এমপি আনারের কোটি টাকা মূল্যের গাড়ি মিলল কুষ্টিয়ায়
Published: 10th, June 2025 GMT
কুষ্টিয়া শহরের একটি বহুতল ভবনের পার্কিং স্পেসে বিলাসবহুল ল্যান্ড ক্রুজার প্রাডো গাড়ির সন্ধান মিলেছে। কোটি টাকা দামের গাড়িটি ঝিনাইদহ-৪ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য নিহত আনোয়ারুল আজিম আনারের বলে ধারণা করছে পুলিশ ও স্থানীয়রা।
সোমবার (৯ জুন) রাত ১২টার দিকে স্থানীয়দের কাছ থেকে খবর পেয়ে কুষ্টিয়া মডেল থানা পুলিশের একটি টিম ঘটনাস্থলে যায়। কুষ্টিয়া পুলিশ সুপারের কার্যালয়ের সামনের ৮ তলা বিশিষ্ট সাফিনা টাওয়ার নামের ভবনের গ্যারেজে ল্যান্ড ক্রুজার প্রাডো ব্র্যান্ডের গাড়িটি পাওয়া যায়। গাড়ির ভেতরে থেকে গাড়ির কাগজপত্র, সংসদ সদস্য ও সিআইপি স্টিকার উদ্ধার করেছে পুলিশ। কালো রঙের গাড়িটার নম্বর ‘ঢাকা মেট্রো-ঘ ১২-৬০৬০’।
কুষ্টিয়া মডেল থানার এসআই স্বপন বলেন, “গাড়ির খবর পেয়ে আমরা ঘটনাস্থলে আসি। গাড়ি থেকে গাড়ির কাগজপত্র, সংসদ সদস্য ও সিআইপি স্টিকার উদ্ধার করা হয়েছে। ধারণা করা হচ্ছে, গাড়িটা ঝিনাইদহ-৪ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য আনোয়ারুল আজিম আনারের। বিষয়টি তদন্ত করে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
আরো পড়ুন:
মোটরসাইকেলে বাসের ধাক্কা, ৩ যুবকের মৃত্যু
ক্রিকেট খেলা নিয়ে দ্বন্দ্ব, দুপক্ষের সংঘর্ষে নিহত ১
এলাবাবাসী জানান, গাড়িটির বিষয় পুলিশকে জানানো হয়। পুলিশ এসে গাড়ি থেকে গাড়ির কাগজপত্র, সংসদ সদস্য ও সিআইপি স্টিকার উদ্ধার করে। গাড়িটা ঝিনাইদহ-৪ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য আনোয়ারুল আজিম আনারের হতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে। কাগজপত্রে তার নাম রয়েছে।
প্রত্যক্ষদর্শী সাব্বির বলেন, “আমরা প্রথমে শুনতে পাই, রাজনীতিতে নিষিদ্ধ আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ও সাবেক শিক্ষা মন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদের গাড়ি রাখা আছে সাফিনা টাওয়ারের গ্যারেজে। পরে পুলিশে খবর দেন স্থানীয়রা। পুলিশ গাড়ি থেকে গাড়ির কাগজপত্র উদ্ধার করে। সংসদ সদস্যের স্টিকার উদ্ধার করেছে।”
তিনি বলেন, “এই গাড়ির চালক কুষ্টিয়া জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আজগার আলীর গাড়ি চালক ছিলেন একসময়। তিনিই গাড়ি থেকে কাগজপত্র ও স্টিকার দেন পুলিশকে। গাড়ির কাগজপত্র দেখে বোঝা যায় যে, গাড়ির মালিক ঝিনাইদহ-৪ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য আনোয়ারুল আজিম আনার। বিষয়টি তদন্ত করে ব্যবস্থা গ্রহণ করার দাবি জানাচ্ছি। এ ঘটনায় যারা জড়িত তাদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানাচ্ছি।”
প্রত্যক্ষদর্শী জুনায়েদ হোসাইন বলেন, “সাফিনা টাওয়ারে একটি ল্যান্ড ক্রুজার প্রাডো গাড়ি কয়েকমাস ধরে রাখা আছে বলে জানতে পারি। গাড়িটি গ্যারেজ থেকে বের করা হয় না, শুধুমাত্র মাঝেমধ্যে স্টার্ট দেওয়া হয়। সাফিনা টাওয়ারের গ্যারেজে গিয়ে দেখি অনেক দামি গাড়ি। সেটির ড্রাইভার আমাদের দেখে পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছিল। পরে ড্রাইভার একজনকে কল দেন। আমি তার সঙ্গে কথা বলেছি। কিন্তু উনি কোনো তথ্য দেননি।”
তিনি বলেন, “খবর পেয়ে পুলিশ আসে এবং গাড়ির কাগজপত্র উদ্ধার করে। গাড়ির কাগজপত্র লাইসেন্স এসব দেখে জানতে পারি গাড়িটা এমপি আনারের।”
স্থানীয়রা বলেন, জেনুইন লিফ কোম্পানি নামে একটা সিগারেট কোম্পানি ভবনের দ্বিতীয়, তৃতীয় ও চতুর্থ তলায় বাসা ভাড়া নিয়েছে। তারাই গাড়িটি রাখার ব্যবস্থা করেছে। এই গাড়ি কয়েকমাস ধরে এখানে রাখা হয়েছে।
বাসার কেয়ারটেকার আলমগীর হোসেন বলেন, “জেনুইন লিফ কোম্পানি দ্বিতীয়, তৃতীয় ও চতুর্থ তলায় বাসা ভাড়া নিয়েছে। সেখানে ফরেনাররা আসেন, থাকেন এবং খাওয়া দাওয়া করেন। তারাই গাড়িটা রাখার ব্যবস্থা করেছেন। জেনুইন লিফ কোম্পানির বেলাল স্যার জিএম এবং জাহিদ স্যার সিইও। এর বেশি আমরা কিছুই জানি না।”
গাড়ি চালক শান্ত বলেন, “পাঁচ বছর আগে আমি কুষ্টিয়া জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আজগার আলীর গাড়ির ড্রাইভার ছিলাম। এখন আর নেই। আমি জেনুইন লিফ কোম্পানির গাড়িচালক হিসাবে চাকরি করি। জিএম স্যার বেলাল ও সিইও জাহিদ স্যারের গাড়ি চালাই। তারা দুইজন আমাকে চাবি দিয়ে গাড়ি স্ট্যার্ট দিতে বলেন। জেনুইন লিফ টোব্যাকোর বেলাল ও জাহিদ স্যারের হুকুমে আমি গাড়ি স্ট্যার্ট দিয়েছি। গাড়ির মালিক কে? তা আমি জানি না। বেলাল স্যার আর জাহিদ স্যার সবকিছু জানেন। তাদের হুকুমে গাড়ি স্ট্যার্ট দিয়েছি। এ বিষয়ে আমি কিছুই জানি না। গাড়ি থেকে পুলিশ কাগজপত্র, লাইসেন্স ও স্টিকার উদ্ধার করেছে। সেখানে গাড়ির মালিকের নাম লেখা আছে। এই গাড়িটি আমি কখনো রাস্তায় চালাইনি।”
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ভবনের গার্ড বলেন, “উনারা গাড়ি এনে রাখেন। আমি তো জানি না যে গাড়িটা কার। আজকে শুনছি গাড়িটা এক সাবেক সংসদ সদস্যের। সিগারেট কোম্পানির অফিসের স্যাররা এই গাড়িটি রেখেছে কয়েক মাস আগে। গাড়িটা বাইরে বের করা হয় না সেভাবে। তবে মাঝেমধ্যে স্ট্যার্ট দেওয়া হয়। চালক শান্ত গাড়িটা স্ট্যার্ট দেন।”
এবিষয়ে কথা বলার জন্য সাফিনা টাওয়ারের মালিক, জেনুইন লিফ টোব্যাকোর সিইও জাহিদ ও জিএম বেলালের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করলেও তাদের পাওয়া যায়নি। তাদের অফিসে গিয়ে কেয়ার টেকার ও দারোয়ানকে ছাড়া কাউকে পাওয়া যায়নি।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, গাড়িটির রেজিস্ট্রেশন ও মালিকানা পত্রে আনোয়ারুল আজিম আনারের নাম উল্লেখ রয়েছে। সাফিনা টাওয়ারের ফ্ল্যাট মালিক ও ভাড়াটিয়ার চুক্তিপত্র অনুযায়ী মেহেরপুর জেলার গাংনী পৌরসভার বাঁশবাড়িয়া দক্ষিণপাড়ার বাসিন্দা মো.
মুস্তাফিজুর রহমান কুষ্টিয়ার দশ মাইল এলাকায় অবস্থিত তারা টোবাকো নামে একটি প্রতিষ্ঠানের শেয়ারহোল্ডার।
কুষ্টিয়া মডেল থানার ওসি মোশাররফ হোসেন বলেন, “ধারণা করা হচ্ছে গাড়িটি কলকাতায় খুন হওয়া ঝিনাইদহ-৪ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য আনোয়ারুল আজিম আনারের। গাড়িটির মালিকানার বিষয়ে অধিকতর নিশ্চিত হওয়ার জন্য বিষয়টি তদন্ত করে দেখা হচ্ছে। কারা কিভাবে গাড়িটি এখানে এনে রেখেছে সে বিষয়টিও তদন্ত করে দেখা হচ্ছে।”
ঢাকা/কাঞ্চন/মাসুদ
উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর উদ ধ র জ ন ইন ল ফ ক ম প ন গ ড় র ক গজপত র সদস য ও স তদন ত কর ব যবস থ ন বল ন এই গ ড় ভবন র
এছাড়াও পড়ুন:
ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় অটোরিকশা চলকদের ধর্মঘট চলছে, ভোগান্তি
ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় দ্বিতীয় দিনের মতো চলছে সিএনজিচালিত অটোরিকশা মালিক ও চালকদের ডাকা ধর্মঘট। সোমবার (২৮ জুলাই) সকাল থেকে তারা গাড়ি চলাচল বন্ধ রেখে আন্দোলন করছেন। ফলে ভোগান্তিতে পড়েছেন সাধারণ যাত্রীরা।
গত শনিবার (২৬ জুলাই) জেলা সিএনজিচালিত অটোরিকশা পরিবহন মালিক সমিতির জরুরি বৈঠকে ধর্মঘটের ডাক দেওয়া হয়।
আরো পড়ুন: ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় অটোরিকশার চালকদের কর্মবিরতি, যাত্রীদের দুর্ভোগ
আরো পড়ুন:
জেলা প্রশাসকের হস্তক্ষেপে চলাচল উপযোগী হলো সখিপুর-ভালুকা সড়ক
সড়কে গর্ত, চলাচলে দুর্ভোগ
সড়কে ট্রাফিক পুলিশের লাগাতার হয়রানি, সিএনজি অটোরিকশা আটক এবং ছাড়ানোর জন্য মোটা অংকের টাকা দাবির প্রতিবাদে ধর্মঘটের ডাক দেওয়া হয় বলে জানান সংশ্লিষ্টরা।
পথচারীরা জানান, আজ সকাল থেকে জেলার সিএনজিচালিত অটোরিকশা স্ট্যান্ডগুলো থেকে কোনো অটোরিকশা চলছে না। চালক ও মালিকরা স্ট্যান্ডে বসে ধর্মঘট কর্মসূচি পালন করছেন। জেলার বিভিন্ন স্থানে সড়কে অবরোধ সৃষ্টি করে যান চলাচলে বাধা দিচ্ছেন অটোরিকশাচালক ও মালিকরা। এ কারণে ভোগান্তিতে পড়েছেন সাধারণ যাত্রীরা। উপায় না পেয়ে অনেকেই পায়ে হেঁটে গন্তব্যে ছুটছেন। ব্যাটারিচালিত রিকশা ও ইজিবাইকে গন্তব্যে যেতে অতিরিক্ত ভাড়া দিতে হচ্ছে বলে অভিযোগ করেছেন যাত্রীরা।
জেলা সিএনজিচালিত অটোরিকশা শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি হেফজুল করিম জানান, দীর্ঘদিন ধরে অটোরিকশার লাইসেন্স দেওয়া বন্ধ রয়েছে। এ সুযোগে পুলিশ প্রতিনিয়ত গাড়ি আটকে হয়রানি করে। গাড়ি ছাড়ানোর জন্য মোটা অংকের টাকা দাবি করে ট্রাফিক পুলিশ। এ নিয়ে অভিযোগ জানিয়েও প্রতিকার পাওয়া যাচ্ছে না। এসব কারণে ধর্মঘটের ডাক দেওয়া হয়েছে। দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত ধর্মঘট চলবে।
গতকাল রবিবার ব্রাহ্মণবাড়িয়ার পুলিশ সুপার এহতেশামুল হক বলেছিলেন, ‘‘ট্রাফিক পুলিশ যানজট নিরসনে কাজ করে যাচ্ছে। যাদের কাগজপত্র নেই বা রেজিস্ট্রেশন ছাড়া চলছে, তাদের গাড়ি আটক করা হচ্ছে। কাগজপত্র আনলে ছেড়ে দেওয়া হচ্ছে। যাদের কাগজপত্র আছে, তারা নির্বিঘ্নে চলতে পারছেন।’’
তিনি আরো বলেন, ‘‘তারা চাচ্ছেন, তাদের কোনো গাড়ি যেন আমরা না ধরি। ট্রাফিক পুলিশ যেন কোনো ব্যবস্থা নিতে না পারে। এটা তো হয় না।’’
ঢাকা/মনিরুজ্জামান/মাসুদ