কীভাবে হজে গেলেন গাজার প্রকৌশলী, মক্কায় গিয়েও কি ভুলতে পারছেন যন্ত্রণা
Published: 2nd, June 2025 GMT
সৌদি আরবের মক্কা নগরে পবিত্র হজ পালন করতে এসেছেন ফিলিস্তিনের গাজার বাসিন্দা মোহাম্মদ শেহাদে। তবে হজে এলেও তাঁর মন পড়ে আছে গাজায়। তিনি বলছিলেন, জীবনে একবার হজের এই বিরল সুযোগ পেলেও তাঁর মন সব সময় উদ্বিগ্ন থাকে। কারণ, যুদ্ধবিধ্বস্ত গাজায় আটকে আছেন তাঁর স্ত্রী ও চার সন্তান।
৩৮ বছর বয়সী এই প্রকৌশলী ক্যানসারের জরুরি চিকিৎসার জন্য মিসরে যাওয়ার অনুমতি পেলেও ইসরায়েলি কর্তৃপক্ষ তাঁর পরিবারের সদস্যদের তাঁর সঙ্গে দেশের বাইরে যাওয়ার অনুমতি দেয়নি।
শেহাদে বলেন, গত ফেব্রুয়ারিতে গাজা ছাড়ার সুযোগ তাঁকে পবিত্র হজে অংশ নেওয়ার ‘সবচেয়ে বড় সুযোগ’ এনে দিয়েছে।
আগামী বুধবার পবিত্র হজের আনুষ্ঠানিকতা শুরু হচ্ছে।
শেহাদে বলছিলেন, মক্কার পবিত্র স্থানগুলোয় তিনি থাকলেও তাঁর মন ভারাক্রান্ত। কারণ, তাঁর স্ত্রী ও সন্তানেরা এখনো গাজায় ইসরায়েলি গোলার মধ্যে পড়ে আছেন।
শেহাদে কাবা শরিফের কাছে একটি রাস্তায় দাঁড়িয়ে বার্তা সংস্থা এএফপিকে বলছিলেন, ‘জীবনের সবচেয়ে বড় কষ্ট হলো নিজের পরিবার থেকে দূরে থাকা।’
শেহাদে ছাড়াও গাজার কয়েক শ হজযাত্রী এসেছেন সৌদি আরবে। সারা বিশ্বের প্রায় ২০ লাখ মুসলিমের সঙ্গে তাঁরা হজ পালন করবেন।
সাদা কাপড় পরিহিত শেহাদে হজযাত্রীদের ভিড়ের মধ্যে দাঁড়িয়ে এএফপিকে বলেন, তিনি গাজায় যুদ্ধের অবসান ও পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে পুনর্মিলনের জন্য দিনরাত আল্লাহর কাছে দোয়া করছেন।
এই ফিলিস্তিনি আরও বলেন, ‘আপনি দুনিয়ার সবচেয়ে পবিত্র জায়গায় থাকলেও পরিবারের কাছ থেকে যদি দূরে থাকেন, তাহলে সুখী হতে পারবেন না।’
দুই আগুনের মাঝখানে
২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর হামাসের হামলার পর থেকেই ইসরায়েল গাজায় নির্বিচার ও নৃশংস হামলা চালিয়ে যাচ্ছে। মাঝে স্বল্পস্থায়ী যুদ্ধিবরতির সময় তাদের হামলা কিছুটা থেমেছিল।
শেহাদের মতো কেউ কেউ চিকিৎসার জন্য গাজা থেকে বাইরে যাওয়ার সুযোগ পেয়েছেন। কিন্তু অন্যদের জন্য গাজা থেকে বের হওয়া প্রায় অসম্ভব হয়ে পড়েছে।
ছলছল চোখে এই প্রকৌশলী বলেন, ‘আমি পবিত্র হজ করার প্রস্তুতি নিচ্ছি। কিন্তু এমন অনেক কথা আছে, যা বলতে পারি না। বললে কান্না চলে আসে।’
শেহাদে যুদ্ধবিরতির সময় গাজা ছেড়েছিলেন। তবে এর কিছুদিন পর থেকে ইসরায়েল আবারও গাজায় নির্বিচার বোমাবর্ষণ শুরু করে। গাজায় কোনো ত্রাণ ঢুকতে দেয়নি। জাতিসংঘ ইতিমধ্যে গাজায় ভয়াবহ দুর্ভিক্ষের আশঙ্কা প্রকাশ করেছে।
শেহাদে বলেন, ‘আমি যখন বের হয়েছিলাম, তখন যেন দুই আগুনের মাঝখানে পড়ে গিয়েছিলাম। চিকিৎসার জন্য মিসরে যাওয়া ও পরিবারের কাছে থাকার মধ্যে কঠিন সিদ্ধান্ত নিতে হয়েছিল আমাকে।’
হামাস–শাসিত গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্যমতে, যুদ্ধবিরতি লঙ্ঘন করে গত ১৮ মার্চ ইসরায়েল আবার নৃশংস হামলা শুরুর পর গাজায় কমপক্ষে ৪ হাজার ১৪৯ জন ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। এতে মোট মৃত মানুষের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৫৪ হাজার ৪১৮। তাঁদের বেশির ভাগই শিশু ও নারী।
ইসরায়েল দাবি করেছে, ২০২৩ সালে হামাসের হামলায় ১ হাজার ২১৮ জন নিহত হন। তাঁদের মধ্যেও অধিকাংশ ছিলেন বেসামরিক নাগরিক।
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প গত শুক্রবার বলেছেন, নতুন যুদ্ধবিরতির চুক্তি ‘খুব কাছাকাছি’।
তবে আলোচনার অগ্রগতি আবারও থমকে গেছে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
দেড় বছরের বেশি সময় ধরে ব্যর্থ আলোচনা দেখে হতাশ শেহাদে বলেন, ‘আমি এখন আশাবাদী হতে ভয় পাই। কারণ, তখন হতাশ হওয়াটা আরও কষ্টদায়ক হয়ে দাঁড়ায়।’
শান্তির জন্য প্রার্থনা
ফিলিস্তিনি কর্মকর্তাদের মতে, এ বছর প্রায় ১ হাজার ৩৫০ জন গাজাবাসী (যাঁরা মূলত মিসরে অবস্থান করছেন) এবং সৌদি বাদশাহর অতিথি হিসেবে আরও ৫০০ জন হজ পালন করছেন।
৪৮ বছর বয়সী রজায়ি রাজেহ আল-খালুত স্ত্রী ও চার সন্তানকে নিয়ে গাজা থেকে মিসরে পালিয়ে যান। তিনি বলেন, তাঁর বাড়ি ধ্বংস হয়ে গেছে। তাঁর আমদানি-রপ্তানি ব্যবসাও শেষ হয়ে গেছে।
রজায়ি বলেন, ‘হজ সাধারণত যেকোনো মুসলিমের জন্য আনন্দের সময় হলেও আমি কোনো আনন্দ অনুভব করতে পারছি না। আমার পরিবার, ভাই-বোনেরা এখনো গাজায়। প্রতিটি মুহূর্ত আমরা তাদের জন্য দুশ্চিন্তায় থাকি।’
রজায়ি সব হজযাত্রীর কাছে অনুরোধ জানান, তাঁরা যেন গাজায় যুদ্ধের অবসান ও পরিবারগুলোর পুনর্মিলনের জন্য দোয়া করেন।
গাজার এই ব্যবসায়ী বলেন, ‘আমি যুদ্ধ, মৃত্যু ও ধ্বংস ছাড়া এই পবিত্র স্থানে আসতে চাইতাম।’
ইসলাম ধর্মের পাঁচটি মূল স্তম্ভের অন্যতম হচ্ছে হজ। সামর্থ্যবান প্রত্যেক মুসলিমের জীবনে অন্তত একবার পালন করা বাধ্যতামূলক।
সরকারিভাবে নির্ধারিত কোটার মাধ্যমে বিভিন্ন দেশের মুসলিমরা পবিত্র হজ পালনের অনুমতি পান।
মক্কার আল-নুজহা প্লাস হোটেলে গাজার হজযাত্রীরা অবস্থান করছেন। সেই হোটেলের লবিতে ষাটোর্ধ্ব এক ফিলিস্তিনি বিধবা বলেন, গত বছর চিকিৎসার জন্য তাঁকে গাজা থেকে সরিয়ে নেওয়া হয়। এর পর থেকে তাঁর ১০ সন্তানকে তিনি আর দেখতে পাননি।
এই নারী বলেন, ‘আমি প্রার্থনা করি, ফিলিস্তিনের সেসব শিশুর জন্য, যারা ক্ষুধা ও যুদ্ধের ভেতর দিয়ে যাচ্ছে।’
এই ফিলিস্তিনি আরও বলেন, ‘আমার পুরো মন গাজায় পড়ে আছে। আমার জীবনটা সেখানেই। আমার ঘরে আমি ফিরতে চাই।’
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ও পর ব র পর ব র র ইসর য় ল হজয ত র প রক শ করছ ন
এছাড়াও পড়ুন:
দেশের বড় চক্ষু হাসপাতাল এক সপ্তাহ ধরে বন্ধ
জাতীয় চক্ষুবিজ্ঞান ইনস্টিটিউটের চিকিৎসক–কর্মকর্তা–কর্মচারী ও চিকিৎসাধীন জুলাই অভ্যুত্থানের আহত ব্যক্তিদের মধ্যে আস্থার সংকট দেখা দিয়েছে। এক পক্ষ অন্য পক্ষকে বিশ্বাস করতে পারছে না। আহত ব্যক্তিরা চাইছেন হাসপাতাল চালু হোক। চিকিৎসক–কর্মকর্তা–কর্মচারীরা বলছেন, নিরাপত্তা নিশ্চিত না হলে তাঁরা কাজে যোগ দিতে চাইছেন না। এমন অবস্থায় আজ বুধবার হাসপাতালের শুধু জরুরি বিভাগ চালু করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে কর্তৃপক্ষ।
দেশের সবচেয়ে বড় সরকারি চোখের এই বিশেষায়িত হাসপাতাল এক সপ্তাহ ধরে বন্ধ। গত বুধবার থেকে হাসপাতালের জরুরি বিভাগ, বহির্বিভাগ ও অন্তর্বিভাগে সব ধরনের সেবা বন্ধ আছে। হাসপাতালে কোনো চিকিৎসক, নার্স বা অন্য কর্মকর্তা–কর্মচারী যাচ্ছেন না। জুলাই অভ্যুত্থানে আহত ব্যক্তিদের দেখার জন্যও কোনো চিকিৎসক সেখানে নেই। অন্যদিকে প্রতিদিন শত শত রোগী সেবা নিতে এসে ফিরে যাচ্ছেন।
গতকাল মঙ্গলবার দুপুরে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক আবু জাফরসহ মন্ত্রণালয়, অধিদপ্তর ও হাসপাতালের কয়েকজন কর্মকর্তা আহত ব্যক্তিদের সঙ্গে সভা করেন। প্রায় তিন ঘণ্টার আলোচনা শেষে আবু জাফর সাংবাদিকদের বলেন, জরুরি বিভাগ ও সীমিত আকারে অন্য সেবা চালু করার ব্যাপারে কথা হয়েছে। তবে এ সিদ্ধান্ত মন্ত্রণালয় চূড়ান্ত করবে।
আরও পড়ুনসেবা বন্ধ ৫ দিন, রোগীরা এসে ফিরে যাচ্ছেন ০১ জুন ২০২৫হাসপাতাল বন্ধ থাকায় ফটকের সামনে বসে অপেক্ষা করেন এই নারী। ঢাকা, ৩ জুন ২০২৫