পঞ্চগড়ে সন্ত্রাসবিরোধী আইনে আ.লীগের ৭২ নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে মামলা
Published: 9th, June 2025 GMT
পঞ্চগড়ের দেবীগঞ্জে নাশকতার পরিকল্পনার অভিযোগে সন্ত্রাসবিরোধী আইনে আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের ৭২ নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করা হয়েছে। একই মামলায় আরও ৩০০ থেকে ৫০০ জনকে অজ্ঞাত আসামি করা হয়েছে।
মামলাটি দায়ের করেছেন পঞ্চগড় সদর উপজেলার ইসলামবাগ এলাকার বাসিন্দা জুয়েল রানা। জুয়েল পঞ্চগড় সদর উপজেলার ইসলামবাগ এলাকার ফয়জুল ইসলামের ছেলে।
মামলার প্রধান আসামি হলেন- দেবীগঞ্জ উপজেলা কৃষক লীগ সভাপতি আশরাফুল আলম এমু। উল্লেখযোগ্য অন্য আসামিরা হলেন, দেবীগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি গিয়াসউদ্দিন চৌধুরী, সাধারণ সম্পাদক হাসনাৎ জামান চৌধুরী জর্জ ও সাংগঠনিক সম্পাদক দীপঙ্কর রায়, দেবীগঞ্জ উপজেলা যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক রাজু আহম্মেদ মিঠু, সাবেক দেবীগঞ্জ পৌর মেয়র আবু বকর সিদ্দিক আবু। এছাড়া বোদা উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান ফারুক আলম টবি, সাবেক রেলপথ মন্ত্রীর ছেলে কৌশিক নাহিয়ান নাবিদ, পঞ্চগড় জেলা ছাত্র লীগের সাধারণ সম্পাদক প্লাবন পাটোয়ারী প্রমুখ।
গত ৫ জুন তিনি দেবীগঞ্জ থানায় মামলাটি দায়ের করেন। তবে রহস্যজনক কারণে মামলা দাখিলের বিষয়টি গোপন রাখা হয়। এ বিষয়ে জানতে চাইলে দেবীগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সোয়েল রানা কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি।
মামলার এজাহারে বলা হয়, গত ১৬ মে একটি হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপের ভার্চুয়াল বৈঠকে আসামিরা দেবীগঞ্জে বিভিন্ন স্থানে নাশকতার পরিকল্পনা করেন। বৈঠকের একটি আট মিনিটের অডিও ক্লিপ পরে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। এতে জনমনে আতঙ্ক ও ক্ষোভের সৃষ্টি হয়।
অডিও ক্লিপে উপজেলা কৃষকলীগের সাধারণ সম্পাদক আশরাফুল আলম এমুর কণ্ঠে নাশকতার পরিকল্পনা শোনা যায়। তিনি ইসলামী ব্যাংকের কয়েকটি শাখায় আগুন লাগানোর এবং বিএনপি-জামায়াতের প্রথম সারির অন্তত ১০জন নেতার বাড়ি জ্বালিয়ে দেওয়ার কথা বলেন।
ঘটনার পর সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ব্যাপক প্রতিক্রিয়া দেখা দেয়। সে সময় আশরাফুল আলমের শাস্তির দাবিতে বিভিন্ন রাজনৈতিক দল মানববন্ধন ও প্রতিবাদ কর্মসূচি পালন করেছিল।
.উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: আওয় ম ল গ উপজ ল ইসল ম
এছাড়াও পড়ুন:
জট কমাতে জাহাজ কমানোর উদ্যোগ
কনটেইনারভর্তি পণ্য নিয়ে একের পর এক জাহাজ আসছে। খালাস শেষে রপ্তানি কনটেইনার নিয়ে বন্দর ছাড়ছে এসব জাহাজ। পণ্য পরিবহনের চাপ সামাল দিতে না পারায় বন্দরে কনটেইনার জাহাজের জট বাড়ছে। এই জট কমানোর জন্য চট্টগ্রাম বন্দরের পথে চলাচলরত কনটেইনার জাহাজের সংখ্যা কমাতে চায় বন্দর কর্তৃপক্ষ।
জাহাজ যাতে কম আসে সে জন্য বন্দরের নেওয়া পদক্ষেপ হতবাক করেছে শিপিং এজেন্টদের। শিপিং এজেন্টস অ্যাসোসিয়েশনের নেতারা বলছেন, দুর্যোগের সময় ছাড়া কোনো বন্দরে চলাচলরত জাহাজের সংখ্যা কমানোর জন্য পদক্ষেপ নেওয়ার নজির বিশ্বে নেই। বরং বিশ্বের নানা বন্দর বা কনটেইনার টার্মিনালগুলোতে যাতে জাহাজ ভেড়ানো হয় সে জন্য শিপিং কোম্পানিগুলোকে উৎসাহ দেওয়া হয়। এ কাজের জন্য বন্দর কর্তৃপক্ষ বা টার্মিনাল পরিচালনাকারী কোম্পানিগুলোর বিপণন বা বাণিজ্য দল রয়েছে। চট্টগ্রামে হচ্ছে উল্টোটা।
বন্দর সূত্রে জানা গেছে, চট্টগ্রাম বন্দরের পথে এখন ১১৮টি কনটেইনার জাহাজ নিয়মিত চলাচলের অনুমোদন রয়েছে। বন্দর থেকে সিঙ্গাপুর, শ্রীলঙ্কা, মালয়েশিয়া ও চীনের বিভিন্ন বন্দরে এসব জাহাজ চলাচল করে। ২০ জুলাই বন্দরের এক সভায় বন্দরের পথে চলাচলরত ১৫টি জাহাজ কমানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। যে ১৫টি জাহাজ কমানো হবে তার তালিকা শিপিং এজেন্টস অ্যাসোসিয়েশনকে নিজ উদ্যোগে বন্দরকে দেওয়ার জন্য বলা হয় ওই সভায়। যুক্তি হিসেবে বলা হয়, জাহাজজটের কারণে বহির্বিশ্বে চট্টগ্রাম বন্দরের সুনাম ক্ষুণ্ন হচ্ছে। ওই সভায় সভাপতিত্ব করেন বন্দর চেয়ারম্যান রিয়ার অ্যাডমিরাল এস এম মনিরুজ্জামান।
এ বিষয়ে জানতে বন্দর চেয়ারম্যানের মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি ফোন ধরেননি। খুদে বার্তা পাঠালেও সাড়া দেননি।
তবে শিপিং এজেন্টরা এখন পর্যন্ত কোনো জাহাজের নাম বন্দরকে দেয়নি, যেগুলো প্রত্যাহার করা হবে। তালিকা না দেওয়ায় গত মঙ্গলবার বন্দরের উপসংরক্ষক ক্যাপ্টেন মো. জহিরুল ইসলাম ২৪ ঘণ্টার মধ্যে (বুধবারের মধ্যে) ১৫টি জাহাজের তথ্য দেওয়ার জন্য শিপিং এজেন্টস অ্যাসোসিয়েশনের চেয়ারম্যানকে চিঠি দেন, যেগুলো এই পথ থেকে প্রত্যাহার করা হবে।
শিপিং এজেন্টস অ্যাসোসিয়েশনের চেয়ারম্যান সৈয়দ মোহাম্মদ আরিফ বলেন, বন্দরের এ উদ্যোগ মাথাব্যথার জন্য মাথা কেটে ফেলার মতো। যেসব কারণে বন্দরে জাহাজজট হয়েছে, তা শনাক্ত করে জরুরি ভিত্তিতে সমাধান করা উচিত। জাহাজের সংখ্যা কমিয়ে জট কমবে না।
স্বাভাবিক সময় বন্দরের বহির্নোঙরে পাঁচ–ছয়টি জাহাজ অপেক্ষায় থাকে। কিন্তু এখন জটের কারণে ক্রেনযুক্ত একেকটি জাহাজ জেটিতে ভেড়ানোর জন্য চার থেকে ১০ দিন পর্যন্ত সাগরে অপেক্ষা করতে হচ্ছে।
শিপিং ও বন্দর কর্মকর্তারা জানান, ঈদুল আজহার একটানা ১০ দিনের ছুটি, দুই দফায় পরিবহন ধর্মঘট, কাস্টমসের শাটডাউন কর্মসূচি ও কাস্টমসের শুল্কায়নের সফটওয়্যারের ধীরগতির কারণে বন্দরের কার্যক্রম ব্যাহত হয়েছে। এর জেরে কনটেইনার জাহাজের যে জট তৈরি হয়েছে, তা এখনো কমছে না। কারণ, কনটেইনারে পণ্য পরিবহন বাড়ছে।
এমন পরিস্থিতিতে বন্দরের নতুন উদ্যোগে জাহাজের সংখ্যা কমানো হলে সিঙ্গাপুর, মালয়েশিয়া ও শ্রীঙ্কার বন্দরগুলোতে বাংলাদেশমুখী কনটেইনারের জট তৈরি হবে বলে জানিয়েছেন শিপিং এজেন্টরা। একইভাবে এসব বন্দর হয়ে ইউরোপ–আমেরিকামুখী রপ্তানি পণ্যের কনটেইনারের স্তূপ বাড়তে পারে ডিপোগুলোতে।
জানতে চাইলে কনটেইনার জাহাজ পরিচালনাকারী জিবিএক্স লজিস্টিকস লিমিটেডের অ্যাসিস্ট্যান্ট ভাইস প্রেসিডেন্ট ও হেড অব অপারেশন মুনতাসীর রুবাইয়াত প্রথম আলোকে বলেন, বন্দরের পথে জাহাজের সংখ্যা কমানো হলে আমদানি–রপ্তানি বাণিজ্য ক্ষতিগ্রস্ত হবে। কারণ, চাহিদা বাড়লে কনটেইনার পরিবহনের ভাড়া বেড়ে যেতে পারে। এতে ভুক্তভোগী হতে পারেন ভোক্তারা।