পবিত্র ঈদুল আজহার সময় কোরবানি বা কোরবানির দৃশ্য আমাদের মধ্যে ইবরাহিম (আ.)–এর ত্যাগের স্মৃতি জাগিয়ে তোলে। তবে বহু মা–বাবার মনে প্রশ্ন আছে, শিশুদের কোরবানি দেখানো ঠিক কি না? বা এটি তাদের মধ্যে কী মানসিক প্রভাব ফেলতে পারে?

শরিয়াহতে কোনো বাধ্যবাধকতা নেই

ইসলামি শরিয়াহর দৃষ্টিকোণ থেকে শিশুদের কোরবানির জবাই দেখানোর কোনো বাধ্যবাধকতা নেই। মিসরের অধ্যাপক ও ইমাম শেখ হামদি আমিনের মতে, ‘শিশুদের জোর করে জবাই দেখাতে হবে, এমন কোনো বিধান নেই। এটি কেবল তাদের ইচ্ছার ওপর নির্ভর করে। কোরবানি দেওয়ার দায়িত্ব প্রাপ্তবয়স্কদের, যাঁরা এটি সম্পন্ন করবেন। শিশুদের জোর করে দেখালে তাদের মন আহত হতে পারে বা নিদ্রায় ব্যাঘাত ঘটতে পারে।’ এই মতামতের ভিত্তি এই যে ইসলাম শিশুদের মানসিক স্বাস্থ্যের প্রতি সংবেদনশীল এবং তাদের মনে অপ্রয়োজনীয় চাপ সৃষ্টি করতে নিরুৎসাহিত করে।

শিশুদের জোর করে জবাই দেখাতে হবে, এমন কোনো বিধান নেই। কোরবানি দেওয়ার দায়িত্ব প্রাপ্তবয়স্কদের, যাঁরা এটি সম্পন্ন করবেন। শিশুদের জোর করে দেখালে তাদের মন আহত হতে পারে।শেখ হামদি আমিন, অধ্যাপক ও ইমাম

মুসলমান মনোবিজ্ঞানীদের মত

মুসলমান মনোবিজ্ঞানীরা এ বিষয়ে একমত যে শিশুদের কোরবানির জবাই দেখানোর আগে তাদের মানসিকভাবে প্রস্তুত করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। আল–আজহার বিশ্ববিদ্যালয়ের মনোবিজ্ঞানের অধ্যাপক মোহাম্মদ এল–মাহদি বলেন, ‘যদি মাতা–পিতা শিশুকে কোনো প্রস্তুতি ছাড়াই জবাইয়ের দৃশ্যের সামনে নিয়ে যান, তবে শিশু এটিকে হিংস্রতা হিসেবে গ্রহণ করতে পারে এবং এটি তার মনে আঘাত দিতে পারে।’ তিনি পরামর্শ দেন, শিশুদের কোরবানির ঐতিহাসিক ও ধর্মীয় তাৎপর্য বোঝানো উচিত। উদাহরণস্বরূপ, মাতা–পিতা বলতে পারেন যে এই কোরবানির মাংস অনেক দরিদ্র পরিবারের মুখে হাসি ফোটাবে। 

আরও পড়ুনমক্কায় ঐতিহাসিক স্থান ঘুরে দেখছেন হজযাত্রীরা২৫ জুন ২০২৪

আইন শামস বিশ্ববিদ্যালয়ের মনোবিজ্ঞানের প্রভাষক দালিয়া মুমিনও এই মত সমর্থন করেন। তিনি বলেন, ‘যেকোনো বড় ঘটনা, যেমন স্কুল পরিবর্তন বা বাসস্থান পরিবর্তনের আগে শিশুদের সঙ্গে কথা বলা জরুরি। কোরবানিও তার ব্যতিক্রম নয়।’ তিনি বলেন, কোনো শিশু অন্য সময়ে মাংস বা মুরগি কাটার দৃশ্য না দেখে কেবল ঈদের সময়ে সে রকম দৃশ্য দেখলে তার মনে ভয় সৃষ্টি হতে পারে।

শিশুদের কোরবানির ঐতিহাসিক ও ধর্মীয় তাৎপর্য বোঝানো উচিত। উদাহরণস্বরূপ, মাতা–পিতা বলতে পারেন যে এই কোরবানির মাংস অনেক দরিদ্র পরিবারের মুখে হাসি ফোটাবে। 

শিশুদের কীভাবে প্রস্তুত করবেন

শিশুদের কোরবানির ব্যাপারে মাতা–পিতার উচিত কিছু পদক্ষেপগুলো গ্রহণ করা। যেমন:

১.

কোরবানির ধর্মীয় পটভূমি বোঝানো: শিশুদের ইবরাহিম (আ.) ও ইসমাইল (আ.)–এর ত্যাগের গল্প সহজ ভাষায় বলুন। ব্যাখ্যা করুন যে কোরবানি আল্লাহর প্রতি আনুগত্য ও ত্যাগের প্রতীক। পবিত্র কোরআনের আয়াত উল্লেখ করা যেতে পারে, ‘তাদের মাংস বা রক্ত আল্লাহর কাছে পৌঁছে না; বরং তোমাদের তাকওয়া তাঁর কাছে পৌঁছে।’ (সুরা হজ, আয়াত: ৩৭)

২. মানবিক দিক তুলে ধরা: শিশুদের বোঝান যে কোরবানির মাংস গরিব ও অভাবী মানুষের মধ্যে বিতরণ করা হয়, যা সমাজে সংহতি ও ভালোবাসা ছড়ায়। এটি তাদের মনে ইতিবাচক ধারণা তৈরি করবে।

আরও পড়ুনএকজন হজযাত্রীর দিনলিপি২৪ জুন ২০২৪কোনো শিশু অন্য সময়ে মাংস বা মুরগি কাটার দৃশ্য না দেখে কেবল ঈদের সময়ে সে রকম দৃশ্য দেখলে তার মনে ভয় সৃষ্টি হতে পারে।দালিয়া মুমিন, আইন শামস বিশ্ববিদ্যালয়ের মনোবিজ্ঞানের প্রভাষক

৩. ধীরে ধীরে পরিচয় করানো: বছরে অন্যান্য সময়ে মাংস বা মুরগি কাটার দৃশ্য দেখিয়ে শিশুদের এই প্রক্রিয়ার সঙ্গে পরিচিত করুন। এটি তাদের জন্য কোরবানির সময় জবাইয়ের দৃশ্যকে কম ভীতিকর করে তুলবে।

৪. শিশুর ইচ্ছার প্রতি সম্মান: শিশু যদি জবাই দেখতে না চায়, তবে তাকে জোর করা উচিত নয়। তাদের মানসিক প্রস্তুতি ও আরামের বিষয়টি প্রাধান্য দেওয়া উচিত।

শিশুর মধ্যে যদি ভয় বা অস্বস্তি দেখা যায়, তবে তাকে জোর করা উচিত নয়। তার দেখার প্রস্তুতি ও সম্মতি থাকলে তাকে কোরবানি দেখানো যায়। মাতা–পিতার উচিত শিশুর বয়স, মানসিক পরিপক্বতা ও স্বাচ্ছন্দ্য বিবেচনা করে সিদ্ধান্ত নেওয়া।

সূত্র: অ্যাবাউট ইসলাম ডটনেট

আরও পড়ুন মদিনা যাত্রায় মনের কোণে যত কথা২১ জুন ২০২৪

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: শ শ দ র ক রব ন র শ শ দ র জ র কর মন ব জ ঞ ন র প রস ত ত ত দ র মন র সময়

এছাড়াও পড়ুন:

শিশুদের কোরবানি দেখানো নিয়ে পণ্ডিতদের ভাবনা

পবিত্র ঈদুল আজহার সময় কোরবানি বা কোরবানির দৃশ্য আমাদের মধ্যে ইবরাহিম (আ.)–এর ত্যাগের স্মৃতি জাগিয়ে তোলে। তবে বহু মা–বাবার মনে প্রশ্ন আছে, শিশুদের কোরবানি দেখানো ঠিক কি না? বা এটি তাদের মধ্যে কী মানসিক প্রভাব ফেলতে পারে?

শরিয়াহতে কোনো বাধ্যবাধকতা নেই

ইসলামি শরিয়াহর দৃষ্টিকোণ থেকে শিশুদের কোরবানির জবাই দেখানোর কোনো বাধ্যবাধকতা নেই। মিসরের অধ্যাপক ও ইমাম শেখ হামদি আমিনের মতে, ‘শিশুদের জোর করে জবাই দেখাতে হবে, এমন কোনো বিধান নেই। এটি কেবল তাদের ইচ্ছার ওপর নির্ভর করে। কোরবানি দেওয়ার দায়িত্ব প্রাপ্তবয়স্কদের, যাঁরা এটি সম্পন্ন করবেন। শিশুদের জোর করে দেখালে তাদের মন আহত হতে পারে বা নিদ্রায় ব্যাঘাত ঘটতে পারে।’ এই মতামতের ভিত্তি এই যে ইসলাম শিশুদের মানসিক স্বাস্থ্যের প্রতি সংবেদনশীল এবং তাদের মনে অপ্রয়োজনীয় চাপ সৃষ্টি করতে নিরুৎসাহিত করে।

শিশুদের জোর করে জবাই দেখাতে হবে, এমন কোনো বিধান নেই। কোরবানি দেওয়ার দায়িত্ব প্রাপ্তবয়স্কদের, যাঁরা এটি সম্পন্ন করবেন। শিশুদের জোর করে দেখালে তাদের মন আহত হতে পারে।শেখ হামদি আমিন, অধ্যাপক ও ইমাম

মুসলমান মনোবিজ্ঞানীদের মত

মুসলমান মনোবিজ্ঞানীরা এ বিষয়ে একমত যে শিশুদের কোরবানির জবাই দেখানোর আগে তাদের মানসিকভাবে প্রস্তুত করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। আল–আজহার বিশ্ববিদ্যালয়ের মনোবিজ্ঞানের অধ্যাপক মোহাম্মদ এল–মাহদি বলেন, ‘যদি মাতা–পিতা শিশুকে কোনো প্রস্তুতি ছাড়াই জবাইয়ের দৃশ্যের সামনে নিয়ে যান, তবে শিশু এটিকে হিংস্রতা হিসেবে গ্রহণ করতে পারে এবং এটি তার মনে আঘাত দিতে পারে।’ তিনি পরামর্শ দেন, শিশুদের কোরবানির ঐতিহাসিক ও ধর্মীয় তাৎপর্য বোঝানো উচিত। উদাহরণস্বরূপ, মাতা–পিতা বলতে পারেন যে এই কোরবানির মাংস অনেক দরিদ্র পরিবারের মুখে হাসি ফোটাবে। 

আরও পড়ুনমক্কায় ঐতিহাসিক স্থান ঘুরে দেখছেন হজযাত্রীরা২৫ জুন ২০২৪

আইন শামস বিশ্ববিদ্যালয়ের মনোবিজ্ঞানের প্রভাষক দালিয়া মুমিনও এই মত সমর্থন করেন। তিনি বলেন, ‘যেকোনো বড় ঘটনা, যেমন স্কুল পরিবর্তন বা বাসস্থান পরিবর্তনের আগে শিশুদের সঙ্গে কথা বলা জরুরি। কোরবানিও তার ব্যতিক্রম নয়।’ তিনি বলেন, কোনো শিশু অন্য সময়ে মাংস বা মুরগি কাটার দৃশ্য না দেখে কেবল ঈদের সময়ে সে রকম দৃশ্য দেখলে তার মনে ভয় সৃষ্টি হতে পারে।

শিশুদের কোরবানির ঐতিহাসিক ও ধর্মীয় তাৎপর্য বোঝানো উচিত। উদাহরণস্বরূপ, মাতা–পিতা বলতে পারেন যে এই কোরবানির মাংস অনেক দরিদ্র পরিবারের মুখে হাসি ফোটাবে। 

শিশুদের কীভাবে প্রস্তুত করবেন

শিশুদের কোরবানির ব্যাপারে মাতা–পিতার উচিত কিছু পদক্ষেপগুলো গ্রহণ করা। যেমন:

১. কোরবানির ধর্মীয় পটভূমি বোঝানো: শিশুদের ইবরাহিম (আ.) ও ইসমাইল (আ.)–এর ত্যাগের গল্প সহজ ভাষায় বলুন। ব্যাখ্যা করুন যে কোরবানি আল্লাহর প্রতি আনুগত্য ও ত্যাগের প্রতীক। পবিত্র কোরআনের আয়াত উল্লেখ করা যেতে পারে, ‘তাদের মাংস বা রক্ত আল্লাহর কাছে পৌঁছে না; বরং তোমাদের তাকওয়া তাঁর কাছে পৌঁছে।’ (সুরা হজ, আয়াত: ৩৭)

২. মানবিক দিক তুলে ধরা: শিশুদের বোঝান যে কোরবানির মাংস গরিব ও অভাবী মানুষের মধ্যে বিতরণ করা হয়, যা সমাজে সংহতি ও ভালোবাসা ছড়ায়। এটি তাদের মনে ইতিবাচক ধারণা তৈরি করবে।

আরও পড়ুনএকজন হজযাত্রীর দিনলিপি২৪ জুন ২০২৪কোনো শিশু অন্য সময়ে মাংস বা মুরগি কাটার দৃশ্য না দেখে কেবল ঈদের সময়ে সে রকম দৃশ্য দেখলে তার মনে ভয় সৃষ্টি হতে পারে।দালিয়া মুমিন, আইন শামস বিশ্ববিদ্যালয়ের মনোবিজ্ঞানের প্রভাষক

৩. ধীরে ধীরে পরিচয় করানো: বছরে অন্যান্য সময়ে মাংস বা মুরগি কাটার দৃশ্য দেখিয়ে শিশুদের এই প্রক্রিয়ার সঙ্গে পরিচিত করুন। এটি তাদের জন্য কোরবানির সময় জবাইয়ের দৃশ্যকে কম ভীতিকর করে তুলবে।

৪. শিশুর ইচ্ছার প্রতি সম্মান: শিশু যদি জবাই দেখতে না চায়, তবে তাকে জোর করা উচিত নয়। তাদের মানসিক প্রস্তুতি ও আরামের বিষয়টি প্রাধান্য দেওয়া উচিত।

শিশুর মধ্যে যদি ভয় বা অস্বস্তি দেখা যায়, তবে তাকে জোর করা উচিত নয়। তার দেখার প্রস্তুতি ও সম্মতি থাকলে তাকে কোরবানি দেখানো যায়। মাতা–পিতার উচিত শিশুর বয়স, মানসিক পরিপক্বতা ও স্বাচ্ছন্দ্য বিবেচনা করে সিদ্ধান্ত নেওয়া।

সূত্র: অ্যাবাউট ইসলাম ডটনেট

আরও পড়ুন মদিনা যাত্রায় মনের কোণে যত কথা২১ জুন ২০২৪

সম্পর্কিত নিবন্ধ