পোশাক কারখানার এক শ্রমিক জাকির হোসেনের (২৫) আত্মহনন ঘিরে গতকাল মঙ্গলবার সারাদিন উত্তপ্ত ছিল গোটা গাজীপুর। আগের রাতের ওই আত্মহননের ঘটনাকে কেন্দ্র করে সকালে পুলিশের সঙ্গে দফায় দফায় শ্রমিকদের সংঘর্ষ হয়। ভাঙচুর হয় কারখানা। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে পুলিশ টিয়ারগ্যাস ছোড়ে। সংঘর্ষে ১১ পুলিশ সদস্যসহ অন্তত ৪০ জন আহত হয়েছে। পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে ১৯ জনকে আটক করেছে। 
 
জানা গেছে, শ্রীপুর উপজেলার গাজীপুর ইউনিয়নের নয়নপুরের জিন্নাত নিটওয়্যার লিমিটেড নামে একটি পোশাক কারখানায় চাকরি করতেন জাকির। গত সোমবার সারাদিন তিনি কাজ করেন কারখানায়। বাসায় ফেরার আগে হঠাৎ কারখানার আট তলা ভবনের ছাদে উঠে নিচে ঝাঁপিয়ে পড়েন তিনি। মারাত্মক রক্তাক্ত অবস্থায় সহকর্মীরা জাকিরকে হাসপাতালে নিলে চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন। জাকির নেত্রকোনার বারহাট্টা উপজেলার বাদেচিরাম গ্রামের মোক্তার উদ্দিনের ছেলে।

সহকর্মীদের দাবি, সোমবার জাকির কারখানা কর্তৃপক্ষের কাছে ছুটি চেয়েছিলেন। কিন্তু তাঁকে ছুটি না দিয়ে লাঞ্ছিত করা হয়। এ অপমান সহ্য করতে না পেরে জাকির আট তলার ছাদ থেকে লাফিয়ে পড়ে আত্মহনন করেছেন। তবে কারখানা কর্তৃপক্ষ বলছে, জাকির ছুটি চায়নি, তাকে লাঞ্ছিতও করা হয়নি। পারিবারিক কলহের কারণে মানসিক যন্ত্রণা থেকে তিনি আত্মহত্যা করে থাকতে পারেন।

এদিকে জাকিরের মৃত্যুর খবর ছড়িয়ে পড়লে রাতেই জিন্নাত নিটওয়্যার লিমিটেডের শ্রমিকরা উত্তেজিত হয়ে পড়েন। গতকাল সকাল ৯টার দিকে তারা এক জোট হয়ে কারখানা ঘেরাও করেন। এক পর্যায়ে শ্রমিকরা কারখানায় ভাঙচুর চালায়। আগে থেকেই পুলিশ সেখানে অবস্থান করছিল। শ্রমিকরা বিক্ষোভ শুরু করলে পুলিশ তাদের থামানোর চেষ্টা করে। খবর পেয়ে সেনাবাহিনী ও শিল্প পুলিশ হাজির হয়ে তাদের নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা চালায়। 

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, কারখানার সামনে রাখা পুলিশের একটি এপিসি (আর্মার্ড পার্সোনেল ক্যারিয়ার) গাড়ি শ্রমিকরা ভাঙচুর চালায়। এ সময় পুলিশকে লক্ষ্য করে তারা ইটপাটকেলও ছুড়তে থাকে। পুলিশ তাদের ধাওয়া দিয়ে এবং টিয়ারশেল নিক্ষেপ করে ছত্রভঙ্গ করে দেয়। এরপর দফায় দফায় পুলিশ ও শ্রমিকদের মধ্যে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া এবং সংঘর্ষ চলতে থাকে। পুরো এলাকায় উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। পুলিশের লাঠিপেটা ও টেয়ারশেলের আঘাতে বেশ কয়েকজন শ্রমিক আহত হলে পরিস্থিতি আরও জটিল হয়। তা ছাড়া শ্রমিকদের ওপর গুলি ছোড়ার অভিযোগ উঠেছে পুলিশের বিরুদ্ধে।

শ্রীপুর থানার ওসি মহম্মদ আব্দুল বারিক জানান, শ্রমিকদের ছত্রভঙ্গ করতে ১৯টি টিয়ারশেল নিক্ষেপ করা হয়। সংঘর্ষে পুলিশের ১১ জন সদস্য আহত হয়েছেন। ১৯ জনকে আটক করা হয়েছে। 

জিন্নাত নিটওয়্যার লিমিটেড কারখানার এজিএম জুবায়ের এম বাশার বলেন, ‘পারিবারিক বিষয় নিয়ে জাকির কয়েক দিন ধরে হতাশায় ভুগছিলেন। সেই হতাশা থেকেই জাকির আটতলা থেকে লাফিয়ে আত্মহত্যা করেছেন। কর্তৃপক্ষের কাছে তিনি ছুটি চাননি। তাঁকে লাঞ্ছিত করার প্রশ্নই উঠে না।
এদিকে কারখানার সিসিটিভিতে ধরা পড়েছে জাকিরের আত্মহত্যার দৃশ্য। ফুটেজে দেখা যায়, ভবনের আটতলায় উঠে জাকির বারবার আকাশের দিকে তাকাচ্ছেন। দুই হাত দিয়ে চুল টানছেন। এক পর্যায়ে সাদা এক টুকরো কাগজ নিয়ে ভবনের মাঝামাঝি স্থানে রাখেন। পরে ছাদের কিনারায় গিয়ে বেশ অনেকক্ষণ দাঁড়িয়ে থেকে নিচের দিকে ঝাঁপ দেন। পুলিশ জাকিরের লেখা চিরকুটটি উদ্ধার করেছে। তাতে লেখা রয়েছে– জীবনে সবাই ভালো থাকতে পারে না। 

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: স ঘর ষ

এছাড়াও পড়ুন:

শ্রীপুরে শ্রমিক-পুলিশ সংঘর্ষে আহত শতাধিক

গাজীপুরের শ্রীপুরে পোশাক কারখানার আন্দোলনরত শ্রমিকদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষ হয়েছে। এতে অন্তত শতাধিক শ্রমিক আহত হয়েছেন।

এক শ্রমিকের আত্মহত্যার জেরে মঙ্গলবার (৩ জুন) সকালে উপজেলার গাজীপুর ইউনিয়নের ধনুয়া গ্রামের নতুন বাজার এলাকার জিন্নাত নিটওয়্যার লিমিটেড কারখানায় ঘটনাটি ঘটে।

আরো পড়ুন: গাজীপুরে গার্মেন্টসের আটতলার ছাদ থেকে লাফিয়ে শ্রমিকের মৃত্যু

আরো পড়ুন:

ঝিনাইদহে দুই পক্ষের সংঘর্ষে নিহত ১

রাবিতে সংঘর্ষ: ৩ ছাত্র সংগঠনের পাল্টাপাল্টি অভিযোগ-প্রতিবাদ

আন্দোলনরত শ্রমিকরা জানান, সোমবার (২ জুন) জাকির হোসেন (২৫) নামে এক শ্রমিক অসুস্থতার জন্য একদিন ছুটি নেন। ছুটি শেষে কাজে ফিরলে কর্তৃপক্ষ সহকর্মীদের সামনে তার সঙ্গে দুর্ব্যবহার করে। এই অপমান সইতে না পেরে জাকির কারখানার আটতলা ভবন থেকে লাফ দিয়ে আত্মহত্যা করেন। জাকিরের মৃত্যুর খবর ছড়িয়ে পড়লে সহকর্মীরা শান্তিপূর্ণ আন্দোলন শুরু করেন। কিন্তু, পরিস্থিতি দ্রুত উত্তপ্ত হয়ে ওঠে। 

শ্রমিকদের অভিযোগ, মঙ্গলবার সকালে পুলিশ লাঠিপেটা, টিয়ারগ্যাস এবং গুলিবর্ষণ করে আন্দোলন দমানোর চেষ্টা করে। এতে অন্তত শতাধিক শ্রমিক আহত হন। শ্রমিকদের একটি অংশ ক্ষুব্ধ হয়ে শিল্প পুলিশের একটি গাড়ি ভাঙচুর করে। 

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক শ্রমিকরা জানান, সংঘর্ষে গর্ভবতী নারীসহ বহু শ্রমিক আহত হয়েছেন। 

শ্রীপুর সাব-জোনের ইনচার্জ মো. আব্দুল লতিফ বলেন, “বিক্ষুব্ধ শ্রমিকরা শিল্প পুলিশের একটি এপিসি (আর্মার্ড পার্সোনেল ক্যারিয়ার) গাড়ি ভাঙচুর করে। পরে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে এবং বিশৃঙ্খলা এড়াতে তাদের ছত্রভঙ্গ করে দেওয়া হয়।”

শ্রীপুর থানার ওসি মো. আব্দুল বারিক বলেন, “শ্রমিক ও পুলিশের মধ্যে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। পুলিশ টিয়ারগ্যাস ব্যবহার করেছে, তবে গুলির কোনো ঘটনা ঘটেনি। বর্তমানে উত্তেজনা নিয়ন্ত্রণে কাজ চলছে।”

ঢাকা/রফিক/মাসুদ

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • আইসিইউতে অভিনেত্রী তানিন সুবহা
  • শ্রীপুরে শ্রমিক-পুলিশ সংঘর্ষে আহত শতাধিক
  • গাজীপুরে গার্মেন্টসের আটতলার ছাদ থেকে লাফিয়ে শ্রমিকের মৃত্যু