বেইজিং ও ওয়াশিংটনের মধ্যে স্বাক্ষরিত শুল্কচুক্তিকে যুক্তরাষ্ট্র ‘গুরুতরভাবে লঙ্ঘন' করেছে বলে অভিযোগ করেছে চীন। একইসঙ্গে হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেছে, চীন তার স্বার্থ রক্ষায় কঠোর ব্যবস্থা নেবে। খবর বিবিসির।

সোমবার (২ জুন) চীনের বাণিজ্য মন্ত্রণালয় বলেছে, ওয়াশিংটন গত মাসে জেনেভায় আলোচনার সময় স্বাক্ষরিত চুক্তিকে ‘গুরুতরভাবে লঙ্ঘন’ করেছে। ওই চুক্তিতে উভয় দেশ একে অপরের থেকে আমদানি করা পণ্যের ওপর শুল্ক কমিয়েছিল।

চীনের বাণিজ্য মন্ত্রণালয় আরো বলেছে, মার্কিন পদক্ষেপগুলো জানুয়ারিতে চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং এবং মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের মধ্যে ফোনালাপের সময় হওয়া ঐকমত্যকেও গুরুতরভাবে লঙ্ঘন করেছে।

আরো পড়ুন:

যুক্তরাষ্ট্রে ইসরায়েলপন্থি বিক্ষোভে পেট্রোল বোমা হামলা

শিগগিরই আলোচনায় বসবেন ট্রাম্প ও শি জিনপিং

শুক্রবার ট্রাম্পের অভিযোগের পর চীনের পক্ষ থেকে পাল্টা এই অভিযোগ এলো। শুক্রবার ট্রাম্প অভিযোগ করেছিলেন যে, ‘চীন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বাণিজ্যচুক্তিকে সম্পূর্ণভাবে লঙ্ঘন করেছে’।

মার্কিন প্রেসিডেন্ট অভিযোগের বিস্তারিত খোলাসা করেননি। তবে বাণিজ্য প্রতিনিধি জেমিসন গ্রিয়ার পরে বলেছিলেন যে, চীন চুক্তির অধীনে সম্মতি অনুসারে অ-শুল্ক বাধা দূর করছে না।

গত মাসে সুইজারল্যান্ডের জেনেভায় ওয়াশিংটন ও বেইজিংয়ের প্রতিনিধিদের এক বৈঠকে স্বাক্ষরিত বাণিজ্য চুক্তির আওতায়, যুক্তরাষ্ট্র চীনা পণ্যের ওপর আরোপিত শুল্ক ১৪৫ শতাংশ থেকে কমিয়ে ৩০ শতাংশ করার ঘোষণা দেয়। অন্যদিকে, চীন মার্কিন পণ্যের ওপর আরোপিত শুল্ক ১২৫ শতাংশ থেকে কমিয়ে ১০ করার ঘোষণা দেয়।

সোমবার (২ জুন) বেইজিং বলেছে, চুক্তির মার্কিন লঙ্ঘনের মধ্যে রয়েছে- চীনা কোম্পানিগুলোর কাছে কম্পিউটার চিপ ডিজাইন সফটওয়্যার বিক্রি বন্ধ করা, চীনা প্রযুক্তি জায়ান্ট হুয়াওয়ের তৈরি চিপ ব্যবহারের বিরুদ্ধে সতর্ক করা এবং চীনা শিক্ষার্থীদের ভিসা বাতিল করা।

জেনেভায় যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের মধ্যে সমঝোতা হওয়ার বিষয়টি বাণিজ্য বিশ্লেষকের হতবাক করে দিয়েছিল, কারণ গত কয়েক মাস ধরে ওয়াশিংটন ও চীন অনেক বাণিজ্য ইস্যুতে ঐকমত্যে পৌঁছাতে অবিশ্বাস্যভাবে দূরে ছিল।

ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি বলছে, জেনেভার বৈঠক দেখায় যে মুখোমুখি আলোচনার সময় ওয়াশিংটন ও বেইজিং চুক্তিতে পৌঁছাতে পারে।

কিন্তু কিছুদিন পার হতেই না হতেই ফের পাল্টাপাল্টি দোষারোপের ঘটনা চুক্তির ভঙ্গুরতা তুলে ধরেছে এবং দীর্ঘমেয়াদী বাণিজ্য চুক্তিতে পৌঁছানো কতটা চ্যালেঞ্জিং হতে পারে তার ইঙ্গিত দেয়।

যদিও পারস্পরিক নতুন অভিযোগগুলো এটাও ইঙ্গিত দিতে পারে যে, ওয়াশিংটন ও বেইজিংয়ের মধ্যে আলোচনা ভালোভাবে চলছে না। রবিবার (১ জুন) হোয়াইট হাউজের দুই শীর্ষ কর্মকর্তা জানান, ট্রাম্প এবং শি শিগগির আলোচনা করতে পারেন।

যুক্তরাষ্ট্রের অর্থমন্ত্রী স্কট বেসেন্ট সিবিএস নিউজকে বলেছেন, শি এবং ট্রাম্পের কথা বলার পরে বাণিজ্যে চুক্তির বিস্তারিত ‘স্পষ্ট’ করা হবে। তবে কথোপকথনটি কবে হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে তা তিনি বলেননি।

যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের পরিচালক কেভিন হ্যাসেট এবিসি নিউজকে বলেছেন, চলতি সপ্তাহে দুই নেতার মধ্যে আলোচনা হওয়ার কথা রয়েছে এবং ‘উভয় পক্ষই আলোচনায় আগ্রহী বলে জানিয়েছেন’।

হ্যাসেট প্রত্যাশিত আলোচনা সম্পর্কে বলেন, “মূল কথা হলো, যদি পরিস্থিতি আমাদের ইচ্ছামতো না ঘটে, তাহলে আমাদের প্রস্তুত থাকতে হবে।”

গত সপ্তাহে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প যুক্তরাষ্ট্রে ইস্পাত ও অ্যালুমিনিয়াম আমদানির ওপর বর্তমান শুল্ক ২৫ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ৫০ শতাংশ করার ঘোষণা দেন। দ্বিগুণ এই শুল্ক আগামী বুধবার থেকে কার্যকর হবে।

শুক্রবার পেনসিলভানিয়ার পিটসবার্গে এক সমাবেশে ভাষণ দিতে গিয়ে ট্রাম্প বলেন, এই পদক্ষেপ স্থানীয় ইস্পাত শিল্প এবং জাতীয় সরবরাহ বৃদ্ধিতে সহায়তা করবে, একই সঙ্গে চীনের উপর নির্ভরতা কমাবে।

ঢাকা/ফিরোজ

.

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর য ক তর ষ ট র য ক তর ষ ট র র ওপর

এছাড়াও পড়ুন:

জুলাই সনদ ও ঘোষণাপত্রের সাংবিধানিক নয়, রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতির পক্ষে বিএনপি

জুলাই সনদ ও জুলাই ঘোষণাপত্রের সাংবিধানিক নয়, রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি পর্যন্ত থাকতে চায় বিএনপি। সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো বলছে, দলটির নীতিনির্ধারণী নেতারা মনে করেন, চব্বিশের গণ-অভ্যুত্থান–পরবর্তী জুলাই সনদ এবং জুলাই ঘোষণাপত্রের সাংবিধানিক স্বীকৃতি দেওয়া হলে ভবিষ্যতে বিতর্ক বা জটিলতা তৈরি হতে পারে। কারণ, ভবিষ্যতেও কোনো স্বৈরাচারী সরকারের বিরুদ্ধে এ ধরনের গণ-অভ্যুত্থান হলে তখন তারও সাংবিধানিক স্বীকৃতির দাবি উঠতে পারে।

গতকাল সোমবার রাতে বিএনপির সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী পর্ষদ জাতীয় স্থায়ী কমিটির সভায় নেতারা এ অভিমত জানিয়েছেন বলে সংশ্লিষ্ট দায়িত্বশীল সূত্রে জানা গেছে।

জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের পাঠানো জুলাই জাতীয় সনদ-২০২৫–এর খসড়া এবং জুলাই ঘোষণাপত্রের চূড়ান্ত খসড়া নিয়ে এ সভা হয়। রাত ৮টা থেকে সভা শুরু হয়ে পৌনে ১২টা পর্যন্ত সভা চলে। সভায় জুলাই সনদ ও জুলাই ঘোষণাপত্রের রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি দেওয়ার পক্ষে সিদ্ধান্ত হয়। গুলশানে বিএনপির চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত এ সভায় সভাপতিত্ব করেন দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। তিনি লন্ডন থেকে ভার্চ্যুয়ালি যুক্ত হন।

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ গতকাল সোমবার সাংবাদিকদের বলেন, খসড়ার সঙ্গে তাঁরা মোটামুটি একমত। অঙ্গীকারের বিষয়ে বিএনপি একমত। সেখানে শব্দ, বাক্য গঠনসংক্রান্ত বিষয়ে বিএনপি তাদের পর্যবেক্ষণ কমিশনকে জানাবে।

বিএনপির সূত্রে জানা গেছে, মঙ্গলবার রাতেই জুলাই সনদ ও জুলাই ঘোষণাপত্রের খসড়ার কিছু সংযোজন-বিয়োজন করে দলীয় মতামত কমিশনে পৌঁছে দেওয়া হয়েছে।

রাজনৈতিক দলগুলোর কাছে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের পাঠানো জুলাই সনদের খসড়ায় ৭ নম্বর দফায় বলা হয়েছে, ‘২০২৪ সালের বৈষম্যবিরোধী ও গণতান্ত্রিক আন্দোলন এবং গণ-অভ্যুত্থানের ঐতিহাসিক তাৎপর্যকে সংবিধানে যথাযোগ্য স্বীকৃতি দিতে অঙ্গীকারবদ্ধ থাকব। ৬ নম্বর দফায় বলা হয়েছে, এই সনদ গৃহীত হওয়ার পর এতে যেসব প্রস্তাব/সুপারিশ লিপিবদ্ধ রয়েছে, সেগুলো পরবর্তী জাতীয় নির্বাচনের মাধ্যমে সরকার গঠনের দুই বছর মেয়াদকালের মধ্যে বাস্তবায়ন নিশ্চিত করার প্রতিশ্রুতি দিচ্ছি।’

বিএনপির স্থায়ী কমিটির নেতারা মনে করেন, ঐকমত্য হওয়া সংস্কার প্রস্তাব বা সুপারিশগুলো সরকার গঠনের দুই বছর মেয়াদকালের মধ্যে বাস্তবায়ন সম্ভব। তবে জুলাই সনদের সাংবিধানিক স্বীকৃতি দেওয়ার বিষয়ে তাঁদের দ্বিমত আছে। এ ছাড়া জুলাই সনদের খসড়ার বাকি ছয় দফা অঙ্গীকারনামার সঙ্গে তাঁরা একমত। জুলাই ঘোষণাপত্র নিয়ে বিএনপির অভিমত হচ্ছে, এর সাংবিধানিক স্বীকৃতি দেওয়া হলে অতীতের আরও ঘটনা যেমন নব্বইয়ে স্বৈরাচার এরশাদবিরোধী গণ-অভ্যুত্থান এবং ভবিষ্যতেও গণ-অভ্যুত্থান হলে তারও সাংবিধানিক স্বীকৃতির প্রশ্ন আসবে। এতে করে জটিলতা বাড়তে পারে। তা ছাড়া একাত্তরের মহান স্বাধীনতার ঘোষণাপত্র বাহাত্তরে প্রণীত সংবিধানের অন্তর্ভুক্ত ছিল না ২০১১ সাল পর্যন্ত। ওই বছর সপ্তম তফসিলে তা যুক্ত করা হয়, যা চ্যালেঞ্জ করে মামলা হয়েছে।

এমতাবস্থায় জুলাই ঘোষণাপত্রও আলাদা করে সংবিধানে যোগ করা অপ্রয়োজনীয় মনে করে বিএনপি। বরং দলটির নীতিনির্ধারণী নেতারা এটিকে ‘রাজনৈতিক দলিল’ হিসেবে রাষ্ট্রের আর্কাইভে ২০২৪ সালের গণ-অভ্যুত্থানের ঘোষণাপত্র সংরক্ষণের পক্ষে।

এ বিষয়ে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বিএনপির স্থায়ী কমিটির একজন সদস্য প্রথম আলোকে বলেন, একটা বিপ্লবকে সংবিধানে নেওয়ার প্রয়োজন পড়ে না। তাই জুলাই সনদ ও জুলাই ঘোষণাপত্রের রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতিতেই থাকতে চায় বিএনপি।

বিএনপি আগেই জানিয়েছিল, জুলাই ঘোষণাপত্রকে সংবিধানের চতুর্থ তফসিলে যুক্ত করতে চায় তারা। পুরো ঘোষণাপত্র নয়, অভ্যুত্থানের স্বীকৃতি হিসেবে একটি অনুচ্ছেদে ঘোষণাপত্রের উল্লেখ থাকবে। জানা গেছে, ঘোষণাপত্রের চূড়ান্ত খসড়া নিয়ে বিএনপির স্থায়ী কমিটিতে বিস্তারিত আলোচনা হয়েছে। দলটি সেখানে ২৬ মার্চ মহান স্বাধীনতার ঘোষণার বিষয়টি অন্তর্ভুক্ত করাসহ কিছু শব্দ ও ভাষাগত পরিবর্তন এনেছে।

জুলাই ঘোষণাপত্র নিয়ে বিএনপির স্থায়ী কমিটির আরেকজন সদস্য প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমাদের (বিএনপির) পক্ষ থেকে মতামত জানানো শেষ। যা দেওয়ার দিয়ে দিয়েছি, আমরা আর কোনো মতামত দেব না।’

সংশ্লিষ্ট নেতারা জানিয়েছেন, জুলাই ঘোষণাপত্র নিয়ে বিএনপি আর আলোচনা করতে চায় না। তবে জুলাই সনদ নিয়ে আলোচনা অব্যাহত রাখবে। কারণ, সংস্কারের ব্যাপারে তারা আন্তরিক।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • জুলাই সনদের খসড়া নিয়ে ৩ দলের আপত্তি, বিএনপি মোটামুটি একমত
  • খসড়া নিয়ে ৩ দলের আপত্তি
  • জুলাই সনদ ও ঘোষণাপত্রের সাংবিধানিক নয়, রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতির পক্ষে বিএনপি
  • প্রাথমিক পর্যায়ে ঐকমত্যের তালিকা রাজনৈতিক দলগুলোর কাছে পাঠানো হবে
  • ৩১ জুলাইয়ের মধ্যে জুলাই সনদ চূড়ান্ত করার প্রত্যাশা
  • ‘বাদ দেওয়ার চেষ্টা হলেও ঘোষণাপত্রে নিশ্চিত হবে জুলাই ছাত্র-জনতার ন্যায্য স্বীকৃতি’
  • দুদক ও পিএসসির বিষয়ে বিএনপিকে অবস্থান পরিবর্তনের আহ্বান এনসিপির
  • রাজনৈতিক দলগুলোর কাছে জুলাই সনদের খসড়া পৌঁছে দেওয়া হয়েছে: আলী রীয়াজ
  • এনসিপির ব্যানার ব্যবহার করে অনেকে চাঁদাবাজিতে যুক্ত হচ্ছেন: হাসনাত আবদুল্লাহ
  • জুলাই সনদ হওয়ার পর নির্বাচন বিষয়ে আলোচনা: নাহিদ