ভারতীয় বংশোদ্ভূত ব্রিটিশ লেখক সালমান রুশদি বলেছেন, ছুরিকাঘাতের শিকার হওয়ার ঘটনার অধ্যায় পেছনে ফেলে তিনি এখন সামনের দিকে এগিয়ে যাচ্ছেন। হামলাকারীর সর্বোচ্চ সাজা হওয়ায় তিনি সন্তুষ্ট।

২০২২ সালে নিউইয়র্কে বক্তৃতা মঞ্চে ছুরিকাঘাতের শিকার হন সালমান রুশদি। হামলাকারী ২৭ বছর বয়সী হাদি মাতারকে গত মে মাসে ২৫ বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে।

৭৬ বছর বয়সী এই লেখক গতকাল রোববার যুক্তরাজ্যে হে ফেস্টিভ্যালে অংশ নেন। সেখানে তিনি বলেন, ‘এই হামলার পর থেকে সবাই কেবল ওই বিষয়টাই জানতে চেয়েছে; কিন্তু আমি ছুরিকাঘাতের অধ্যায়টা পেরিয়ে এসেছি।’

সম্প্রতি রুশদি বিবিসি রেডিও ৪-এর ‘টুডে’অনুষ্ঠানে অংশ নেন। সেখানে তিনি হামলাকারীর সাজা হওয়ায় সন্তুষ্টি প্রকাশ করেন।

হে ফেস্টিভ্যালে রুশদি বলেন, ‘পরে হামলার ঘটনাস্থলে যাওয়ার সময়টা আমার জন্য গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্ত ছিল। আমি ও আমার স্ত্রী এলিজা সেখানে গিয়েছিলাম। যেখানে পড়ে গিয়েছিলাম, সেখানেই আবার দাঁড়াতে পারি—এটা আমি নিজেকে দেখাতে চেয়েছিলাম।’

এই ঘটনার স্মৃতি নিয়ে রুশদি ‘নাইফ’ নামে আত্মজৈবনিক বই লিখেছেন। আগামী নভেম্বর মাসে তাঁর লেখা নতুন গল্পসংকলন ‘দ্য ইলেভেনথ আওয়ার’ প্রকাশিত হতে যাচ্ছে। হামলার পর এটাই তাঁর প্রথম কোনো সংকলন প্রকাশিত হতে যাচ্ছে।

নিউইয়র্কের হামলায় রুশদি এক চোখের দৃষ্টিশক্তি হারিয়েছেন, তাঁর যকৃৎ (লিভার) মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। স্নায়ুর ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় একটি হাত অচল হয়ে গেছে। তিনি বলেন, ‘আমার সব কিছু দারুণ অনুভব করছি। তারপরও ডান চোখ না থাকার মতো কিছু বিষয়ে আমার হতাশা আছে। তবে সামগ্রিকভাবে আমি নিজেকে সৌভাগ্যবান মনে করি এবং প্রত্যাশার চেয়েও ভালো আছি।’

হে ফেস্টিভ্যালে রুশদির আলোচনায় কঠোর নিরাপত্তা ছিল। নির্ধারিত সময়ের চেয়ে ১৫ মিনিট দেরিতে অনুষ্ঠান শুরু হয়।

‘স্বাধীন মতপ্রকাশ মানেই সহ্য করা’

আলোচনায় সালমান রুশদি বলেন, ‘মতপ্রকাশের স্বাধীনতা মানে এমন কথাও সহ্য করা, যেটা আপনি পছন্দ করেন না।’ নিজের লেখা বই ‘স্যাটানিক ভার্সেস’ প্রকাশের পরপরই তাঁকে নিয়ে তৈরি একটি চলচ্চিত্রের উদাহরণ দিয়ে রুশদি বলেন, ‘সেই ছবিতে আমাকে খলনায়ক হিসেবে দেখানো হয়েছিল। ব্রিটিশ বোর্ড অব ফিল্ম ক্ল্যাসিফিকেশন (বিবিএফসি) ছবিটি ‘শতরকম অপমানজনক’ আখ্যা দিয়ে ছাড়পত্র দেয়নি; কিন্তু তিনি ছবিটি মুক্তি দিতে অনুরোধ করেছিলেন।

রুশদি বলেন, ‘আমরা এমন একসময় বাস করছি, যখন মানুষ খুব সহজেই নিজের অপছন্দের মতামত থামিয়ে দিতে চায়। এটা খুব বিপজ্জনক প্রবণতা।’ তরুণদের প্রতি তাঁর পরামর্শ, ‘এ ব্যাপারে ভাবতে হবে।’

মার্কিন রাজনীতি প্রসঙ্গে রুশদি বলেন, ‘আমেরিকার অবস্থা ভালো নয়।’ প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পকে ইঙ্গিত করে তিনি বলেন, ‘একসময় আমরা ওবামা দম্পতির নেতৃত্বে আশার আলো দেখেছিলাম। আর এখন যেটা চলছে, .

.. হতাশাজনক।’

তবে ভবিষ্যৎ নিয়ে এখনো আশাবাদী জানিয়ে তিনি বলেন, ‘আমার মনে হয় আমি আশাবাদের রোগে ভুগি... কোনোভাবেই মন থেকে সরাতে পারি না যে, শেষমেশ সব ঠিকই হয়ে যাবে।’

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: প রক শ

এছাড়াও পড়ুন:

প্রধান উপদেষ্টার নিউইয়র্ক সফরে সঙ্গী হচ্ছেন ফখরুল, তাহেরসহ চার রাজনীতিবিদ

জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের অধিবেশনে যোগ দিতে আগামী ২১ সেপ্টেম্বর দিবাগত রাতে নিউইয়র্কের উদ্দেশে ঢাকা ছাড়বেন প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস। তাঁর সফরসঙ্গী হিসেবে যাবেন চারজন রাজনীতিবিদ। তাঁরা হলেন- বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, জামায়াতে ইসলামীর নায়েবে আমির সৈয়দ আব্দুল্লাহ মুহাম্মদ তাহের, জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) মহাসচিব আখতার হোসাইন এবং বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের পররাষ্ট্রবিষয়ক উপদেষ্টা হুমায়ুন কবির।

আজ বুধবার বিকেলে রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে এক সংবাদ সম্মেলনে এই তথ্য জানান পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেন। জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের ৮০তম অধিবেশনে যোগদান উপলক্ষে প্রধান উপদেষ্টার নিউইয়র্ক সফরের বিস্তারিত জানাতে এই সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়।

দেশের বিশেষ পরিস্থিতির প্রেক্ষাপটে চারজন রাজনীতিবিদ প্রধান উপদেষ্টার সফরসঙ্গী হচ্ছেন বলে সংবাদ সম্মেলনে জানান পররাষ্ট্র উপদেষ্টা। তিনি বলেন, জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের অধিবেশনে যোগ দিতে একটি বাণিজ্যিক ফ্লাইটে ২১ সেপ্টেম্বর দিবাগত রাতে নিউইয়র্কের উদ্দেশে দেশ ছাড়বেন প্রধান উপদেষ্টা। ২২ সেপ্টেম্বর তিনি নিউইয়র্ক পৌঁছাবেন। তিনি দেশে ফিরবেন ২ অক্টোবর।

২৬ সেপ্টেম্বর জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদে প্রধান উপদেষ্টা ভাষণ দেবেন জানিয়ে তৌহিদ হোসেন বলেন, প্রধান উপদেষ্টা তাঁর বক্তব্যে বিগত এক বছরে দেশে ঘটে যাওয়া সংস্কার ও আগামী দিনের নির্বাচন অনুষ্ঠানের মাধ্যমে একটি সত্যিকারের গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রব্যবস্থা গড়ে তোলার দৃঢ় প্রত্যয় বিশ্ব দরবারে তুলে ধরবেন বলে আশা করা হচ্ছে।

পররাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, এ বছরের অধিবেশন বাংলাদেশের জন্য খুবই তাৎপর্যপূর্ণ। কারণ, ৩০ সেপ্টেম্বর জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের সভাপতির সভাপতিত্বে ‘হাই লেভেল কনফারেন্স অন দ্য সিচুয়েশন অব রোহিঙ্গা মুসলিমস অ্যান্ড আদার মাইনোরিটিস ইন মিয়ানমার’ শীর্ষক একটি উচ্চ পর্যায়ের সভা হবে। রোহিঙ্গা সংকটকে কেন্দ্র করে জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদে এমন একটি উচ্চ পর্যায়ের সভার আয়োজন এবারই প্রথম। এই উচ্চ পর্যায়ের সভা থেকে যেন রোহিঙ্গা সংকটের দ্রুত সমাধানের একটি কার্যকর পরিকল্পনা উঠে আসে, সেজন্য আন্তর্জাতিক অংশীদার ও রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর প্রতিনিধিদের নিয়ে গত মাসে কক্সবাজারে একটি অংশীদার সভা অনুষ্ঠিত হয়।

সংবাদ সম্মেলনে পররাষ্ট্র উপদেষ্টার সঙ্গে উপস্থিত ছিলেন পররাষ্ট্র সচিব আসাদ আলম সিয়াম, প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম, উপ-প্রেস সচিব আবুল কালাম আজাদ মজুমদার, জ্যেষ্ঠ সহকারী প্রেস সচিব ফয়েজ আহম্মদ প্রমুখ।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • প্রধান উপদেষ্টার জাতিসংঘ সফর ২২ সেপ্টেম্বর, সঙ্গী মির্জা ফখরুলসহ চার রাজনীতিক
  • প্রধান উপদেষ্টার নিউইয়র্ক সফরে সঙ্গী হচ্ছেন ফখরুল, তাহেরসহ চার রাজনীতিবিদ
  • নিউইয়র্ক টাইমসের বিরুদ্ধে ১৫ বিলিয়ন ডলারের মামলা করবেন ট্রাম্প
  • ইসরায়েলি বন্ডে আর বিনিয়োগ নয়—ঘোষণা দিলেন জোহরান মামদানি