ছোটবেলার কুরবানির ঈদ খুব আনন্দের ছিলো। আমার বেড় ওঠা ঢাকায়। ইকবাল রোডে আমার বাবার বাড়ি। সাড়ে বারো কাঠা জায়গা নিয়ে ছিল আমাদের বাড়িটা। ঘরের সামনে বিরাট উঠান ছিলো। কুরবানির জন্য কেনা গরু ওই উঠানে রাখা হতো। শুধু আমাদের গরু না, মামা, খালাদের কেনা গরুও ওই একই উঠানে রাখা হতো।
ঈদের আগের দিন বাবা, মামারা সবাই একসঙ্গে গরু কিনতে যেতেন। মামারা গরু কিনতে যাওয়ার আগে আমাদের বাড়িতে আসতেন। মা অনেক রকম খাবার রান্না করতেন। যেমন— খিচুরি, মুরগির মাংস, ডিম ভাজি। সবাই একসঙ্গে খাওয়া-দাওয়া করে গাবতলী হাটে গরু কিনতে যেতেন। বড়দের সঙ্গে আমিও যেতাম। বিকালের আগে গরু কিনে বাসায় ফিরে আসতাম। রাতে আবার সবাই একসঙ্গে খেতো। এবং পরের দিনের গরু কুরবানির প্ল্যানিং হতো। অবশ্য বিকালের পরে নারীরা অর্থাৎ নানী, খালারা সবাই আসতেন গরু দেখতে। বাড়িটা উৎসবমুখর হয়ে উঠতো। সবমিলিয়ে আমাদের বাড়িতে ঈদের আগের দিন আরেকটি ঈদ হয়ে যেত।
সেই সময় সবাই একসঙ্গে ঈদ করা হতো। বাড়ির উঠানেই গরু কুরবানি করা হতো। মাংস ভাগ করে বিলানো হতো। এরপর মামা, খালারা তাদের ভাগের মাংস নিয়ে বিকালে নিজেদের বাড়িতে চলে যেতেন। এই যে ঈদের আগের দিন গরু কেনা থেকে কুরবানি এই সময়টুকুতে আত্মীয় স্বজনেরা সবাই মিলে একটি পরিবার হয়ে উঠতো।
আরো পড়ুন:
চলতি মাসে মুক্তি পাবে আলোচিত পাঁচ সিনেমা
বিয়ে করলেন হিনা খান, ক্যান্সারের সঙ্গে লড়াইটাও চলছে
সবার আলাদা বাসা এবং আলাদা ফ্ল্যাট বাড়ি হওয়ার পর থেকে আর এই সুযোগটুকু রইলো না। সময়ের পরিবর্তনে মানুষজন অনেকে হারিয়ে গেলো, অনেকে বিদেশে চলে গেলো। এভাবে করে ভাঙতে ভাঙতে এখন যার যার ঈদ তার তার।
এখন হয়তো আগের চেয়ে অনেক বড় গরু কুরবানি দেওয়া হয় কিন্তু আগের ঈদের আনন্দটা এখন আর খুঁজে পাই না।
অনুলিখন: স্বরলিপি
ঢাকা/লিপি
.উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর ঈদ স ম ত সব ই একসঙ গ ক রব ন আম দ র
এছাড়াও পড়ুন:
সরকারের বক্তব্যের সঙ্গে বাজেটের ব্যাপক অমিল
অর্থ উপদেষ্টার বাজেট বক্তৃতার সঙ্গে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) সংশ্লিষ্ট নথিপত্রের মিল পাওয়া যায়নি। যেমন অর্থ উপদেষ্টা বলেছেন, স্থানীয় শিল্পে ব্যবহৃত চুনাপাথর আমদানিতে বিদ্যমান সম্পূরক শুল্ক ১০ শতাংশ থেকে কমিয়ে শূন্য করা হয়েছে। কিন্তু জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের নথিতে শুধু গ্লাস ও সিরামিক খাতের জন্য এই নিয়মের কথা বলা হয়েছে। তাহলে এখানে বৈষম্য কেন করা হয়েছে? কাঁচামাল হিসেবে স্থানীয় অন্যান্য শিল্পেও একই নিয়ম থাকতে পারত।
বাজেট প্রস্তাবে টার্নওভার ট্যাক্স বা লেনদেন কর বিদ্যমান শূন্য দশমিক ৬ শতাংশের পরিবর্তে ১ শতাংশ করা হয়েছে। এটি ব্যবসা বৃদ্ধিকে অনুৎসাহিত করবে। এমন কিছু পণ্য আছে যেগুলোর কাঁচামালের দাম অনেক বেশি। এ কারণে বেশি পরিমাণে ব্যাংকঋণ প্রয়োজন হয়। সে ক্ষেত্রে ব্যবসায়িক লেনদেন বা টার্নওভার বেশি হয়। কিন্তু বেশি টার্নওভার মানেই বেশি লাভ নয়; বেশির ভাগ ক্ষেত্রে বেশি ঋণের বোঝা। বরং এটাকে শূন্য করা গেলে উৎপাদনশীলতা গতি পাবে।
ব্যাংকের ক্ষেত্রে এটি প্রচলিত থাকতে পারে, কেননা কয়েক বছর ধরে শিল্পপ্রতিষ্ঠানগুলো ব্যাপক লোকসান বা সীমিত মুনাফা করলেও ব্যাংক খাত ব্যাপক হারে মুনাফা করেছে।প্রস্তাবিত বাজেটে করপোরেট কর বাড়ানো হয়েছে। প্রশ্ন হলো, যারা তালিকাভুক্ত কোম্পানি তাদের কেন করপোরেট কর বেশি দিতে হবে। উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানকে গ্রস প্রফিট থেকে করপোরেট কর দিতে হবে, একই কোম্পানি যখন শেয়ারধারীদের নিট প্রফিট থেকে লভ্যাংশ দেয় তখনো তাদের আবার উচ্চ হারে কর দিতে হবে। এভাবে একজন করপোরেট শেয়ারধারী বা উদ্যোক্তাকে মোট ৫৭ শতাংশের মতো কর দিতে হয়। বাকি ৪৩ শতাংশ নিজের লিভিং লাইফ বাবদ খরচ করার পরে কোনো কোনো ক্ষেত্রে উদ্বৃত্ত থাকে না। ফলে নতুন শিল্প করার জন্য অথবা শিল্প বাড়ানোর জন্য প্রয়োজনীয় জোগান অসম্ভব হয়ে যায়।
এ বিষয়ে আমাদের প্রস্তাব হচ্ছে, উৎপাদনশীল শিল্প থেকে করপোরেট কর আরও কমানো উচিত। ব্যাংকের ক্ষেত্রে এটি প্রচলিত থাকতে পারে, কেননা কয়েক বছর ধরে শিল্পপ্রতিষ্ঠানগুলো ব্যাপক লোকসান বা সীমিত মুনাফা করলেও ব্যাংক খাত ব্যাপক হারে মুনাফা করেছে। এটা ঋণের উচ্চ সুদের হারের কারণে সম্ভব হয়েছে।
প্রস্তাবিত বাজেটে ২ লাখ ২১ হাজার কোটি টাকা ঘাটতি দেখানো হয়েছে। এটি পূরণে ৯৬ হাজার কোটি টাকার বৈদেশিক সাহায্য এবং ১ লাখ ২৫ হাজার কোটি টাকার অভ্যন্তরীণ ঋণ ধরা হয়েছে। অভ্যন্তরীণ ঋণ ব্যাংক খাত থেকে ভর্তুকি হিসেবে নেওয়া হলে ব্যাংক খাত অভ্যন্তরীণ শিল্পায়নে চাহিদা অনুযায়ী ঋণের জোগান দিতে পারবে না। শিল্পায়ন ব্যাহত হতে পারে।
ব্যক্তিশ্রেণির আয়কর অনলাইনে দেওয়ার যে নিয়ম করা হয়েছে। তবে আরও সময় নিয়ে নতুন ও পুরোনো করদাতাদের প্রশিক্ষণ দিয়ে চালু করলে ভালো হতো। ব্যক্তিশ্রেণির আয়কর রিটার্ন অ্যাসেসমেন্ট অ্যামাউন্টের পুরোটা একসঙ্গে জমা দেওয়ার বিধান করা হয়েছে। এতে বৃহৎ করদাতাদের একসঙ্গে কর দেওয়া কঠিন হবে। ফলে এ ক্ষেত্রে মামলার পরিমাণ ব্যাপকভাবে বাড়বে। কারণ, বেশি পরিমাণ কর একসঙ্গে জমা দেওয়া প্রায় অসম্ভব। এ ক্ষেত্রে সময় বাড়িয়ে কোনো জরিমানা ছাড়া কমপক্ষে চারটি কিস্তির সুযোগ রাখা যেতে পারে।
আগে কোনো ব্যবসায়ী শিল্পের জন্য কাঁচামাল আমদানির সময় উৎসে অগ্রিম আয়কর হিসেবে ২ থেকে ৫ শতাংশ পর্যন্ত কেটে নেওয়া হয়। এটি পরে সমন্বয় হতে পারে। তবে এটিকে চূড়ান্ত দায় রাখা হয়েছে। অর্থাৎ মুনাফা না করেও আয়কর প্রদান করতে হবে। এ ক্ষেত্রে সাধারণ শেয়ারধারীরা ব্যাপক ক্ষতির মুখে পড়বেন। এই ব্যবস্থাকে আমরা কোনভাবেই ব্যবসাবান্ধব বলতে পারি না।