মহসিন সাহেব অফিস শেষে মাত্রই বাসায় ফিরেছেন। কাপড়–জামাও বদলাননি। এমন সময় দরজার ডিংডং ঘণ্টাটি বেজে উঠল। বিরক্তি নিয়েই দরজা খুলতে এগিয়ে গেলেন। শুনতে পেলেন, বাইরে গরুর হাম্বা হাম্বা ডাক চলছে।
চমকে উঠলেন মহসিন সাহেব, তবে কি গরুও বেল টিপতে শিখে গেছে? কোরবানির ঈদ এসে গেছে। পথে–ঘাটে গরু নিয়ে চলাচলও শুরু। অহরহ হাম্বা ডাক শুনতে শুনতে এখন অভ্যাসই হয়ে গেছে বলা যায়। ভাবলেন—দলছুট দিশাহারা কোনো গরু দরজায় এসে হয়তো হাজির হয়েছে! এআইয়ের যুগ! কিসের মধ্যে কী হয় আজকাল, বোঝা কঠিন।
দরজা খুলতেই ভুল ভাঙল। কোনো গরু নেই, যিনি দাঁড়িয়ে আছেন, তিনি এলাকায় ‘মিস্টার অ্যাডভাইজার’ নামে খ্যাত। কেউ কেউ তার্কিকও বলে থাকে। তো তিনি হঠাৎ গরুর ডাক রপ্ত করলেন কেন, ভেবে অবাক হলেন। মহসিন সাহেব অবশ্য তাঁকে আসল নামে, রজব সাহেবই বলেন।
মহসিন সাহেবের সঙ্গে মাঝেমধ্যে দেখা হয়। টুকটাক কথা হয়। এলাকার সবার মতো তিনিও এড়িয়ে চলেন। তো একাধারে বিরক্ত ও বিস্মিত মহসিন সাহেব আবিষ্কার করলেন যে গরু নয়, মিস্টার রজব দাঁড়িয়ে। কিন্তু গরুটি গেল কোথায়!
ঘরে ঢুকতে ঢুকতে রজব মহসিন সাহেবের সঙ্গে কুশল বিনিময় শেষে বললেন, ‘সরি, অসময়ে এসে পড়লাম। আসলে এ ছাড়া আমারও সময় হচ্ছিল না। তক্কে তক্কে ছিলাম.
কথা শেষে হাসতে হাসতে রজব আবার যোগ করলেন, ‘দরজায় গরুর হাম্বা ডাক শুনেছেন, অথচ দেখেন যে গরু নেই। অবাক হয়েছিলেন তো? আসলে কোরবানির ঈদ বলে কথা! আমি মোবাইলে রিংটোন হিসেবে হাম্বাটা জুড়ে দিয়েছি। ট্রেড টিউন আরকি!’
মহসিন সাহেব কোনো উত্তর না দিয়ে বললেন, ‘কন, হঠাৎ আমার বাসায় আসছেন, কী হেল্প করতে পারি।’ নির্লোভ ও সৎ মানুষ হিসেবে পরিচিত মহসিন সাহেবের মুডটা স্টাডি করতে করতে রজব বললেন, ‘মাফ করবেন। আপনি ব্যস্ত মানুষ। দেখাই হয় না। তো দেখলাম, বাসায় ঢুকলেন। তাই জরুরি কথাটা সারতে চলে এলাম। বেশি সময় নেব না।’
‘ঠিক আছে। একটা কথা মনে পড়ল, কমু? আচ্ছা, আপনার একটা ভাই আছে না? কী করে অহন?’ কথাটা শুনে গম্ভীর হয়ে গেলেন রজব সাহেব। বললেন, ‘আর বলবেন না। কী যে হয়েছে, একেবারে গরু–ছাগলেরও অধম। কিছুই করে না। ভাবে, সবাই সবকিছু ওর পাতে তুলে দেবে। শুয়ে–বসেই কাটায়। আমার কাছেই থাকে। কী বলব, মাঝে বন্ধুদের সঙ্গে মিশে চাঁদাবাজি করতে গিয়ে হাজত খেটেছে। চাঁদাবাজিটাও সাকসেসফুলি করতে পারেনি।’ মহসিন সাহেব কথাগুলো শুনে বিরক্ত হলেন। কোরবানির ঈদ বলে রজব লোকটি মনে হয় গরু–ছাগল ছাড়া কিছুই ভাবতে পারেন না। নিজের ভাইকেও সেগুলোর সঙ্গে তুলনা করতে ছাড়েন না। মনে মনে প্রমাদ গুনলেন এই ভেবে, লোকটির যা স্বভাব দাঁড়িয়েছে, তাতে সায় দিয়ে না চললে তাকেও গরু–ছাগলের লাইনে ফেলে কথা বলবে। তাই এসব এড়িয়ে যাওয়ার চেষ্টায় বললেন, ‘তা অহন কন দেহি, হঠাৎ গরিবের ঘরে আসা ক্যান?’
এ কথা জিজ্ঞেস করেই মনে হলো, রজব তাঁর আনসাকসেসফুল ভাইয়ের কাজটি নিজে ধরেননি তো! মানে চাঁদাটাদার লাইন? মানুষের মধ্যে তো প্রায়ই ইনকামের সহজ পথ নেওয়ার প্রবণতা দেখা দিচ্ছে। তা নাম মহসিন হলেও হাজি মুহম্মদ মহসীন তো নই যে দান–অনুদান দিতে পারব। কোনো লাভ হবে না জোর খাটালেও। ভাবলেন মহসিন। কিন্তু সেটা ভুল প্রমাণ করে রজব সাহেব বললেন, ‘নিশ্চয়ই ভাবছেন, আমি ভাইয়ের হয়ে কাজটি করতে এসেছি কি না। সে রকম কিছু নয়। এলাম জানতে, কোরবানি নিয়ে ভাবছেন কি না।’
‘কী জানতে চাইতাছেন?’ মহসিন সাহেব অজান্তে তর্কের পথটা খুলে দিলেন যেন। এ–ও ভাবনায় এল যে লোকটি মাইন্ড রিডিংয়ে অদ্ভুত এক্সপার্ট।
রজব সাহেব বললেন, ‘না, মানে গরু না ছাগল—কিসের মধ্যে আছেন, জানতে চাচ্ছিলাম আরকি।’ মহসিন সাহেব রুষ্ট ভাবটা আড়াল করে বললেন, ‘ওই সবের মধ্যে মানে?’
‘মানে কোন দিকে চোখ?’ রজবের কথার উত্তরে মহসিন বললেন কিছুটা খোঁচা মারার ধরনে, ‘আপাতত চোখটা আপনার দিকেই। কী কইতে চান, বুঝছি না তো তাই।’
‘রাগ করছেন। আপনি কি ভাবছেন, আপনাকে গরু–ছাগল বলছি, ছি ছি।’ রজব জিব কাটলেন। বললেন, ‘যাক গে, ঈদে কী কোরবানি দেবেন, কত টাকা বাজেট ইত্যাদি জানার ইচ্ছায় আসা।’
‘সেইটা জানতে এত দূর আসলেন! আসলে আমি সাধ্যে যা কুলায়, তা–ই তো করি। এবারও তা–ই হইব। অহনও ভাবি নাই তেমন। তা, আপনে তো ভাই এ কয়টা কথা কইতে নিশ্চয়ই আসেন নাই।’
‘ঠিক ধরেছেন। বলার অন্য বিষয় আছে। কিন্তু আপনি এখনো ডিসিশন নেননি, কোরবানিতে কী করবেন? ঈদ তো এসেই গেছে। এখনো সিদ্ধান্ত নেননি! সাধ্যের চিন্তাতেই আছেন! এখন তো গরু না মহিষ, ভেড়া না ছাগল, উট না দুম্বা—এই সব চিন্তা শেষ সবার। মানে সিদ্ধান্ত নেওয়াই শেষ।’
রজব সাহেবের কথা শেষ হতেই মহসিন সাহেব খানিকটা চটে যাওয়ার মতন করে বললেন, ‘আরে ভাই, ডিসিশন লওয়ার সময় আমার এখনো আসে নাই। আপনি নিজেরটা ভাবলে ভালো হয় না? আপনি কি গরুর ভাগার পার্টনার করতে চান, তাই আসা?’ ‘মহসিন সাহেব, মাইন্ড করবেন না। আসলে আমি ডিসিশন নিতে আপনাকে হেল্প করতে চাচ্ছি। সেই জন্য আসা।’
‘কেনরে ভাই! পকেটও আমার, খরচটাও। কী কোরবানি দিমু, সেইটাও আমার চয়েস। ছাপোষা মানুষ। সবটা নিয়া হিসাব কইরা চলন লাগে। আপনি কী হেল্প করবেন, বুঝতাছি না।’
‘বুঝেছি। তা ছাপোষা বলছেন—ছানা–পোনারা সবাই বড় হয়ে গেছে না? তাদের পোষা নিয়ে ভাবতে হয় না নিশ্চয়। তাইলে কি ছাগল পোষার কথা বলছেন সংক্ষেপে। মানে গ্রামের মতো কোরবানির ছাগল পুষে রেখেছেন সারা বছর ধরে?’
এ পর্যায়ে বিরক্তিটুকু ছেঁটে ফেলে মহসিন রীতিমতো ভাষার শিক্ষক বনে যাওয়ার মতো করে বললেন, ‘আরে ভাই “ছ”–এ আ–কার শুনলেই কি খালি ছাগলের কথা মনে পড়ে? আর কোনো কিছু নাই? “ছ”–তে ছাতু, ছায়া, ছাতা, ছাদ, ছাত্র ইত্যাদি কত শব্দ আছে। আমার পুত্ররা এখনো বিশ্ববিদ্যালয়ের লেভেলে আছে, ছাত্র।’
এই কথা শেষে একটু দম নিলেন। তারপর বাকিটা বললেন, ‘তো তাগো দেখভাল করতে হয় না? অগো পিছনে ছায়ার মতন থাকতে হয়। বাবা মানেই তো তাগো মাথার ওপরে ছাদ বলেন, ছাতা বলেন—আমিই সব। অগো ভালো খাবার না দিতে পারলে টানাপোড়েনের সংসারে ছাতু হইলেও তা জোগাড় রাখতে হয়।’
রজব বললেন, ‘আপনি তো আসল পয়েন্ট থেকে দূরে সরিয়ে দিচ্ছেন!’
উত্তরে মহসিন বললেন, ‘আপনের তো পয়েন্ট দুইটা। এক. কোরবানি দিমু কি না। দুই. গরু না ছাগল! তাই তো, নাকি? তা এসব জাইনা আপনার কী লাভ? আর এইটা নিয়া আমারে সাবজেক্ট বানাইলেন ক্যান, অন্যের ব্যাপারে নাক গলানি স্বভাব নাকি!’
‘স্বভাব নারে ভাই, কর্তব্য জ্ঞান করি, মানে যারা কোনো ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নিতে পারে না, আমি তাদের খুঁচিয়ে খুঁচিয়ে মূল সমস্যাগুলোর কথা বের করি। তারপর সমস্যা থাকলে দূর করতে চেষ্টা করি।’
‘চেষ্টা, নাকি কম্পেল! মানে জোরজার কইরা কিছু একটা করাইয়া ছাড়েন। ঘটকগো মতন আর্ট অব কনভিন্সিং বা ম্যাচ মেকিং পটানিমার্কা প্র্যাকটিস করতাছেন ইদানীং।’ মহসিন সাহেব এসব বলে বিরক্তি প্রকাশ করলেন।
‘না ভাই, কোনো আর্টের ব্যাপার না। তা ছাড়া আর্টিস্টদের ব্যাপার অন্য রকম। তাঁরা গরু–ছাগলের সুন্দর সুন্দর ছবি আঁকেন, বিক্রিও করেন। এক আর্টিস্টের কথা জানি, যিনি কাগজে জলরঙে আঁকা তাঁর একটি ছাগলের ছবি বিক্রি করে সেই টাকার অংশবিশেষ দিয়ে বড়সড় গরু কোরবানি দিয়েছিলেন। হা হা হা! আর ঘটক হওয়া তো সাংঘাতিক ব্যাপার। এই বুদ্ধি ধরা তো মহা কঠিন। দুই পক্ষকে গরু বানিয়ে ছাড়ে ভুলিয়ে ভালিয়ে। আমিও তো ভাই তাদের পাল্লায় পড়েই বিয়েটা করেছিলাম!’
‘বুঝছি, আসল কথাটা কইয়া ফালান। হঠাৎ আমার পিছে লাগলেন ক্যান কন তো!’ মহসিন সাহেব ছাড়া পেতে অধৈর্য হয়ে বলেন।
কথা প্রস্তুতই ছিল এমনভাবে শুরু করেন রজব সাহেব। ‘ভাই, মাইন্ড করবেন না। আমি রিয়েলিটিতে বিশ্বাসী। দিনকাল বুঝে চলি। যখন যেমনটা চলে, সেইটা নিয়ে ভাবি। সবাইকে সেইটা ভাবতে শেখাই। মেনে চলতে বলি। সাহায্য করি। যেমন যখন হেভি গরম, লাইফটায় হাঁসফাঁস অবস্থা, তখন এসি, ফ্যান ইত্যাদি কেনার ধুম পড়ে যায়। রীতিমতো প্রতিযোগিতা শুরু হয়। একই রকম অবস্থা হয় কোরবানির ঈদেও। যত বড় গরু তত বড় ডিপ ফ্রিজ কেনার হুড়োহুড়ি পড়ে যায়। অফিস বলেন বা বাসা—সর্বত্রই এসব নিয়ে আলোচনা চলতে থাকে, তাই না? যাঁর এসব কেনার সামর্থ্য নেই, তাঁরও অন্যদের দেখে, বিজ্ঞাপনে উদ্বুদ্ধ হয়ে সামর্থ্য তৈরির চেষ্টা চলে। আসলে একা একা ভাবলে এসবে সিদ্ধহস্ত হওয়া যায় না। সিদ্ধান্তও নেওয়া যায় না। কঠিন হয়, তাই না? তখন হেল্পিং হ্যান্ড হিসেবে পারফেক্ট একজন সহায়ক প্রয়োজন হয়।’
একনাগাড়ে কথা বলে থামেন রজব সাহেব। তারপর মহসিন সাহেবের কোনো প্রতিক্রিয়া চেহারায় আছে কি না, দেখে নেন। কিছুক্ষণ চোখ বন্ধও করে রাখেন। পরবর্তী কথা কী হওয়া উচিত, তা নিয়ে ভাবতে সময় নেন। মহসিন সাহেব অবস্থাটিকে রজবের ভেতরে কুকিং টাইম চলছে বলে ভাবেন। এই রান্নায় নতুন কথা তৈরি হয়ে গেলেই আবার শুরু হয়ে যাবে, ভেবে নেন মহসিন সাহেব।
ভাবতে না ভাবতেই আবার সক্রিয় ভূমিকা নিয়ে বলতে শুরু করেন রজব, ‘যা বলছিলাম, ওই যে এসি, ডিপ ফ্রিজ ইত্যাদি কিনতে অপারগ ব্যক্তিবিশেষগণ, যাঁরা অন্য অনেকের সেসব কেনার জন্য টাকাপয়সা জোগাড়ের উপায় সম্বন্ধে ইতিহাস শুনতে শুনতে নিজেরাও সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেন। অর্থ প্রাপ্তির এক নম্বর, দুই নম্বর—সব দিক উন্মোচিত হয়ে যায় চোখের সামনে। পরের অসুবিধাগুলো নিয়ে পরে ভাবা যাবে—এই কথা ভেবে কাণ্ডটি ঘটিয়ে ফেলেন। বুঝলেন, ঠিক সময়ে ঠিক সিদ্ধান্তটি নিতে জানলে, রিস্ক নিতে পারলে ইচ্ছাপূরণটি অবলীলায় ঘটে। এসিতে গরমে গা জুড়ায় ঠান্ডা পেয়ে, ডিপ ফ্রিজে মাংস টিকে থাকে, আরও কত কী হয়। তবে সবচাইতে বড় প্রাপ্তি ঘটে স্ট্যাটাস বৃদ্ধিতে। গিন্নিদের কাছে নিজেদের দামটিও বাড়ে। সঠিক বলেছি কি না?’
মহসিন সাহেব অত কথা শোনার পর হাঁফ ছেড়ে বাঁচলেন। বললেন, ‘আপনি তো সাহেব আমাকে দুই নম্বরি হইতে শিখাইতাছেন মনে হয়। এই সব আমারে শিখাইয়া লাভ নাই। আমি যা, তা–ই থাকতে পছন্দ করি। আর এই সবের লগে কোরবানির কী সম্পর্ক?’
রজব সাহেব হেসে ফেললেন। ‘এই তো কথায় কথায় শেষমেশ কোরবানির কথায় আসলেন। ঠিক আছে, তাইলে আবার গরু–ছাগলে আসি। সেই যে বলেছিলাম, যখন যা নিয়ে প্রতিযোগিতার দিন আসে, তখন সিদ্ধান্ত নিতে সহায়ক, পরামর্শক লাগে। ওই যে স্ট্যাটাসের কথা বললাম, তেমনটা বড় গরুর বেলায়ও খাটে। তা সে যতই দামি হোক। কিনে এক রাত বাড়িতে বেঁধে রাখলেও স্ট্যাটাসের পারদ অনেক ওপরে উঠে যায়। গরুটাকে বিভিন্ন পাড়ার লোকেরাও দেখতে আসে। মালিককেও দেখে। মনে মনে বিপুল ওজনের মাপটাও করে ফেলে। মানে গরুর মাংস ও মালিকের ভারী পকেটের ওজন।’
মহসিন সাহেব কিছুটা ঠাট্টা মেশানো স্বরে বলেন, ‘বেশ, তা আমারে দেইখা কি আপনের মনে হইতাছে ওই পারদ উঠানিতে আমি এক্সপার্ট? ওইটা কিনার আমার সাধ্য টইটম্বুর অবস্থার?’
‘তাই বলে কি অমন হওয়ার ইচ্ছা থাকতে নেই?’ রজব বলেন। ‘কোরবানি দেবেন না? বড়সড় গরু কিনার উপায় নিয়ে ভাববেন না? আরে ভাই উপায় তো আপনার হাতের কাছে ছাইচাপার মতো পড়ে আছে। কথায় আছে না—যেখানে দেখিবে ছাই, উড়াইয়া দেখো তাই, পাইলেও পাইতে পারো অমূল্য রতন।’
রজব সাহেবের কথার পিঠে কথা বলার আর ইচ্ছে হয় না মহসিন সাহেবের। তবু বলেন, ‘তাতে আমার কী! ওই রকম বচন আমার ব্যাপারে খাটব না। আমার ধারেকাছে তেমন কোনো ছাই নাই।’
‘আছে আছে। একেবারে অফিসের টেবিলেই আছে। ঠিক আছে, ছাইচাপা নাই–বা বললাম। ফাইলচাপা কাগজ তো আছে। ওইগুলোতেই তো অমূল্য গরুরূপী রতন রয়েছে। ফাইলগুলো ছাড়লেই দামটা একেবারে হাম্বা বলে পকেটে এসে ঢুকবে।’ রজব সাহেবের এই রসিকতায় মহসিন সাহেবের মাথায় প্রচণ্ড রাগ জমতে থাকে। বলেন, ‘মিয়া, আপনি তো দুই নম্বরের ওপরে যদি কিছু খারাপ থাকে, তারও ওপরের। মানুষগো করাপ্ট করার গ্রুপের কেউ। এইবার যান। প্লিজ। দেখেন—আমার টেবিলে কোনো দিন কোনো ফাইল আটকানো থাকে না। ওই পাওয়ারও নাই, ইচ্ছাও নাই।’
মহসিন সাহেব থামতেই রজব বলতে থাকেন, ‘ভাই, চটছেন কেন? কোরবানি তো দেবেনই, নাকি? আমি শুধু আপনার স্ট্যাটাস বাড়ানোর চেষ্টা করছিলাম কিছু পথ বাতলে দিয়ে। এইটুকুই। ট্রায়েড টু হেল্প ইউ। ডোন্ট মাইন্ড। ডোন্ট টেক ইট সিরিয়াসলি।’
রাগ নামের ওষুধটি কাজে দিয়েছে মনে করে মহসিন সাহেব বলব না বলব না করেও বলে ফেললেন, ‘এইভাবে কোরবানির কথা ধর্মে নাই। আর আমি তো হইলাম কোরবানিতে সাত ভাগের এক ভাগের পার্টনার চিরকাল। শুধু কোরবানিই–বা বলি ক্যান, বাজারে বড় গোটা একটা মাছে ভাগ পেলে এক ভাগ কিনি। বাবার রেখে যাওয়া অল্পস্বল্প সম্পদের ভাগিদার সাত ভাই বোনের সঙ্গে এক ভাগের অংশীদার আমি।’
এই কথা শেষে নিজ জীবনের সবচাইতে বড় ঘটনাটিকেও মজা করে বলে ফেলেন, ‘শোনেন, শ্বশুর–শাশুড়ির সাত কন্যার ভাগ বলেন কিংবা ভাগ্য—একটাকেই আমার ঘরনি হিসেবে পেয়ে সারা জীবন সংসারধর্মটুকু পালন করতাছি। তো এই রকমই সাত ভাগের কোরবানি দিতে আমি রেডি হইয়াই আছি। অহন আপনের মতলবের কথাটা বইল্যা শ্যাষ করেন। আর যদি আপনার কোনো ফাইলে আমার সহায়তা লাগে বইলেন, চেষ্টা করুম এমনিই সুরাহা করতে, অবশ্যই যদি ন্যায়সংগত হয়।’
‘সরি। যা ভেবেছিলাম তা হলো না। এইভাবে কনভিন্স করে বড়লোকদের ধরা যায় না। আসলে আমি গরুর ব্যবসা ধরেছি কোরবানি উপলক্ষে। গরু হাটে নিই না। কিন্তু জমছে না ভাই। ফেইল করে যাচ্ছি। পরিচিতদের কাছেই যাই। বড়লোকেরা হাটে যেতে আগ্রহী। হাটের লাখো লোককে তাক লাগিয়ে বিশাল গরু কেনেন। বড় গরুর বড় হাটে যাওয়ার শক্ত হার্ট হয় তাঁদের সামর্থের চোটে। তাই আমি স্ট্র্যাটেজি চেঞ্জ করেছি। ফেইলিউর ইজ দ্য পিলার অব সাকসেস ভেবে এই আপনাদের মতো ছাপোষাদের ধরছি। তো আপনার ভাগিদারদের বলবেন একটা ছোটমোটো হলেও যদি কেনেন। যাই। দোয়া করবেন, আমাদের জন্য।’ মহসিন সাহেব বললেন, ‘তা কথাটা প্লুরালি...কইলেন যে! মানে পরিবারসহ মিন করলেন তো?’ রজব সাহেব হেসে ফেললেন, ‘অবশ্যই, ইনক্লুডিং গরু এবং আমার ব্যবসা। যাই। ঈদ মোবারক।’
উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: মহস ন স হ ব র রজব স হ ব ব বলল ন ন মহস ন ব রক ত ম ইন ড বলব ন করল ন করব ন ন রজব অবস থ আপন র
এছাড়াও পড়ুন:
ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কে দীর্ঘ যানজট, ধীর গতি ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কেও
ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কের গাজীপুর মহানগরীর কোনাবাড়ী থেকে মির্জাপুরের গোড়াই পর্যন্ত প্রায় ২০ কিলোমিটার এলাকায় দীর্ঘ যানজটের সৃষ্টি হয়েছে। আজ শুক্রবার সকাল ৯টা পর্যন্ত মহাসড়কটিতে এই অবস্থা দেখা গেছে। ঢাকা–ময়মনসিংহ মহাসড়কেও ধীর গতিতে চলছে যানবাহন। মহাসড়ক দুটিতে ঘণ্টার পর ঘণ্টা আটকে থেকে দুর্ভোগ পোহাচ্ছেন ঈদে ঘরমুখো মানুষ।
প্রিয়জনদের সঙ্গে ঈদ উদ্যাপন করতে রাজধানীসহ বিভিন্ন শহর থেকে বাড়ি ফিরছেন কর্মজীবীরা। ফলে মহাসড়কগুলোতে স্বাভাবিকের চেয়ে অনেক বেশি যানবাহন চলাচল করছে। গতকাল বৃহস্পতিবার বিকেলের পর থেকে ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কে যানবাহনের চাপ বেড়ে যায় কয়েকগুণ। রাতে বেশ কয়েকটি স্থানে যানবাহন বিকল হয়ে মহাসড়কের দুইদিকে যানজটের সৃষ্টি হয়।
পুলিশ, যাত্রী ও স্থানীয় বাসিন্দাদের সূত্রে জানা যায়, গাজীপুরে ঢাকা-টাঙ্গাইল ও ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়ক দুটিতে যানবাহনের চাপ থাকায় থেমে থেমে যানজট তৈরি হয়েছে। এতে মারাত্মক ভোগান্তিতে পড়েছেন যাত্রী, চালক ও সংশ্লিষ্টরা। দীর্ঘ ভোগান্তি এড়াতে অনেকেই পায়ে হেঁটে এগিয়ে গিয়ে কাঙ্ক্ষিত গন্তব্যের গাড়ি ধরতে চাইছেন। ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কে গাজীপুর মহানগরীর কোনাবাড়ী থেকে মির্জাপুরের গোড়াই পর্যন্ত প্রায় ২০ কিলোমিটার এলাকা ধীরে ধীরে চলাচল করছে যানবাহন।
পরিবহন সংশ্লিষ্টরা জানান, গতকাল শিল্পাঞ্চলগুলোর পোশাক কারখানায় ছুটি হওয়ায় লাখো মানুষ একই সঙ্গে নিজেদের গন্তব্যে যাত্রা করেন। এ ছাড়া মহাসড়কের বিভিন্ন পয়েন্টে যানবাহনের জন্য অপেক্ষায় থাকেন। এতে রাতভর মহাসড়কের বিভিন্ন পয়েন্টে যানজট তৈরি হয়। ঈদে বাড়ি ফেরা মানুষদের দীর্ঘসময় যানবাহনে বসে থাকতে হচ্ছে। গরম ও যানজটে অসহনীয় দুর্ভোগে পড়েন শিশু, নারী ও বয়োজ্যেষ্ঠরা।
আজ সকাল থেকে ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের বোর্ডবাজার থেকে সালনা ৫ কিলোমিটার এলাকায় যানজট তৈরি হয়েছে। এসব এলাকায় থেমে থেমে চলছে গাড়ি। এর মধ্যে পর্যাপ্ত সংখ্যক যানবাহন না পেয়ে পেয়ে অনেকেই বিভিন্ন যানবাহনের খোলা ছাদ, ট্রাক ও পিকআপে করেই গন্তব্যে উদ্দেশে রওনা হচ্ছেন। সুযোগ বুঝে অতিরিক্ত ভাড়া দাবি করছেন পরিবহন সংশ্লিষ্টরা।
রাজশাহী যাওয়ার উদ্দেশে চন্দ্রা থেকে আলম এন্টারপ্রাইজ পরিবহনের একই বাসে উঠেন আকবর আলী। যানজটে আটকে তিনি আক্ষেপ প্রকাশ করে বলেন, ‘যানজটের কারণে ঘণ্টার পর ঘণ্টা কষ্ট করছি। কখন যানজট শেষ হয় কে জানে? রাস্তায় কোনো পুলিশও দেখছি না।’
রাজধানীর মহাখালী থেকে ৫ ঘণ্টা আগে রওনা হয়ে আস সকাল ৯টার দিকে গাজীপুরে চন্দ্রা এলাকায় আটকে ছিলেন জেঁকে পরিবহনের বাসচালক ময়নাল হোসেন। তিনি বলেন, চন্দ্রার আগে এসে দীর্ঘ সময় ধরে দাঁড়িয়ে আছেন। অনেক বয়স্ক ও শিশু যাত্রী আছে, তাঁরা অসুস্থ হয়ে যাচ্ছেন।
বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে যানজট পরিস্থিতির উন্নতি হবে বলে আশ্বাস দিয়েছেন নাওজোর হাইওয়ে পুলিশের (ওসি) সওগাতুল আলম। তিনি জানান, সড়কের শৃঙ্খলা রক্ষার পাশাপাশি যানবাহনের গতি সচল রাখতে হাইওয়ে পুলিশ সদস্যরা সর্বোচ্চ সচেষ্ট আছেন। রাস্তায় দাঁড়িয়ে প্যাসেঞ্জার তোলায় মহাসড়কে যানবাহনের চাপ বাড়ে। যানবাহনের চাপ ও রাতে কয়েকটি স্থানে পরিবহন বিকল হওয়ায় এই যানজটের সৃষ্টি হয়েছে।