ঋণ নয়, যন্ত্রপাতি কেনায় ২৯৮ কোটি টাকা সরকারি বরাদ্দ চান চসিক মেয়র
Published: 2nd, June 2025 GMT
নগরের খাল ও নালা পরিষ্কার রাখতে যন্ত্রপাতি কেনার জন্য প্রস্তাবিত প্রকল্পের পুরো টাকাটা সরকারি বরাদ্দ হিসেবে চান চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের (চসিক) মেয়র ডা. শাহাদাত হোসেন।
সোমবার দুপুরে নগরের কালামিয়া বাজার ইসহাকেরপুল এলাকায় বির্জাখাল পরিদর্শনে গিয়ে সরকারের কাছে এই দাবি জানান তিনি। মেয়র জানান, নগরের ৫৭টি খাল ও ১৬০০ কিলোমিটার নালা পরিষ্কার রাখার জন্য যন্ত্রপাতি কিনতে ২০২২ সালে ৩৯৮ কোটি টাকার একটি প্রকল্প পাঠানো হয়েছিল। প্রকল্পটির ১০০ কোটি টাকা কাটছাট করে ২৯৮ কোটি টাকা করা হয়েছে। এরমধ্যে ১৬০ কোটি টাকা ঋণ হিসেবে দিতে চায় সরকার।
ডা.
তিনি বলেন, ‘খাল-নালা পরিষ্কার রাখার জন্য যন্ত্রপাতির কোনো বিকল্প নেই। ইতোমধ্যে আমাদের যে মেশিনগুলো আছে সেগুলো ১৫ থেকে ২০ বছরের পুরনো হয়ে গেছে। কাজ করতে গিয়ে ভেঙে গেছে। সেগুলো ঠিক করতে গিয়ে আমাদের যে পরিমাণ খরচ হচ্ছে সেজন্য আমি ৩৯৮ কোটি টাকার যে প্রকল্প সেটা বারবার মন্ত্রণালয়ে কথা বলে অনুমোদনের চেষ্টা করেছি।’
বির্জা খাল ফের পরিষ্কার করবে চসিক
নগরের বির্জাখালটির একাংশ নিজস্ব অর্থায়নে পরিষ্কারের উদ্যোগ নিয়েছিল জামায়াতে ইসলামী চট্টগ্রাম মহানগর শাখা। তখন খালটি আবর্জনা ভরা ছিল। দীর্ঘদিন পরিষ্কার না করায় জন্মেছিল আগাছা। আজ সিটি মেয়র ডা. শাহাদাত হোসেন সেখানে গিয়ে দেখতে পান খালের একাংশে ভাসমান আবর্জনা জমে আছে। খাল থেকে তোলা আবর্জনাও খালের পাড়ে পড়ে আছে।
এসময় স্থানীয়দের উদ্দেশে ডা. শাহাদাত হোসেন বলেন, ‘জনগণকে ময়লা থেকে পরিত্রাণ দেওয়ার দায়িত্ব আমাদের। সম্পূর্ণভাবে ময়লাগুলো পরিষ্কার হয়নি। এখন এটা আমাদের পরিষ্কার করতে হবে। আগামীকাল থেকে আমাদের সিটি করপোরেশনের স্পেশাল দল আবার কাজ শুরু করবে। কারণ যে পরিমাণ পরিষ্কার হবে চিন্তা করেছিলাম, সেটা হয়নি।’
সিটি মেয়র বলেন, ‘এটা জামায়াতে ইসলামী আমাদের কাছে চেয়েছে, আমরা দিয়েছি। তারপরও যে পরিমাণ পরিষ্কার হওয়ার কথা, সেখানে আজকে দেখতে পাচ্ছি প্রচুর পরিমাণে ময়লা এখানে পড়ে আছে। সেটা আবার পরিষ্কার করতে হবে।’
এসময় চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের প্রধান পরিচ্ছন্ন কর্মকর্তা ইখতিয়ার উদ্দিন আহমেদ চৌধুরী ও মেয়রের ব্যক্তিগত সহকারী মারুফুল হক চৌধুরী মারুফসহ স্থানীয় লোকজন উপস্থিত ছিলেন।
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: পর ষ ক র র প রকল প পর ম ণ আম দ র র জন য বর দ দ নগর র সরক র
এছাড়াও পড়ুন:
মাঝরাতে সরকারি কর্মকাণ্ড কতটা স্বাভাবিক
বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারের রাতের কর্মকাণ্ড নিয়ে বোধকরি একটা মহাকাব্য লিখে ফেলা সম্ভব। তাঁরা যেভাবে গভীর কিংবা শেষ রাতে নানা সিদ্ধান্ত নিচ্ছেন, ফেসবুকে বার্তা দিচ্ছেন; তাতে তো মনে হচ্ছে সরকারের কর্তা-ব্যক্তিরা দিনে কাজ না করে রাতেই মনে হয় বেশি কাজ করেন! কয়েকটা উদাহরণ বরং দেওয়া যাক।
মাস কয়েক আগে যখন দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি অস্বাভাবিক ভাবে খারাপ হয়ে গেল, আমাদের স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী রাত তিনটার সময় সংবাদ সম্মেলন ডাকলেন! বাংলাদেশের ইতিহাসে রাত তিনটার সময় আর কোনো মন্ত্রী এ ধরনের সম্মেলনের আয়োজন করেছেন কি না, আমার অন্তত জানা নেই। আমরা সবাই ভাবলাম, তিনি হয়তো বড় কোনো ঘোষণা দেবেন। এরপর কী দেখলাম?
তিনি খুব সাধারণভাবে বললেন, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখার জন্য সরকার নিজেদের উদ্যোগকে কঠিন ও শক্তিশালী করার চেষ্টা করবে।
সপ্তাহখানেক আগে হঠাৎ আকাশ থেকে একটি যুদ্ধবিমান ঢাকা শহরের উত্তরার মাইলস্টোন স্কুল বিল্ডিংয়ে ভেঙে পড়ল। আগুনে দগ্ধ শিশুরা ধ্বংসস্তূপের নিচ থেকে নিজেরা উঠে এসে হাঁটছে; এমন দৃশ্যও আমাদের দেখতে হয়েছে। যে দৃশ্য দেখলে যে কেউ হয়তো ট্রমায় চলে যাবে। ওই স্কুলের এইচএসসি পরীক্ষার্থীরা হয়তো সরাসরি সেই দৃশ্য দেখেছে। খুব স্বাভাবিকভাবেই চলতে থাকে—এইচএসসি পরীক্ষা পিছিয়ে দেওয়া সময়ের দাবি ছিল। এ সিদ্ধান্ত সরকার দিনের বেলাতেই নিতে পারত। অথচ আমরা কী দেখলাম?
সরকারের পক্ষ থেকে রাত তিনটার দিকে ফেসবুকে এসে ঘোষণা করা হলো, পরের দিনের এইচএসসি পরীক্ষা পেছানো হয়েছে।
যখনই আপনি সরকারের অস্বাভাবিক আচরণ নিয়ে প্রশ্ন করবেন কিংবা আপনার মনে এই প্রশ্ন জাগবে; তখনই কিন্তু রাষ্ট্র ভালো আছে কি না; সেই প্রশ্নও সামনে আসবে।দিন দু-এক আগে এ সরকারকেই যাঁরা চাকরি দিয়েছেন, এ কথা বলছি কারণ, সরকারের প্রধান উপদেষ্টা নিজেই বলেছিলেন, ‘ছাত্ররা আমার নিয়োগকর্তা’—সেই ছাত্রদের সংগঠন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সাবেক মুখপাত্র উমামা ফাতেমা গভীর রাতে ফেসবুক এসে লাইভ করেন প্রায় আড়াই ঘণ্টা।
এই আড়াই ঘণ্টার লাইভে মূল যে বক্তব্য তিনি তুলে ধরেছেন, সারমর্ম করলে দাঁড়ায়: বৈষম্যবিরোধী প্ল্যাটফর্ম মানি মেকিং মেশিনে পরিণত হয়েছে এবং অনেকেই এর সঙ্গে জড়িত। তিনি এটাও বলেছেন, এই সংগঠনের সব সিদ্ধান্ত হেয়ার রোড থেকে আসে। অর্থাৎ উপদেষ্টারা যেখানে থাকেন।
এদিকে সোমবার দিবাগত রাত তিনটার দিকে উপদেষ্টা মাহফুজ আলম একটা ফেসবুক পোস্ট করেছেন। যদিও ফেসবুক স্ট্যাটাসটি তিনি বেশ কয়েকবার এডিট করেছেন। তবে প্রথমে যা লিখেছেন, সেটা হচ্ছে, নতুন একটি দলের মহারথীদের কয়েকজন দুর্নীতিতে জড়িত। এ ছাড়া তিনি এটাও বলেছেন, একটা সার্কেলের সবাই দুর্নীতিগ্রস্ত!
এখন প্রশ্ন হচ্ছে, তাহলে তাঁদের কেন প্রশ্রয় দেওয়া হলো? আপনারা যদি জানেনই কিছু মানুষ দুর্নীতিগ্রস্ত। তাহলে সরকারের অংশ হিসেবে আপনাদের তো দায়িত্ব তাঁদের আইনের আওতায় আনা। সেটা না করে ফেসবুকে পোস্ট করতে হচ্ছে কেন? তা–ও আবার রাত তিনটায়!
এই সরকার কি মাঝরাতের ফেসবুকীয় সরকারে পরিণত হয়েছে? পরীক্ষা পেছানোর মতো সিদ্ধান্ত যখন মাঝরাতে নিতে হয়, সংবাদ সম্মেলন যখন রাত তিনটায় করতে হয়, তখন তো প্রশ্ন জাগতেই পারে। কারণ এটা তো স্বাভাবিক কোনো বিষয় নয়।
যখনই আপনি সরকারের অস্বাভাবিক আচরণ নিয়ে প্রশ্ন করবেন কিংবা আপনার মনে এই প্রশ্ন জাগবে; তখনই কিন্তু রাষ্ট্র ভালো আছে কি না; সেই প্রশ্নও সামনে আসবে।
রাষ্ট্র যদি ভালো না থাকে তবে তার মাত্রা কতটুকু, সেটা নির্ণয় এবং সে অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া এখন জরুরি হয়ে পড়েছে।
আমিনুল ইসলাম প্রভাষক, এস্তোনিয়ান এন্ট্রাপ্রেনিউরশিপ ইউনিভার্সিটি
[email protected]