রাজধানীর পশ্চিমাঞ্চলের চারটি থানা—আদাবর, মোহাম্মদপুর, ধানমন্ডি ও হাজারীবাগ এলাকায় বিভিন্ন অপরাধী দল গড়ে উঠেছে। জনবহুল এই অঞ্চলে মাদক, ছিনতাই, ডাকাতি, চাঁদাবাজিসহ নানা ধরনের অপরাধে সক্রিয় অপরাধী চক্র। প্রকাশ্যে অস্ত্র নিয়ে মহড়া দিয়ে তারা নানা অপকর্মে জড়াচ্ছে। আধিপত্য বিস্তারসহ নানা অপরাধের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে তারা খুনোখুনিতেও জড়িয়ে পড়েছে।

সম্প্রতি হাজারীবাগে আলাদা দুটি খুনের ঘটনার পর এ অঞ্চলের অপরাধী দলগুলো নতুন করে আলোচনায় এসেছে। সরেজমিন অনুসন্ধানে আদাবর, মোহাম্মদপুর ও হাজারীবাগে এমন অন্তত অর্ধশত অপরাধী দল সক্রিয় থাকার তথ্য পাওয়া গেছে। ৫ আগস্টের পর ১০ মাসে এসব অপরাধী দলের হাতে খুন হয়েছেন অন্তত ১১ জন।

পুলিশ ও র‍্যাবের দেওয়া তথ্য বলছে, ৫ আগস্টের পর এই চারটি থানা এলাকা থেকে মাদক, চুরি, ছিনতাই, ডাকাতি, চাঁদাবাজি ও হত্যায় জড়িত অন্তত দেড় হাজার ব্যক্তিকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।

এর মধ্যে র‍্যাবের হাতেই গ্রেপ্তার হয়েছে ১ হাজার ৫৬ জন। এদের অধিকাংশের বয়স ১৫ থেকে ২২ বছরের মধ্যে।

এই অপরাধী দলগুলো ‘অদ্ভুত’ ধরনের নামে পরিচিত। যেমন ‘টিন এজ টর্নেডো’, ‘পাটালি গ্রুপ’, ‘লও ঠেলা গ্রুপ’, ‘কবজি কাটা গ্রুপ’, ‘ডার্ক স্ট্রাইকার্স’, ‘রেড ভলক্যানো’, ‘ডাইল্লা গ্রুপ’, ‘অ্যালেক্স ইমন গ্রুপ’, ‘লেভেল হাই গ্রুপ’, ‘চাঁন গ্রুপ’, ‘মাউরা গ্রুপ’, ‘ভাইবা ল’, ‘লাল গ্রুপ’, ‘ঠোঁটে ল গ্রুপ’, ‘লাড়া-দে’, ‘মেমোরি গ্রুপ’ ইত্যাদি। অপরাধী দলগুলো নিজেরাই এসব নাম ধারণ করে ফেসবুকে পোস্ট দেয়।

পুলিশের একজন কর্মকর্তা প্রথম আলোকে বলেন, বিভিন্ন সময় অপরাধী দলের সদস্যদের আইনের আওতায় আনা হলেও দ্রুততম সময়ে জামিনে ছাড়া পেয়ে নতুন করে অপরাধে জড়াচ্ছে। এসব অপরাধী দলের কোনোটিকে শীর্ষ সন্ত্রাসীরা প্রশ্রয় দিচ্ছে, আবার কোনো অপরাধী দলকে রাজনৈতিক দলের স্থানীয় পর্যায়ের নেতারা প্রশ্রয় দিচ্ছেন। ফলে আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে তারা খুনোখুনিতেও জড়াচ্ছে।

গত বছরের ২০ সেপ্টেম্বর মোহাম্মদপুরের রায়ের বাজারের সাদেক খান কাঁচাবাজার এলাকায় আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে দুটি অপরাধী দল ‘অ্যালেক্স ইমন’ ও ‘ডাইল্লা’ গ্রুপের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। ওই সংঘর্ষের সময় ডাইল্লা গ্রুপের সদস্য নাছির বিশ্বাস ও মুন্না নামের দুই তরুণ নিহত হন। দুটি অপরাধী দলের সদস্যরাই চুরি-ছিনতাই, মাদক, চাঁদাবাজিসহ নানা অপরাধে জড়িত। অ্যালেক্স ইমন গ্রুপকে শীর্ষ সন্ত্রাসী ইমামুল হাসান হেলাল ওরফে পিচ্চি হেলাল প্রশ্রয় দেন। জোড়া খুনের মামলাতেও পিচ্চি হেলালকে আসামি করা হয়েছে।

যদিও নাছির বিশ্বাসের বড় ভাই সুমন বিশ্বাস প্রথম আলোর কাছে দাবি করেন, তাঁর ভাই নাছির পেশায় রাজমিস্ত্রি, কোনো অপরাধী দলের সদস্য ছিলেন না। দুটি অপরাধী দলের সংঘর্ষের মধ্যে পড়ে নাছির নিহত হন। তবে স্থানীয় সূত্র এবং পুলিশ বলছে, নাছিরের বিরুদ্ধে মাদকসহ বিভিন্ন অপরাধে থানায় মামলা রয়েছে।

এদিকে গত মার্চ ও এপ্রিলে এক মাসের ব্যবধানে মোহাম্মদপুরের শের শাহ সুরী সড়কে আবাসন ব্যবসায়ী মনির আহমেদের বাসায় ঢুকে গুলির ঘটনায় দুই শীর্ষ সন্ত্রাসীর বিরোধের তথ্য উঠে এসেছে। মনির আহমেদ প্রথম আলোকে বলেন, তিনি চন্দ্রিমা রিয়েল এস্টেটের পরিচালক। এক সন্ত্রাসী তাঁর কাছে চাঁদা চেয়েছিল। এর জেরেই গুলির ঘটনা ঘটেছে। এখন তিনি বাসা থেকে বের হতে ভয় পান।

এ ঘটনা তদন্তের সঙ্গে যুক্ত একজন গোয়েন্দা কর্মকর্তা  বলেন, ঘটনাটি মূলত দুই শীর্ষ সন্ত্রাসীর দ্বন্দ্বের জেরে ঘটেছে। ওই ব্যবসায়ীও একজন শীর্ষ সন্ত্রাসীর ঘনিষ্ঠ হিসেবে পরিচিত।

ঢাকার পশ্চিমাঞ্চলের অপরাধপ্রবণ চারটি থানার মধ্যে আদাবর ও মোহাম্মদপুর থানা দুটি ঢাকা মহানগর পুলিশের তেজগাঁও বিভাগের মধ্যে পড়েছে। এই বিভাগের উপকমিশনার (ডিসি) ইবনে মিজান প্রথম আলোকে বলেন, পুলিশি তৎপরতায় এ অঞ্চলে অপরাধীদের দৌরাত্ম্য অনেক কমে এসেছে। ছিনতাই, ডাকাতিসহ বিভিন্ন অপরাধ অনেকটা নিয়ন্ত্রণে এলেও বিচ্ছিন্ন কিছু ঘটনা ঘটে।

তারা ভাসমান অপরাধী, স্থায়ী ঠিকানা নেই

হাজারীবাগের জাফরাবাদে গত ১৫ মে গভীর রাতে একটি পরিবারের সাতজনকে কুপিয়েছে ‘পাটালি গ্রুপ’ নামে একটি অপরাধী গ্রুপের সদস্যরা।

সম্প্রতি জাফরাবাদের ইত্যাদির মোড়ে গিয়ে কথা হয় ভুক্তভোগী পরিবারটির সঙ্গে। বাড়িতে ঢুকতেই দেখা যায়, চেয়ারে বসে আছেন গৃহকর্তা আবুল কাশেম। বাঁ হাতের পুরোটাই ব্যান্ডেজ মোড়ানো। সেদিনের ঘটনা জিজ্ঞাসা করতেই তিনি কান্নায় ভেঙে পড়েন। ঘটনার বর্ণনা দিয়ে তিনি বলেন, ঘটনার দিন গভীর রাতে তিনজন বাসায় উঁকি দিচ্ছিলেন। কেন বাসায় উঁকি দিচ্ছিলেন, জিজ্ঞেস করতেই পরিবারের সাতজনকে কুপিয়ে জখম করে পালিয়ে যায় তারা।

এ ঘটনার পর পুলিশ অভিযানে নেমে ৪৪ জনকে গ্রেপ্তার করে। এদের ২০ জনের বেশি পাটালি গ্রুপের সদস্য বলে জানিয়েছে পুলিশ। অভিযানে পাটালি গ্রুপের দ্বিতীয় শীর্ষ ব্যক্তি শাহিনকেও গ্রেপ্তার করা হয়। তবে পাটালি গ্রুপের প্রধান আলমগীর ওরফে ফর্মা আলমগীর এখনো পলাতক।

পুলিশের একজন কর্মকর্তা বলেন, পাটালি গ্রুপে কতজন সদস্য আছে, এর সঠিক হিসাব পাওয়া যায়নি। তবে সংখ্যাটা ৭০ জনের কম নয়। এই দলের সদস্যরা ভাসমান, স্থায়ী কোনো ঠিকানা নেই। চুরি, ছিনতাই, ডাকাতি, চাঁদাবাজিসহ বিভিন্ন অপরাধে জড়িত। তারা ভাড়াটে সন্ত্রাসী হিসেবেও কাজ করে। এক এলাকায় অপরাধের পর অন্য এলাকায় চলে যায়।

ঢাকার পশ্চিমাঞ্চলের চারটি থানা এলাকার সীমান্ত ঘেঁষে গাবতলী–সদরঘাট বেড়িবাঁধ সড়ক চলে গেছে। এর পাশ দিয়ে বয়ে গেছে বুড়িগঙ্গা নদী। এ অঞ্চলে নিম্নআয়ের অনেক মানুষ বসবাস করেন। বেড়িবাঁধ–সংলগ্ন চাঁদ উদ্যান, ঢাকা উদ্যান, চাঁন মিয়া হাউজিং, বছিলা, জাফরাবাদ, রায়েরবাজার, গণকটুলী এলাকায় অপরাধী গ্রুপগুলো বেশি সক্রিয়। এই অপরাধী দলগুলো ‘অদ্ভুত’ ধরনের নামে পরিচিত। যেমন ‘টিন এজ টর্নেডো’, ‘পাটালি গ্রুপ’, ‘লও ঠেলা গ্রুপ’, ‘কবজি কাটা গ্রুপ’, ‘ডার্ক স্ট্রাইকার্স’, ‘রেড ভলক্যানো’, ‘ডাইল্লা গ্রুপ’, ‘অ্যালেক্স ইমন গ্রুপ’, ‘লেভেল হাই গ্রুপ’, ‘চাঁন গ্রুপ’, ‘মাউরা গ্রুপ’, ‘ভাইবা ল’, ‘লাল গ্রুপ’, ‘ঠোঁটে ল গ্রুপ’, ‘লাড়া-দে’, ‘মেমোরি গ্রুপ’ ইত্যাদি। অপরাধী দলগুলো নিজেরাই এসব নাম ধারণ করে ফেসবুকে পোস্ট দেয়।

পুলিশের মোহাম্মদপুর অঞ্চলের সহকারী কমিশনার এ কে এম মেহেদী হাসান প্রথম আলোকে বলেন, মোহাম্মদপুর অঞ্চলে অনেক ভাসমান অপরাধী বসবাস করে। বিভিন্ন দলের সঙ্গে যুক্ত হয়ে তারা নানা ধরনের অপরাধে যুক্ত হয়।

খুনোখুনি থেমে নেই

হাজারীবাগের জাফরাবাদে গত ১৫ মে সন্ধ্যায় একটি কিশোর দলের হাতে খুন হন আলোকচিত্রী নুরুল ইসলাম। বিয়ের অনুষ্ঠানের ছবি তোলার কথা বলে তাঁকে ডেকে নিয়ে কুপিয়ে খুন করে ১০-১২ জনের একটা কিশোর দল। তারা নুরুল ইসলামের কাছ থেকে উন্নত মানের দুটি ক্যামেরাও ছিনিয়ে নেয়।

নুরুল ইসলামের বড় ভাই ওসমান গনি বলেন, নুরুল ইসলামের সঙ্গে কারও কোনো শত্রুতা ছিল না। শুধু ক্যামেরা ছিনিয়ে নিতেই ডেকে নিয়ে হত্যা করা হয়।

নুরুল খুনের আধা ঘণ্টা আগে হাজারীবাগের জিগাতলা বাসস্ট্যান্ডে মাদক সেবনকে কেন্দ্র করে একটি অপরাধী দলের হাতে খুন হন স্নাতকপড়ুয়া সামিউর রহমান।

পুলিশের ধানমন্ডি অঞ্চলের সহকারী কমিশনার শাহ মোস্তফা তারিকুজ্জামান প্রথম আলোকে বলেন, ৫ আগস্টের পর বিভিন্ন অপরাধী দল এ অঞ্চলে সক্রিয় ছিল। পুলিশের তৎপরতায় পরিস্থিতি অনেকটাই নিয়ন্ত্রণে আছে। এখন ভাসমান কিছু অপরাধী হাজারীবাগ ও ধানমন্ডির ‘বর্ডার’ এলাকায় কখনো কখনো সক্রিয় হয়।

আদাবর, মোহাম্মদপুর, ধানমন্ডি ও হাজারীবাগ এলাকায় সরেজমিনে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ৫ আগস্টের পর আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর তৎপরতা কমে যাওয়ার সুযোগে অপরাধী দলগুলো বেপরোয়া হয়ে ওঠে। গত ১০ মাসে এ অঞ্চলে বিভিন্ন অপরাধী দলের হাতে ১১ জন খুন হয়েছেন। শুধু মোহাম্মদপুরেই খুন হয়েছেন সাতজন।

মোহাম্মদপুর অঞ্চলে ‘ভয়ংকর’ অপরাধী দলগুলোর মধ্যে ব্যাপক আলোচনায় আসে ‘কবজি কাটা’ গ্রুপ। স্থানীয় সূত্রগুলো বলছে, এই দলের সদস্যরা কবজি কেটে ভিডিও করে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে দিত। এই দলের ভাড়াটে খুনিও রয়েছে বলে জানিয়েছে পুলিশ। গত বছরের ১ সেপ্টেম্বর রাতে একটি আবাসন প্রতিষ্ঠানের কর্মচারী বিল্লাল গাজীকে কুপিয়ে হত্যা করা হয়। ভাড়াটে সন্ত্রাসী হিসেবে তারা এই খুন করেছে বলে পুলিশ জানিয়েছে। গত ফেব্রুয়ারিতে কবজি কাটা গ্রুপের প্রধান আনোয়ার হোসেন র‍্যাবের হাতে গ্রেপ্তার হন।

গত ২৭ মে মোহাম্মদপুরে সেনাবাহিনীর অভিযানে ফরিদ আহমেদ বাবু ওরফে এক্সেল বাবু নামে এক সন্ত্রাসীকে গ্রেপ্তার করা হয়। আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তর জানিয়েছে, এক্সেল বাবুর বিরুদ্ধে ঢাকার বিভিন্ন থানায় হত্যা, অস্ত্র, অপহরণ, চাঁদাবাজি এবং ভূমি দখলের অভিযোগে ১৫টির বেশি মামলা রয়েছে। ‘টিন এজ টর্নেডো, ‘কবজি কাটা গ্রুপ’সহ অন্তত চারটি অপরাধী দলের নেতৃত্ব দেন এক্সেল বাবু। কবজি কাটা গ্রুপের প্রধান আনোয়ার হোসেন ওরফে কবজি কাটা আনোয়ারের গডফাদার হিসেবেও পরিচিত তিনি।

এদিকে গত সেপ্টেম্বর ও অক্টোবরে মাদক ব্যবসাকে কেন্দ্র করে বিভিন্ন অপরাধী দলের অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্বে মোহাম্মদপুরের জেনেভা ক্যাম্পে চারজন খুন হয়েছেন। মুজাহির ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক অসি আহমেদ প্রথম আলোকে বলেন, জেনেভা ক্যাম্পে অবাধে মাদক ব্যবসা চলছে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীসহ সংশ্লিষ্টদের জানানো হলেও পরিস্থিতির উন্নতি হচ্ছে না।

দীর্ঘদিন ধরে মোহাম্মদপুর এলাকায় বসবাস করেন ব্যাংকার এ এস এম নিয়াজ মোর্শেদ। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, মোহাম্মদপুর ও আশপাশের এলাকা অনেক দিন ধরেই অপরাধপ্রবণ এলাকা। তবে ৫ আগস্টের পর পরিস্থিতির মারাত্মক অবনতি হয়। এ অঞ্চলের অপরাধ নিয়ন্ত্রণে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে কঠোর হতে হবে। জড়িতদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ব ভ ন ন অপর ধ অ য ল ক স ইমন ৫ আগস ট র পর গ র প ত র কর ন র ল ইসল ম ম হ ম মদপ র দল র সদস য প রথম আল ক খ ন হয় ছ ন ক ন দ র কর দল র হ ত জ ফর ব দ য় অপর ধ র অপর ধ ধ নমন ড ছ নত ই দল র স এল ক য় পর চ ত আহম দ ব যবস ধরন র র ঘটন ঘটন র দলগ ল

এছাড়াও পড়ুন:

টেলিযোগাযোগ বিভাগের প্রতিবাদ ও প্রতিবেদকের বক্তব্য

‘কেনাকাটা আটকে দিয়েছিলেন নাহিদ, তোড়জোড় ফয়েজের’ শিরোনামে ২৭ জুলাই প্রথম আলোতে প্রকাশিত সংবাদের প্রতিবাদ জানিয়েছে ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রণালয়। বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ কোম্পানি লিমিটেডের (বিটিসিএল) ‘৫-জি উপযোগীকরণে বিটিসিএলের অপটিক্যাল ফাইবার ট্রান্সমিশন নেটওয়ার্ক উন্নয়ন’ শিরোনামের প্রকল্প নিয়ে প্রতিবেদনটির প্রতিবাদ পাঠানো হয় ২৮ জুলাই।

প্রতিবাদপত্রে বলা হয়, প্রকল্পটি নিয়ে করা প্রতিবেদনে প্রধান উপদেষ্টার ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত বিশেষ সহকারী ফয়েজ আহমদ তৈয়্যবকে জড়িয়ে যে ‘অভিযোগ ও ব্যাখ্যাহীন অনুমানমূলক’ মন্তব্য করা হয়েছে, তা পুরোপুরি বিভ্রান্তিকর, একপক্ষীয় এবং ভিত্তিহীন। এতে উদ্দেশ্যপ্রণোদিত হয়ে বিকৃত তথ্য উপস্থাপন করে ফয়েজ আহমদের মানহানি করার চেষ্টা করা হয়েছে, যা সাংবাদিকতার নৈতিকতা বিরুদ্ধ।

টেলিযোগাযোগ বিভাগ প্রতিবাদপত্রে সুনির্দিষ্ট কয়েকটি বিষয়ে বক্তব্য দিয়েছে। নিচে সেই সুনির্দিষ্ট বিষয়গুলো উল্লেখ করে প্রতিবেদকের বক্তব্য তুলে ধরা হলো।

আরও পড়ুনদুর্নীতির অভিযোগে কেনাকাটা আটকে দিয়েছিলেন নাহিদ, তোড়জোড় ফয়েজ আহমদের২৭ জুলাই ২০২৫

এক. প্রতিবাদপত্রে বলা হয়, প্রথম আলোর প্রতিবেদনে ইঙ্গিত দেওয়া হয়েছে যে ফয়েজ আহমদ দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) অনুসন্ধানাধীন একটি প্রকল্পের কার্যক্রম ‘এগিয়ে নিতে’ বিশেষ কৌশল অবলম্বন করেছেন। বাস্তবতা হলো, বিটিসিএলের ৫–জি রেডিনেস প্রকল্পে ২৯০ কোটি টাকার ঋণপত্র (এলসি) পূর্ববর্তী সরকারের আমলে চূড়ান্ত হয়েছে। সেই টাকা ফেরত পাওয়ার আর কোনো বাস্তবসম্মত পথ নেই। এবং এসব যন্ত্রপাতি গ্রহণ না করলে সম্পূর্ণ অর্থই রাষ্ট্রের অপচয়ে পরিণত হবে।

টেলিযোগাযোগ বিভাগ আরও বলেছে, ফয়েজ আহমদ শুধু অর্থনৈতিক বাস্তবতা বিবেচনায় নিয়ে, আইনি কাঠামোর ভেতরে থেকে দুদকের সঙ্গে আনুষ্ঠানিক যোগাযোগ করেছেন, যেখানে দুর্নীতির সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের শাস্তির দাবিও তিনি তুলে ধরেছেন। এটি দুর্নীতির ‘সহযোগিতা’ নয়, বরং রাষ্ট্রীয় স্বার্থ রক্ষায় দায়িত্বশীল পদক্ষেপ।

প্রতিবেদকের বক্তব্য: প্রকল্পের কাজ এগিয়ে নিতে বিটিসিএল একটি বেসরকারি আইনি পরামর্শক প্রতিষ্ঠানকে দিয়ে দুদকের অনুসন্ধানাধীন প্রকল্পের বাকি কাজ এগিয়ে দিতে আইনগত মতামত নেয় (২৭ মার্চ, ২০২৫)। যদিও এ ধরনের আইনগত মতামত দেওয়ার জন্য বিটিসিএলের নিজস্ব আইনজীবী প্যানেল রয়েছে। বেসরকারি আইনি পরামর্শক প্রতিষ্ঠান প্রথমে ইতিবাচক মতামত দিলেও পরে (৮ এপ্রিল, ২০২৫) দুর্নীতির অভিযোগ সম্পর্কে জানতে পেরে সতর্ক করে দেয় যে তদন্তাধীন প্রকল্পে কেনাকাটার ক্ষেত্রে আইনি ব্যবস্থা নেওয়ার সুযোগ রয়েছে।

দুদক চিঠি দিয়ে বিটিসিএলকে স্পষ্ট জানিয়ে দেয় (১৮ জুন, ২০২৫) যে তাদের প্রাথমিক অনুসন্ধানে ক্রয় আইনের লঙ্ঘন পাওয়া গেছে। তাই কেনাকাটার কার্যক্রম এগিয়ে নিলে আইনের ব্যত্যয় হবে এবং অর্থ ব্যয় আইনসিদ্ধ হবে না। দুদক তাদের মতামত জানানোর পরও ফয়েজ আহমদ আবার (২২ জুন) সংস্থাটির চেয়ারম্যানকে চিঠি দেন এবং তাঁর ব্যক্তিগত মনোযোগ ও আন্তরিক সহযোগিতা কামনা করেন।

দুদকের নেতিবাচক মতামতের পরও কেনাকাটার কার্যক্রম এগিয়ে নিয়ে যাওয়া টেলিযোগাযোগ বিভাগের (প্রতিবাদপত্রে উল্লেখ করা) দাবিকে সমর্থন করে না। ফয়েজ আহমদ দুদককে দ্রুত অনুসন্ধান শেষ করার অনুরোধ করতে পারতেন। অনুসন্ধান শেষ হলে সে অনুযায়ী ব্যবস্থা নিতে পারতেন। বিটিসিএলের ওই প্রকল্পে দুদক গত ৯ জানুয়ারি অনুসন্ধানের সিদ্ধান্ত নেয়। এই অনুসন্ধান নিশ্চয়ই বছরের পর বছর চলবে না। কেনাকাটায় আর কিছুদিন দেরি হলে রাষ্ট্রের বিপুল ক্ষতি হয়ে যাবে, এ দাবি যৌক্তিক নয়।

‘দুর্নীতি সহায়ক’ বক্তব্যটি ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের (টিআইবি) নির্বাহী পরিচালক ইফতেখারুজ্জামানের মতামত, প্রথম আলোর নয়।

দুই. প্রতিবাদপত্রে বলা হয়েছে, প্রয়োজনের চেয়ে ৫ গুণ সক্ষমতার যন্ত্রপাতি কেনার উদ্যোগ নিয়ে অর্থ অপচয়ের চেষ্টার অভিযোগ অসত্য। প্রতিবাদপত্রে কারিগরি বিভিন্ন তথ্য-উপাত্ত তুলে ধরে বলা হয়, বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) সমীক্ষায় বিভিন্ন ধরনের চাহিদা বিবেচনা করা হয়নি। সেসব বিবেচনায় নেওয়া হলে যন্ত্রপাতির সক্ষমতা ২৬ টিবিপিএস (টেরাবাইট পার সেকেন্ড) নয়, ১২৬ টিবিপিএসের প্রয়োজন হবে। ফাইভ-জি প্রকল্পে ১২৬ টেরাবাইট ক্ষমতা ‘রিডান্ডেন্ট’সহ নিশ্চিতকরণের ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। এখানে কোনো যন্ত্রপাতি বা সক্ষমতা অব্যবহৃত থাকার সুযোগ নেই।

প্রতিবাদপত্রে আরও বলা হয়, বুয়েটের বিশেষজ্ঞ দল ২০২১ সালে প্রণীত বিটিসিএলের ফাইভ-জি প্রকল্পের একটি সমীক্ষায় মতামত দেয় যে শুধু আন্তর্জাতিক ইন্টারনেট ব্যান্ডউইডথ যদি ২৬ টিবিপিএস হয়, তাহলে সব মিলিয়ে ‘সিস্টেমের লাইন ক্যাপাসিটি’ ১২৬ টিবিপিএস প্রয়োজন হবে।

প্রতিবেদকের বক্তব্য: এই প্রকল্প নিয়ে দুদকের অনুসন্ধানের বিষয়বস্তুই হলো ‘দরপত্রের শর্তানুযায়ী দরদাতাদের মূল্যায়ন না করে সংশ্লিষ্ট আইন ও বিধি লঙ্ঘনপূর্বক শুধু প্রকল্প পরিচালকের বক্তব্যের ভিত্তিতে তিনজন দরদাতাকেই কারিগরিভাবে রেসপনসিভ (যোগ্য) ঘোষণা করাসহ নন-রেসপনসিভ দরদাতাদের কাছ থেকে প্রয়োজনীয় সক্ষমতার পাঁচ গুণ বেশি যন্ত্রপাতি ও সরঞ্জামাদি ক্রয় করে বিপুল পরিমাণ রাষ্ট্রীয় অর্থের ক্ষতিসাধনের অভিযোগ।’ প্রথম আলোর প্রতিবেদনে এ ‘অভিযোগ’ই শুধু তুলে ধরা হয়েছে।

তা ছাড়া ২০৩০ সাল পর্যন্ত যে ২৬ টিবিপিএস চাহিদা নিরূপিত হয়েছিল, কিন্তু কেনা হচ্ছে ১২৬ টেরাবাইট—এটা ২০২৩ সালের ২৪ জুলাই অনুষ্ঠিত বিটিসিএলের ২১৩তম পর্ষদ সভার কার্যবিবরণীতে রয়েছে। পাশাপাশি তৎকালীন ব্যবস্থাপনা পরিচালক আসাদুজ্জামান লিখিতভাবে জানিয়েছিলেন যে প্রযুক্তিগত অগ্রগতির কারণে টেলিকম যন্ত্রপাতিও অতি দ্রুত পরিবর্তনশীল। এ কারণে দীর্ঘ সময় যন্ত্রপাতির খুচরা যন্ত্রাংশ সহজলভ্য থাকে না। সাধারণভাবে টেলিকম যন্ত্রপাতির সর্বোচ্চ ব্যবহারযোগ্য আয়ুষ্কাল সাত বছর ধরা হয়। এই দরপত্রের ক্ষেত্রেও কারিগরি নির্দেশে যন্ত্রপাতির আয়ুষ্কাল সাত বছর নির্ধারিত রয়েছে। তিনি সাবধান করেছিলেন যে ২০৪০ সাল পর্যন্ত চাহিদা পূরণে বেশি সক্ষমতার যন্ত্রপাতি চাওয়া হলেও বাস্তবে তা সচল থাকার নিশ্চয়তা ২০৩০ সাল পর্যন্ত। অর্থাৎ যে পরিমাণ যন্ত্রপাতি কেনা হবে, তার একটি বড় অংশই ২০৩০ সাল পর্যন্ত ব্যবহৃত হবে না এবং ব্যবহারের পূর্বেই মেয়াদ শেষ হয়ে যাবে।

বিগত সরকারের সময় অতিরিক্ত সক্ষমতার যন্ত্র কেনার অনুমোদন না দেওয়ার কারণেই আসাদুজ্জামানকে ব্যবস্থাপনা পরিচালকের পদ থেকে অপসারণ করা হয় এবং নতুন ব্যবস্থাপনা পরিচালক নিয়োগ করে কার্যাদেশ দেওয়া হয়।

তিন. প্রতিবাদপত্রে টেলিযোগাযোগ বিভাগ বলেছে, দুদকের ওপর প্রভাব বিস্তারের দাবি তথ্যভিত্তিক নয়। দুদকের চেয়ারম্যানের সঙ্গে দেখা করা এবং চিঠি পাঠানো একটি প্রাতিষ্ঠানিক, নীতিগত এবং স্বচ্ছ প্রক্রিয়ার অংশ। এর মধ্য দিয়ে কোনোভাবেই সংস্থাটির ওপর ‘প্রভাব বিস্তার’ করা হয়নি; বরং তদন্তকাজ চলমান রাখতে এবং যন্ত্রপাতি গ্রহণের অর্থনৈতিক যৌক্তিকতা ব্যাখ্যা করতে একটি প্রাসঙ্গিক ও প্রয়োজনীয় দৃষ্টিভঙ্গি উপস্থাপন করা হয়েছে। তা ছাড়া বিশেষ সহকারীর দুদকে প্রেরিত আধা সরকারি পত্রের বক্তব্যকে প্রকল্পের কেনাকাটা করতে বিশেষ কৌশলের আশ্রয় নেওয়ার অভিযোগ বলে প্রচার করা হয়েছে, যা জনমনে বিভ্রান্তি তৈরি করেছে। এটা অপসংবাদিকতা ছাড়া আর কিছু নয়।

প্রতিবেদকের বক্তব্য: টেলিযোগাযোগ বিভাগের এক নম্বর পয়েন্টেও একই বিষয়ে বলা হয়েছে। সেখানেই প্রতিবেদকের বক্তব্য দেওয়া হয়েছে। স্বচ্ছতার স্বার্থে টেলিযোগাযোগ বিভাগের এই বক্তব্য আবার উল্লেখ করা হলো। এখানে বলে রাখা দরকার, দুদকের স্পষ্ট মতামত পাওয়ার পরও চেয়ারম্যানকে দ্বিতীয় দফা চিঠি দেওয়া এবং অভিযোগকে ‘সত্য নয়’ বলে দাবি করা স্বাধীন সংস্থাটিকে প্রভাবিত করারই চেষ্টা। দুদকের মতামত যাতে কেনাকাটার পক্ষে পরিবর্তিত হয়, সে জন্যই ফয়েজ আহমদ দ্বিতীয় দফা আধা সরকারি পত্র দিয়েছিলেন এবং তিনি সেখানে দুদক চেয়ারম্যানের ‘ব্যক্তিগত মনোযোগ ও আন্তরিক সহযোগিতা’ কামনা করেন।

চার. প্রতিবাদপত্রে টেলিযোগাযোগ বিভাগ বলেছে, প্রথম আলোর প্রতিবেদনে কারখানা পরিদর্শন ও জিও (সরকারি আদেশ) জারির প্রেক্ষাপট চেপে রাখা হয়েছে। প্রকৃতপক্ষে, প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয় থেকেই জিও অনুমোদন না হওয়ায় চীনে কারখানা পরিদর্শনের জন্য প্রতিনিধিদল পাঠানো সম্ভব হয়নি। সরকারের নির্ধারিত বিধি অনুযায়ী, যখন কারখানা পরিদর্শন সম্ভব নয়, তখন পণ্য সরবরাহ চুক্তির শর্ত অনুযায়ী জাহাজীকরণ করা যেতে পারে—বিষয়টি সচেতনভাবে উপেক্ষা করা হয়েছে।

প্রতিবেদকের বক্তব্য: প্রথম আলোর প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, দরপত্রের নিয়মানুযায়ী কারখানা পরিদর্শনে যাওয়ার কথা বিটিসিএলের চারজন প্রকৌশলীর। সেখানে নিয়মবহির্ভূতভাবে চারজনের জায়গায় পাঁচজনকে কারখানা পরিদর্শনে পাঠানোর জন্য জিও জারির অনুরোধ করা হয়। নতুন দলে বিটিসিএলের প্রকৌশলী রাখা হয় দুজন আর টেলিযোগাযোগ বিভাগের তিনজন। তদন্ত–সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, টেলিযোগাযোগ বিভাগের কর্মকর্তাদের খুশি রাখতে তাঁদের চীন সফরে অন্তর্ভুক্ত করার সুযোগ করে দেওয়া হয়। যদিও তাঁদের চীনে যাওয়া হয়নি। কারণ, প্রধান উপদেষ্টার দপ্তর থেকে জিও (সরকারি আদেশ) জারির বিষয়টি আটকে দেওয়া হয়েছে।

উল্লেখ্য, প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয় থেকে গত ৯ ডিসেম্বর বিদেশ ভ্রমণসংক্রান্ত একটি পরিপত্র জারি করা হয়। সেখানে সাধারণভাবে বিদেশ ভ্রমণ নিরুৎসাহিত করা হয়। তবে নির্দেশনার ৯ নম্বরে কেনাকাটা, জাহাজীকরণের আগে কারখানা পরিদর্শন ইত্যাদি ক্ষেত্রে কেবল সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞ প্রেরণের বিষয় বিবেচনা করতে বলা হয়েছে। অর্থাৎ ‘ফ্যাক্টরি একসেপটেন্সের’ জন্য বিদেশ ভ্রমণ নিষিদ্ধ নয়। আরও উল্লেখ্য যে এই কেনাকাটার জন্য কারখানায় যন্ত্রপাতি পরীক্ষা-নিরীক্ষার জিও গত বছরের ১ সেপ্টেম্বর জারি করা হয়েছিল। কিন্তু পরে ২৪ সেপ্টেম্বর তা বাতিল করা হয়। ২৪ অক্টোবর (২০২৪) বিটিসিএলের পরিচালনা পর্ষদ প্রকল্প নিয়ে তদন্তের সিদ্ধান্ত নেয় এবং এ বছরের ৬ জানুয়ারি সেই তদন্ত প্রতিবেদন দুদকে পাঠাতে বলে।  

পাঁচ. প্রতিবাদপত্রে টেলিযোগাযোগ বিভাগ বলেছে, প্রথম আলোর প্রতিবেদনে ফয়েজ আহমদের চীন সফর নিয়ে বিভ্রান্তি ছড়ানো হয়েছে। এতে চীন সফরের ব্যাখ্যা এবং এর সরকার অনুমোদিত বৈধতা সম্পূর্ণ উপেক্ষা করে এটিকে ‘অপরিচিত সংস্থার অর্থে’ পরিচালিত বলে উপস্থাপন করা হয়েছে। অথচ এটি ছিল সরকারি অনুমোদিত সফর, যার উদ্দেশ্য ছিল তথ্যপ্রযুক্তি খাতে আন্তর্জাতিক অভিজ্ঞতা অর্জন ও অবকাঠামোগত সক্ষমতা পর্যালোচনা।

প্রতিবেদকের বক্তব্য: এ সফর সরকারের অনুমোদনহীন, তা প্রথম আলোর প্রতিবেদনের কোথাও বলা হয়নি। বলা হয়েছে, জিওতে উল্লিখিত ‘চায়নিজ এন্টারপ্রাইজেস অ্যাসোসিয়েশন মেম্বারস ইন বাংলাদেশ’ নামের সংগঠনটি অপরিচিত। তবে ‘চায়নিজ এন্টারপ্রাইজেস অ্যাসোসিয়েশন ইন বাংলাদেশ’ নামের একটি সংগঠন রয়েছে। উল্লেখ্য, ওই সফরে বিশেষ সহকারীর একান্ত সচিব সফরসঙ্গী ছিলেন, যা সরকারের বিদেশ ভ্রমণবিষয়ক নির্দেশনার সঙ্গে সাংঘর্ষিক। এ নির্দেশনায় একান্ত সচিবদের জরুরি প্রয়োজন ব্যতীত সঙ্গে নেওয়া পরিহার করতে বলা হয়েছে।

ছয়. প্রতিবাদপত্রে টেলিযোগাযোগ বিভাগ বলেছে, একটি জাতীয় গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্পের আর্থিক ও প্রযুক্তিগত বাস্তবতা বিশ্লেষণ না করে শুধু প্রাক্তন আমলাদের বক্তব্য, বাতিল হওয়া দরপত্র এবং অনুমাননির্ভর ব্যাখ্যা দিয়ে ফয়েজ আহমদের কার্যক্রমকে প্রশ্নবিদ্ধ করা হয়েছে। তিনি এ বিষয়ে প্রেস কনফারেন্সের মাধ্যমে নিজের অবস্থান গণমাধ্যমে ব্যাখ্যা দিয়েছেন, যার কিছু অংশ প্রতিবেদনে উল্লেখ থাকলেও প্রথম আলোর প্রতিনিধিদের সুনির্দিষ্ট প্রশ্নের প্রতি উত্তরের অনুপস্থিতিকে উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে ব্যাখ্যা করা হয়েছে।

প্রতিবেদকের বক্তব্য: বক্তব্য জানতে প্রথম আলোর পক্ষ থেকে ১৬ জুলাই ফয়েজ আহমদ এবং ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগের জনসংযোগ কর্মকর্তাকে ই-মেইলে প্রশ্ন পাঠানো হয়। পরে ফয়েজ আহমদকে ফোন করা হয় এবং খুদে বার্তা পাঠানো হয়। তথ্য ও যোগাযোগপ্রযুক্তি (আইসিটি) বিভাগের জনসংযোগ কর্মকর্তাকে ফোনে বিষয়টি জানানো হয়। ২০ জুলাই আইসিটি বিভাগে গেলে অভ্যর্থনা কক্ষ থেকে জানানো হয়, ফয়েজ আহমদ অফিসে উপস্থিত নেই। তখন আইসিটি বিভাগের জনসংযোগ কর্মকর্তা মুহম্মদ জসীম উদ্দিনের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি লিখিত বক্তব্য পাঠাবেন বলে জানান। তিনি পাঠাননি। পরে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, বিষয়টি নিয়ে ৭ জুলাই ফয়েজ আহমদ সংবাদ সম্মেলন করেছিলেন। সেটাই তাঁর বক্তব্য। উল্লেখ্য, ফয়েজ আহমদের আগের বক্তব্যের চুম্বক অংশ প্রতিবেদনে রয়েছে। পাশাপাশি ৭ জুলাই তা প্রথম আলোতে প্রকাশিত হয়েছিল। প্রথম আলোর প্রতিবেদনে অনুমাননির্ভর কোনো ব্যাখ্যা দেওয়া হয়নি।

সাত. টেলিযোগাযোগ বিভাগ জানিয়েছে, ইতিমধ্যে দুজন কারিগরি ও দুজন ক্রয় বিশেষজ্ঞের সমন্বয়ে ‘কস্ট-বেনিফিট অ্যানালাইসিস’ (ব্যয়ের বিপরীতে সুফল পর্যালোচনা) কমিটি গঠন করা হয়েছে।

প্রতিবেদকের বক্তব্য: ‘কস্ট-বেনিফিট অ্যানালাইসিস’ করা হয়েছে কি না, সেটা প্রথম আলোকে দেওয়া বক্তব্যে জানতে চেয়েছিলেন টিআইবির ইফতেখারুজ্জামান।

আমরা দ্ব্যর্থহীন ভাষায় বলছি, প্রথম আলোর প্রতিবেদন মোটেও ‘ব্যাখ্যাহীন অনুমানমূলক’ নয়, এটা ‘বিভ্রান্তিকর, একপক্ষীয় এবং ভিত্তিহীন’ও নয়; বরং প্রথম আলোর প্রতিবেদন সঠিক এবং সংশ্লিষ্ট নথিপত্র প্রথম আলোর কাছে আছে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ