২০২২ সালে এক দুর্ঘটনায় পা ভেঙেছিল গ্লেন ম্যাক্সওয়েলের। চিকিৎসায় সুস্থ হলেও মাঝে মধ্যেই তাঁর পায়ে সমস্যা হতো। সেই পা নিয়ে ২০২৩ বিশ্বকাপে ওয়ানডে ইতিহাসের সেরা ইনিংসটি খেলেছিলেন ম্যাক্সওয়েল। সেই পায়ের জন্য ৩৬ বছর বয়সী এই অস্ট্রেলিয়ান গতকাল ওয়ানডে থেকে অবসরের ঘোষণা দিয়েছেন। ৫০ ওভারের ক্রিকেট ছাড়লেও টি২০ চালিয়ে যাবেন বলে জানিয়েছেন ম্যাক্সওয়েল।
২০২৩ বিশ্বকাপে ভারতের মুম্বাইয়ের ওয়াংখেড়ে স্টেডিয়ামে আফগানিস্তানের ২৯১ রান তাড়া করতে গিয়ে বিপদে পড়ে গিয়েছিল অস্ট্রেলিয়া। ৯১ রানে ৭ উইকেট পতনের পর মনে হচ্ছিল বড় পরাজয়ে বিশ্বকাপ থেকে বিদায় নিতে যাচ্ছে অসিরা। সেই পরিস্থিতি থেকে অবিশ্বাস্য ব্যাটিং করে দলকে জিতিয়ে দিয়েছিলেন ম্যাক্সওয়েল। একে তো দুর্ঘটনা থেকে সেরে ওঠা পা, তার ওপর ক্র্যাম্প! উইকেটে দাঁড়াতেই পারছিলেন না তিনি। প্রতিটি শটের পর তাঁর মাংসপেশিতে টান লাগত। অসহ্য ব্যথা, তীব্র যন্ত্রণায় মাটিতে শুয়ে পড়তে বাধ্য হতেন তিনি।
ওই অবস্থায় ১২৮ বলে অপরাজিত ২০১ রানের অবিস্মরণীয় ইনিংস খেলেছিলেন ম্যাক্সওয়েল। একা হাতে দলকে জিতিয়েছিলেন তিনি। ২০২ রানের অবিচ্ছিন্ন অষ্টম উইকেট জুটিতে কামিন্সের অবদান কেবল ১২ রান। এই ইনিংসকে ওয়ানডে ইতিহাসের সেরা না বলে উপায় আছে!
অনেকের মতে, ওই জয়ের স্পিরিটেই ফাইনালে স্বাগতিক ভারতকে হারিয়ে শিরোপা জিতে অস্ট্রেলিয়া। কাকতালীয়ভাবে ফাইনালে জয়সূচক রানটি এসেছিল ম্যাক্সওয়েলের ব্যাট থেকেই। দুটি বিশ্বকাপজয়ী এ তারকা ১৩ বছরের ওয়ানডে ক্যারিয়ারের ইতি টানলেন। গতকাল
‘ফাইনাল ওয়ার্ড পডকাস্ট’কে দেওয়া সাক্ষাৎকারে প্রধান নির্বাচক জর্জ বেইলির সঙ্গে আলোচনা প্রসঙ্গে ম্যাক্সওয়েল বলেন, ‘আমার মনে হচ্ছে, এই শারীরিক অবস্থায় আমার জন্য দল পিছিয়ে পড়ছে। আমি তাঁকে (বেইলি) বলেছি, আমার মনে হয় না আমি সেই (২০২৭) বিশ্বকাপ খেলতে পারব। এখন সময় হয়েছে আমার জায়গায় নতুন কাউকে সুযোগ দেওয়ার। যেন সে নিজেকে গড়ে তোলার জন্য পর্যাপ্ত সুযোগ পায়।’
চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির পরই স্টিভ স্মিথ ও মার্কাস স্টয়নিস ওয়ানডে থেকে অবসর নেন। ১৪৯টি ওয়ানডে খেলা ম্যাক্সওয়েলও তাদের পথেই হাঁটলেন। ২০১২ সালে ওয়ানডে অভিষেক হওয়া এই তারকা ব্যাট হাতে ৩৯৯০ রান করার পাশাপাশি অফস্পিনে ৭৭টি উইকেটও নিয়েছেন।
.উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: ল ন ম য ক সওয় ল ব শ বক প উইক ট
এছাড়াও পড়ুন:
আসামি না হয়েও স্বেচ্ছায় কারাগারে যাওয়া সেই যুবক প্রতারণা মামলায় গ্রেপ্তার
চট্টগ্রামে মাদকের একটি মামলায় আসামি সেজে আদালতে আত্মসমর্পণের পর কারাগারে যাওয়া এক যুবককে জালিয়াতি ও প্রতারণার মামলায় গ্রেপ্তার (শ্যোন অ্যারেস্ট) দেখিয়েছেন আদালত। তাঁর নাম মো. রাকিব। পুলিশের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে আজ মঙ্গলবার দুপুরে চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট এস এম আলাউদ্দিন মাহমুদ শুনানি শেষে এই আদেশ দেন। কারা কর্তৃপক্ষ বলছে, ১০ হাজার টাকার বিনিময়ে প্রকৃত আসামি মো. সুমনের হয়ে আদালতে স্বেচ্ছায় আত্মসমর্পণ করেন রাকিব। আদালতের আদেশে ১ জুলাই থেকে তিনি কারাগারে রয়েছেন।
নগর পুলিশের অতিরিক্ত উপকমিশনার (প্রসিকিউশন) মফিজ উদ্দিন প্রথম আলোকে বলেন, কারাগারে আটক রাকিবকে জালিয়াতি ও প্রতারণা মামলায় গ্রেপ্তার দেখানোর আবেদন করে কোতোয়ালি থানা-পুলিশ। শুনানি শেষে আদালত তা মঞ্জুর করেন। আসামিকে রিমান্ডের আবেদন করা হয়েছে।
আদালত সূত্র জানায়, ২০২৪ সালের ৩১ আগস্ট নগরের আকবর শাহ থানার কৈবল্যধাম এলাকায় একটি পিকআপ ভ্যানে অভিযান চালিয়ে ৪০ কেজি গাঁজা উদ্ধার করে র্যাব, যার মূল্য ৪ লাখ টাকা। ঘটনাস্থল থেকে গ্রেপ্তার করা হয় গাড়িচালক রাহাত ইসলামকে। পালিয়ে যান চালকের সহকারী (হেলপার) মো. সুমন। এ ঘটনায় র্যাব কর্মকর্তা বাদী হয়ে আকবর শাহ থানায় মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনে মামলা করেন। তদন্ত শেষে চলতি বছরের ২৬ ফেব্রুয়ারি আদালতে অভিযোগপত্র জমা দেয় পুলিশ। এতে রাহাত ইসলাম ও মো. সুমনকে আসামি করা হয়।
আদালত পুলিশের দেওয়া অভিযোগপত্রটি গ্রহণ করে পলাতক আসামি সুমনের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেন। এরই মধ্যে সুমনের গ্রামের বাড়ি নেত্রকোনার পূর্বধলা এলাকায় অভিযান চালায় পুলিশ। বিষয়টি জানতে পেরে সুমন নিজেকে কারামুক্ত রাখতে তাঁর পরিবর্তে নোয়াখালীর রাকিবকে আদালতে আত্মসমর্পণ করায় ১ জুলাই। চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মো. মোস্তফা শুনানি শেষে আসামির জামিন আবেদন নামঞ্জুর করে কারাগারে পাঠান। সুমনের হয়ে রাকিব আত্মসমর্পণের সময় তাঁর পক্ষে আইনজীবী ছিলেন ওয়াহিদ মুরাদ।
আদালতে একজনের পরিবর্তে আরেকজন আত্মসমর্পণের বিষয়টি ধরা না পড়লেও কারাগারে গিয়ে ধরা পড়ে। জাতীয় পরিচয়পত্রের ডেটাবেজে (তথ্যভান্ডার) ভোটারদের আঙুলের ছাপ সংরক্ষিত আছে। এ পদ্ধতিকে বলা হয় ফিঙ্গারপ্রিন্ট আইডেনটিফিকেশন অ্যান্ড ভেরিফিকেশন সিস্টেম। ২০২৩ সালের জানুয়ারি থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে এ পদ্ধতি ব্যবহার শুরু করে চট্টগ্রাম কারা কর্তৃপক্ষ। এরই মধ্যে আঙুলের ছাপে ধরা পড়েছে অনেক বন্দীর আসল পরিচয়। এসব ঘটনায় মামলাও হয়েছে। ২০২৩ সালের জানুয়ারি থেকে চলতি মাসের জুলাই পর্যন্ত আত্মসমর্পণ করে জালিয়াতির মাধ্যমে চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারাগারে আসা ১৬ জনের আঙুলের ছাপে শনাক্ত করা হয়।
চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারাগারের জ্যেষ্ঠ তত্ত্বাবধায়ক মো. ইকবাল হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, আদালত থেকে কারাগারে আসা প্রত্যেক নতুন আসামির আঙুলের ছাপ নেওয়া হয়। সেখানে আসামির জাতীয় পরিচয়পত্রে থাকা আসল পরিচয় উঠে আসে। ইকবাল হোসেন আরও বলেন, ‘সুমনের হয়ে কারাগারে আসা রাকিব স্বীকার করেছেন তিনি মাদক মামলার প্রকৃত আসামি নন। ১০ হাজার টাকার বিনিময়ে তিনি সুমন সেজেছেন। তাঁকে বলা হয়েছে, দ্রুত কারাগার থেকে ছাড়িয়ে নেওয়া হবে। তাই তিনি রাজি হয়েছেন। বিষয়টি চিঠি দিয়ে আদালতকে জানানো হয়েছে।’
আরও পড়ুনচট্টগ্রামে ‘আয়নাবাজি’, ধরা পড়েছে আঙুলের ছাপে০৮ নভেম্বর ২০২৩কারাগার থেকে চিঠি পাওয়ার পর মামলা করার নির্দেশ দেন চট্টগ্রাম চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট কাজী মিজানুর রহমান। একই সঙ্গে আসামিকে আত্মসমর্পণকারী আইনজীবী ওয়াহিদ মুরাদের কাছে কারণ ব্যাখ্যা চেয়েছেন আদালত। আদালতের প্রসিকিউশন শাখার আকবর শাহ থানার জিআরও সাইদুর রহমান বাদী হয়ে গত রোববার রাতে নগরের কোতোয়ালি থানায় প্রতারণা ও জালিয়াতির অভিযোগে মামলা করেন। মামলায় মো. রাকিব ও মো. সুমনকে আসামি করা হয়। সুমন এখনো পলাতক।