কোরবানির মাংস সাধারণত তিন ভাগে ভাগ করা হয়: এক ভাগ পরিবারের জন্য, এক ভাগ আত্মীয়-বন্ধুদের জন্য এবং এক ভাগ গরিব-দুস্থদের জন্য। কিন্তু একটি সাধারণ প্রশ্ন অনেকের মনে জাগে: কোরবানির মাংস কি মুসলমানদের বাইরে অন্য ধর্মাবলম্বী কাউকে দান করা বৈধ?

ইসলামি শরিয়াহ অনুযায়ী কিছু শর্ত সাপেক্ষে কোরবানির মাংস অমুসলিমদের দেওয়া যায়। প্রখ্যাত সৌদি আলেম শাইখ মুহাম্মদ ইবনে সালিহ আল-উসাইমিন (রহ.

) বলেছেন, ‘যদি কোনো অমুসলিম মুসলিমদের বিরুদ্ধে যুদ্ধে জড়িত না থাকে, তবে তাকে কোরবানির মাংস দান করা বৈধ।’

তিনি এই মতামতের সমর্থনে কোরআনের একটি আয়াত উল্লেখ করেছেন, ‘আল্লাহ তোমাদের নিষেধ করেন না, যারা তোমাদের বিরুদ্ধে ধর্মের কারণে যুদ্ধ করেনি এবং তোমাদের ঘর থেকে বিতাড়িত করেনি, তাদের সঙ্গে ন্যায় ও দয়ার সঙ্গে ব্যবহার করতে। নিশ্চয়ই আল্লাহ ন্যায়পরায়ণদের ভালোবাসেন। কিন্তু যারা ধর্মের কারণে তোমাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করেছে, তোমাদের ঘর থেকে বিতাড়িত করেছে এবং বিতাড়নে সাহায্য করেছে, তাদের সঙ্গে বন্ধুত্ব করতে আল্লাহ নিষেধ করেছেন। যারা তাদের সঙ্গে বন্ধুত্ব করবে, তারা জালিম (অন্যায়কারী)।’ (সুরা মুমতাহিনা: ৮-৯)

যদি কোনো অমুসলিম মুসলিমদের বিরুদ্ধে যুদ্ধে জড়িত না থাকে, তবে তাকে কোরবানির মাংস দান করা বৈধ।শাইখ মুহাম্মদ ইবনে সালিহ আল-উসাইমিন (রহ.), প্রখ্যাত সৌদি আলেম আরও পড়ুনমক্কায় ঐতিহাসিক স্থান ঘুরে দেখছেন হজযাত্রীরা২৫ জুন ২০২৪

এই আয়াত থেকে স্পষ্ট, যে অমুসলিমরা মুসলিমদের সঙ্গে শান্তিপূর্ণভাবে সহাবস্থান করে এবং তাদের বিরুদ্ধে শত্রুতায় জড়িত নয়, তাদের সঙ্গে দয়া ও ন্যায়ের ব্যবহার করা উৎসাহিত করা হয়। তাই তাদের কোরবানির মাংস দান করা শুধু বৈধই নয়, বরং এটি ইসলামের মানবিক চেতনার প্রকাশ।

শত্রুতায় জড়িত না হলে

শেখ ইবনে উসাইমিনের মতে, যে অমুসলিমরা মুসলিমদের বিরুদ্ধে যুদ্ধে জড়িত বা তাদের ক্ষতি করার কার্যক্রমে সংশ্লিষ্ট, তাদের কোরবানির মাংস দেওয়া উচিত নয়। এই শর্তটি কোরআনের উপরোক্ত আয়াতের দ্বিতীয় অংশের ওপর ভিত্তি করে, যেখানে শত্রুতাপূর্ণ ব্যক্তিদের সঙ্গে বন্ধুত্ব নিষিদ্ধ করা হয়েছে। তবে বাস্তব জীবনে, সাধারণ অমুসলিম প্রতিবেশী, সহকর্মী বা বন্ধু, যারা শান্তিপূর্ণভাবে সহাবস্থান করে, তাদের ক্ষেত্রে এই শর্ত প্রযোজ্য নয়। তাদের মাংস দান করা কোনো সমস্যা সৃষ্টি করে না।

যদি সম্ভব হয়, অমুসলিমদের কোরবানির ধর্মীয় ও মানবিক তাৎপর্য বোঝানোর চেষ্টা করুন। এটি তাদের মনে ইসলাম সম্পর্কে ইতিবাচক ধারণা তৈরি করবে।

ব্যবহারিক পরামর্শ

কোরবানির মাংস বিতরণের প্রধান উদ্দেশ্য হলো সমাজে সংহতি, ভালোবাসা এবং মানবিকতা ছড়ানো। মাংস দানের মাধ্যমে গরিব-দুস্থদের সাহায্য করা হয় এবং আত্মীয়-প্রতিবেশীদের সঙ্গে সম্পর্ক জোরদার করা হয়। অমুসলিমদের মাংস দেওয়ার মাধ্যমে এই উদ্দেশ্য আরও ব্যাপক হয়; কারণ, এটি ধর্মীয় সীমানা অতিক্রম করে মানবতার বন্ধন তৈরি করতে পারে।

তবে কোরবানির মাংস অমুসলিমদের দেওয়ার ক্ষেত্রে কিছু ব্যবহারিক বিষয় মাথায় রাখা উচিত:

১. নিয়তের বিশুদ্ধতা: মাংস দানের নিয়ত হওয়া উচিত আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন এবং মানুষের কল্যাণ। এটি কোনো প্রদর্শনী বা বাহ্যিক উদ্দেশ্যের জন্য হওয়া উচিত নয়।

আরও পড়ুন বাংলাদেশি হজযাত্রীর ইন্তেকাল হলে কী হয়০১ জুলাই ২০২৪

২. সংস্কৃতির প্রতি সংবেদনশীলতা: অমুসলিমদের খাদ্যাভ্যাস বা সাংস্কৃতিক পছন্দ বিবেচনা করুন। কিছু অমুসলিম নিরামিষভোজী হতে পারেন বা নির্দিষ্ট ধরনের মাংস খেতে অনিচ্ছুক হতে পারেন। তাদের পছন্দের প্রতি শ্রদ্ধা দেখান।

৩. শান্তিপূর্ণ সম্পর্ক: যাদের সঙ্গে আপনার শান্তিপূর্ণ ও বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক রয়েছে, যেমন প্রতিবেশী বা সহকর্মী, তাদের মাংস দান করলে সম্প্রদায়ের মধ্যে ইতিবাচক প্রভাব পড়ে।

৪. ধর্মীয় তাৎপর্য বোঝানো: যদি সম্ভব হয়, অমুসলিমদের কোরবানির ধর্মীয় ও মানবিক তাৎপর্য বোঝানোর চেষ্টা করুন। এটি তাদের মনে ইসলাম সম্পর্কে ইতিবাচক ধারণা তৈরি করবে।

কোরবানির মূল চেতনা হলো তাকওয়া বা আল্লাহভীতি অর্জন এবং সমাজে ভালোবাসা ও সংহতি ছড়ানো। কোরআনে বলা হয়েছে, ‘তাদের মাংস বা রক্ত আল্লাহর কাছে পৌঁছে না, বরং তোমাদের তাকওয়া তাঁর কাছে পৌঁছে।’ (সুরা হজ, আয়াত: ৩৭)

সূত্র: ইসলাম কিউএ ডট ইনফো

আরও পড়ুনকাবা শরিফের মাতাফে মার্বেল পাথরের অপূর্ব কাহিনি১৮ জুন ২০২৪

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: দ র ক রব ন র ক রব ন র ম ব যবহ র ক বন ধ ত ব স দ ন কর র জন য আল ল হ ইসল ম

এছাড়াও পড়ুন:

নিরাপদ খাদ্য দিবস শনিবার: ‘নিরাপদ খাদ্য উচ্চ রক্তচাপ ঝুঁকি কমায়’

অনিরাপদ খাদ্যের কারণে বাংলাদেশে উচ্চ রক্তচাপসহ বিভিন্ন ধরনের অসংক্রামক রোগ ও অন্যান্য স্বাস্থ্য ঝুঁকি ক্রমশ বাড়ছে। গবেষণা বলছে, নিম্ন ও মধ্যম আয়ের দেশগুলোতে খাদ্যবাহিত রোগে উৎপাদনশীলতা হ্রাস এবং স্বাস্থ্য সেবা ব্যয়ের বোঝা বছরে ১১০ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের চেয়েও বেশি।

‘ফুড সেফটি: সায়েন্স ইন অ্যাকশন’ এই প্রতিপাদ্য নিয়ে ৭ জুন উদযাপিত হতে যাচ্ছে বিশ্ব নিরাপদ খাদ্য দিবস ২০২৫। এ বছর দিবসটি উপলক্ষে নিরাপদ খাদ্য নিশ্চিতের জন্য গবেষণা এবং জ্ঞানের অগ্রগতিতে বিজ্ঞানের ভূমিকার ওপর বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে।

সম্প্রতি স্বাস্থ্য খাত সংস্কার কমিশনের একটি প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বাংলাদেশ এমন একটি পুষ্টিজনিত ঝুঁকির সম্মুখীন হচ্ছে যেখানে খাদ্যাভ্যাস ও জীবনধারা সংশ্লিষ্ট দীর্ঘস্থায়ী অসংক্রামক রোগ এবং বিপাকজনিত রোগ ক্রমশ প্রধান উদ্বেগের কারণ হয়ে দাঁড়াচ্ছে। বিশ্বে প্রতি বছর এক কোটিরও বেশি মানুষ উচ্চ রক্তচাপের কারণে মারা যায় এবং বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতে এই মৃত্যুর অধিকাংশই স্বাস্থ্যকর খাদ্য বিষয়ক নীতির মতো বিভিন্ন ধরনের নীতি প্রণয়নের মাধ্যমে প্রতিরোধ করা সম্ভব।

আরো পড়ুন:

‘প্লাস্টিক দূষণ রোধ করার এখনই সময়’

বাকৃবিতে বিশ্ব দুগ্ধ দিবস উদযাপন

সর্বশেষ ‘বাংলাদেশ এনসিডি স্টেপস সার্ভে, ২০২২' এর তথ্য অনুযায়ী ৩৭ শতাংশ মানুষ খাবারের সাথে লবণ গ্রহণ করে এবং ১৩ শতাংশ মানুষ মাত্রাতিরিক্ত লবণযুক্ত ফাস্ট ফুড খেয়ে থাকে। এতে উচ্চ রক্তচাপে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি ক্রমাগত বাড়ছে।

বিশ্ব নিরাপদ খাদ্য দিবস ২০২৫ উপলক্ষে এক প্রতিক্রিয়ায় গবেষণা ও অ্যাডভোকেসি প্রতিষ্ঠান প্রজ্ঞা'র (প্রগতির জন্য জ্ঞান) নির্বাহী পরিচালক এবিএম জুবায়ের বলেন, “স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভাস তৈরির মাধ্যমে উচ্চ রক্তচাপসহ বিভিন্ন ধরনের অসংক্রামক রোগের ঝূঁকি অনেকাংশেই কমানো সম্ভব। বিশেষ করে খাবারে লবণের পরিমাণ কমানোর পাশাপাশি আঁশযুক্ত খাবার ও পরিমিত পরিমাণে শাকসবজি গ্রহণ করা আবশ্যক। একই সাথে প্রয়োজনীয় আইন বা নীতিমালার প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন জোরদার করতে হবে।”

ঢাকা/হাসান/সাইফ

সম্পর্কিত নিবন্ধ