কুমিল্লার চান্দিনায় অবৈধ পশুহাটে অভিযান চালাতে গিয়ে হেনস্তার শিকার হয়েছেন সহকারী কমিশনার (ভূমি) মুহাম্মদ ফয়সাল আল নুর। গতকাল সোমবার বিকেলে উপজেলার দোল্লাই-নবাবপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মাঠে এ ঘটনা ঘটে।

পরে গতকাল সন্ধ্যায় ঘটনাস্থলে যায় সেনাবাহিনীর একটি দল। ওই ঘটনায় ক্ষমা চেয়ে মুচলেকা দেন অভিযুক্ত মো.

আক্তারুজ্জামান নামের এক যুবদল নেতা।

আক্তারুজ্জামান উপজেলার দোল্লাই নবাবপুর ইউনিয়ন যুবদল সভাপতি। তিনি দোল্লাই-নবাবপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়–সংলগ্ন একটি পশুর হাট পরিচালনা করেন। বাজার ইজারা নেওয়া হলেও বিদ্যালয় মাঠে পশুর হাটের বেচাকেনা করা হয়।

সহকারী কমিশনার ফয়সাল আল নুর বলেন, ‘সরকারি নির্দেশ অমান্য করে বিদ্যালয় মাঠে গরুর বাজার বসানো হয়। আমরা অভিযানে গেলে বাজার পরিচালনাকারী ও ইউনিয়ন যুবদল সভাপতি আক্তারুজ্জামানের উসকানিতে তাঁর লোকজন সরকারি কাজে বাধা সৃষ্টি করেন। তাঁরা কাজে বাধা দিয়ে আমাদের ওপর ক্ষিপ্ত হন। পরে তাঁরা ক্ষমা চেয়ে মুচলেকা দেন।’

প্রত্যক্ষদর্শী ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, গতকাল বিকেলে দোল্লাই-নবাবপুর পশুর হাটে গিয়ে বিদ্যালয় মাঠ থেকে হাট সরানোর কথা বলতেই নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটকে (ফয়সাল আল নুর) ‘আওয়ামী লীগের দালাল, ফ্যাসিস্টের দোসর’ আখ্যা দিয়ে ‘ধর, ধর’ বলেন একদল লোক। একপর্যায়ে পুলিশ সদস্য ও ভূমি অফিসের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সহায়তায় ম্যাজিস্ট্রেট দোল্লাই-নবাবপুর ইউনিয়ন ভূমি অফিসে অবস্থান নেন। পরে সন্ধ্যা সাড়ে সাতটার পর সেনাবাহিনীর একটি দল ঘটনাস্থলে আসে। তখন ভুল স্বীকার করে ক্ষমা চেয়ে মুচলেকা দেন বাজার পরিচালনাকারী ও দোল্লাই নবাবপুর ইউনিয়ন যুবদল সভাপতি মো. আক্তারুজ্জামান।

এ সম্পর্কে গতকাল সোমবার রাতে আক্তারুজ্জামান বলেন, ‘বাজারটি আমি পরিচালনা করলেও ইজারা নেওয়া হয়েছে আমাদের ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি সাজু ভাইয়ের নামে। বিকেলে উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) মুহাম্মদ ফয়সাল আল নুর এসে আমাকে কথা বলার জন্য ডাক দেন। আমি সামনে গেলে কথা বলার এক পর্যায়ে তিনি আমাকে ধমক দিয়ে কথা বলতে থাকেন। তখন আমি বলেছি, আপনার কাজ আপনি করেন, আমি আপনার কথা শুনতে পারব না। এ কথা বলার এক পর্যায়ে তিনি আমাকে পুলিশ দিয়ে আটকের চেষ্টা করেন। তখন ৪০০-৫০০ লোক জড়ো হয়ে যায়। পরে তিনি ভূমি অফিসে গিয়ে আশ্রয় নেন। এরপর আমাদের ইউনিয়ন চেয়ারম্যান ও সেনাবাহিনী এসে বিষয়টি মিলমিশ করিয়ে দিয়েছে।’

চান্দিনা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মোহাম্মদ আশরাফুল হক বলেন, প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মাঠে গরুর বাজার অপসারণের জন্য ভ্রাম্যমাণ আদালতের অভিযান পরিচালনা করা হয়েছিল। এ সময় ইজারাদারের লোকজন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের সঙ্গে অসদাচরণ করেছেন। পরে সেনাবাহিনীকে ঘটনাস্থলে পাঠানো হয়। স্থানীয়দের উপস্থিতিতে ইজারাদার ক্ষমা প্রার্থনা করে মুচলেকা দিয়েছেন। বিদ্যালয় মাঠে আবার পশুর হাট বসানো হলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: উপজ ল সরক র য বদল গতক ল

এছাড়াও পড়ুন:

আ.লীগ না থাকলেও অন্তর্ভুক্তিমূলক হতে পারে নির্বাচন: গোয়েন লুইস

আওয়ামী লীগ না থাকলেও জনগণের অংশগ্রহণ সঠিকভাবে হলে আগামী নির্বাচন অন্তর্ভুক্তিমূলক হতে পারে বলে মনে করছেন ঢাকায় জাতিসংঘের আবাসিক সমন্বয়ক গোয়েন লুইস। তিনি বলেছেন, সুনির্দিষ্টভাবে জাতিসংঘের কাছে অন্তর্ভুক্তি মানে হচ্ছে, প্রত্যেক বাংলাদেশি যেন মতামত দেওয়ার সুযোগ পায়। 

গতকাল বুধবার জাতীয় প্রেস ক্লাবে ডিপ্লোম্যাটিক করেসপন্ডেন্টস অ্যাসোসিয়েশন বাংলাদেশের ‘ডিক্যাব টকে’ এ কথা বলেন জাতিসংঘের এ প্রতিনিধি। ডিক্যাব সভাপতি একেএম মঈনুদ্দিন ও সাধারণ সম্পাদক আরিফুজ্জামান মামুন অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন।

আওয়ামী লীগ না থাকা অবস্থায় অন্তর্ভুক্তিমূলক নির্বাচন নিয়ে প্রশ্ন করলে গোয়েন লুইস বলেন, অন্তর্ভুক্তিমূলক নির্বাচন মানে হচ্ছে, সমাজের প্রত্যেক অংশই যেন ভোট দিতে পারে। নারী, ১৮ বছর বয়সী, নৃতাত্ত্বিক, সংখ্যালঘু সম্প্রদায়, বিভিন্ন ধর্মীয় সম্প্রদায়– অন্তর্ভুক্তিমূলক দিয়ে আমরা এটাই বোঝাই। তবে প্রত্যেকের যেন নির্বাচনে অংশগ্রহণের প্রবেশাধিকার ও সক্ষমতা থাকে।

আওয়ামী লীগের কার্যক্রম নিষিদ্ধের প্রসঙ্গে তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ বা বিএনপির রাজনৈতিক অবস্থান নিয়ে কোনো মন্তব্য করছি না। জাতিসংঘ রাজনীতিতে সম্পৃক্ত নয়। 

জাতিসংঘ মানবাধিকার কমিশনের প্রতিবেদনে রাজনৈতিক দলকে নিষিদ্ধ না করার সুপারিশের মধ্যেও আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করা হয়েছে। এ নিয়ে গোয়েন লুইস বলেন, আমরা সুপারিশ করেছি, কারণ সব দলের অংশগ্রহণ ও অন্তর্ভুক্তির মাধ্যমে মেরূকরণ এবং সম্ভাব্য সংঘাত এড়ানো যায়। এটা রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত, সরকারের সিদ্ধান্ত।

রাখাইনে করিডোরে জাতিসংঘের যুক্ততা 

নিয়ে তিনি বলেন, আন্তঃসীমান্ত সম্পর্ক উন্নয়ন, সংঘাতের কারণে ক্ষতিগ্রস্ত লোকদের সহায়তা করার জন্য যে কোনো ধরনের উদ্যোগকে আমরা স্বাগত জানাই। এ বিষয়ে জাতিসংঘ সহায়তা করবে। কিন্তু এ ধরনের কোনো মানবিক করিডোর নেই। আমরা করিডোর-সংক্রান্ত কোনো ধরনের আলোচনায়ও নেই।

জাতিসংঘের আবাসিক সমন্বয়ক বলেন, করিডোর দুই সরকারের বিষয়। এটি প্রতিষ্ঠিত হলে জাতিসংঘ সহায়তা করতে পারে।  

ঢাকায় জাতিসংঘের মানবাধিকারবিষয়ক কার্যালয় চালুর বিষয়টি প্রায় চূড়ান্ত। সরকারের সংস্কার উদ‍্যোগে জাতিসংঘের সমর্থন অব‍্যাহত রাখার কথাও জানান এ কূটনীতিক।
 

সম্পর্কিত নিবন্ধ