কোরবানির ঈদের পরদিন আজ রোববার সবজিসহ বিভিন্ন নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের তেমন বেচাকেনা হয়নি। রাজধানীর কয়েকটি বাজার ঘুরে দেখা গেছে, অধিকাংশ দোকানপাটই বন্ধ রয়েছে, আবার ক্রেতার সমাগমও খুবই কম। শুধু সবজি আর মাছ-মুরগির কিছু দোকান খোলা।

এদিকে ঈদের দুই দিন আগে আগে শসা, টমেটো বো গাজর প্রভৃতি পণ্যের দাম বাড়লেও তা আবার কমে গেছে। বিপরীতে কিছুটা দাম বেড়েছে ব্রয়লার ও সোনালি মুরগির এবং চিংড়ি ও ইলিশ মাছের।

আজ রোববার রাজধানীর মোহাম্মদপুর কৃষি মার্কেট ও টাউন হল বাজারে ক্রেতা-বিক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলে এমন তথ্য জানা গেছে।

ব্যবসায়ীরা জানান, ঈদের আগের দিন রাত পর্যন্ত ভালো বেচাকেনা হয়েছে। এরপর পণ্য কেনাবেচার চাহিদা কমেছে। অনেক বিক্রেতা ঈদের ছুটি কাটাচ্ছেন। আগামীকাল সোমবার থেকে বাজার স্বাভাবিক হতে শুরু করবে। যদিও সরকারিভাবে ঈদের ছুটি শেষ হবে ১০ জুন মঙ্গলবার।

খুচরা বিক্রেতারা জানান, ঈদের কারণে গতকাল শনিবার বাজারে সবজি ও অন্যান্য পণ্যের সরবরাহ একপ্রকার বন্ধই ছিল। আজ রোববারও একই অবস্থা বিরাজ করছে। দোকানে যেসব পণ্য দুই-তিন দিন আগে থেকে ছিল, সেগুলোই এখন বিক্রি করছেন তাঁরা। তবে ঢাকার আশপাশের কিছু এলাকা থেকে অল্প কিছু সবজি এসেছে বাজারে। দাম আগের তুলনায় কম।

সরেজমিনে যা দেখা গেল

রাজধানীর মোহাম্মদপুর কৃষি মার্কেটে আজ দুপুর ১২টার দিকে গিয়ে দেখা যায়, বাজারটিতে মাত্র সবজির ছয়টি, মাছের তিনটি ও দুটি মুদি দোকান খোলা রয়েছে। এ ছাড়া বাকি সব দোকান বন্ধ। সেখান থেকে মোহাম্মদপুর টাউন হল বাজারে গিয়ে দেখা গেল, সেখানে সবজির চারটি, আলু-পেঁয়াজের দুটি ও মুরগির তিনটি দোকান খোলা রয়েছে। আজ দুপুর পর্যন্ত মোহাম্মদপুরের বিভিন্ন পাড়া–মহল্লার হাতেগোনা কয়েকটি মুদিদোকান বাদে নিত্যপণ্যসহ বিভিন্ন অধিকাংশ দোকানপাটই খোলেনি। রাজধানীর মিরপুর, যাত্রাবাড়ী ও বনশ্রী এলাকায় খোঁজ নিয়েও একই চিত্রের কথা জানা গেছে।

দরদাম কেমন

কোরবানির ঈদের দুই দিন আগে, অর্থাৎ বৃহস্পতিবার হঠাৎ করে শসা, কাঁচা মরিচ, গাজর, টমেটো ও লেবুর দাম বেড়ে গিয়েছিল। মূলত সালাদের জন্য এসব পণ্যের চাহিদা বেশি থাকাতেই মূলত এগুলোর দাম বেড়েছিল। ঈদের দিন পর্যন্ত এ বাড়তি দাম ছিল। তবে আজ দাম কমে গেছে। বলে রাখা ভালো, এসব পণ্য ও সবজির অধিকাংশই দুই-তিন দিন আগে আনা। বাজারে এখনো নতুন সরবরাহ শুরু হয়নি। পুরোনো পণ্য কম দরে বিক্রি করছেন বিক্রেতারা।

বাজারে গিয়ে দেখা যায়, প্রতি কেজি হাইব্রিড জাতের শসা ৫০-৬০ টাকা ও দেশি শসা ৭০-১০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। ঈদের আগের দিন; অর্থাৎ গত শুক্রবারে খুচরা বাজারে প্রতি কেজি হাইব্রিড শসা ১০০ টাকা ও দেশি জাতের শসা ১২০ থেকে ২০০ টাকায় বিক্রি হয়েছিল।

কাঁচা মরিচের দামও কমেছে। আজ বাজারে প্রতি কেজি কাঁচা মরিচ বিক্রি হয়েছে ৫০-৬০ টাকায়, যা দুই দিন আগেও ছিল দ্বিগুণ–আড়াই গুণ; অর্থাৎ ১২০-১৬০ টাকা। বাজারে দেশি ও হাইব্রিড (চায়না)—এই দুই জাতের গাজর পাওয়া যায়। প্রতি কেজি দেশি গাজর আজ বিক্রি হচ্ছে ৬০ টাকায়, যা এক–দুই দিন আগে ছিল ১৩০-১৪০ টাকা। ঈদের আগের দিনের তুলনায় টমেটোর দাম কেজিতে ৩০-৫০ টাকা কমে ৬০-৯০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। লেবুর দামও হালিতে ১০ টাকা কমে ২০-৩০ টাকা হয়েছে।

ঈদের সময় বাজারে গরু ও খাসির মাংসের কোনো চাহিদা থাকে না। ফলে সব বাজারেই মাংসের দোকানগুলো বন্ধ রয়েছে। আগামী কয়েক দিনও ঢিলেঢালাভাবে মাংস বিক্রি চলবে। তবে এ সময় ব্রয়লার ও সোনালি মুরগি, ডিম এবং চিংড়ি ও ইলিশ প্রভৃতি মাছের চাহিদা রয়েছে। এর মধ্যে ডিম বাদে অন্যগুলোর দাম কিছুটা বেড়েছে। ব্রয়লার মুরগির দাম কেজিতে ২০ টাকা ও সোনালির মুরগির দাম ৪০ টাকার মতো বেড়েছে। তাতে আজ প্রতি কেজি ব্রয়লার ১৯০-২০০ টাকায়, আর সোনালি ৩০০-৩২০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। প্রতি ডজন ডিম আগের মতোই ১৩০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

বাজারে মাছের দোকানও খুব একটা খোলা নেই। আজ দুপুরে মোহাম্মদপুর কৃষি মার্কেটে গিয়ে তিনটি মাছের দোকান খোলা পাওয়া গেছে। এসব দোকানে ইলিশ, চিংড়ি, পোয়া, চাষের শিং ও কাচকি মাছ নিয়ে বসেছিলেন বিক্রেতারা। এর মধ্যে প্রতি কেজি ইলিশ ২ হাজার ২০০ টাকা থেকে ২ হাজার ৪০০ টাকা, চিংড়ি ৮০০-৯০০ টাকা, পোয়া মাছ ৫০০ টাকা এবং শিং ও কাচকি ৪০০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে।

মোহাম্মদপুর কৃষি মার্কেটে কথা হয় আদাবর এলাকার বাসিন্দা মাজহারুল ইসলামের সঙ্গে। তিনি চিংড়ি এবং সালাদের জন্য শসা ও টমেটো কিনতে আসেন। মাজহারুল ইসলাম বলেন, ‘ঈদের আগে যে চিংড়ি কিনেছিলাম, তা শেষ হয়ে গেছে। মেহমানদের সামনে তো শুধু গরুর মাংস দেওয়া যায় না। এ জন্য চিংড়ি কিনতে এসেছি। আর সালাদের জন্য যে শসা-টমেটো নিয়েছিলাম, সেগুলোও শেষ। বাজারে সতেজ শসা, টমেটো পাইনি, যা আছে তা দুই-তিন দিন আগের আনা। তবে দাম কম রয়েছে।’

গত বছর কেমন দাম ছিল

বিক্রেতারা জানান, গত দুই বছরে কোরবানির ঈদের সময় এবারের তুলনায় অনেক বেশি দাম ছিল। যেমন গত বছর কোরবানির ঈদের সময় ঢাকার বিভিন্ন বাজারে ৩০০ থেকে ৩৫০ টাকা কেজি দরে কাঁচা মরিচ বিক্রি হয়েছিল। তার আগের বছর; অর্থাৎ ২০২৩ সালে এ দাম উঠেছিল ৫০০ টাকায়। এবার মরিচের সর্বোচ্চ দাম উঠেছে ১৫০-১৬০ টাকা।

গত বছর রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় প্রতি ডজন ডিম ১৬৫-১৭০ টাকায় বিক্রি হয়েছিল। এবার ঈদের সময় ডিমের দাম বাড়েনি। প্রতি ডজন ডিম ১৩০ টাকায় স্থিতিশীল রয়েছে।

গত বছর ঈদের সময় সোনালি মুরগির কেজি উঠেছিল ৩৫০-৩৬০ টাকায়। এবার দাম ৩২০ টাকা পর্যন্ত উঠেছে। আর ব্রয়লার মুরগির দাম গত বছরের মতোই রয়েছে।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ম হ ম মদপ র ক ষ র ঈদ র সময় দ ই দ ন আগ ব রয়ল র গত বছর র আগ র অর থ ৎ ৬০ ট ক ম রগ র সবজ র

এছাড়াও পড়ুন:

সিডনিতে তিন তারকার হলো দেখা

দূর প্রবাসের ব্যস্ত জীবনে হঠাৎ দেশের চেনা মুখের দেখা মিলে গেলে সেটি কেবল একটি সাধারণ সাক্ষাৎ থাকে না। বরং হয়ে ওঠে দেশের স্মৃতি টেনে আনা এক মুহূর্ত, হয়ে ওঠে একটুকরো বাংলাদেশের প্রতিচ্ছবি। এমনই এক দৃশ্যের অবতারণা হলো গত শনিবার অস্ট্রেলিয়ার সিডনির এডমন্ডসন পার্ক মলে।

বাংলাদেশের তিন অঙ্গনের তিন পরিচিত মুখ—ক্রিকেটার ইমরুল কায়েস, গায়ক তাহসান খান ও অভিনেতা মাজনুন মিজান সেখানে হঠাৎ একত্র হলেন। ব্যস্ত নগরের ভিড়ে এই তিন তারকার দেখা হয়ে গেল এক ‘অপ্রত্যাশিত’ আড্ডায়।

তিন ভুবনের তারকারা
বাংলাদেশ ক্রিকেট দলের সাবেক ওপেনার ইমরুল কায়েস সম্প্রতি পরিবার নিয়ে সিডনিতে স্থায়ী হয়েছেন। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে বাংলাদেশের হয়ে বহু স্মরণীয় ইনিংস খেলা এই বাঁহাতি ব্যাটসম্যান এখন নতুন করে জীবনের আরেক অধ্যায় শুরু করেছেন অস্ট্রেলিয়ায়। অভিনেতা মাজনুন মিজানও অনেক দিন ধরেই পরিবার নিয়ে সিডনিতে বসবাস করছেন।

ছোট পর্দার জনপ্রিয় এই অভিনেতা দেশে অসংখ্য নাটকে অভিনয় করেছেন। নাট্যাঙ্গনের পরিচিত মুখ হলেও সিডনিতে তিনি অনেকটা পর্দার আড়ালেই থাকেন, তবু প্রবাসী বাঙালিদের কাছে তিনি প্রিয়জন।
অন্যদিকে গায়ক ও অভিনেতা তাহসান খান ছিলেন সফররত। সম্প্রতি অস্ট্রেলিয়ার বিভিন্ন শহরে কনসার্ট করছেন তিনি। ব্রিসবেন ও অ্যাডিলেডে সফল শো শেষে সিডনির কনসার্টেও হাজারো দর্শকের মন জয় করেছেন। এরপর সামনে রয়েছে মেলবোর্ন ও পার্থে তাঁর পরিবেশনা। সিডনিতে সফল কনসার্টের রেশ এখনো কাটেনি, এরই মধ্যে ঘটে গেল এই মিলন।

সিডনিতে গাইছেন তাহসান

সম্পর্কিত নিবন্ধ