রাইজিংবিডিতে প্রতিবেদনের পর ভূলুয়া নদী দখলমুক্ত করতে অভিযান
Published: 3rd, June 2025 GMT
‘মৃতপ্রায় ভুলুয়া, বন্যা আতঙ্কে পাড়বাসী’ এ শিরোনামে গত ২৪ মে সংবাদ প্রচার করে জনপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল রাইজিংবিডি ডটকম। প্রতিবেদনটি সংশ্লিষ্ট প্রশাসনের নজরে আসে। এর পর সোমবার (২ জুন) সকাল থেকে লক্ষ্মীপুরের কমলনগরে ভুলুয়া নদী দখলমুক্ত করতে উচ্ছেদ অভিযান শুরু করেছে পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো)।
কমলনগর উপজেলার চরকাদিরা ইউনিয়নের ফজু মিয়ার হাট এলাকায় ভুলুয়া নদীতে তৈরি করা বাঁধ ভেঙে দিয়ে উচ্ছেদ অভিযান শুরু করা হয়। এ সময় নদীতে থাকা বাঁধ কেটে দেওয়া হয় ও বেয়াল জালগুলো ভেঙে পুড়িয়ে দেয়।
পাউবো ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, বাংলাদেশের দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলের লক্ষ্মীপুর ও নোয়াখালী জেলার গুরুত্বপূর্ণ একটি নদীর নাম ভুলুয়া। সর্পিলাকার নদীটির দৈর্ঘ্য ৭১ কিলোমিটার ও প্রস্থ ৮৫ মিটার।
নোয়াখালীর বেগমগঞ্জ থেকে লক্ষ্মীপুর সদর, কমলনগর ও রামগতি উপজেলা হয়ে মেঘনা নদীতে মিলিত হয়েছে ভুলুয়া। একসময় এ নদীতে উত্তাল ঢেউ ও স্রোত ছিল। ভুলুয়ার আশপাশের লাখো মানুষ কৃষি উৎপাদনসহ নানা প্রয়োজনে ব্যবহার করত এ নদীর পানি। বড় বড় সাম্পান নৌকা ও জাহাজ চলত এ নদীতে। বহু প্রজাতির মাছের সমাহার ছিল এখানে।
স্থানীয় প্রভাবশালী ব্যক্তিরা বিভিন্ন স্থান দখল করে নদীর দুই পাশে গড়ে তুলেছেন অসংখ্য মাছের ঘের। আবার মাঝখানে বাঁধ দিয়ে বর্ষা মৌসুমে মাছ চাষ করছেন কেউ কেউ। নদীর তীর ঘেঁষে ঘর-বাড়ি তুলে দখল করে রাখা হয়েছে। ময়লা-আবর্জনা ফেলে দূষিত করছে নদীর পানি। পলি জমে পানির প্রবাহ বন্ধ হয়ে শুকিয়ে গেছে নদী।
গত বর্ষায় পানির প্রবাহ বন্ধ থাকায় লক্ষ্মীপুরের রামগতি, কমলনগর, সদর ও নোয়াখালীর সদর এবং সুবর্ণচর উপজেলার কয়েক লাখ মানুষ দেড় মাসের বেশি সময় পানিবন্দি হয়ে পড়েন। চলতি বর্ষায় আবারও আতঙ্কে দিন অতিবাহিত করছেন এ অঞ্চলের লাখ লাখ মানুষ। দীর্ঘদিন ধরে ভুলুয়া নদী দখলমুক্ত করা ও জলাবদ্ধতা নিরসনের দাবিতে আন্দোলন চালিয়ে আসছে স্থানীয় সামাজিক সংগঠনগুলো।
লক্ষ্মীপুর পানি উন্নয়ন বোর্ডের ব্যবস্থাপনায় উচ্ছেদ অভিযানে নেতৃত্ব দেন কমলনগর উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) রাহাত উজ জামান, সহকারী কমিশনার (ভূমি) আরাফাত হোসেন, সেনাবাহিনীর দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ক্যাপ্টেন মেহদী হোসেন, লক্ষ্মীপুর পাউবোর উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী ইমতিয়াজ মাহমুদ, কমলনগর থানার ওসি তৌহিদুল ইসলাম, কমলনগর প্রেস ক্লাবের সভাপতি মুছা কালিমুল্লাহ, সাধারণ সম্পাদক আমানত উল্যাহ,পাউবোর উপ-সহকারী তনয় রায় চৌধুরী ও আব্দুর রহিম প্রমুখ।
ইউএনও মো.
পানি উন্নয়ন বোর্ডের লক্ষ্মীপুর কার্যালয়ের নির্বাহী প্রকৌশলী নাহিদ-উজ-জামান খান বলেছেন, প্রভাবশালীদের দেওয়া বাঁধ অপসারণ করে পানির প্রবাহ নিশ্চিত করতে আমাদের অভিযান অব্যাহত থাকবে। প্রভাবশালীরা যত শক্তিশালী হোক না কেন, কাউকে ছাড় দেওয়া হবে না। নদীটি খনন করতে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে প্রস্তাবও পাঠানো হয়েছে।
ঢাকা/লিটন/রফিক
উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর প ন র প রব হ লক ষ ম প র ত করত উপজ ল
এছাড়াও পড়ুন:
এই সরকারও আমলাতন্ত্রের চাপে!
চব্বিশের গণ-অভ্যুত্থান নতুন যে জন-আকাঙ্ক্ষা তৈরি করেছে, সেখানে নিশ্চিত করেই জনপ্রশাসন সংস্কারের প্রশ্নটি নাগরিকদের কেন্দ্রীয় একটি চাহিদা। কিন্তু অন্তর্বর্তী সরকার যেভাবে ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ সরকারের মতোই পদ ছাড়া পদোন্নতি দিচ্ছে, তাতে উদ্বিগ্ন না হওয়ার কোনো কারণ নেই। কেননা, আগের সরকার কর্তৃত্ববাদী ও স্বৈরাচারী হয়ে উঠেছিল যে কয়টা স্তম্ভের ওপর দাঁড়িয়ে, তার অন্যতম আমলাতন্ত্র।
জনপ্রশাসনকে রাজনীতিকরণের বৃত্ত ভেঙে জনবান্ধব করার একটা বড় সুযোগ এনে দিয়েছিল অভ্যুত্থান। কিন্তু শুরু থেকেই অন্তর্বর্তী সরকার আমলাতন্ত্রের ওপর অতিনির্ভরশীল হয়ে ওঠায় সেই সুযোগ অনেকটাই হাতছাড়া হয়েছে। সরকারি কর্মকর্তাদের বিরোধিতার কারণে জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশনের বড় কোনো সুপারিশ বাস্তবায়ন করতে পারেনি সরকার। অন্যদিকে বেতন বাড়াতে গঠন করা হয়েছে বেতন কমিশন। কিছু মুখকে সরিয়ে দেওয়া ছাড়া জনপ্রশাসনে সেই পুরোনো চর্চা অব্যাহত রয়েছে। বিশেষ করে পদ ছাড়া পদায়নের ক্ষেত্রে জনপ্রশাসনে যেভাবে আগের সরকারের চর্চার ধারাবাহিকতা বজায় রাখা হয়েছে, সেটা যারপরনাই দুঃখজনক।
প্রথম আলোর খবর জানাচ্ছে, উপসচিব স্তরে যেখানে আগে থেকেই পদের চেয়ে ৬০০ কর্মকর্তা বেশি রয়েছেন, সেখানে আগস্ট মাসে নতুন করে ২৬৮ জনকে এই পদে পদোন্নতি দেওয়া হয়েছে। অতিরিক্ত সচিব পদেও পদোন্নতির আলোচনা শুরু হয়েছে। রাজনৈতিক সরকারের আমলে জনপ্রশাসনে হরেদরে পদোন্নতি দেওয়ার অনেক নজির আছে। এর কারণ একটাই, আমলাতন্ত্রকে তুষ্ট রাখা। অন্তর্বর্তী সরকার এই চর্চায় ছেদ ঘটাতে পারবে, সেটাই সবাই প্রত্যাশা করেছিল।
পরিহাসের বিষয় হচ্ছে, জনপ্রশাসনে পদ ছাড়া পদোন্নতি দেওয়ার পর বেশির ভাগ কর্মকর্তাকে আগের জায়গাতেই রেখে দেওয়া হয়। এর মানে হচ্ছে তাঁরা আগের দায়িত্বই পালন করেন, কিন্তু মাঝখান থেকে বেতন-ভাতা বাড়ে। উপসচিব পর্যায়ের কর্মকর্তারা তিন বছর চাকরি পাওয়ার পর বিনা সুদে গাড়ি কেনার জন্য ঋণসুবিধা পান। অন্তর্বর্তী সরকারের আমলে অবসরে যাওয়া সরকারি কর্মকর্তাদের যেভাবে পদোন্নতি দেওয়া হয়েছে, তার দৃষ্টান্তও খুব বেশি নেই। অবসরে যাওয়া প্রশাসন ক্যাডারের ‘বঞ্চিত’ ৭৬৪ জন কর্মকর্তাকে পদোন্নতি দেওয়া হয়েছে ও অন্য ক্যাডারের ‘বঞ্চিত’ ৭৮ জন অবসরপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে ভূতাপেক্ষ পদোন্নতির সুপারিশ করা হয়েছে।
জনপ্রশাসনের মেধাবী ও যোগ্য কর্মকর্তারা পদোন্নতি পেয়ে পরের ধাপে যাবেন, সেটা স্বাভাবিক বিষয়। কিন্তু পদ না থাকার পরও কেন পদায়ন করা হবে? এ ক্ষেত্রে সরকারকে পর্যালোচনা করে দেখা প্রয়োজন, জনপ্রশাসনের বিভিন্ন স্তরে পদ বাড়ানো যায় কি না। আবার যেখানে এমনিতেই পদের বিপরীতে নিয়োগপ্রাপ্ত কর্মকর্তার সংখ্যা বেশি, সেখানে অবসরে যাওয়া কর্মকর্তাদের নিয়োগ দেওয়া কতটা যৌক্তিক?
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের লোকপ্রশাসন বিভাগের সাবেক অধ্যাপক ও জনপ্রশাসনবিশেষজ্ঞ সালাউদ্দিন এম আমিনুজ্জামান বলেছেন, জনপ্রশাসনে পদ ছাড়া পদোন্নতি দেওয়া যায় না। তবে বিশেষ ক্ষেত্রে মেধাবীদের পদোন্নতি দেওয়ার সুযোগ রয়েছে। এরপরও কেন এমন পদোন্নতি—সেই ব্যাখ্যায় তিনি বলেছেন, সরকার সম্ভবত আমলাতন্ত্রের চাপে রয়েছে। এই ধারণা শুধু তাঁর একার নয়, নাগরিক পরিসরের
বিস্তৃত একটি ধারণাও। অন্তর্বর্তী সরকারকে অবশ্যই এর পরিষ্কার ব্যাখ্যা হাজির করা উচিত।
মাথাভারী আমলাতন্ত্র সরকারি সেবা নাগরিকের কাছে ঠিকভাবে পৌঁছানোর ক্ষেত্রে বড় একটা বাধা। অন্যদিকে সরকারকে এখানে বিশাল ব্যয়ের বোঝা বহন করতে হয়। ফলে মাঠ প্রশাসন থেকে শুরু করে সিনিয়র সচিব পর্যন্ত একটি সামঞ্জস্যপূর্ণ ও গতিশীল জনপ্রশাসনই সবাই প্রত্যাশা করে। জনপ্রশাসনের সব স্তরে পদোন্নতি রাজনৈতিক বিবেচনায় নয়, মেধার ভিত্তিতেই হতে হবে।