন (৫৫), তাঁর স্ত্রী রহিমা বেগম, মেয়ে সামিয়া বেগম (১৪) ও ছেলে আলী আব্বাস (৯)। হঠাৎ বিকট শব্দে টিলা ধসে ঘরের ওপর পড়ে। মাটিচাপা পড়ে ঘুমন্ত অবস্থাতেই মারা যান তারা। ভোরে সেনাবাহিনী, পুলিশ ও ফায়ার সার্ভিস যৌথ অভিযানে তাদের মরদেহ উদ্ধার করে।
পাশের ঘরে থাকা রিয়াজের প্রথম স্ত্রী ও মেয়ে ভাগ্যক্রমে বেঁচে যান। স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান জানান, কয়েক দিন ধরে মাইকিং করে টিলাধসের আশঙ্কায় সতর্ক করা হচ্ছিল। নিহতদের পরিবারের আবেদনে ময়নাতদন্ত ছাড়াই দাফনের অনুমতি দেওয়া হয়েছে।
একই রাতে গোলাপগঞ্জ পৌর এলাকার আমুড়া-শিকাপুর সড়কে টিলাধসের কারণে যোগাযোগ বন্ধ হয়ে গেছে। বিভিন্ন স্থানে বসতঘর, দোকান ও রাস্তাঘাট ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
চট্টগ্রাম নগরীর বিভিন্ন এলাকায় কয়েক ঘণ্টার ভারী বৃষ্টিতে দেখা দিয়েছে ভয়াবহ জলাবদ্ধতা। ফইল্ল্যাতলী বাজারে মহেশখালের পাশের সড়কের প্রায় ১০০ মিটার ফেটে ও দেবে গেছে। কিছু এলাকায় স্থায়ীভাবে পানি জমে আছে। সেনাবাহিনীর টিম, সিটি করপোরেশন ও পরিচ্ছন্নতাকর্মীরা কাজ করলেও বৃষ্টি থামছে না বলে পরিস্থিতির উন্নতি হয়নি। চসিক কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, নালাগুলো বালুতে ভরাট হয়ে থাকায় পানি নামতে পারছে না। বৃষ্টির সঙ্গে জোয়ারের পানি মিশে পরিস্থিতি আরও খারাপ হয়েছে। গত ২৪ ঘণ্টায় ১৯৪ দশমিক ২ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। এর আগের দিন মৌসুমি বৃষ্টি হয় সর্বোচ্চ ২৩৮ মিলিমিটার।
রাঙামাটি জেলার কাপ্তাই, বড়ইছড়ি, সাপছড়িসহ ১৬টি স্থানে পাহাড়ধসে রাঙামাটি-চট্টগ্রাম সড়কে যান চলাচল বন্ধ হয়ে গেছে। নিম্নাঞ্চলে ঢুকে পড়া পানিতে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে দুই শতাধিক পরিবার। জেলা প্রশাসন জানিয়েছে, দুর্গতদের উদ্ধার ও আশ্রয় দিতে নেওয়া হয়েছে প্রস্তুতি। পাহাড়ের পাদদেশে বসবাসকারী ৬৭২ জনকে আশ্রয়কেন্দ্রে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে।
সুনামগঞ্জের দোয়ারাবাজার, ছাতক ও তাহিরপুর উপজেলার বিস্তীর্ণ এলাকা পাহাড়ি ঢলে প্লাবিত হয়েছে। মৌলভীবাজারের বড়লেখায় পৌর শহরসহ পাঁচটি ইউনিয়নের গ্রাম ডুবে গেছে। দোকানপাট ও বাড়িঘরে পানি ঢুকে ৪-৫ কোটি টাকার ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে বলে জানিয়েছেন স্থানীয় ব্যবসায়ীরা।
গতকাল সকাল ৬টা থেকে ৯টা পর্যন্ত তিন ঘণ্টায় ময়মনসিংহে ৬৮ মিলিমিটার বৃষ্টিতে সানকিপাড়া, চরপাড়া, রেললাইন বস্তি, নতুন বাজার, বলাশপুরসহ বেশির ভাগ এলাকা তলিয়ে যায়। সড়কে হাঁটুপানি জমে যাওয়ায় মানুষের চলাচল কঠিন হয়ে পড়ে।
লক্ষ্মীপুরের রামগতিতে মেঘনায় ট্রলারডুবির এক দিন পর উদ্ধার করা হয়েছে ইউএনএইচসিআর স্বেচ্ছাসেবক হাসিনা খাতুনের মরদেহ। এখনও নিখোঁজ এক পুলিশ সদস্যসহ আরও দু’জন। হাতিয়ায় দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়ায় জোয়ারের উচ্চতা বেড়ে যাওয়ায় নিঝুমদ্বীপে ভেসে এসেছে দুটি মৃত ডলফিন।
সুন্দরবনের ঢাংমারী, করমজল, সুপতি, কটকা ও দুবলারচরের ৬টি মিঠাপানির পুকুরে ঢুকে পড়েছে লবণাক্ত পানি। এতে বনে মিঠাপানির উৎস সাময়িক বন্ধ হয়ে গেছে। স্রোতে ভেসে মারা গেছে দুটি হরিণ।
ভারত থেকে আসা পাহাড়ি ঢল আর টানা বৃষ্টিতে দেশের ছয় জেলার নদনদীর পানি বিপৎসীমার ওপরে প্রবাহিত হচ্ছে। সিলেট, সুনামগঞ্জ, মৌলভীবাজার, হবিগঞ্জ, নেত্রকোনা ও ফেনীতে বন্যার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।
বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্রের নির্বাহী প্রকৌশলী উদয় রায়হান জানান, সুরমা, কুশিয়ারা, মনু, খোয়াই ও হালদা নদীর পানি সাতটি পয়েন্টে বিপৎসীমার ওপরে বইছে। আগামী তিন দিন সিলেট ও ময়মনসিংহ বিভাগের নদনদীর পানি আরও বাড়তে পারে। ব্রহ্মপুত্রের পানি বাড়ছে এবং তিস্তা সতর্কসীমার কাছাকাছি অবস্থান করছে।
বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্র সূত্র বলছে, সিলেট ও ময়মনসিংহ বিভাগের সারিগোয়াইন, যাদুকাটা, মনু, ধলাই, খোয়াই ও সোমেশ্বরী নদীর পানি আগামী তিন দিন বাড়তে পারে।
আগামী ২৪ ঘণ্টায় চট্টগ্রাম বিভাগের গোমতী, মুহুরী, ফেনী, হালদা, সাঙ্গু, মাতামুহুরী নদীর পানি বাড়তে পারে। ফেনী জেলার মুহুরী নদী-সংলগ্ন নিম্নাঞ্চলে বন্যা পরিস্থিতি সৃষ্টি হওয়ার ঝুঁকি রয়েছে। আগামী তিন দিনের মধ্যে অবশ্য এসব নদীর পানি কমতে পারে।
পানি উন্নয়ন বোর্ডের তথ্য অনুযায়ী, রংপুর বিভাগের তিস্তা, ধরলা ও দুধকুমার নদের পানি আগামী তিন দিন বাড়তে পারে। কাল পর্যন্ত বরিশাল, খুলনা ও চট্টগ্রাম বিভাগের উপকূলীয় নদীগুলোতে স্বাভাবিক অপেক্ষা বেশি উচ্চতায় জোয়ার হতে পারে।
(প্রতিবেদনে তথ্য দিয়েছেন সংশ্লিষ্ট ব্যুরো, অফিস ও প্রতিনিধি)
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: নদ র প ন পর ব র সতর ক র ওপর
এছাড়াও পড়ুন:
ভারী বৃষ্টির পূর্বাভাস, পাহাড় ধসের শঙ্কা
মৌসুমি বায়ু সক্রিয় থাকার কারণে ভারী বৃষ্টির পূর্বাভাস দিয়েছে আবহাওয়া অধিদপ্তর। এছাড়া, পাহাড় ধস ও জলাবদ্ধতা তৈরি হাওয়ার আশঙ্কা করা হয়েছে।
আবহাওয়ার অধিদপ্তরের ভারী বর্ষণের সতর্কবার্তায় বলা হয়েছে, সোমবার (২ জুন) সন্ধ্যা ৬টার মধ্যে ময়মনসিংহ, চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগের কোথাও কোথাও ভারী (৪৪-৮৮ মিলিমিটার) থেকে অতি ভারী (৮৮ মিলিমিটার) বর্ষণ হতে পারে।
অতি ভারী বর্ষণের কারণে সিলেট, চট্টগ্রাম, রাঙ্গামাটি, খাগড়াছড়ি, বান্দরবন ও কক্সবাজার জেলাসমূহের পাহাড়ি এলাকার কোথাও কোথাও ভূমিধ্বসের সম্ভাবনা রয়েছে। সেইসঙ্গে ভারী বর্ষণের কারণে ঢাকা ও চট্টগ্রাম মহানগরীর কোথাও কোথাও অস্থায়ীভাবে জলাবদ্ধতা তৈরি হতে পারে।
এছাড়া, আবহাওয়ার সর্বশেষ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, সোমবার সকাল ৯টা থেকে পরবর্তী ২৪ ঘণ্টায় ময়মনসিংহ, বরিশাল, চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগের অনেক জায়গায় এবং রংপুর, রাজশাহী, ঢাকা ও খুলনা বিভাগের কিছু কিছু জায়গায় অস্থায়ীভাবে দমকা হাওয়াসহ বিদ্যুৎ চমকানো বা হালকা থেকে মাঝারি ধরনের বৃষ্টি বা বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে। সেইসঙ্গে ময়মনসিংহ, বরিশাল, চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগের কোথাও কোথাও মাঝারি ধরনের ভারী থেকে ভারী বর্ষণ হতে পারে। সারা দেশে দিন ও রাতের তাপমাত্রা সামান্য বৃদ্ধি পেতে পারে।
আগামী মঙ্গলবার (৩ জুন) সকাল ৯টা থেকে পরবর্তী ২৪ ঘণ্টায় ময়মনসিংহ, চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগের অনেক জায়গায়; ঢাকা ও বরিশাল বিভাগের কিছু কিছু জায়গায় এবং রংপুর, রাজশাহী ও খুলনা বিভাগের দু’এক জায়গায় অস্থায়ীভাবে দমকা হাওয়াসহ বিদ্যুৎ চমকানো বা হালকা থেকে মাঝারি ধরনের বৃষ্টি বা বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে। সেই সঙ্গে ময়মনসিংহ, চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগের কোথাও কোথাও মাঝারি ধরনের ভারী থেকে ভারী বর্ষণ হতে পারে। সারা দেশে দিন এবং রাতের তাপমাত্রা সামান্য বৃদ্ধি পেতে পারে।
আগামী বুধবার (০৪ জুন) সকাল ৯টা থেকে পরবর্তী ২৪ ঘণ্টায় রংপুর, ময়মনসিংহ ও সিলেট বিভাগের কিছু কিছু জায়গায় এবং রাজশাহী, ঢাকা, খুলনা, বরিশাল ও চট্টগ্রাম বিভাগের দু-এক জায়গায় অস্থায়ীভাবে দমকা হাওয়াসহ বিদ্যুৎ চমকানো বা হালকা থেকে মাঝারি ধরনের বৃষ্টি বা বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে। সেইসঙ্গে কোথাও কোথাও মাঝারি ধরনের ভারী থেকে ভারী বর্ষণ হতে পারে। সারা দেশে দিন এবং রাতের তাপমাত্রা প্রায় অপরিবর্তিত থাকতে পারে।
আগামী বৃহস্পতিবার (০৫ জুন) সকাল ৯টা থেকে পরবর্তী ২৪ ঘণ্টায় রংপুর, রাজশাহী, ময়মনসিংহ, ঢাকা, খুলনা, বরিশাল চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগের দু-এক জায়গায় অস্থায়ীভাবে দমকা হাওয়াসহ বিদ্যুৎ চমকানো বা হালকা থেকে মাঝারি ধরনের বৃষ্টি বা বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে। সেই সঙ্গে সারা দেশে দিন এবং রাতের তাপমাত্রা প্রায় অপরিবর্তিত থাকতে পারে।
আগামী পাঁচ দিনের শেষের দিকে তাপমাত্রা বৃদ্ধি পেতে পারে বলে জানিয়েছে সংস্থাটি।
ঢাকা/হাসান/ইভা