রাজধানীর কোনো ঈদ জামাত নিরাপত্তার বাইরে থাকবে না: ডিএমপি কমিশনার
Published: 6th, June 2025 GMT
পবিত্র ঈদুল আজহায় রাজধানী ঢাকার একটি ঈদ জামাতও নিরাপত্তার বাইরে থাকবে না বলে জানিয়েছেন ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি) কমিশনার শেখ মো. সাজ্জাত আলী।
শুক্রবার (৬ জুন) জাতীয় ঈদগাহের নিরাপত্তা ব্যবস্থা পরিদর্শন শেষে তিনি এ কথা জানান।
রাজধানীবাসীকে ঈদের শুভেচ্ছা জানিয়ে শেখ মো. সাজ্জাত আলী বলেন, “জাতীয় ঈদগাহে ঈদের প্রধান জামাত অনুষ্ঠিত হবে সকাল সাড়ে ৭টায়। এখানে একত্রে ৩৫ হাজার মুসল্লি ঈদের নামাজ আদায় করতে পারবেন। প্রধান উপদেষ্টা, প্রধান বিচারপতিসহ অন্যান্য বিচারপতি, উপদেষ্টা, ঢাকাস্থ মুসলিম দেশের কূটনীতিক ও অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিরা জাতীয় ঈদগাহে ঈদের নামাজ আদায় করবেন। ঈদগাহে ৪টি পুরুষ ও একটি নারীদের গেটসহ মোট পাঁচটি গেট দিয়ে মুসল্লিরা ঈদ জামাতে প্রবেশ করতে পারবেন।”
আরো পড়ুন:
টাঙ্গাইলে ট্রেন ও বাসের ছাদ থেকে পড়ে ২ জন নিহত
কালুরঘাট সেতুতে একাধিক যানবাহনে ট্রেনের ধাক্কা, নিহত ৩
জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররমের ঈদ জামাতের ব্যাপারে তিনি বলেন, “জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররমে মোট পাঁচটি ঈদ জামাত অনুষ্ঠিত হবে। তার মধ্যে প্রথম জামাত শুরু হবে সকাল ৭টায়। আবহাওয়া প্রতিকূল থাকলে জাতীয় ঈদগাহ ময়দানের প্রধান জামাত বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদে সকাল ৮টায় অনুষ্ঠিত হবে।”
ডিএমপি কমিশনার বলেন, “এ বছর ঢাকা মহানগরীতে মোট ১১৮টি ঈদগাহ এবং এক হাজার ৬২১টি মসজিদে ঈদের জামাত অনুষ্ঠিত হবে। এছাড়াও মহানগরীতে শিয়া ও কাদিয়ানি সম্প্রদায় কর্তৃক আটটি এবং সৌদি আরবের সঙ্গে মিল রেখে তিনটি ঈদের জামাত অনুষ্ঠিত হবে।”
তিনি বলেন, “জাতীয় ঈদগাহ, বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদ এবং ঢাকার অন্যান্য স্থানে অনুষ্ঠেয় ঈদ জামাতের সার্বিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ একটি সমন্বিত, সুদৃঢ় ও নিশ্ছিদ্র নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে। জাতীয় ঈদগাহ ময়দানে ঈদের জামাত উপলক্ষে পর্যাপ্ত নিরাপত্তামূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। জাতীয় ঈদগাহ ময়দান ও আশেপাশের এলাকায় ইতোমধ্যেই সিসি ক্যামেরা স্থাপন করা হয়েছে। ঈদগাহ ময়দানে স্থাপিত অস্থায়ী পুলিশ কন্ট্রোল রুম থেকে নিরাপত্তা ব্যবস্থা সার্বক্ষণিক পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে।”
সাজ্জাত আলী বলেন, “ঈদগাহ ময়দানে আসার প্রধান তিনটি রাস্তার প্রবেশ মুখে অর্থাৎ মৎস্য ভবন ক্রসিং, প্রেসক্লাবের সামনে ও হাইকোর্ট ক্রসিংয়ে ব্যারিকেড ও তল্লাশির ব্যবস্থা থাকবে। ঈদগাহ ময়দানে প্রবেশপথ সমূহে আর্চওয়ের মাধ্যমে সব মুসল্লিকে প্রবেশ করতে হবে। এছাড়াও মেটাল ডিটেক্টর দিয়ে ও ম্যানুয়ালি তল্লাশির ব্যবস্থা থাকবে। নারীদের জন্য পৃথক নামাজের ব্যবস্থা, প্রবেশপথ এবং নিরাপত্তা ব্যবস্থা থাকবে। ঈদগাহ ময়দান ও আশেপাশের এলাকা এসবির সুইপিং টিম এবং সিটিটিসির ডগ স্কোয়াড দ্বারা সুইপিং করা হবে।”
তিনি বলেন, “ডিএমপির সোয়াট ও বোম্ব ডিসপোজাল ইউনিট সার্বক্ষনিক প্রস্তুত থাকবে। ডিবি ও সিটিটিসির পর্যাপ্ত সংখ্যক সদস্য সাদা পোশাকে মোতায়েন থাকবে এবং পুরো এলাকায় আলাদা নিরাপত্তা বলয় তৈরি করা হবে। নিরাপত্তা ব্যবস্থা পর্যবেক্ষণের জন্য ইতোমধ্যেই ওয়াচ টাওয়ার স্থাপন করা হয়েছে। নিরাপত্তা প্রদানে নিয়োজিত অন্যান্য আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর সঙ্গে সার্বক্ষণিক সমন্বয় করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হচ্ছে।”
তিনি বলেন, “জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররম কেন্দ্রিক একই ধরনের নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। অন্যান্য ঈদগাহের ক্ষেত্রে ডিএমপির প্রতিটি ক্রাইম বিভাগ আয়োজক সংস্থার সঙ্গে সমন্বয় করে পর্যাপ্ত নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে। মহানগরীর একটি ঈদ জামাতও নিরাপত্তা ব্যবস্থার বাইরে থাকবে না।”
নগরবাসীর প্রতি অনুরোধ জানিয়ে ডিএমপি কমিশনার বলেন, “নিরাপত্তার স্বার্থে তল্লাশি কার্যক্রমে সহযোগিতা করার জন্য নগরবাসীকে অনুরোধ করছি। ঈদ জামাতে কোনো প্রকার ব্যাগ, ধারালো বস্তু বা দাহ্য পদার্থ সঙ্গে না আনার জন্য অনুরোধ করছি। ঈদ জামাত শেষে তাড়াহুড়ো না করে সুশৃঙ্খলভাবে বের হবেন। সন্দেহজনক কিছু মনে হলে অনতিবিলম্বে নিকটস্থ পুলিশ সদস্যকে জানাবেন।”
এ সময় তিনি নগরবাসীকে ঈদের ছুটির সময় মহানগরীর নিরাপত্তা নিশ্চিতে নগরবাসীর সহায়তা প্রত্যাশা করে ডিএমপির পক্ষ থেকে যে সব নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে সেগুলো মেনে চলারও আহ্বান জানিয়েছেন। পাশাপাশি কোরবানির পশুর বর্জ্য সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা বজায় রাখা ও যেকোনো সহায়তায় জাতীয় জরুরি সেবা ৯৯৯ এবং পুলিশ কন্ট্রোল রুমে যোগাযোগ করার আহ্বান জানান।
ফাঁকা ঢাকার নিরাপত্তা নিয়ে এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, “রাতের নিরাপত্তায় ৫০০ পেট্রোল টিম থাকবে, দিনে ২৫০টি থাকবে। পাশাপাশি গাড়ি, ফুট পেট্রোল ও মোবাইল পেট্রোল থাকবে। আমরা সবাইকে সজাগ করছি, যে অফিসাররা অফিসে থাকেন, বাইরে কম বের হন, তাদেরও দায়িত্ব বণ্টন করে দেওয়া হয়েছে। তারা সুপারভিশন করার জন্য মাঠে থাকবেন। আশা করি কোনো সমস্যা হবে না। এছাড়া সড়কে চেকপোস্ট তল্লাশি থাকবে।”
ঢাকা/হাসান/মাসুদ
.উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর ঈদ ঈদগ হ ময়দ ন জ ত য় মসজ দ জ ত য় ঈদগ হ ঈদ জ ম ত অন য ন য ব যবস থ নগরব স প রব শ র জন য ড এমপ
এছাড়াও পড়ুন:
প্রভাবশালীদের কবজায় অস্থায়ী পশুর হাট
ঈদুল আজহা উপলক্ষে ঢাকার দুই সিটি করপোরেশনেই গড়ে উঠেছে অস্থায়ী পশুর হাট। প্রশাসনিক স্থবিরতা, রাজনৈতিক দখল, ইজারা প্রক্রিয়ায় অনিয়মের কারণে বসেছে এসব হাট। এতে বাড়ছে জনদুর্ভোগ, তৈরি হচ্ছে নিরাপত্তা ও শৃঙ্খলা সংকট।
জানা গেছে, দুই সিটি করপোরেশনের নির্ধারিত ১৯টি অস্থায়ী হাটের অধিকাংশই এবার ইজারা পেয়েছেন বিএনপি এবং তার অঙ্গসংগঠনের ঘনিষ্ঠ ব্যবসায়ীরা।
ঢাকা উত্তরের ৯টির মধ্যে ৮টি কোরবানির হাট বিএনপির হাতে: ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের অস্থায়ী ১২টি কোরবানির হাটের মধ্যে এখন পর্যন্ত ৯টির ইজারা চূড়ান্ত হয়েছে। এর মধ্যে ৮টিই বিএনপি নেতাকর্মীদের নিয়ন্ত্রণে। স্থায়ী গাবতলী হাটও ঈদসহ এক বছরের জন্য ইজারা দেওয়া হয়েছে।
খিলক্ষেতের মস্তুল চেকপোস্ট সংলগ্ন হাটটি পেয়েছে 'সুরমি ইন্টারপ্রাইজ' নামের একটি প্রতিষ্ঠান, যার পেছনের হাল ধরেছেন মহানগর উত্তর বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক আকতার হোসাইন।
তেজগাঁওয়ের পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট সংলগ্ন হাট পরিচালনা করছেন ‘জায়ান এন্টারপ্রাইজ’ এর মনিরুজ্জামান, যিনি যুবদলের তেজগাঁও শিল্পাঞ্চল থানা ইউনিটের সদস্যসচিব।
মিরপুর ইস্টার্ন হাউজিং হাট পেয়েছেন রতন মিয়া। তিনি বলেন, “বিএনপির কিছু সিনিয়র ভাইয়ের সহায়তা পেয়েছি, তবে নিয়ম মেনেই ইজারা নিয়েছি।”
তবে নিয়ম মানা হয়েছে কিনা, সে প্রশ্ন উঠছে দিয়াবাড়ি হাটকে ঘিরে। অভিযোগ উঠেছে, সর্বোচ্চ দরদাতা হয়েও একজন দরপত্রদাতা কার্যাদেশ পাননি শুধু মূল পে-অর্ডার দাখিল না করায়। দ্বিতীয় দরদাতা দাবি করেছেন, রাজনৈতিক চাপের কারণেই তাকেও কার্যাদেশ দেওয়া হয়নি।
দক্ষিণেও দৃশ্যপট এক: ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) ৯টি হাটের মধ্যে আটটিই এবার গেছে বিএনপি ঘনিষ্ঠ ব্যবসায়ীদের হাতে। যেখানে গত কয়েক বছর ধরে আওয়ামী লীগ-ঘনিষ্ঠরা নিয়ন্ত্রণ করে আসছিলেন, এবার সেই নিয়ন্ত্রণ পুরোপুরি বদলে গেছে।
সিটি করপোরেশন সূত্র বলছে, শাহজাহানপুরের মৈত্রী সংঘ মাঠ, আমুলিয়া, পোস্তগোলা, দনিয়া ক্লাব, রহমতগঞ্জ মাঠসহ অন্তত ছয়টি হাটের ইজারাদাররা বিএনপির সাবেক নেতা বা তাদের ঘনিষ্ঠ।
সবচেয়ে আলোচিত নারিন্দার ‘সাদেক হোসেন খোকা মাঠ’ ও ধোলাইখাল ট্রাক টার্মিনালের যৌথ হাট। সরকারি দর ছিল ৪ কোটি ৬৪ লাখ টাকা, কিন্তু এটি মাত্র ২ কোটি ২৫ লাখ টাকায় পেয়েছেন সৈয়দ মাসুদ রেজা, যিনি সাবেক মেয়র খোকার পরিবারের ঘনিষ্ঠ বলে পরিচিত।
আর ব্রাদার্স ইউনিয়ন ক্লাবসংলগ্ন হাটটি ৩ কোটি ৭৫ লাখ টাকা মূল্যের হলেও তা মাত্র ১ কোটি ২০ লাখ টাকায় নিয়েছেন স্থানীয় বিএনপি নেতা ইসমাইল হোসেন।
প্রশাসনিক অচলাবস্থা: ডিএসসিসির নগর ভবনে ইজারা ও অর্থ বিভাগ কার্যত অচল। অনেক বিভাগে তালা ঝুলছে, কর্মকর্তা-কর্মচারীরা হাজির হচ্ছেন না।
ডিএসসিসির প্রশাসক মো. শাহজাহান মিয়া বলেন, “নিয়োগ ও বেতন সংক্রান্ত জটিলতার কারণে অনেকে অফিসে আসছেন না। ফলে কার্যক্রমে স্থবিরতা এসেছে।”
এই বিলম্বের সুযোগেই গড়ে উঠছে বেআইনি হাট। কলাবাগান, কামরাঙ্গীরচর, বনশ্রী, শ্যামপুর, বাংলামোটর, মেরাদিয়া—নগরজুড়ে বিভিন্ন স্থানে অনুমোদনহীন হাট বসেছে।
ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার এস এন মো. নজরুল ইসলাম বলেন, “অবৈধ হাট চিহ্নিত করা হয়েছে। তবে তালিকা না থাকায় উচ্ছেদে অভিযান চালানো যাচ্ছে না। সিটি করপোরেশন তালিকা দিলে পুলিশ অভিযান চালাবে।”
জনদুর্ভোগ ও নিরাপত্তাহীনতা: নগরবিদরা বলছেন, হাট ব্যবস্থাপনায় রাজনৈতিক প্রভাব ও প্রশাসনিক সমন্বয়ের অভাবে নগরবাসীকে ভয়াবহ দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের নগর পরিকল্পনা বিভাগের অধ্যাপক ড. আতিকুল ইসলাম বলেন, “এসব হাটে রাজনৈতিক দখলের কারণে সন্ত্রাস, চাঁদাবাজি, পশু চুরি ও যানজট বেড়ে যায়। এতে নগরবাসী নিরাপত্তাহীনতায় ভোগে। উত্তরণের একমাত্র পথ হলো স্বচ্ছ ইজারা প্রক্রিয়া ও কার্যকর সমন্বয়।”
সেগুনবাগিচার বাসিন্দা আবুল কালাম বলেন, “আগে আওয়ামী লীগের লোকেরা নিয়ন্ত্রণ করত, এখন বিএনপিরা করছে। কিন্তু দুর্ভোগ তো আমাদেরই পোহাতে হয়। রাস্তাঘাট বন্ধ, মলমূত্রে দুর্গন্ধ, চাঁদাবাজি—এসব আমাদের জীবন দুর্বিষহ করে তোলে।”