পঞ্চগড় সদর উপজেলায় ভুট্টাক্ষেতে কাজ করতে গিয়ে বিদ্যুৎস্পর্শে কলেজ শিক্ষার্থীসহ তিনজনের মৃত্যু হয়েছে। এ ঘটনায় একজন গুরুতর আহত হয়েছেন। বুধবার সকালে উপজেলার ধাক্কামারা ইউনিয়নের ফকিরের হাট এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। 

মারা যাওয়া কলেজ শিক্ষার্থীর নাম জামিদুল ইসলাম (২২)। জামিদুল ধাক্কামারা ইউনিয়নের বেংহাড়িপাড়া গ্রামের সপিজুল ইসলামের ছেলে। তিনি পঞ্চগড় মকবুলার রহমান সরকারি কলেজের বিএ প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থী ছিলেন। মৃত অন্যরা হলেন– বেংহাড়িপাড়া গ্রামের সফিউল ইসলামের ছেলে রব্বানী (৩৫) ও লিয়াকত আলীর ছেলে শাহীন ইসলাম (৪৫।

মৃত ব্যক্তিদের স্বজন ও স্থানীয়রা জানান, ধাক্কামারা ইউনিয়নের ১৪ জনের একটি দল পাশের ফকিরের হাট এলাকায় চুক্তিতে একটি ভুট্টাক্ষেতে কাজ করতে যান। এ সময় ক্ষেতের মধ্যেই বিদ্যুতের একটি তার ছিঁড়ে পড়ে ছিল। তখন কেউ সেটা খেয়াল করেননি। কাজ চলাকালে বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ ছিল। পরে বিদ্যুৎ সরবরাহ চালু হলে ছেঁড়া তার স্পর্শ করে কয়েকজন বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হন। এ সময় ঘটনাস্থলেই মারা যান জামিদুল ইসলাম। গুরুতর আহত রব্বানী, শাহীন ও তাঁর ভাই জয় ইসলামকে পঞ্চগড় আধুনিক সদর হাসপাতালে নেওয়ার পথে রব্বানী ও শাহীন মারা যান। জয় ইসলামকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। প্রাথমিক চিকিৎসার পর তাঁকে রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়।

আহত জয় ইসলাম বলেন, বিদ্যুতের তারটি ক্ষেতেই পড়ে ছিল। তখন বিদ্যুৎ ছিল না। কাজ করার সময় হঠাৎ করে তাঁর পা ঝিন ঝিন করছিল। অন্যরাও বিদ্যুতের শক খেয়ে আক্রান্ত হয়েছিলেন। তিনি সেখান থেকে দৌড়ে বের হয়ে বারবার বিদ্যুৎ অফিসে ফোন দেন। কিন্তু কেউ ফোন ধরেননি। পরে অনেকেই ফোন দেন। এক পর্যায়ে বিদ্যুৎ বন্ধ করা হলে তাদের উদ্ধার করে হাসপাতালে নেওয়া হয়।

পঞ্চগড় আধুনিক সদর হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসক আবুল কাশেম বলেন, বিদ্যুৎস্পর্শে হাসপাতালে আসা ব্যক্তিদের মধ্যে দু’জনকে মৃত অবস্থায় পাওয়া যায়। আহত একজনকে প্রাথমিক চিকিৎসা শেষে উন্নত চিকিৎসার জন্য রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: ল ইসল ম স পর শ

এছাড়াও পড়ুন:

অধ্যাপক ইউনূসের সংস্কারের অঙ্গীকারের এক বছর পরেও কারাগারে সাংবাদিকেরা: সিপিজে

সাংবাদিক ফারজানা রুপা চলতি বছরের ৫ মার্চ ঢাকার একটি জনাকীর্ণ আদালতে আইনজীবী ছাড়াই দাঁড়িয়েছিলেন। বিচারক তাঁর বিরুদ্ধে আরেকটি হত্যা মামলা নথিভুক্ত করার প্রক্রিয়া শুরু করছিলেন। ইতিমধ্যে অন্য মামলায় কারাগারে থাকা এই সাংবাদিক শান্তভাবে জামিনের আবেদন জানান। ফারজানা বলেন, ‘ইতিমধ্যে আমার বিরুদ্ধে এক ডজন মামলা দেওয়া হয়েছে। আমি একজন সাংবাদিক। আমাকে ফাঁসানোর জন্য একটি মামলাই যথেষ্ট।’

বিশ্বজুড়ে সাংবাদিকদের অধিকার রক্ষায় কাজ করা আন্তর্জাতিক সংগঠন কমিটি টু প্রটেক্ট জার্নালিস্টসের (সিপিজে) এক নিবন্ধে এসব কথা বলা হয়েছে। এতে বলা হয়, বেসরকারি একাত্তর টেলিভিশনের সাবেক প্রধান প্রতিবেদক ফারজানা রুপার বিরুদ্ধে ৯টি হত্যা মামলা রয়েছে। আর তাঁর স্বামী চ্যানেলটির সাবেক বার্তাপ্রধান শাকিল আহমেদের নামে রয়েছে আটটি হত্যা মামলা।

এক বছর আগে ছাত্রদের নেতৃত্বে কয়েক সপ্তাহের বিক্ষোভের পর পদত্যাগ করে দেশ থেকে পালিয়ে যান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ওই বিক্ষোভ চলাকালে দুজন সাংবাদিক নিহত হন। শেখ হাসিনার পদত্যাগ ও দেশ ছাড়ার পর বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের দায়িত্ব নেন নোবেল বিজয়ী অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস।

অধ্যাপক ইউনূস গণমাধ্যম সংস্কারের প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। শেখ হাসিনা সরকারের অধীন সাংবাদিকদের লক্ষ্যবস্তু করতে ব্যবহৃত সাইবার নিরাপত্তা আইন বাতিল করা হয়েছে। কিন্তু ২০২৪ সালের নভেম্বরে ডেইলি স্টার পত্রিকাকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে অধ্যাপক ইউনূস বলেছিলেন, সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে তাড়াহুড়ো করে হত্যার অভিযোগ আনা হচ্ছে। তিনি আরও বলেছিলেন, সরকার তখন থেকে এ ধরনের পদক্ষেপ বন্ধ করে দিয়েছে। মামলাগুলো পর্যালোচনা করার জন্য একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে।

কিন্তু প্রায় এক বছর পর এখনো সাংবাদিক ফারজানা রুপা, শাকিল আহমেদ, শ্যামল দত্ত ও মোজাম্মেল হক বাবু কারাগারে আছেন। হত্যায় উসকানি দেওয়ার অভিযোগে পৃথক মামলায় তাঁদের গ্রেপ্তার করা হয়েছিল। বিগত সরকারের প্রতি সহানুভূতিশীল হিসেবে ব্যাপকভাবে পরিচিত সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে এ ধরনের অভিযোগের বারবার ব্যবহারকে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত সেন্সরশিপ বলেই মনে হচ্ছে।

এ ধরনের আইনি অভিযোগ ছাড়াও সিপিজে সাংবাদিকদের ওপর শারীরিক হামলা, রাজনৈতিক কর্মীদের কাছ থেকে হুমকি এবং নির্বাসনের ঘটনা নথিভুক্ত করেছে। বাংলাদেশের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল কমপক্ষে ২৫ জন সাংবাদিকের বিরুদ্ধে গণহত্যার অভিযোগে তদন্ত করছে। এই অভিযোগ সাবেক শেখ হাসিনা সরকারের সঙ্গে যুক্ত ব্যক্তিদের লক্ষ্যবস্তু করতে ব্যবহৃত হয়ে আসছে।

সিপিজের আঞ্চলিক পরিচালক বেহ লিহ ই বলেন, ‘চারজন সাংবাদিককে বিশ্বাসযোগ্য প্রমাণ ছাড়াই এক বছর ধরে কারাগারে আটকে রাখা অন্তর্বর্তী সরকারের সংবাদপত্রের স্বাধীনতা রক্ষার ঘোষিত প্রতিশ্রুতিকে দুর্বল করে।’ তিনি আরও বলেন, ‘প্রকৃত সংস্কার মানে অতীত থেকে বেরিয়ে আসা, এর অপব্যবহারের পুনরাবৃত্তি নয়। যেহেতু আগামী মাসগুলোতে দেশে নির্বাচন হতে চলেছে, তাই সব রাজনৈতিক দলকে সাংবাদিকদের খবর প্রকাশের অধিকারকে অবশ্যই সম্মান জানাতে হবে।’

আইনি নথি ও প্রতিবেদন নিয়ে সিপিজের এক পর্যালোচনায় দেখা গেছে, এফআইআর নথিভুক্ত হওয়ার অনেক পর সাংবাদিকদের নাম প্রায়ই এতে যুক্ত করা হয়। মে মাসে জাতিসংঘের বিশেষজ্ঞরা উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন, গত বছরের বিক্ষোভের পর ১৪০ জনের বেশি সাংবাদিকের বিরুদ্ধে হত্যার অভিযোগ আনা হয়েছে।

শ্যামল দত্তের মেয়ে শশী সিপিজেকে বলেন, তাঁর বাবার বিরুদ্ধে এখন কতগুলো মামলা চলছে, পরিবার তার হিসাব রাখতে পারেনি। তাঁরা অন্তত ছয়টি হত্যা মামলার কথা জানেন, যেখানে শ্যামল দত্তের নাম আছে। মোজাম্মেল বাবুর পরিবার ১০টি মামলার কথা জানে। ফারজানা রুপা ও শাকিল আহমেদের পরিবার সিপিজেকে জানিয়েছে, তারা পাঁচটি মামলার এফআইআর পাননি, যেখানে একজন বা অন্য সাংবাদিকের নাম উল্লেখ করা হয়েছে। এর মানে হলো তাঁদের কেউই জামিনের আবেদন করতে পারছেন না।

এ বিষয়ে বক্তব্য জানতে প্রধান উপদেষ্টার প্রেসসচিব শফিকুল আলম ও পুলিশের মুখপাত্র এনামুল হক সাগরকে ই–মেইল করে সিপিজে। তবে তাঁরা সাড়া দেননি বলে সিপিজের নিবন্ধে উল্লেখ করা হয়।

সম্পর্কিত নিবন্ধ