দিনাজপুরের ঐতিহাসিক গোর-এ-শহীদ বড়মাঠে লাখো মুসল্লি একসঙ্গে ঈদুল আজহার নামাজ আদায় করেছেন। ধর্মীয় ভাবগাম্ভীর্য ও উৎসাহ-উদ্দীপনার মধ্য দিয়ে অনুষ্ঠিত এই বৃহৎ জামাত শান্তিপূর্ণভাবে সম্পন্ন করতে নেওয়া হয় কয়েক স্তরের নিরাপত্তা ব্যবস্থা।

শনিবার সকাল সাড়ে ৮টায় এই মাঠে ঈদের নামাজে ইমামতি করেন মাওলানা মাহফুজুর রহমান। যেখানে জেলাসহ পার্শ্ববর্তী জেলা ও দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে আগত মুসল্লিরা অংশগ্রহণ করেন। নামাজ শেষে দেশ, জাতি, মুসলিম উম্মাহ, ফিলিস্তিনের নির্যাতিত মুসলমান এবং ১৯৭১ ও ২৪-এর শহীদ ও আহতদের জন্য দোয়া করা হয়।

সকাল থেকেই এই মাঠের প্রবেশদ্বারগুলো খুলে দেয়া হয়। মাঠে নামাজ আদায় করতে আসা প্রতিটি মুসল্লিকে আর্চ ও মেটাল ডিটেক্টর দিয়ে তল্লালি করে প্রবেশ করানো হয়। পুরো মাঠটি পর্যবেক্ষণের জন্য ছিল ওয়াচ টাওয়ার, সিসি ক্যামেরা ও ড্রোনের ব্যবস্থা। এছাড়াও প্রতিটি কাতারে সাদা পোশাকে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা মোতায়েন ছিল। মাঠে সার্বক্ষণিক নিয়োজিত ছিল র‌্যাব, পুলিশ, আনসারসহ গোয়েন্দা সংস্থার সদস্যরা।
 
মেহেরপুর জেলার গাংনী উপজেলার শাহারবাটী গ্রাম থেকে এই মাঠে নামাজ আদায় করতে এসেছিলেন সত্তর বছর বয়সী শহীদুল ইসলাম। তিনি বলেন, এখানে এসে এবং নামাজ আদায় করে নিজেকে ধন্য মনে হচ্ছে। এখানকার মানুষের ব্যবহার ভালো এবং শান্তিপূর্ণভাবে নামাজ আদায় করতে পেরেছি। পৃথিবীর সকল মানুষ ভালো থাকুক। বড় মাঠে নামাজ আদায় করে সকলের জন্য দোয়া কামনা করেছি। 

নড়াইলের লোহাগড়া উপজেলা থেকে আসা শেখ নিজাম উদ্দিন বলেন, মিডিয়ার মাধ্যমে আমি দিনাজপুরের এই মাঠের কথা জেনেছি। এজন্য ইচ্ছা ছিল এই মাঠে নামাজ আদায় করবো। আল্লাহ আমার মনের আশা কবুল করেছেন। অনেকের সাথে নামাজ আদায় করলাম, খুব ভালো লাগছে। ইনশাল্লাহ, আমি আবার এই মাঠে নামাজ আদায় করতে আসবো। 

ঠাকুরগাঁও থেকে নামাজ আদায় করতে আসা খাদেমুল ইসলাম বলেন, এখানে বড় মাঠ। এই হজ্বের মাসে, ঈদের দিনে সকলে এই মাঠে নামাজ আদায় করতে আসেন। অনেকের দোয়া কবুল হয়। আমার দোয়া কবুল হওয়ার জন্য আমি এখানে এসেছি। আল্লাহ যেন আমাদের সকলের দোয়া কবুল করেন। এখানে নামাজ আদায় করে খুব ভালো লাগছে। দেশবাসীকে জানাই ঈদের শুভেচ্ছা। 

দিনাজপুর জেলা প্রশাসক রফিকুল ইসলাম বলেন, আল্লাহর অশেষ রহমতে সুন্দর পরিবেশে এই গোর-এ-শহীদ ময়দানে ঈদের নামাজ আদায় করলাম। আমরা সারাদেশের ১৮ কোটি মানুষের জন্য দোয়া করি, সারা বিশ্বের ২৫০ কোটি মুসলমানের জন্য আমরা দোয়া করি এবং সারা দুনিয়ার ৮০০ কোটি মানুষের জন্য আমরা দোয়া করি। আল্লাহ সকলকে সুস্থ ও সুন্দর রাখবেন সেই দোয়া করি। 

দিনাজপুর জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা যায়, গোর-এ শহীদ বড় ময়দানের আয়তন প্রায় ২২ একর। ২০১৭ সালে নির্মিত ৫২ গম্বুজের ঈদগাহ মিনার তৈরীতে খরচ হয়েছে ৩ কোটি ৮০ লাখ টাকা। ঈদগাহ মাঠটি ঐতিহাসিক নিদর্শন ও মনোরম কৃতির সৌন্দর্য ও নান্দনিক হিসেবে নির্মাণ কাজ শুরু করা হয়। এই ৫০ গম্বুজের দুই ধারে ৬০ ফুট করে ২টি মিনার, মাঝের দুটি মিনার ৫০ ফুট করে। ঈদগাহ মাঠের মিনারের প্রথম গম্বুজ অর্থাৎ মেহেরাব (যেখানে ইমাম দাড়াবেন) তার উচ্চতা ৪৭ ফিট। এর সাথে রয়েছে আরও ৪৯টি গম্বুজ। এছাড়া ৫১৬ ফিট লম্বায় ৩২টি আর্চ নির্মাণ করা হয়েছে। পুরো মিনার সিরামিক্স দিয়ে নির্মাণ করা হয়েছে। প্রতিটি গম্বুজ ও মিনারে রয়েছে বৈদ্যুতিক লাইটিং।

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: ঈদ ল আজহ গম ব জ আল ল হ র জন য দ য় কর এই ম ঠ

এছাড়াও পড়ুন:

বিএসবির বাশার প্রতারণার আরও ৯ মামলায় গ্রেপ্তার

মানি লন্ডারিং প্রতিরোধ আইনের মামলায় গ্রেপ্তার ‘বিএসবি গ্লোবাল নেটওয়ার্ক’-এর চেয়ারম্যান খায়রুল বাশারকে আরও নয়টি প্রতারণার মামলায় গ্রেপ্তার দেখানোর অনুমতি দিয়েছেন আদালত। পুলিশের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট (সিএমএম) আদালত আজ বুধবার এই আদেশ দেন।

ঢাকার সিএমএম আদালতের অতিরিক্ত পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) শামসুদ্দোহা সুমন প্রথম আলোকে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

১০ দিনের রিমান্ড শেষে খায়রুল বাশারকে আজ বুধবার দুপুরে আদালতে হাজির করা হয়। প্রতারণার পৃথক নয়টি মামলায় গ্রেপ্তার দেখানোর আবেদন করা হয়। শুনানি নিয়ে আবেদন মঞ্জুর করেন আদালত।

মানি লন্ডারিং আইনের মামলায় ১৪ জুলাই রাজধানীর ধানমন্ডি এলাকা থেকে খায়রুল বাশারকে গ্রেপ্তার করে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)। সংস্থাটি জানিয়েছে, তাদের প্রাথমিক অনুসন্ধানে জানা গেছে, ২০১৮ থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত খায়রুল বাশার তাঁর স্ত্রী খন্দকার সেলিমা রওশন ও ছেলে আরশ ইবনে বাশারকে সঙ্গে নিয়ে একটি সংঘবদ্ধ প্রতারক চক্র গড়ে তোলেন। চক্রটি বিদেশি বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির সুযোগ, স্কলারশিপ ও ভিসা প্রক্রিয়াকরণের নামে শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে বিপুল পরিমাণ অর্থ হাতিয়ে নিয়েছে। ভুয়া ভিসা প্রসেসিং, মনগড়া প্রতিনিধিত্ব ও চটকদার বিজ্ঞাপনের মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের আকৃষ্ট করা হতো। কিন্তু অনুসন্ধানে জানা যায়, শিক্ষার্থীদের অনেকের নামে বিদেশি কোনো বিশ্ববিদ্যালয়ে আবেদনই করা হয়নি। আবার অনেকে বিদেশে গিয়ে নানাভাবে প্রতারিত হয়েছেন।

সিআইডির তথ্য অনুযায়ী, এখন পর্যন্ত ৪৪৮ জন ভুক্তভোগী প্রতারিত হওয়ার কথা জানিয়েছেন। তবে প্রকৃত সংখ্যা আরও বেশি হতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে। ইতিমধ্যে কয়েকজন ভুক্তভোগী প্রতারণা ও জালিয়াতির অভিযোগে বিভিন্ন থানায় মামলা করেছেন।

আরও পড়ুনউচ্চশিক্ষার স্বপ্ন দেখিয়ে টাকা আত্মসাৎ, বিএসবি গ্লোবাল নেটওয়ার্কের চেয়ারম্যান বাশার গ্রেপ্তার১৪ জুলাই ২০২৫

সম্পর্কিত নিবন্ধ