বাজেট একটি সরকারের রাজনৈতিক দর্শনের প্রতিফলন ও বাস্তবায়নের অন্যতম প্রধান বাহন। সেই হিসেবে সার্বিক মূল্যায়নে বর্তমান বাজেট “ফ্যাসিবাদের দোসর ও নব্য ফ্যাসিবাদী রাজনৈতিক দর্শনের প্রতিফলন” বলে মন্তব্য করেছেন জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান জি এম কাদের।

মঙ্গলবার বাজেট প্রতিক্রিয়ায় তিনি বলেন, পতিত ফ্যাসিবাদ সরকারের বিগত বছরের বাজেটকে মোটামুটি অনুসরণ করা হয়েছে এবং ওই বাজেটের ধারাবাহিকতা রক্ষা করা হয়েছে।

জি এম কাদের বলেন, বিগত বাজেটকে বর্তমান বাস্তবতার নিরিখে কিছুটা কাটছাঁট করা হয়েছে এবং কোনো কোনো ক্ষেত্রে প্রস্তাবিত অর্থের পরিমাণ বাড়িয়ে ধরা হয়েছে। মূল কাঠামো বা রাজনৈতিক দর্শনে তেমন কোনো নতুনত্ব লক্ষ্য করা যাচ্ছে না। মূল্যবোধের জায়গা থেকে প্রাক্তন সরকারের ভাবধারার বাইরে তেমন কিছু চোখে পড়ছে না।

বর্তমান বাজেট বাস্তবায়নযোগ্য নয়— উল্লেখ করে জি এম কাদের বলেন, রাজস্ব আহরণের যে লক্ষ্যমাত্রা ধার্য করা হয়েছে বর্তমান প্রেক্ষাপটে তা অবাস্তব বা কাছাকাছি যাওয়াও সম্ভব নয়। যতদিন রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা না আসে এবং আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক না হয়, ততদিন বিদেশি ঋণ বা সাহায্য পাওয়া নিয়ে সংশয় আছে। ফলে বাজেট ঘাটতির আকার অনেক বড় হবে এবং অনেক প্রয়োজনীয় খরচ মেটানো সরকারের জন্য বড় ধরনের সমস্যা হবে বলে আমরা মনে করি।

তিনি বলেন, মধ্যবিত্ত ও নিম্নবিত্ত মানুষের জন্য কোনো স্বস্তির ব্যবস্থা নেই প্রস্তাবিত বাজেটে। প্রবৃদ্ধির নিম্নগামী অবস্থানের কারণে কর্মসংস্থান ও ব্যবসা-বাণিজ্যে মন্দাভাব দেখা দেবে। প্রাক্কলিত মূল্যস্ফীতি অর্জনের লক্ষ্যমাত্রা বাস্তবসম্মত নয়। মূল্যস্ফীতির লাগাম টানা সম্ভব হবে বলে মনে হয় না। ফলে সাধারণ মানুষ দরিদ্র থেকে দরিদ্রতর অবস্থায় পৌঁছাবে। দ্রব্যমূল্যের লাগামহীন ঊর্ধ্বগতির কারণে অর্ধভুক্ত ও অভুক্ত মানুষের সংখ্যা ব্যাপকভাবে বৃদ্ধি পাবে বলে আশঙ্কা করছি।

সার্বিকভাবে দেশের মানুষের জন্য এ বাজেট কোনো সুখবর বা স্বস্তি আনছে না— এমন দাবি করে জি এম কাদের বলেন, এই বাজেটের প্রবৃদ্ধি নিম্নগামী। প্রবৃদ্ধি নিম্নগামী হলে কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা সম্ভব হবে না, স্বাভাবিক ব্যবসা-বাণিজ্য ব্যাহত হবে এবং কম রাজস্ব আদায় হবে। মূল্যস্ফীতির হার ৬.

৫ শতাংশ ধরা হয়েছে। এপ্রিল পর্যন্ত এই হার ৯.১৭ শতাংশে আনা সম্ভব হয়েছে। সামনের দিকে মূল্যস্ফীতির হার কমবে, এর কোনো লক্ষণ আমরা দেখছি না। প্রস্তাবিত বাজেটে ক্ষুধার্ত ও অভুক্ত মানুষের সংখ্যা বাড়াবে।

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: ব জ ট ২০২৫ ২৬ জ এম ক দ র র জন ত ক এম ক দ র সরক র র ব যবস

এছাড়াও পড়ুন:

ধামরাইয়ে মা-দু’ ছেলে হত্যা: ‘বালিশচাপা দিয়ে হত্যা করে রবিন’

ঢাকার ধামরাইয়ে বসতঘর থেকে মা ও দুই ছেলের লাশ উদ্ধারের ঘটনায় রহস্য উন্মোচন করেছে পুলিশ ব্যুরো অফ ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)। সংস্থাটি জানিয়েছে, প্রয়াত শ্বশুরের রেখে যাওয়া ডেকারেটর ব্যবসা দেখভাল নিয়ে পারিবারিক কলহের জেরে বালিশচাপা দিয়ে  শাশুড়ি নারগিস আক্তার ও দুই শ্যালককে হত্যা করে রবিন (২২)। এ ঘটনায় তাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।

বৃহস্পতিবার (৫ জুন) দুপুরের দিকে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনের (পিবিআই) ঢাকা জেলার পুলিশ সুপার কুদরত-ই-খুদা এক সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানান।

গত ২ জুন বিকেলের দিকে ধামরাই উপজেলার গাংগুটিয়া ইউনিয়নের রক্ষিত গ্রাম থেকে মা ও দুই ছেলের লাশ উদ্ধার করা হয়। এ ঘটনায় গত ৪ জুন নিহত নারগিস আক্তারের ভাই আব্দুর রশিদ (৪২) বাদী হয়ে হত্যা মামলা (নম্বর- ০৫) করেন।

আরো পড়ুন:

গোপালগঞ্জে বৃদ্ধকে কুপিয়ে হত্যা

চুনারুঘাটে গাড়িতে না তোলায় চালককে পিটিয়ে হত্যার অভিযোগ

গ্রেপ্তার রবিন ধামরাইয়ের আমতা ইউনিয়নের বালিয়া ইউনিয়নের কামারপাড়া এলাকার রফিকুল ইসলামের ছেলে। নিহতরা হলেন, ধামরাইয়ের গাংগুটিয়া ইউনিয়নের রক্ষিত এলাকার মৃত রাজা মিয়ার স্ত্রী নারগিস আক্তার (৩৭), তার দুই ছেলে মো. শামীম (২২) ও সোলাইমান (৮)। বড় ছেলে শামীম ডেকারেটরের কাজ করতেন ও ছোট ছেলে সোলাইমান মায়ের কাছে থাকতেন।

মামলার এজাহারে বলা হয়, গত ১ জুন রাত ৯টা থেকে দুপুর ২টার দিকে অজ্ঞাত আসামিরা বসতঘরের টিনের বেড়ার দরজা খুলে ঢুকে পরিকল্পিতভাবে তাদের শ্বাসরোধ করে হত্যা করে মরদেহ খাটের ওপর শুইয়ে রেখে পালিয়ে যায়।

পুলিশ সুপার কুদরত-ই-খুদা জানান, থানায় মামলা রুজু হওয়ার পর বিষয়টি নিয়ে তদন্তে নামে পিবিআই ঢাকা জেলার সদস্যা। এর ধারাবাহিকতায়, রবিন হত্যায় জড়িত রয়েছে, এমন তথ্য উঠে আসে। এর জের ধরে গত ৪ জুন ধামরাইয়ের সানোড়া ইউনিয়নের মধুডাঙ্গা এলাকায় অভিযান চালিয়ে রবিনকে গ্রেপ্তার করা হয়। পরে তিনি হত্যায় জড়িতের বিষয়ে তথ্য দেন। 

রবিনের বরাত দিয়ে পুলিশ সুপার জানান, গত ১ জুন রাত সাড়ে ১১টা থেকে ভোর ৪টার মধ্যে ওই বাড়ির টিনের বেড়ার দরজা খুলে ঘরে ঢুকে প্রথমে বড় শ্যালক শামীমকে (২২) খাটের পাশে শোয়া দেখে তার মুখের ওপর বালিশ চাপা দিয়ে চেপে ধরে মৃত্যু নিশ্চিত করে রবিন। এরপর শাশুড়ি নারগিস (৩৭) ও সোলাইমানকে (৮) আরেক খাটে শোয়া দেখে একইভাবে তাদেরও মুখে বালিশ চাপা দিয়ে চেপে ধরে মৃত্যু নিশ্চিত করে। এরপর তিনজনের মরদেহ একই খাটে শুইয়ে কাঁথা দিয়ে ঢেকে ভোর ৪টার দিকে নিজের বাড়ি ফিরে আসে রবিন। 

পর দিন সকাল থেকে নারগিসের মেয়ে নাসরিন তার মাকে ফোন করতে থাকে। তবে তারা ফোন রিসিভ না করায় দুপুর ২টার দিকে তিনি মায়ের বাড়ি আসেন। ঘরে ঢুকে দেখতে পান, তার মা ও দুই ভাই মৃত অবস্থায় কাঁথা দিয়ে ঢেকে রাখা হয়েছে।

পিআইবি জানান, এক বছর আগে মারা যাওয়া শ্বশুর রাজা মিয়ার ডেকারেটরের ব্যবসা দেখাশোনা নিয়ে তৈরি হওয়া পারিবারিক কলহের জেরে শাশুড়ি ও দুই শ্যালককে হত্যা করে রবিন।
 

ঢাকা/সাব্বির/বকুল 

সম্পর্কিত নিবন্ধ