কার্যাদেশ নওগাঁয়, কাজ হচ্ছে রাজশাহীতে
Published: 2nd, June 2025 GMT
ঠিকাদারকে খুশি রাখতে তুঘলকি কাণ্ড ঘটিয়েছেন বরেন্দ্র বহুমুখী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (বিএমডিএ) এক প্রকল্প পরিচালক (পিডি)। নওগাঁয় ওই ঠিকাদারকে দিয়ে খাল সংস্কারের কাজ করানো যায়নি বলে পিডি তাকে দিয়ে রাজশাহীতে একই কাজ করাচ্ছেন।
বিএমডিএর কর্মকর্তারা বলছেন, নওগাঁয় কাজ করা সম্ভব না হলে সেই কার্যাদেশ স্থগিত বা বাতিল করতে হতো। তারপর রাজশাহীর কাজের দরপত্র আহ্বান করে কাজ দেওয়া উচিত ছিল। এখন যেটা করা হয়েছে, সেটা অনিয়ম।
এমন অনিয়ম করেছেন ‘বরেন্দ্র এলাকায় খালে পানি সংরক্ষণের মাধ্যমে সেচ সম্প্রসারণ প্রকল্প-২য় পর্যায়’-এর পিডি নাজিরুল ইসলাম। ২১ লাখ ৯৯ হাজার টাকায় খাল খননের এ কাজটি করছে আরআর এন্টারপ্রাইজ নামের ঠাকুরগাঁওয়ের একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। প্রতিষ্ঠানটির স্বত্বাধিকারী রুহুল আমিন ঠাকুরগাঁও পৌর বিএনপির সহ-সভাপতি।
কাগজপত্রে দেখা গেছে, গত ২০ জানুয়ারি নওগাঁর মহাদেবপুর ও চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর উপজেলায় খাল সংস্কার এবং পাইপলাইন স্থাপনের কিছু কাজের দরপত্র আহ্বান করেন পিডি নাজিরুল ইসলাম। ৪ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত ঠিকাদাররা দরপত্র জমা দেন। ১৭ এপ্রিল মহাদেবপুর উপজেলার বুজরুককান্তিপুর খাড়ি সংস্কারের কাজ দেওয়া হয় আরআর এন্টারপ্রাইজকে।
কিন্তু, এই প্রতিষ্ঠানটি কিছু দিন আগে রাজশাহীর গোদাগাড়ী উপজেলার ঘনশ্যামপুর থেকে হঠাৎপাড়া পর্যন্ত একটি খাল সংস্কারের কাজ শুরু করেছে। ইতোমধ্যে প্রায় ৬০০ মিটার খাল খনন সম্পন্ন হয়েছে। সম্প্রতি ঘনশ্যামপুর ব্রিজের কাছে দুটি স্কেভেটরের মাধ্যমে মাটি খননের কাজ করতে দেখা গেছে। সেখানে স্কেভেটরের দুই চালক ছাড়া কাউকে পাওয়া যায়নি।
বিএমডিএ সূত্র জানায়, মহাদেবপুরে মাত্র ৭০০ মিটার খাল সংস্কারের কাজটি দেওয়া হয়েছিল ২১ লাখ ৯৯ হাজার টাকায়। সামান্য কাজটির জন্য অতিরিক্ত টাকায় কার্যাদেশ দেওয়া হলেও খালে পানি চলে আসায় কাজটি শেষ পর্যন্ত করা যায়নি। তাই, ওই একই ঠিকাদারকে নতুন দরপত্র আহ্বান ছাড়াই রাজশাহীর গোদাগাড়ীতে কাজ দেওয়া হয়েছে। গোদাগাড়ীর খালটি সংস্কার হবে ১ হাজার ৬০০ মিটার। বিএমডিএর ওই সূত্র বলছে, ৭০০ মিটারের জন্যই ২২ লাখ টাকার কার্যাদেশ হলে ১ হাজার ৬০০ মিটারের জন্য আরো বেশি টাকা ব্যয় হওয়ার কথা। কিন্তু, ওই একই টাকায় ১ হাজার ৬০০ মিটার খাল সংস্কারের কাজ দেওয়া প্রমাণ করে, মহাদেবপুরের কাজের জন্য অতিরিক্ত টাকা ধরা হয়েছিল।
জানতে চাইলে পিডি নাজিরুল ইসলাম বলেন, “মহাদেবপুরের কাজের কার্যাদেশ দেওয়ার পর কাজ শুরুর আগেই খাড়িতে পানি চলে আসে। তাই, সেখানে কাজ করা যায়নি। এজন্য ওই ঠিকাদারকে গোদাগাড়ীতে একটি কাজ দেওয়া হয়েছে। এটি কোনো অনিয়ম নয়।”
তবে, বিএমডিএর অন্য একজন পিডি নাম প্রকাশ না করার অনুরোধ জানিয়ে বলেন, “কার্যাদেশ দেওয়ার পরও কোনো কাজ করা সম্ভব না হলে সেটি বাতিল বা স্থগিত করতে হয়। কিন্তু, ওই কাজের ঠিকাদারকে সন্তুষ্ট রাখতে অন্য কোনো কাজ দেওয়ার সুযোগ নেই। এটি অবশ্যই অনিয়ম। কারণ, দুটি কাজের পরিমাপসহ অন্যান্য প্রাক্কলন কখনো এক হয় না।”
এমন অনিয়ম করে কীভাবে কাজ পেলেন, জানতে চাইলে আরআর এন্টারপ্রাইজের স্বত্বাধিকারী ও ঠাকুরগাঁও পৌর বিএনপির সহ-সভাপতি রুহুল আমিন বলেছেন, “এটা তো আমি বলতে পারব না। এটা বিএমডিএকে জিজ্ঞেস করলেই ভালো হয়। আমাকে কাজ দিয়েছে, আমি করছি। কাজও শেষের দিকে। আর এক কিলোমিটারের মতো কাজ বাকি আছে।”
এই অনিয়মের ব্যাপারে জানতে চাইলে বিএমডিএর ভারপ্রাপ্ত সচিব এনামুল কাদির বলেন, “এই বিষয়টা আমার জানা নেই। এ ব্যাপারে কোনো অভিযোগ হলে কর্তৃপক্ষ তদন্ত করে দেখবে।”
ঢাকা/কেয়া/রফিক
.উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর ৬০০ ম ট র ঠ ক দ রক ব এমড এ দরপত র ক জ কর র জন য
এছাড়াও পড়ুন:
পায়রা বন্দরসহ দুই প্রকল্পের ক্রয় প্রস্তাব অনুমোদন
পায়রা বন্দরের জন্য সংশ্লিষ্ট পরিসেবাসহ দুটি শিপ টু শোর ক্রেন সরবরাহ এবং নারায়ণগঞ্জের খানপুরে অভ্যন্তরীণ কন্টেইনার এবং বাল্ক টার্মিনাল নির্মাণ প্রকল্পে কাজের ক্রয় প্রস্তাবে অনুমোদন দিয়েছে সরকারি ক্রয় সংক্রান্ত উপদেষ্টা পরিষদ কমিটি। প্রস্তাব দুটিতে ব্যয় হবে ৪৫০ কোটি ১১ লাখ ১০ হাজার ২৫৪ টাকা।
মঙ্গলবার (২৯ জুলাই) সচিবালয়ে মন্ত্রি পরিষদ বিভাগের সম্মেলন কক্ষে অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমদের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সভায় কমিটির সদস্য ও উর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
সভা সূত্রে জানা যায়, পায়রা সমুদ্র বন্দরের প্রথম টার্মিনাল এবং আনুষঙ্গিক সুবিধাদি নির্মাণ (২য় সংশোধিত)’ প্রকল্পের আওতায় সংশ্লিষ্ট পরিসেবাসহ দুটি শিপ টু শোর ক্রেন সরবরাহ এবং স্থাপন কাজের জন্য দরপত্র আহ্বান করা হলে ৪টি প্রতিষ্ঠান দরপ্রস্তাব দাখিল করে। দরপত্রের সব প্রক্রিয়া শেষে টিইসি কর্তৃক সুপারিশকৃত রেসপনসিভ সর্বনিম্ন দরদাতা প্রতিষ্ঠান যৌথভাবে (১) এইচপি এবং (২) এনজে, চায়না প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করবে। এতে ব্যয় হবে ১৬২ কোটি ২ লাখ ১১ হাজার ৫৬৮ টাকা।
নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের ‘নারায়ণগঞ্জের খানপুরে অভ্যন্তরীণ কন্টেইনার এবং বাল্ক টার্মিনাল নির্মাণ (১ম সংশোধিত)’ প্রকল্পের প্যাকেজ নম্বর দুইয়ের পূর্ত কাজের ক্রয় প্রস্তাবে অনুমোদন দিয়েছে কমিটি। এ জন্য উন্মুক্ত দরপত্র পদ্ধতিতে দরপত্র আহ্বান করা হলে ২টি প্রতিষ্ঠান দরপত্র দাখিল করে। দরপত্রের সকল প্রক্রিয়া শেষে টিইসি কর্তৃক সুপারিশকৃত রেসপনসিভ সর্বনিম্ন দরদাতা প্রতিষ্ঠান যৌথভাবে (১) স্পেক্ট্রা ইঞ্জিনিয়ার্স এবং (২) এসএস রহমান ইন্টারন্যানাল লিমিটেড প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করবে। এতে ব্যয় হবে ২৮৮ কোটি ৮ লাখ ৯৮ হাজার ৬৮৬ টাকা।
ঢাকা/হাসনাত//