কলোরাডোতে এক বছর ধরে হামলার পরিকল্পনা করছিলেন সন্দেহভাজন: দাবি আইনজীবীদের
Published: 3rd, June 2025 GMT
যুক্তরাষ্ট্রের কলোরাডো অঙ্গরাজ্যে ইসরায়েলপন্থী একটি বিক্ষোভে পেট্রলবোমা নিক্ষেপের ঘটনায় গ্রেপ্তার ব্যক্তি এক বছর ধরে হামলার পরিকল্পনা করছিলেন বলে গতকাল সোমবার আইনজীবীরা জানিয়েছেন। মার্কিন নাগরিকত্ব না থাকায় আগ্নেয়াস্ত্র কিনতে পারেননি তিনি। এ কারণে বন্দুকের বদলে পেট্রলবোমা দিয়ে হামলা করেছেন।
গত রোববার দুপুরে কলোরাডোর বোল্ডার শহরে এ হামলার ঘটনা ঘটে। এতে অন্তত ১২ জন আহত হয়েছেন। ঘটনার পরপরই সন্দেহভাজন একজনকে গ্রেপ্তার করা হয়। তাঁর নাম মোহাম্মদ সাব্রি সোলিমান। ৪৫ বছর বয়সী এই ব্যক্তি মিসরের নাগরিক।
সাব্রি সোলিমান তদন্তকারী কর্মকর্তাদের বলেছেন, তিনি ‘সব জায়নবাদীকে হত্যা করতে চেয়েছিলেন’। কিন্তু তাঁর মেয়ে হাইস্কুল থেকে স্নাতক না করা পর্যন্ত বোল্ডার শহরে হামলা চালানো স্থগিত রেখেছিলেন। অঙ্গরাজ্য ও ফেডারেল আদালতের নথি অনুযায়ী, তাঁর বিরুদ্ধে হত্যাচেষ্টা, হামলা ও ঘৃণাজনিত অপরাধের অভিযোগ আনা হয়েছে।
পুলিশ ও এফবিআইয়ের হলফনামায় বলা হয়েছে, সোলিমান জানিয়েছেন, গোপনে আগ্নেয়াস্ত্র বহনের অনুমতিপত্র পাওয়ার জন্য তিনি একটি প্রশিক্ষণ কোর্সে অংশ নিয়ে বন্দুক চালানো শিখেছিলেন। কিন্তু অভিবাসন-সংক্রান্ত সীমাবদ্ধতার কারণে শেষ পর্যন্ত পেট্রলবোমা ব্যবহার করে হামলা চালান। ইউটিউব থেকে পেট্রলবোমা তৈরির পদ্ধতি শিখেছেন বলে তদন্তকারী কর্মকর্তাদের জানান সোলিমান।
যুক্তরাষ্ট্রের ইমিগ্রেশন ও কাস্টমস এনফোর্সমেন্টের (আইসিই) ভারপ্রাপ্ত পরিচালক টড লায়ন্স বলেন, সোলিমান পর্যটক ভিসায় যুক্তরাষ্ট্রে এসেছিলেন। ভিসার মেয়াদ শেষ হওয়ার পরও তিনি নিজ দেশে ফিরে যাননি। তাঁর কর্মসংস্থানের অনুমতিপত্রের (ওয়ার্ক পারমিট) মেয়াদও শেষ হয়ে গেছে।
সোলিমানের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানার সমর্থনে দাখিল করা পুলিশ হলফনামায় বলা হয়েছে, তিনি মিসরে জন্মগ্রহণ করেছেন। ১৭ বছর কুয়েতে ছিলেন এবং ৩ বছর আগে কলোরাডো স্প্রিংসে এসে বসবাস শুরু করেন। সেখানে তিনি স্ত্রী ও পাঁচ সন্তান নিয়ে থাকতেন।
ট্রাম্প প্রশাসনের কর্মকর্তারা রোববারের সহিংসতাকে অবৈধ অভিবাসনের বিরুদ্ধে দমন-পীড়নের উদাহরণ হিসেবে তুলে ধরেছেন।
মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও এক্সে পোস্ট করে বলেন, ‘গতকালের ভয়াবহ হামলার পরিপ্রেক্ষিতে সব জঙ্গি, তাঁদের পরিবার এবং ভিসায় থাকা জঙ্গি-সমর্থকদের জানিয়ে দিচ্ছি, ট্রাম্প প্রশাসনের অধীন আমরা আপনাদের খুঁজে বের করব, ভিসা বাতিল করব এবং বহিষ্কার করব।’
বোল্ডার পুলিশের হলফনামা অনুযায়ী, সোলিমান এক বছর ধরে এ হামলার পরিকল্পনা করেছিলেন। কলোরাডো বিশ্ববিদ্যালয়ের কাছে অবস্থিত জনপ্রিয় পথচারী শপিং এলাকা পার্ল স্ট্রিট মলে এ হামলা করা হয়।
হামলায় ভুক্তভোগীদের অনেকেই ছিলেন বয়স্ক। তাঁরা ‘রান ফর দেয়ার লাইভস’ নামের একটি সংগঠনের আয়োজনে অনুষ্ঠিত বিক্ষোভে অংশ নিয়েছিলেন। সংগঠনটি মূলত হামাসের হাতে জিম্মি ইসরায়েলিদের মুক্তির ব্যাপারে দাবি নিয়ে কাজ করে।
আরও পড়ুনযুক্তরাষ্ট্রে ইসরায়েলপন্থী বিক্ষোভে বোমা: ‘সন্ত্রাসী হামলা’ বলেছে এফবিআই০২ জুন ২০২৫যুক্তরাষ্ট্রের অ্যাটর্নি জেনারেল পাম বন্ডি বলেন, ‘ইহুদিবিদ্বেষী সন্ত্রাসী হামলা’ হিসেবে বিবেচিত এ ঘটনার জন্য অভিযুক্তকে আইন অনুযায়ী সর্বোচ্চ শাস্তির মুখোমুখি হতে হবে।
কর্তৃপক্ষ জানায়, সন্দেহভাজনকে যেখানে আটক করা হয়েছিল, তার কাছাকাছি এলাকা থেকে ১৬টি পেট্রলবোমা উদ্ধার করা হয়েছে। পুলিশ আরও জানায়, কাছেই পার্ক করে রাখা তাঁর গাড়ি থেকে একটি গ্যাসোলিনের ক্যানিস্টার এবং ঘটনাস্থল থেকে পেট্রলভর্তি একটি আগাছানাশক স্প্রেয়ার পাওয়া গেছে।
ফেডারেল আদালতে ঘৃণাজনিত অপরাধের অভিযোগে দোষী প্রমাণিত হলে সোলিমানের সর্বোচ্চ সাজা হবে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড। আর অঙ্গরাজ্যের আদালতে করা হত্যাচেষ্টার একাধিক অভিযোগে সর্বোচ্চ ৩৮৪ বছর কারাদণ্ড হতে পারে।
আরও পড়ুনযুক্তরাষ্ট্রে ইসরায়েলপন্থী বিক্ষোভে পেট্রলবোমা নিক্ষেপ, কয়েকজন আহত০২ জুন ২০২৫.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: য ক তর ষ ট র প ট রলব ম ইসর য় ল কল র ড
এছাড়াও পড়ুন:
দণ্ডাদেশের রায় বাতিল, খালাস পেলেন ব্রাহ্মণবাড়িয়ার মোবারক
একাত্তরে মুক্তিযুদ্ধের সময় মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় খালাস পেয়েছেন ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আখাউড়ার মো. মোবারক হোসেন।
দণ্ডাদেশের রায়ের বিরুদ্ধে ১১ বছর আগে আপিল করেছিলেন মোবারক। তাঁর করা আপিল মঞ্জুর করে প্রধান বিচারপতি সৈয়দ রেফাত আহমেদের নেতৃত্বাধীন আপিল বিভাগ আজ বুধবার এ রায় দেন। একই সঙ্গে মোবারককে ট্রাইব্যুনালের দেওয়া দণ্ডাদেশের রায় বাতিল করা হয়েছে।
একাত্তরে মুক্তিযুদ্ধের সময় মানবতাবিরোধী অপরাধের কোনো মামলায় এই প্রথম আপিল করে কেউ খালাস পেলেন বলে জানিয়েছেন মোবারকের আইনজীবীরা।
আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের দেওয়া দণ্ডাদেশের বিরুদ্ধে ২০১৪ সালের ১৮ ডিসেম্বর আপিল বিভাগে আপিল করেন মোবারক, যার ওপর ৮ জুলাই শুনানি শুরু হয়।
২২ জুলাই শুনানি শেষে আপিল বিভাগ রায়ের জন্য ৩০ জুলাই দিন রাখেন। সে অনুযায়ী আজ বেলা পৌনে ১১টার দিকে রায় ঘোষণা করেন আদালত।
রায় ঘোষণার সময় আদালতে মোবারকের পক্ষে জ্যেষ্ঠ আইনজীবী এস এম শাহজাহান ও ইমরান এ সিদ্দিক এবং আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের প্রসিকিউটর গাজী এম এইচ তামিম উপস্থিত ছিলেন।
একাত্তরের মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় মোবারককে মৃত্যুদণ্ডাদেশ দিয়ে ২০১৪ সালের ২৪ নভেম্বর রায় দেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১। তাঁর বিরুদ্ধে আনা পাঁচটি অভিযোগের মধ্যে দুটি প্রমাণিত হয়। এর মধ্যে ১ নম্বর অভিযোগে মোবারককে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়। আর ৩ নম্বর অভিযোগে মোবারককে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডাদেশ দেওয়া হয়। অপর তিনটি অভিযোগ (২,৪ ও ৫ নম্বর অভিযোগ) প্রমাণিত না হওয়ায় এগুলো থেকে তাঁকে খালাস দেওয়া হয়।
ট্রাইব্যুনালের রায় থেকে জানা যায়, মুক্তিযুদ্ধের সময় মোবারক জামায়াতের রাজনীতির সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ছিলেন। স্বাধীনতার পর তিনি জামায়াতের ইউনিয়ন পর্যায়ে রুকন হন। পরে তিনি আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে যোগ দেন।
আপিল বিভাগের রায়ের পর জ্যেষ্ঠ আইনজীবী এস এম শাহজাহান প্রথম আলোকে বলেন, ‘১ নম্বর অভিযোগে মৃত্যুদণ্ড ও ৩ নম্বর অভিযোগে মোবারককে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দিয়েছিলেন ট্রাইব্যুনাল। দুই অভিযোগ থেকে তাঁকে খালাস দেওয়া হয়েছে। ট্রাইব্যুনালের রায় বাতিল করা হয়েছে। অন্য কোনো মামলা না থাকলে তাঁর কারামুক্তিতে বাধা নেই।’