প্রস্তাবিত বাজেটে আওয়ামী লীগ আমলের ধারাবাহিকতাই রক্ষা করা হয়েছে বলে মনে করে গণতান্ত্রিক অধিকার কমিটি। তারা বলেছে, বাজেটে বেশির ভাগ খাতে খরচ কমানো হলেও জনপ্রশাসন খাতের খরচ আরও বাড়ানো হয়েছে, কমানো হয়েছে জনগুরুত্বপূর্ণ খাতের বাজেট। বাজেটে আগের মতোই রাঘব বোয়ালদের কাছ থেকে কর আদায়ের ব্যাপারে কোনো সুস্পষ্ট দিকনির্দেশনা নেই।

আজ মঙ্গলবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ডাকসু ক্যাফেটেরিয়ার শিক্ষক লাউঞ্জে গণতান্ত্রিক অধিকার কমিটির কার্যনির্বাহী সভা অনুষ্ঠিত হয়। কমিটির সদস্য অধ্যাপক আনু মুহাম্মদের সভাপতিত্বে সভায় কারা হেফাজতে বম নাগরিকের মৃত্যু, শ্রমিকদের বকেয়া মজুরি নিয়ে টালবাহানা, বাজেটে আওয়ামী আমলের ধারাবাহিকতা রক্ষা, চট্টগ্রাম বন্দর নিয়ে সরকারের অপতৎপরতা, দেশজুড়ে সংখ্যালঘু ও নারীদের ওপর হামলা–হয়রানির ওপর নিন্দা প্রস্তাব গৃহীত হয়।

সভার শুরুতেই অন্তর্বর্তী সরকারের ঘোষিত ২০২৫-২৬ অর্থবছরের বাজেট নিয়ে আলোচনা হয়। অধিকার কমিটির নেতারা বলেন, নতুন বাজেটে আওয়ামী লীগ আমলের ধারাবাহিকতাই রক্ষা করা হয়েছে। বাজেটে বেশির ভাগ খাতে খরচ কমানো হলেও জনপ্রশাসন খাতের খরচ আরও বাড়ানো হয়েছে, কমানো হয়েছে জনগুরুত্বপূর্ণ খাতের বাজেট। অন্যদিকে বাজেটের কোনো ধরনের স্বচ্ছতা ও জবাবদিহি নিশ্চিত করা হয়নি। এখনো মানুষের কাছে সরকারের পরিচালন ব্যয়ের আদ্যোপান্ত হিসাব ও বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্পের বিস্তারিত ডকুমেন্ট (নথি) উন্মুক্ত নয়। ফলে বাজেটের কত টাকা লুটপাট হবে, অপচয় হবে, সেটা জানার কোনো সুযোগ জনগণের সামনে রাখা হয়নি। বাজেটে আগের মতোই রাঘব বোয়ালদের কাছ থেকে কর আদায়ের ব্যাপারে কোনো সুস্পষ্ট দিকনির্দেশনা নেই।

বাজেটে আগের মতোই কালোটাকা সাদা করার সুযোগ রাখা হয়েছে উল্লেখ করে অধিকার কমিটির সভায় বলা হয়, বাজেটে কর্মসংস্থান বাড়ানোর ব্যাপারে কোনো সুস্পষ্ট দিকনির্দেশনাও নেই। সেই সঙ্গে বিভিন্ন দেশি শিল্পের ওপর যেভাবে শুল্ক চাপানো হয়েছে, সেটা অন্তর্বর্তী সরকারের বিদেশমুখিতাকেই সামনে আনে। আওয়ামী লীগের মতোই অন্তর্বর্তী সরকার আমলাদের খুশি করার পথে হাঁটছে এবং বাজেটের নানা খাতের হিসাব দেওয়ার সময় ধোঁয়াশা সৃষ্টি করছে। এর উদাহরণ হিসেবে সভায় কমিটির নেতারা সামাজিক নিরাপত্তা খাতের কথা বলেন। তাঁরা বলেন, এ ক্ষেত্রে লাখ–কোটি টাকার ওপর বাজেট দেখানো হলেও আসলে তার মধ্যে পেনশন ও ভর্তুকির টাকা যোগ করা হয়েছে। এটা কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। সভা থেকে বাজেটের সব প্রকল্প ও পরিচালন ব্যয়ের বিস্তারিত হিসাব জনগণের কাছে অবিলম্বে উন্মুক্ত করতে সরকারের কাছে দাবি জানানো হয়।

সভায় বলা হয়, সম্প্রতি ঘটা সংময় বমের মৃত্যু এবং এর আগে লাল ত্লেং কিম বমসহ অন্যান্য বম নাগরিকের সঙ্গে ঘটে যাওয়া নির্মম ঘটনা কেবল ব্যক্তিগত অবহেলার উদাহরণ নয়; বরং এটি একটি বৃহত্তর ও সুপরিকল্পিত কাঠামোর অংশ। এর মাধ্যমে রাষ্ট্র বম জনগোষ্ঠীর বিরুদ্ধে একটি প্রক্রিয়াধীন জাতিগত নির্মূল অভিযান পরিচালনা করছে। এ নির্মূল অভিযান সরাসরি রাষ্ট্রীয় মদদে, রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানগুলোর সক্রিয় সহযোগিতায় এবং ‘সন্ত্রাসবিরোধী’ প্রচারণার নামে পরিচালিত হচ্ছে। নির্বিচার আটক বম নাগরিকদের মুক্তির দাবি জানিয়েছে গণতান্ত্রিক অধিকার কমিটি।

গতকাল কারখানা কর্তৃপক্ষের দুর্ব্যবহারের কারণে অপমানিত হয়ে গাজীপুরের শ্রীপুরে জিন্নাত নিটওয়্যার কারখানায় ছাদ থেকে লাফিয়ে পড়ে শ্রমিকের মৃত্যু হওয়ার অভিযোগের প্রসঙ্গ তুলে ধরে সভায় বলা হয়, ওই ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে শ্রমিকদের বিক্ষোভে পুলিশের হামলায় প্রায় ২০ জন শ্রমিক আহত হন। অন্যদিকে এখনো টিএনজেড গ্রুপের শ্রমিকেরা তাঁদের প্রতিশ্রুত বকেয়া মজুরি পুরোটা পাননি। গণতান্ত্রিক অধিকার কমিটি মনে করে, এসব ঘটনায় শ্রমিক ইস্যুতে সরকারের অসংবেদনশীলতাই প্রকাশিত হয়। কমিটি এ–ও মনে করে, এসবেরই প্রতিফলন ঘটেছে এবারের বাজেটেও। যার কারণে আওয়ামী লীগ আমলের মতোই শ্রমিকদের জন্য সর্বনিম্ন বরাদ্দই রাখা হয়েছে।

যশোরের অভয়নগরে হিন্দুদের ‍ওপর হামলা ঠেকাতে সরকারের ব্যর্থতার তীব্র সমালোচনা করা হয় অধিকার কমিটির সভায়। একই সঙ্গে শিক্ষক নাদিরা ইয়াসমিনসহ বিভিন্ন জায়গায় মব তৈরি করে নারীদের ওপর যে ফ্যাসিবাদী আক্রমণ ও হয়রানি চলছে, সেগুলো ঠেকাতে সরকারের ব্যর্থতার তীব্র নিন্দা জানায় কমিটি।

সভা শেষে গণতান্ত্রিক অধিকার কমিটির পক্ষ থেকে ১৪ জুন ২০২৫-২৬ অর্থবছরের বাজেট পর্যালোচনা ও ২১ জুন চট্টগ্রাম বন্দরকেন্দ্রিক আলোচনার কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়।

এ সভায় গণতান্ত্রিক অধিকার কমিটির সদস্য অধ্যাপক সামিনা লুৎফা, মানজুর-আল-মাতিন, বীথি ঘোষ, সীমা দত্ত, মারজিয়া প্রভা, কৌশিক আহমেদ, ফেরদৌস আরা রুমী, সুজিত চৌধুরী, মাহতাব উদ্দীন আহমেদ, হারুন অর রশিদ, আবদুল্লাহ কাফী রতন, আনিস রায়হান, সত্যজিৎ বিশ্বাস, ইকবাল কবীর, দিলীপ রায়, রাফিকুজ্জামান ফরিদ, তামজিদ হায়দার প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ল গ আমল র গ র মত ই সরক র র পর চ ল র ওপর আওয় ম

এছাড়াও পড়ুন:

ঢাকায় অটোমোবাইল ও কৃষি যন্ত্রপাতির প্রদর্শনী শুরু হচ্ছে শনিবার

ঢাকায় দুই দিনব্যাপী অটোমোবাইল ও কৃষি যন্ত্রপাতির প্রদর্শনী শুরু হচ্ছে আগামী শনিবার। এতে অটোমোবাইল, কৃষি যন্ত্রপাতিসহ হালকা প্রকৌশল খাতের ২৬টি স্টল থাকবে। পাশাপাশি শিল্পের সহায়ক প্রতিষ্ঠানের স্টল থাকবে আরও ১২টি। প্রদর্শনীর উদ্বোধন করবেন শিল্প উপদেষ্টা আদিলুর রহমান খান।

বাংলাদেশ অটোমোবাইলস অ্যাসেম্বলার্স অ্যান্ড ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যাসোসিয়েশন ও অ্যাগ্রিকালচার মেশিনারি ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যাসোসিয়েশন বাংলাদেশের সহযোগিতায় এই প্রদর্শনীর আয়োজন করছে বাংলাদেশ চেম্বার অব ইন্ডাস্ট্রিজ (বিসিআই)। ঢাকার তেজগাঁও শিল্প এলাকায় এডিসন প্রাইম ভবনের ছাদে এই প্রদর্শনী অনুষ্ঠিত হবে। এই ভবনেই বিসিআইয়ের কার্যালয় অবস্থিত।

আজ বৃহস্পতিবার বিসিআই কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত সংবাদ সম্মেলনে দুই দিনব্যাপী এই প্রদর্শনী নিয়ে বিস্তারিত জানান চেম্বারটির সভাপতি আনোয়ার-উল আলম চৌধুরী। আরও উপস্থিত ছিলেন অ্যাগ্রিকালচার মেশিনারি ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যাসোসিয়েশন বাংলাদেশের সভাপতি আলিমুল আহসান চৌধুরী, বিসিআইয়ের পরিচালক মো. শাহেদ আলম, এস এম শাহ আলম, জিয়া হায়দার প্রমুখ।

বিসিআইয়ের সভাপতি বলেন, হালকা প্রকৌশল খাতে বাংলাদেশে বর্তমানে ছোটবড় প্রায় ৫০ হাজার প্রতিষ্ঠান রয়েছে। এই খাতে কাজ করেন ১০ লাখ মানুষ। হালকা প্রকৌশল খাতে স্থানীয় বাজার ১২ বিলিয়ন ডলারের হলেও দেশীয় উৎপাদকেরা অর্ধেক পূরণ করতে পারছেন। তা ছাড়া হালকা প্রকৌশল খাতের বৈশ্বিক বাজারের আকার প্রায় ৮ ট্রিলিয়ন ডলার। তিনি আরও বলেন, তৈরি পোশাক খাত আর বেশি মূল্য সংযোজন করতে পারবে না। ফলে আমাদের অর্থনীতিকে টেকসই করতে হলে আমাদের অন্য খাতে যেতে হবে। সে ক্ষেত্রে হালকা প্রকৌশল খাত পারে বড় সম্ভাবনার।

অ্যাগ্রিকালচার মেশিনারি ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যাসোসিয়েশন বাংলাদেশের সভাপতি আলিমুল আহসান চৌধুরী বলেন, প্রতিবছর কৃষিজমি কমছে। কৃষকের বয়স বাড়ছে, তার কারণ তরুণেরা খুব কম কৃষিকাজে আসছেন। বিশ্বের অনেক দেশেই মোট জনগোষ্ঠীর ১০ শতাংশের কম কৃষিকাজে নিয়োজিত। ১০ শতাংশ মানুষ বাকি ৯০ শতাংশের জন্য খাদ্য জোগান দিচ্ছে। সে কারণে যন্ত্রের ব্যবহার বাড়ছে। বাংলাদেশেও কৃষিকাজে যন্ত্রের ব্যবহার বাড়ছে। তবে বড় অংশই আমদানি করতে হচ্ছে।

আলিমুল আহসান চৌধুরী বলেন, বাংলাদেশে ১২০০ থেকে ১৫০০ কোটি টাকার কৃষি যন্ত্রপাতির বাজার আছে। তার মধ্যে দেশীয় কোম্পানিগুলো সরবরাহ করছে মাত্র ৪০০ থেকে ৪৫০ কোটি টাকার যন্ত্রাংশ। নীতিসহায়তা পেলে দেশীয় প্রতিষ্ঠানগুলোর সক্ষমতা বাড়বে বলে মন্তব্য করেন তিনি।

সম্পর্কিত নিবন্ধ