পবিত্র হজ পালনের লক্ষ্যে সৌদি আরবের পবিত্র মক্কায় ১৩ লাখের বেশি হজযাত্রী জমায়েত হয়েছেন। আগামী বুধবার চলতি বছরের হজ শুরু হবে। হজের আগেই সৌদি আরবে প্রচণ্ড তাপপ্রবাহ শুরু হয়েছে। অতীতের অভিজ্ঞতার আলোকে নিরাপদে হজ পালনের জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা জোরদার করেছে সৌদি কর্তৃপক্ষ।

সৌদি আবহাওয়া অধিদপ্তরের পূর্বাভাস বলছে, চলতি সপ্তাহে মক্কা ও আশপাশের অঞ্চলে তাপমাত্রা ৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াস ছাড়িয়ে যেতে পারে। এ পরিস্থিতিতে বিশ্বের অন্যতম বৃহৎ ধর্মীয় জনসমাগম ঘিরে নিরাপত্তা ও স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করতে বিশেষ প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে।

হজ ইসলামের পাঁচটি মূল স্তম্ভের একটি। শারীরিক ও আর্থিকভাবে সক্ষম প্রত্যেক মুসলিমের জীবনে অন্তত একবার হজ পালন করা ফরজ।

সৌদি কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, গত শুক্রবার পর্যন্ত ১৩ লাখের বেশি হজযাত্রী সৌদি আরবে পৌঁছেছেন। এবারের হজ ব্যবস্থাপনায় ৪০টির বেশি সরকারি সংস্থা এবং আড়াই লাখ কর্মকর্তা-কর্মচারী মোতায়েন করা হয়েছে।

২০২৪ সালের ভয়াবহ গরমে কয়েক শ হজযাত্রীর মৃত্যু হয়েছিল। তাই এবারের প্রস্তুতিতে তাপজনিত ঝুঁকি মোকাবিলায় জোর দেওয়া হয়েছে।

সৌদি হজমন্ত্রী তৌফিক আল-রাবিয়াহ জানিয়েছেন, এবার মক্কায় ছায়াযুক্ত এলাকার পরিমাণ বাড়িয়ে ৫০ হাজার বর্গমিটার (১২ একর) করা হয়েছে। মোতায়েন করা হচ্ছে অতিরিক্ত কয়েক হাজার চিকিৎসক। চার শতাধিক শীতলীকরণ ইউনিট স্থাপন করা হয়েছে।

নজরদারিতে যুক্ত হচ্ছে সর্বাধুনিক কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) প্রযুক্তি। হজ পালনকারী লাখো মানুষের জনস্রোত নিয়ন্ত্রণে ড্রোন থেকে প্রাপ্ত ভিডিও ও তথ্য বিশ্লেষণ করে সহায়তা নেওয়া হবে।

‘আল্লাহর পক্ষ থেকে নিয়ামত’

মসজিদ আল-হারামের পাশে দাঁড়িয়ে ফিলিপাইনের আইনজীবী ও শরিয়াহ্‌ পরামর্শক আবদুল মাজিদ আতাই বলেন, ‘এটা আল্লাহর পক্ষ থেকে একটা বড় নিয়ামত। এখানে এসে আমরা খুব শান্তি ও নিরাপত্তা অনুভব করছি।’

নাইজেরিয়ার ২৭ বছর বয়সী আবদুলহামিদ টানা দ্বিতীয়বার হজ পালন করতে এসেছেন। তিনি বলেন, ‘আমি খুব খুশি। কিন্তু এই গরমে আমি রোদচশমা ছাড়া বের হচ্ছি না। মক্কার আবহাওয়া প্রচণ্ড গরম।’

হজের বেশির ভাগ আনুষ্ঠানিকতা জুন মাসের প্রচণ্ড দাবদাহে সম্পন্ন করতে হবে। গত বছর হজের সময় তাপমাত্রা বেড়ে ৫১ দশমিক ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াসে দাঁড়িয়েছিল। তখন ১ হাজার ৩০১ জন হজযাত্রী প্রাণ হারিয়েছিলেন, যাঁদের অধিকাংশই ছিলেন অননুমোদিত। বিশ্লেষকদের ধারণা, এসব হজযাত্রীর সঙ্গে বৈধ কাগজপত্র না থাকায় তাঁরা তাপনিয়ন্ত্রিত তাঁবু বা বাসের সুবিধা নিতে পারেননি।

তবে জার্মানভিত্তিক গবেষণা সংস্থা ক্লাইমেট অ্যানালিটিকসের ফাহাদ সাঈদ বলেন, ‘তাপমাত্রার তীব্রতা এতটাই বেশি ছিল যে তাদের [সৌদির] অভিযোজন ব্যবস্থাগুলো ব্যর্থ হয়েছিল।’

পবিত্র মক্কা নগরীতে হাঁটার সময় অভিবাদন জানাচ্ছেন এক নারী হজযাত্রী। ২ জুন ২০২৫.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: হজয ত র

এছাড়াও পড়ুন:

পিকিং বিশ্ববিদ্যালয়ে বংশে তিনি প্রথম, তাই এত আয়োজন

চীনে উচ্চশিক্ষার জন্য অভিজাত বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর মধ্যে প্রথম সারিতে রয়েছে বেইজিংয়ের পিকিং বিশ্ববিদ্যালয়। সেখানে ভর্তি হওয়ার সুযোগ পাওয়া দেশটির যেকোনো শিক্ষার্থীর জন্য দারুণ সম্মানের। এ বছর পিকিং বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির সুযোগ পেয়েছেন লি গুওইয়াও।

লির বাড়ি জেজিয়াং প্রদেশের ওয়েনজউ শহরে। এর আগে তাঁর বংশে শত বছরের ইতিহাসে কেউ পিকিং বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সুযোগ পাননি। এত বড় সম্মানের উপলক্ষ উদ্‌যাপন করতে তাই বিন্দুমাত্র কার্পণ্য করেননি লির পরিবার ও গ্রামের বাসিন্দারা। রীতিমতো লালগালিচা বিছিয়ে, মোটর শোভাযাত্রা করে, ব্যান্ড বাজিয়ে পরিবার ও গ্রামের মুখ উজ্জ্বল করা লিকে সংবর্ধনা দেন তাঁরা, সঙ্গে ছিল ভূরিভোজের ব্যবস্থা। চীনের সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম উইবোতে এই সংবর্ধনার ছবি ও ভিডিও রীতিমতো ভাইরাল হয়ে যায়।

চীনে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির জন্য জাতীয় পর্যায়ে একটি পরীক্ষা নেওয়া হয়। যেটি ‘গাওকাও’ নামে পরিচিত। তীব্র প্রতিযোগিতাপূর্ণ এই পরীক্ষা বেশ কঠিন। পরীক্ষায় মোট ৭৫০ নম্বরের মধ্যে লি পেয়েছেন ৬৯১।

লির গ্রামের এক প্রতিবেশী জানান, লির বাবা নির্মাণশ্রমিক। লির মা মাত্র ২ হাজার ৮০০ ইউয়ান বেতনে একটি সুপারশপে কাজ করেন। সত্যি বলতে, ছেলেটি সম্পূর্ণ নিজের চেষ্টা আর পরিশ্রমে এটা অর্জন করেছেন।

প্রতিবেশী আরেক গ্রামবাসী বলেন, লি তাঁর বাবার কাছ থেকে পাওয়া একটি পুরোনো মুঠোফোন দিয়ে প্রশ্নোত্তর অনুশীলন করতেন। সাপ্তাহিক ছুটির দিনগুলোয় গ্রামের গ্রন্থাগারে বসে পরীক্ষার প্রশ্নপত্র হাতে লিখে তারপর সেগুলো অনুশীলন করতেন। মাধ্যমিকে তিনি কখনো কোনো প্রাইভেট শিক্ষকের কাছে পড়েননি।

লিকে সংবর্ধনা দিতে শতাব্দীপ্রাচীন ঐতিহ্য ভেঙে তাঁদের গ্রামের পূর্বপুরুষদের মন্দিরের প্রধান ফটক খোলা হয়, যা একটি বিশেষ সম্মানের প্রতীক হিসেবে বিবেচিত।

লিকে সংবর্ধনা দেওয়ার ছবি ও ভিডিও চীনজুড়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে আলোচনার জন্ম দিয়েছে।

অনলাইনে একজন লেখেন, ‘পিকিং বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হতে ৬৯১ নম্বর! এটা অবিশ্বাস্য। সত্যিই পুরো পরিবারের মুখ উজ্জ্বল করেছে!’

তবে কেউ কেউ এই জমকালো উদ্‌যাপন নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন।

তাঁরা বলেছেন, এটা কি একটু বাড়াবাড়ি নয়? উৎসবটা খুবই জাঁকজমকপূর্ণ, এতে ছেলেটার ওপর অকারণ চাপ তৈরি হতে পারে। স্নাতক হওয়ার পর কি পরিবার তাঁর কাছ থেকে অনেক বেশি কিছু প্রত্যাশা করবে না?

সম্পর্কিত নিবন্ধ