ছুরিকাঘাতের অধ্যায় পেরিয়ে এসেছি, বললেন সালমান রুশদি
Published: 2nd, June 2025 GMT
ভারতীয় বংশোদ্ভূত ব্রিটিশ লেখক সালমান রুশদি বলেছেন, ছুরিকাঘাতের শিকার হওয়ার ঘটনার অধ্যায় পেছনে ফেলে তিনি এখন সামনের দিকে এগিয়ে যাচ্ছেন। হামলাকারীর সর্বোচ্চ সাজা হওয়ায় তিনি সন্তুষ্ট।
২০২২ সালে নিউইয়র্কে বক্তৃতা মঞ্চে ছুরিকাঘাতের শিকার হন সালমান রুশদি। হামলাকারী ২৭ বছর বয়সী হাদি মাতারকে গত মে মাসে ২৫ বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে।
৭৬ বছর বয়সী এই লেখক গতকাল রোববার যুক্তরাজ্যে হে ফেস্টিভ্যালে অংশ নেন। সেখানে তিনি বলেন, ‘এই হামলার পর থেকে সবাই কেবল ওই বিষয়টাই জানতে চেয়েছে; কিন্তু আমি ছুরিকাঘাতের অধ্যায়টা পেরিয়ে এসেছি।’
সম্প্রতি রুশদি বিবিসি রেডিও ৪-এর ‘টুডে’অনুষ্ঠানে অংশ নেন। সেখানে তিনি হামলাকারীর সাজা হওয়ায় সন্তুষ্টি প্রকাশ করেন।
হে ফেস্টিভ্যালে রুশদি বলেন, ‘পরে হামলার ঘটনাস্থলে যাওয়ার সময়টা আমার জন্য গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্ত ছিল। আমি ও আমার স্ত্রী এলিজা সেখানে গিয়েছিলাম। যেখানে পড়ে গিয়েছিলাম, সেখানেই আবার দাঁড়াতে পারি—এটা আমি নিজেকে দেখাতে চেয়েছিলাম।’
এই ঘটনার স্মৃতি নিয়ে রুশদি ‘নাইফ’ নামে আত্মজৈবনিক বই লিখেছেন। আগামী নভেম্বর মাসে তাঁর লেখা নতুন গল্পসংকলন ‘দ্য ইলেভেনথ আওয়ার’ প্রকাশিত হতে যাচ্ছে। হামলার পর এটাই তাঁর প্রথম কোনো সংকলন প্রকাশিত হতে যাচ্ছে।
নিউইয়র্কের হামলায় রুশদি এক চোখের দৃষ্টিশক্তি হারিয়েছেন, তাঁর যকৃৎ (লিভার) মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। স্নায়ুর ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় একটি হাত অচল হয়ে গেছে। তিনি বলেন, ‘আমার সব কিছু দারুণ অনুভব করছি। তারপরও ডান চোখ না থাকার মতো কিছু বিষয়ে আমার হতাশা আছে। তবে সামগ্রিকভাবে আমি নিজেকে সৌভাগ্যবান মনে করি এবং প্রত্যাশার চেয়েও ভালো আছি।’
হে ফেস্টিভ্যালে রুশদির আলোচনায় কঠোর নিরাপত্তা ছিল। নির্ধারিত সময়ের চেয়ে ১৫ মিনিট দেরিতে অনুষ্ঠান শুরু হয়।
‘স্বাধীন মতপ্রকাশ মানেই সহ্য করা’
আলোচনায় সালমান রুশদি বলেন, ‘মতপ্রকাশের স্বাধীনতা মানে এমন কথাও সহ্য করা, যেটা আপনি পছন্দ করেন না।’ নিজের লেখা বই ‘স্যাটানিক ভার্সেস’ প্রকাশের পরপরই তাঁকে নিয়ে তৈরি একটি চলচ্চিত্রের উদাহরণ দিয়ে রুশদি বলেন, ‘সেই ছবিতে আমাকে খলনায়ক হিসেবে দেখানো হয়েছিল। ব্রিটিশ বোর্ড অব ফিল্ম ক্ল্যাসিফিকেশন (বিবিএফসি) ছবিটি ‘শতরকম অপমানজনক’ আখ্যা দিয়ে ছাড়পত্র দেয়নি; কিন্তু তিনি ছবিটি মুক্তি দিতে অনুরোধ করেছিলেন।
রুশদি বলেন, ‘আমরা এমন একসময় বাস করছি, যখন মানুষ খুব সহজেই নিজের অপছন্দের মতামত থামিয়ে দিতে চায়। এটা খুব বিপজ্জনক প্রবণতা।’ তরুণদের প্রতি তাঁর পরামর্শ, ‘এ ব্যাপারে ভাবতে হবে।’
মার্কিন রাজনীতি প্রসঙ্গে রুশদি বলেন, ‘আমেরিকার অবস্থা ভালো নয়।’ প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পকে ইঙ্গিত করে তিনি বলেন, ‘একসময় আমরা ওবামা দম্পতির নেতৃত্বে আশার আলো দেখেছিলাম। আর এখন যেটা চলছে, .
তবে ভবিষ্যৎ নিয়ে এখনো আশাবাদী জানিয়ে তিনি বলেন, ‘আমার মনে হয় আমি আশাবাদের রোগে ভুগি... কোনোভাবেই মন থেকে সরাতে পারি না যে, শেষমেশ সব ঠিকই হয়ে যাবে।’
উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: প রক শ
এছাড়াও পড়ুন:
নিউইয়র্কের ম্যানহাটানে বন্দুকধারীর গুলিতে পুলিশসহ নিহত ৫
যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্ক শহরের ম্যানহাটানের মধ্যাঞ্চলে এক বন্দুকধারীর গুলিতে পাঁচজন নিহত হয়েছেন। নিহত ব্যক্তিদের মধ্যে একজন পুলিশ কর্মকর্তা এবং সন্দেহভাজন বন্দুকধারীও রয়েছেন। স্থানীয় সময় গতকাল সোমবার সন্ধ্যায় এ ঘটনা ঘটে।
আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর বরাত দিয়ে মার্কিন সংবাদমাধ্যম সিএনএন এ তথ্য জানিয়েছে। আরও বলা হয়েছে, সন্দেহভাজন বন্দুকধারী ‘আত্মঘাতী’ হয়েছেন বলে প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে।
ঘটনার পরপর সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে পোস্ট দিয়ে নিউইয়র্কের মেয়র এরিক অ্যাডামস জানান, একজন পুলিশ কর্মকর্তাকে ‘আঘাত’ করা হয়েছে। ওই পুলিশ কর্মকর্তার পরিবারের প্রতি গভীর সমবেদনা জানান মেয়র।
যদিও নিউইয়র্ক পুলিশের মুখপাত্র পরবর্তী সময় বলেন, তিনি একজন পুলিশ কর্মকর্তা নিহত হওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত কিংবা অস্বীকার—কোনোটাই করতে পারছেন না।
পুলিশ জানায়, ঘটনাস্থল ৩৪৫ পার্ক এভিনিউ এবং ইস্ট ফিফটি ওয়ান স্ট্রিটের চারপাশ এখন পুলিশের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। আর একমাত্র সন্দেহভাজন বন্দুকধারী নিহত হয়েছেন। যদিও তাঁর নাম-পরিচয় এখনো জানানো হয়নি।
এক্সে পোস্ট দিয়ে পুলিশ কমিশনার জেসিকা টিসচ লিখেন, এ মুহূর্তে ঘটনাস্থল নিয়ন্ত্রণে আনা হয়েছে এবং একমাত্র সন্দেহভাজন বন্দুকধারীকে নিষ্ক্রিয় করা হয়েছে।
প্রত্যক্ষদর্শী একজন নারী নাম প্রকাশ না করার শর্তে এএফপিকে জানান, একটি অফিস ভবনে এ ঘটনা ঘটেছে। তিনি বলেন, ‘আমি তখন পাশেই ছিলাম। তিনি (বন্দুকধারী) একের পর এক ফ্লোরে ঘুরছিলেন।’
প্রত্যক্ষদর্শীরা এএফপিকে জানান, ঘটনাটি বিনিয়োগ প্রতিষ্ঠান ব্ল্যাকস্টোন ইনভেস্টমেন্ট কোম্পানির একটি কার্যালয়ে ঘটেছে।
ঘটনাস্থলে বেশ কয়েকটি অ্যাম্বুলেন্স জড়ো করা হয়েছে। আকাশে হেলিকপ্টার উড়তে দেখা গেছে। পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে সাংবাদিক ও উৎসুক জনতাকে দূরে সরিয়ে দিয়েছে।
ম্যানহাটানের ওই এলাকায় বেশকিছু পাঁচ তারকা হোটেল এবং করপোরেট প্রতিষ্ঠানের সদর দপ্তর রয়েছে।