যুক্তরাষ্ট্রের কলোরাডো অঙ্গরাজ্যে ইসরায়েলপন্থী একটি বিক্ষোভে পেট্রলবোমা নিক্ষেপের ঘটনায় গ্রেপ্তার ব্যক্তি এক বছর ধরে হামলার পরিকল্পনা করছিলেন বলে গতকাল সোমবার আইনজীবীরা জানিয়েছেন। মার্কিন নাগরিকত্ব না থাকায় আগ্নেয়াস্ত্র কিনতে পারেননি তিনি। এ কারণে বন্দুকের বদলে পেট্রলবোমা দিয়ে হামলা করেছেন।

গত রোববার দুপুরে কলোরাডোর বোল্ডার শহরে এ হামলার ঘটনা ঘটে। এতে অন্তত ১২ জন আহত হয়েছেন। ঘটনার পরপরই সন্দেহভাজন একজনকে গ্রেপ্তার করা হয়। তাঁর নাম মোহাম্মদ সাব্রি সোলিমান। ৪৫ বছর বয়সী এই ব্যক্তি মিসরের নাগরিক।

সাব্রি সোলিমান তদন্তকারী কর্মকর্তাদের বলেছেন, তিনি ‘সব জায়নবাদীকে হত্যা করতে চেয়েছিলেন’। কিন্তু তাঁর মেয়ে হাইস্কুল থেকে স্নাতক না করা পর্যন্ত বোল্ডার শহরে হামলা চালানো স্থগিত রেখেছিলেন। অঙ্গরাজ্য ও ফেডারেল আদালতের নথি অনুযায়ী, তাঁর বিরুদ্ধে হত্যাচেষ্টা, হামলা ও ঘৃণাজনিত অপরাধের অভিযোগ আনা হয়েছে।

পুলিশ ও এফবিআইয়ের হলফনামায় বলা হয়েছে, সোলিমান জানিয়েছেন, গোপনে আগ্নেয়াস্ত্র বহনের অনুমতিপত্র পাওয়ার জন্য তিনি একটি প্রশিক্ষণ কোর্সে অংশ নিয়ে বন্দুক চালানো শিখেছিলেন। কিন্তু অভিবাসন-সংক্রান্ত সীমাবদ্ধতার কারণে শেষ পর্যন্ত পেট্রলবোমা ব্যবহার করে হামলা চালান। ইউটিউব থেকে পেট্রলবোমা তৈরির পদ্ধতি শিখেছেন বলে তদন্তকারী কর্মকর্তাদের জানান সোলিমান।

যুক্তরাষ্ট্রের ইমিগ্রেশন ও কাস্টমস এনফোর্সমেন্টের (আইসিই) ভারপ্রাপ্ত পরিচালক টড লায়ন্স বলেন, সোলিমান পর্যটক ভিসায় যুক্তরাষ্ট্রে এসেছিলেন। ভিসার মেয়াদ শেষ হওয়ার পরও তিনি নিজ দেশে ফিরে যাননি। তাঁর কর্মসংস্থানের অনুমতিপত্রের (ওয়ার্ক পারমিট) মেয়াদও শেষ হয়ে গেছে।

সোলিমানের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানার সমর্থনে দাখিল করা পুলিশ হলফনামায় বলা হয়েছে, তিনি মিসরে জন্মগ্রহণ করেছেন। ১৭ বছর কুয়েতে ছিলেন এবং ৩ বছর আগে কলোরাডো স্প্রিংসে এসে বসবাস শুরু করেন। সেখানে তিনি স্ত্রী ও পাঁচ সন্তান নিয়ে থাকতেন।

ট্রাম্প প্রশাসনের কর্মকর্তারা রোববারের সহিংসতাকে অবৈধ অভিবাসনের বিরুদ্ধে দমন-পীড়নের উদাহরণ হিসেবে তুলে ধরেছেন।

মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও এক্সে পোস্ট করে বলেন, ‘গতকালের ভয়াবহ হামলার পরিপ্রেক্ষিতে সব জঙ্গি, তাঁদের পরিবার এবং ভিসায় থাকা জঙ্গি-সমর্থকদের জানিয়ে দিচ্ছি, ট্রাম্প প্রশাসনের অধীন আমরা আপনাদের খুঁজে বের করব, ভিসা বাতিল করব এবং বহিষ্কার করব।’

বোল্ডার পুলিশের হলফনামা অনুযায়ী, সোলিমান এক বছর ধরে এ হামলার পরিকল্পনা করেছিলেন। কলোরাডো বিশ্ববিদ্যালয়ের কাছে অবস্থিত জনপ্রিয় পথচারী শপিং এলাকা পার্ল স্ট্রিট মলে এ হামলা করা হয়।

হামলায় ভুক্তভোগীদের অনেকেই ছিলেন বয়স্ক। তাঁরা ‘রান ফর দেয়ার লাইভস’ নামের একটি সংগঠনের আয়োজনে অনুষ্ঠিত বিক্ষোভে অংশ নিয়েছিলেন। সংগঠনটি মূলত হামাসের হাতে জিম্মি ইসরায়েলিদের মুক্তির ব্যাপারে দাবি নিয়ে কাজ করে।

আরও পড়ুনযুক্তরাষ্ট্রে ইসরায়েলপন্থী বিক্ষোভে বোমা: ‘সন্ত্রাসী হামলা’ বলেছে এফবিআই০২ জুন ২০২৫

যুক্তরাষ্ট্রের অ্যাটর্নি জেনারেল পাম বন্ডি বলেন, ‘ইহুদিবিদ্বেষী সন্ত্রাসী হামলা’ হিসেবে বিবেচিত এ ঘটনার জন্য অভিযুক্তকে আইন অনুযায়ী সর্বোচ্চ শাস্তির মুখোমুখি হতে হবে।

কর্তৃপক্ষ জানায়, সন্দেহভাজনকে যেখানে আটক করা হয়েছিল, তার কাছাকাছি এলাকা থেকে ১৬টি পেট্রলবোমা উদ্ধার করা হয়েছে। পুলিশ আরও জানায়, কাছেই পার্ক করে রাখা তাঁর গাড়ি থেকে একটি গ্যাসোলিনের ক্যানিস্টার এবং ঘটনাস্থল থেকে পেট্রলভর্তি একটি আগাছানাশক স্প্রেয়ার পাওয়া গেছে।

ফেডারেল আদালতে ঘৃণাজনিত অপরাধের অভিযোগে দোষী প্রমাণিত হলে সোলিমানের সর্বোচ্চ সাজা হবে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড। আর অঙ্গরাজ্যের আদালতে করা হত্যাচেষ্টার একাধিক অভিযোগে সর্বোচ্চ ৩৮৪ বছর কারাদণ্ড হতে পারে।

আরও পড়ুনযুক্তরাষ্ট্রে ইসরায়েলপন্থী বিক্ষোভে পেট্রলবোমা নিক্ষেপ, কয়েকজন আহত০২ জুন ২০২৫.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: য ক তর ষ ট র প ট রলব ম ইসর য় ল কল র ড

এছাড়াও পড়ুন:

এনায়েত করিম ও গোলাম মোস্তফা পাঁচ দিন রিমান্ডে

রাজধানীর রমনা থানায় করা সন্ত্রাসবিরোধী আইনের মামলায় বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত মার্কিন নাগরিক এনায়েত করিম চৌধুরী ওরফে মাসুদ করিম ও এস এম গোলাম মোস্তফা আজাদকে পাঁচ দিন রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করার অনুমতি দিয়েছেন আদালত।

পুলিশের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট (সিএমএম) আদালতের ম্যাজিস্ট্রেট সারাহ ফারজানা হক আজ বুধবার এ আদেশ দেন।

প্রথম আলোকে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন ঢাকার মহানগর দায়রা জজ আদালতের প্রধান পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) ওমর ফারুক ফারুকী।

পিপি ওমর ফারুক ফারুকী প্রথম আলোকে বলেন, সরকার উৎখাতের ষড়যন্ত্রের সঙ্গে যুক্ত এনায়েত করিম চৌধুরী ও এস এম গোলাম মোস্তফাকে আদালতে হাজির করে সাত দিন রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করার আবেদন করে পুলিশ। আসামিপক্ষ থেকে জামিনের আবেদন করা হয়। উভয় পক্ষের শুনানি নিয়ে আদালত মাসুদ ও মোস্তফাকে পাঁচ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন।

এর আগে এনায়েত করিম ওরফে মাসুদ করিমকে গত সোমবার দুদিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন আদালত।

রাষ্ট্রপক্ষ থেকে বলা হয়, এনায়েত করিম চৌধুরী ওরফে মাসুদ করিম মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থা সিআইএর প্রতিনিধি হিসেবে পরিচয় দিয়েছেন। বাস্তবে তিনি র-এর (ভারতীয় গোয়েন্দা সংস্থা) এজেন্ট। বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারকে অস্থিতিশীল করার মিশন নিয়ে তিনি বাংলাদেশে এসেছেন। বর্তমান সরকার উৎখাতের ষড়যন্ত্রের সঙ্গে যুক্ত। তাঁর দুটি মুঠোফোন জব্দ করা হয়েছে। সেটির ফরেনসিক পরীক্ষা করা হলে তাঁর ষড়যন্ত্রের বিষয়ে আরও অনেক নতুন তথ্য জানা যাবে। এনায়েত করিম চৌধুরী ওরফে মাসুদ করিমসহ আর কারা ষড়যন্ত্রের সঙ্গে জড়িত, সেটি জানার জন্য তাঁকে রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা জরুরি।

অপরদিকে এনায়েত করিম চৌধুরীর পক্ষে তাঁর আইনজীবীরা আদালতের কাছে দাবি করেন, তিনি ৬ সেপ্টেম্বর দেশে এসেছেন, তাঁর আমেরিকায় ফিরে যাওয়ার কথা ১৪ সেপ্টেম্বর। তিনি বাংলাদেশে এসে গুলশানে অবস্থান করছিলেন।

এনায়েত করিম চৌধুরীর আইনজীবী ফারহান এমডি আরাফ বলেন, এ ঘটনার সঙ্গে তাঁর মক্কেল কোনোভাবেই জড়িত নন। তিনি একজন মার্কিন নাগরিক। সরকার উৎখাতের ষড়যন্ত্রের সঙ্গে তিনি কোনোভাবে যুক্ত নন।

এর আগে গত শনিবার এনায়েত করিম চৌধুরীকে (৫৫) সন্দেহভাজন হিসেবে আটকের পর ৫৪ ধারায় গ্রেপ্তার দেখানো হয়।

পুলিশের তথ্য অনুযায়ী, গত শনিবার সকালে রাজধানীর মিন্টোরোড থেকে এনায়েত করিম চৌধুরীকে আটক করা হয়। তাঁর কাছ থেকে জব্দ করা পাসপোর্টের তথ্য অনুযায়ী, তিনি মার্কিন নাগরিক।

আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর একাধিক সূত্র প্রথম আলোকে জানিয়েছে, এনায়েত করিম নিজেকে মাসুদ করিম নামে পরিচয় দেন। তিনি নিজেকে মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থা সিআইএর দক্ষিণ এশীয় অঞ্চলের প্রধান বলে পরিচয় দিয়ে থাকেন। এই পরিচয়ে তিনি বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের প্রভাবশালী নেতাদের রাষ্ট্রক্ষমতায় অধিষ্ঠিত করার স্বপ্ন দেখান। ২০১৮ সালের ভোটের আগেও তিনি একাধিক রাজনৈতিক দলের নেতাদের সঙ্গে দেশের বাইরে বৈঠক করেন।

পুলিশ বলছে, গত শনিবার এনায়েত করিম চৌধুরী প্রাডো গাড়িতে করে মিন্টোরোড এলাকায় সন্দেহজনকভাবে ঘোরাফেরা করছিলেন। গাড়ি থামিয়ে তাঁকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হলে ওই এলাকায় ঘোরাঘুরি করার বিষয়ে সদুত্তর দিতে পারেননি। পরে তাঁকে আটক করে ৫৪ ধারায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে আদালতে পাঠিয়ে ৭ দিনের রিমান্ড আবেদন করা হয়। আদালত তাঁকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন। পাশাপাশি সোমবার রিমান্ড শুনানির দিন ধার্য করেন।

সংশ্লিষ্ট একজন পুলিশ কর্মকর্তা প্রথম আলোকে বলেছেন, প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে এনায়েত করিম বলেছেন, বর্তমান সরকার পরিবর্তন করে নতুন জাতীয় সরকার গঠনে কাজ করতে তিনি বাংলাদেশে এসেছেন। তাঁর দাবি, তিনি বিশেষ একটি দেশের গোয়েন্দা সংস্থার এজেন্ট। বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকার খুব নাজুক অবস্থায় আছে। সেনাবাহিনীর সঙ্গেও এই সরকারের দূরত্ব তৈরি হয়েছে। এই সুযোগে বর্তমান সরকারকে পরিবর্তন করতে বাংলাদেশে এসেছেন। সরকারি উচ্চ ও নীতিনির্ধারক পর্যায়ের একাধিক কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করেছেন বলে জানিয়েছেন। এ ছাড়া বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের প্রভাবশালী নেতা ও ব্যবসায়ীদের সঙ্গে গোপন বৈঠক করেছেন।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • অনিয়ম-দুর্নীতির অভিযোগে যশোর আইনজীবী সমিতির চার সদস্যকে সাময়িক বহিষ্কার
  • যশোরে ৪ আইনজীবীকে বহিষ্কার
  • ক্ষতিপূরণের বিরুদ্ধে আপিল করতে ২৫ শতাংশ অর্থ জমা দেওয়ার বিধান প্রশ্নে রুল
  • আইনজীবী সোমার মৃত্যুতে আইনজীবী সমিতির শোক সভা ও দোয়া
  • এনায়েত করিম ও গোলাম মোস্তফা পাঁচ দিন রিমান্ডে
  • ভাঙ্গা থেকে দুটি ইউনিয়ন বাদ দেওয়া প্রশ্নে রুল
  • বাগেরহাটে চারটি সংসদীয় আসন রাখতে নির্দেশ কেন নয়: হাইকোর্ট
  • পান্থকুঞ্জ পার্ক ও হাতিরঝিল অংশে নির্মাণকাজে স্থিতাবস্থা আপাতত বহাল, চলবে না কার্যক্রম
  • চারটি আসন বহালের দাবিতে বাগেরহাটে নির্বাচন কার্যালয় ঘেরাও, উচ্চ আদালতে দুটি রিট
  • বরিশালে তরুণীকে ধর্ষণের পর হত্যা: ২ জনের মৃত্যুদণ্ড