রাজশাহীতে আধুনিক ব্যবস্থাপনার এক খামার
Published: 2nd, June 2025 GMT
রাজশাহীর পবা থানার মাহিন্দ্রতে প্রায় ৩০ বিঘার খামার ‘নাবা ডেইরি অ্যান্ড ক্যাটল ফার্ম’। খামারের সঙ্গে কয়েক শ বিঘা মাঠে দেখা যায় গবাদিপশুর জন্য ঘাস চাষ। ২০২০ সালে যাত্রা শুরু করা প্রতিষ্ঠানটি স্বল্প সময়েই রাজশাহী অঞ্চল ছাপিয়ে বিভিন্ন জেলায় একটি আস্থা ও নির্ভরতার নাম হয়ে উঠেছে। প্রতিষ্ঠানটির চেয়ারম্যান হারুনুর রশীদ এবং নির্বাহী পরিচালক মামুনুর রশীদের নেতৃত্বে নাবা ডেইরি নিরাপদ মাংস ও অন্যান্য দুগ্ধজাত পণ্য উৎপাদন করছে।
আধুনিক খামার
আধুনিক ব্যবস্থাপনার এই খামার নিয়ে প্রতিষ্ঠানটির উপমহাব্যবস্থাপক (ডিজিএম) মো.
শুধু ঈদের সময় নয়, নাবা ডেইরি সারা বছরই গরু বিক্রি করে থাকে। গত বছর কোরবানির ঈদের সময় খামার থেকে প্রায় ২৫০টি গরু বিক্রি করা হয়। অনলাইনে কেনাকাটার এই সুবিধা দূরদূরান্তের ক্রেতাদের জন্য সময় ও শ্রম বাঁচিয়ে দিচ্ছে। মুঠোফোনের মাধ্যমে উচ্চমানের গবাদিপশুর প্রাপ্যতা নিশ্চিত করা যাচ্ছে। রাজশাহীর স্থানীয় গ্রাহকেরা অবশ্য খামারে এসে সরাসরি গরু দেখে কেনেন। পশু কেনাবেচার ক্ষেত্রে অনলাইন ব্যাংকিংসহ মোবাইল ব্যাংকিং সেবা গ্রাহকেরা ব্যবহার করতে পারেন। তারা ২৫০-৪৫০ কেজি ওজনের কোরবানির গরুর মাংস ৪৩০-৪৪০ টাকা কেজি দরে ফার্ম থেকে সরাসরি বিক্রি করছে।
নিরাপদ উৎপাদনব্যবস্থা
নাবা ডেইরির সাফল্যের অন্যতম ভিত্তি নিরাপদ ও প্রাকৃতিক উপায়ে উৎপাদনপ্রক্রিয়া। খামারে বিশেষজ্ঞের তত্ত্বাবধানে পশুদের রাখা হয়। গবাদিপশুর কৃত্রিম বৃদ্ধির জন্য কোনো ধরনের স্টেরয়েড, অ্যান্টিবায়োটিক বা মেডিসিন ব্যবহার করা হয় না। এতে পশুর মাংস, দুধসহ দুগ্ধজাত পণ্যের বিশুদ্ধতা এবং গুণমান নিশ্চিত করা যাচ্ছে। মাসুমুল হক জানান, ‘আমরা গ্রাহকের সামনে দুধসহ ঘি, দই, মাঠার মতো বিভিন্ন অনুষঙ্গ প্রাকৃতিক উপায়ে তৈরি করে সরবরাহ করছি। প্রাকৃতিক উপায়ে উৎপাদনব্যবস্থার মাধ্যমে ভোক্তাদের স্বাস্থ্য সুরক্ষায় প্রতিশ্রুতিবদ্ধ আমরা।’ ফার্মের ব্যবস্থাপনায় টেকসই ও পরিবেশবান্ধব উপায় অনুশীলন করা হচ্ছে। প্রায় ২০০ বিঘা জমিতে বিভিন্ন ধরনের ঘাস উৎপাদন করা হচ্ছে এই খামারের জন্য। প্রাকৃতিক উপায়ে গবাদিপশুর জন্য পর্যাপ্ত ও পুষ্টিকর খাদ্যের উৎস ব্যবস্থা করা হচ্ছে। শীতকালে ঘাসের সংকট মোকাবিলায় তারা ১ হাজার ৫০০ থেকে ২ হাজার টন ঘাস সংরক্ষণ করা হয়। গরুর জন্য অ্যানথ্রাক্সসহ বিভিন্ন রোগের নিয়মিত ভ্যাকসিন ও টিকা দেওয়া হয়। খামারজুড়ে আধুনিক উপায় পশুর স্বাস্থ্য সুরক্ষা ও রোগের বিস্তার রোধে কঠিন ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে।
কর্মসংস্থান বিকাশ
নাবা ডেইরি অ্যান্ড ক্যাটলের খামারে বর্তমানে প্রায় ৮০০ পশু লালন-পালন করা হচ্ছে। এই বিশাল কর্মযজ্ঞে ৯০ জনের মতো কর্মী সরাসরি জড়িত। এই কর্মী বাহিনীতে স্থানীয় গ্রামীণ মানুষের একটি বড় অংশ অন্তর্ভুক্ত। খামারটি শুধু গবাদিপশু পালনের পাশাপাশি ঘাস উৎপাদন থেকে শুরু করে দুগ্ধজাত পণ্য প্রক্রিয়াকরণ এবং বাজারজাতকরণ পর্যন্ত একটি স্বয়ংসম্পূর্ণ ইকোসিস্টেম তৈরি করেছে।
বৈচিত্র্যময় গবাদিপশু ও দুগ্ধজাত পণ্য
নাবা ডেইরিতে দেশি গরুর পাশাপাশি বিভিন্ন উন্নত জাতের গরু আধুনিক উপায়ে পালন করা হয়। এতে উৎপাদিত মাংস ও দুধের গুণমান ও পরিমাণ ভালো থাকে। কোরবানির ঈদের জন্য তারা শাহিওয়াল, সিন্ধি, পাবনা ব্রিড, রেড চিটাগংয়ের মতো জনপ্রিয় জাতের গরু সরবরাহ করে। সারা বছরের জন্য হলিস্টিক ফ্রিজিয়ান ক্রসসহ বিভিন্ন উচ্চফলনশীল জাতের গরু লালন–পালন করা হয়। বর্তমানে নাবা ডেইরি প্রতিদিন প্রায় আড়াই হাজার লিটার দুধ উৎপাদন করে। এই দুধ থেকে উৎপাদিত হয় উচ্চমানের ঘি, দই, মাঠাসহ বিভিন্ন সুস্বাদু ও পুষ্টিকর দুগ্ধজাত পণ্য। এই পণ্যগুলো রাজশাহীর বিভিন্ন জেলায় সহজেই পাওয়া যাচ্ছে। স্থানীয় মাংসের বাজারেও নাবা ডেইরির একটি শক্তিশালী অবস্থান রয়েছে। নাবা ডেইরি অ্যান্ড ক্যাটল শুধু দেশের অভ্যন্তরীণ বাজারেই সীমাবদ্ধ থাকতে চায় না। ভবিষ্যতে তারা মধ্যপ্রাচ্য ও ইউরোপের বিভিন্ন দেশে দুগ্ধজাত পণ্য রপ্তানির লক্ষ্য রয়েছে খামারটির।
উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: প র ক ত ক উপ গ র হক র ক রব ন র ব যবস থ র জন য উৎপ দ
এছাড়াও পড়ুন:
প্রথম চালানে ৩৭ হাজার ৪৬০ কেজি ইলিশ গেল ভারতে
দুর্গাপূজা উপলক্ষে যশোরের বেনাপোল স্থলবন্দর দিয়ে প্রথম চালানে ৩৭ হাজার ৪৬০ কেজি ইলিশ মাছ ভারতে রপ্তানি হয়েছে। আজ বুধবার দেশের ছয়টি প্রতিষ্ঠান ১২ দশমিক ৫০ ডলার কেজিতে এই ইলিশ রপ্তানি করা হয়েছে, যা বাংলাদেশি টাকায় ১ হাজার ৫২৫ টাকা।
অথচ এদিন যশোর শহরের মাছের আড়তে ৫০০ থেকে ৬০০ গ্রাম আকারের প্রতি কেজি ইলিশ মাছ ১ হাজার ৪৫০ থেকে ১ হাজার ৫৫০ টাকায় পাইকারি বেচা–কেনা হয়েছে। খুচরা বাজারে সেই ইলিশ কেজিতে ৫০ থেকে ১০০ টাকা বেশি দরে ভোক্তাকে কিনতে হচ্ছে; অর্থাৎ দেশের খুচরা বাজারের দামের চেয়ে কম দামে ইলিশ ভারতে রপ্তানি হচ্ছে।
দেশের চেয়ে কম দামে ইলিশ মাছ রপ্তানি কীভাবে সম্ভব হচ্ছে, এমন প্রশ্নের জবাবে রপ্তানিকারকদের ক্লিয়ারিং অ্যান্ড ফরওয়ার্ডিং (সিএন্ডএফ) এজেন্ট জুয়েল এন্টারপ্রাইজের স্বত্বাধিকারী শহিদুল ইসলাম বলেন, ‘রপ্তানিকারকেরা ইলিশের জাহাজ থেকে সরাসরি মাছ কেনেন। ছোট–বড় মিলিয়ে যখন কেনেন, তখন একটু কম দামে তাঁরা কিনতে পারেন। এ কারণে তাঁদের পুষিয়ে যায়। এর চেয়ে বেশি কিছু আমার জানা নেই।’
যশোর শহরের বড় বাজারের মাছ বাজার ঘুরে দেখা গেছে, ইলিশ মাছের সরবরাহ কম। যে কারণে ৫০০ থেকে ৬০০ গ্রাম ওজনের ইলিশ মাছ ১ হাজার ৪০০ থেকে ১ হাজার ৫০০ টাকা কেজি দরে বেচাকেনা হচ্ছে। খুচরা ইলিশ বিক্রেতা লিয়াকত আলী বলেন, ‘গত বছরের তুলনায় এ বছর ইলিশ মাছের দাম বাড়তি। বাজারে সরবরাহ কম। যে কারণে এ বছর ইলিশ মাছের দাম কমার সম্ভাবনা আর দেখছি না।’
যশোর বড় বাজার মৎস্যজীবী আড়তদার সমিতির সাধারণ সম্পাদক শেখ পিয়ার মোহাম্মদ জানান, আজ যশোরের বাজারে ৫০০ থেকে ৬০০ গ্রাম আকারের ইলিশ মাছ ১ হাজার ৪৫০ থেকে ১ হাজার ৫৫০ টাকা কেজি দরে পাইকারি কেনাবেচা হয়েছে। আর কেজি আকারের ইলিশ প্রতি কেজি ৩ হাজার টাকার ওপরে বেচাকেনা হয়েছে। ভারতের রপ্তানির কারণে স্থানীয় বাজারে এখন ইলিশ মাছ সরবরাহে ঘাটতি রয়েছে, যে কারণে দাম বেশি। অথচ গত বছর এই সময়ে কেজি আকারের ইলিশ মাছের দাম ছিল সর্বোচ্চ ১ হাজার ৬০০ টাকা কেজি। এবার প্রায় দ্বিগুণ দামে সেই ইলিশ কেনাবেচা হচ্ছে।
বেনাপোল স্থলবন্দরের মৎস্য পরিদর্শন ও মাননিয়ন্ত্রণ কেন্দ্র সূত্রে জানা গেছে, এ বছর সরকার ৩৭টি প্রতিষ্ঠানের অনুকূলে ১ হাজার ২০০ টন ইলিশ ভারতে রপ্তানির অনুমতি দিয়েছে। আজ থেকে ইলিশ মাছ রপ্তানি শুরু হলো। গত বছর ইলিশ রপ্তানির অনুমতি ছিল ২ হাজার ৪২০ টন। বেনাপোল বন্দর দিয়ে রপ্তানি হয়েছিল মাত্র ৫৩২ টন। এবারও অনুমোদনকৃত ইলিশ রপ্তানির কোটা পূরণ হবে কি না, তা নিয়ে সন্দেহ রয়েছে। ৫ অক্টোবরের মধ্যে ইলিশ রপ্তানি শেষ করতে নির্দেশ দিয়েছে মৎস্য অধিদপ্তর।
জানতে চাইলে বেনাপোল স্থলবন্দরের মৎস্য পরিদর্শন ও মাননিয়ন্ত্রণ কেন্দ্রের ফিশারিজ কোয়ারেন্টিন সজীব সাহা বলেন, দুর্গাপূজা উপলক্ষে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় অনুমোদিত ইলিশ রপ্তানির প্রথম চালানে বেনাপোল স্থলবন্দর দিয়ে ১২ দশমিক ৫০ ডলার মূল্যে ৩৭ দশমিক ৪৬০ টন ইলিশ রপ্তানি হয়েছে। ছয়টি প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে এই ইলিশ ভারতে পাঠানো হয়েছে। রপ্তানি করা ইলিশের একটি বাক্স খুলে দেখা গেছে, ৩৮টি ইলিশ মাছের ওজন ২১ কেজি; অর্থাৎ প্রতিটি ইলিশের ওজন ছিল ৫৫০ গ্রাম। এ ছাড়া ৭০০ থেকে ৮৫০ গ্রাম ওজনের ইলিশ মাছও রপ্তানি হয়েছে। ৫৫০ গ্রাম থেকে ৮৫০ গ্রাম আকারের মধ্যে ইলিশ মাছ রপ্তানি হচ্ছে।
পদ্মার রুপালি ইলিশ স্বাদ আর গন্ধে অতুলনীয় হওয়ায় দুই বাংলায় এ মাছ বেশ জনপ্রিয়। বিশেষ করে দুর্গাপূজায় অতিথি আপ্যায়নে খাবারের প্রধান তালিকায় ইলিশ রাখেন কলকাতার বাঙালিরা। আগে ইলিশ সাধারণ রপ্তানি পণ্যের তালিকায় উন্মুক্ত থাকলেও উৎপাদন সংকট দেখিয়ে ২০১২ সালে দেশের বাইরে ইলিশ রপ্তানি বন্ধ করে দেয় তৎকালীন সরকার। তবে ২০১৯ সাল থেকে বিশেষ বিবেচনায় কেবল দুর্গাপূজা উপলক্ষে আবারও ইলিশ রপ্তানির সুযোগ দেয় সরকার।
আরও পড়ুনদুর্গাপূজা উপলক্ষে ভারতের ‘বিশেষ অনুরোধে’ ইলিশ রপ্তানির অনুমতি: মৎস্য উপদেষ্টা২২ সেপ্টেম্বর ২০২৪