কুষ্টিয়া শহরের একটি বহুতল ভবনের পার্কিং জোনে একটি ল্যান্ড ক্রুজার প্রাডো ব্র্যান্ডের গাড়ির সন্ধান মিলেছে। কোটি টাকার গাড়িটি ঝিনাইদহ-৪ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য নিহত আনোয়ারুল আজীম আনারের বলে ধারণা করছেন পুলিশ ও স্থানীয়রা। কুষ্টিয়া পুলিশ লাইনসের সামনে অবস্থিত সাফিনা টাওয়ারের পার্কিং জোনে গাড়িটি রাখা ছিল। এমপির স্টিকার লাগানো দেখে লোকজনের সন্দেহ হলে তারা পুলিশে খবর দেয়।

গাড়ি থেকে গাড়ির কাগজপত্র, সংসদ সদস্য ও সিআইপি স্টিকার উদ্ধার করেছে পুলিশ। কালো কালারের গাড়িটার নম্বর ‘ঢাকা মেট্রো-ঘ ১২-৬০৬০’। এসব তথ্য নিশ্চিত করে কুষ্টিয়া মডেল থানার এসআই স্বপন বলেন, গাড়ির খবর পেয়ে আমরা ঘটনাস্থলে আসি। গাড়ি থেকে গাড়ির কাগজপত্র, সংসদ সদস্য ও সিআইপি স্টিকার উদ্ধার করা হয়েছে। ধারণা করা হচ্ছে, গাড়িটা ঝিনাইদহ-৪ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য আনোয়ারুল আজীম আনারের। বিষয়টি তদন্ত করে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

স্থানীয়রা বলেন, আমরা গাড়িটার খবর পাই। পরে বিষয়টি পুলিশকে জানানো হয়। পুলিশ তল্লাশি করে গাড়ির কাগজপত্র, সংসদ সদস্য ও সিআইপি স্টিকার পেয়েছে। গাড়িটা ঝিনাইদহ-৪ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য আনোয়ারুল আজীম আনারের বলে ধারণা করা হচ্ছে। কাগজপত্রে তার নাম রয়েছে। এই গাড়িটি বেশ কয়েকমাস আগে বাড়ির গ্যারেজে রাখা হয়।

প্রত্যক্ষদর্শী জুনায়েদ হোসাইন বলেন, সাফিনা টাওয়ার নিচে গাড়িটি কয়েক মাস ধরে রাখা ছিল। মাঝে মধ্যে গাড়িটি চালানো হতো। খবর পেয়ে আমরা বেশ কয়েকজন গ্যারেজে গেলে ড্রাইভার পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করে। পরে পুলিশ এসে তার সাথে কথা বলে। যারা এই গাড়ি রাখার ব্যবস্থা করেছে তাদের আইনের আওতায় আনতে হবে দ্রুত।

স্থানীয়রা বলেন, জেনুইন লিফ কোম্পানি নামের একটা সিগারেট কোম্পানি ২য়, ৩য় ও ৪র্থ তলা ভাড়া নিয়েছেন। তারাই গাড়িটা রাখার ব্যবস্থা করেছেন। এই গাড়িটি কয়েকমাস ধরে এখানে রাখা হয়েছে।

বাসার কেয়ারটেকার আলমগীর হোসেন বলেন, জেনুইন লিফ কোম্পানি নামের একটি তামাক প্রসেসিং কোম্পানি ২য়, ৩য় ও ৪র্থ তলায় বাসা ভাড়া নিয়েছে। ভেড়ামারা কোম্পানিটি নতুন একটি প্রসেসিং কারখানা করছে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, জেনুইন লিফ কোম্পানি কুষ্টিয়ার ভেড়ামারায় নতুন প্রসেসিং কারখানা করছে। কোম্পানিটির মালিক আব্দুস সবুর লিটন। তার বাড়ি চট্টগ্রামে। নরসিংদী জেলায় ‘তারা ট্যোবাকো’ নামে ব্যবসা পরিচালনা করেন। এছাড়া সাবেক শিক্ষামন্ত্রী নওফেল চৌধুরীর সাথে ‘বিজয় ট্যোবাকো’ নাম দিয়ে একসঙ্গে ব্যবসা করতেন ওই লিটন। ৫ আগস্টের আগে দৌলতপুর উপজেলায় তারা ও বিজয় ট্যোবাকোর নামে তামাক ক্রয় করতেন লিটন। বিএনপির দুই নেতার ছত্রছায়ায় লিটন নতুন করে ব্যবসা শুরু করেছেন ভেড়ামারায়। নওফেলের ঘনিষ্ঠ ব্যবসায়িক পার্টনার লিটন। গাড়িটি আওয়ামী লীগের কোনো নেতার মাধ্যমে লিটনের কোম্পানির লোকজন এখানে নিয়ে এসেছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। বিষয়টি তদন্ত করলে বেরিয়ে আসবে।

লিটনের ম্যানেজার হিসেবে কাজ করেন জাহিদ হোসেন নামের এক ব্যক্তি। এছাড়া বেলাল হোসেন নামের এক জিএম আছে। তাদের হেফাজতে গাড়িটি ছিল বলে স্থানীয়রা ধারণা করছেন।

গাড়িচালক শান্ত বলেন, আজ থেকে পাঁচ বছর আগে আমি কুষ্টিয়া জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আজগার আলীর গাড়ির ড্রাইভার ছিলাম। এখন আর নাই। আমি জেনুইন লিফ কোম্পানির গাড়িচালক হিসাবে চাকরি করি। জিএম স্যার বেলাল ও সিইও জাহিদ স্যারের গাড়ি চালাই। তারা দুজন আমাকে চাবি দিয়ে গাড়ি স্টার্ট দিতে বলেন। জেনুইন লিফ টোব্যাকোর বেলাল ও জাহিদ স্যারের হুকুমে আমি স্টার্ট দিয়েছি। গাড়ির মালিক কে- তা আমি জানি না। বেলাল স্যার আর জাহিদ স্যার সবকিছু জানে। গাড়ি থেকে পুলিশ কাগজপত্র, লাইসেন্স ও স্টিকার উদ্ধার করেছে। সেখানে গাড়ির মালিকের নাম লেখা আছে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ভবনের গার্ড বলেন, উনারা (জেনুইন লিফ) গাড়িটি এনে রেখেছেন। এতদিন ভাবতাম গাড়িটি তাদের নিজেদের। এখন শুনছি গাড়ির মালিক নাকি ঝিনাইদহের আনার। সিগারেট কোম্পানির অফিসের স্যাররা এই গাড়িটি রেখেছে বেশ কয়েক মাস আগে। গাড়িটা বাইরে বের করা হয় না সেভাবে। তবে মাঝেমধ্যে ইঞ্জিন চালু করা হয়।

এ বিষয়ে কুষ্টিয়া মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোশাররফ হোসেন বলেন, বিষয়টি তদন্ত করে দেখা হচ্ছে। এখন ছুটি চলছে। অফিস খুললে বিআরটিএ থেকে গাড়ির বিষয়ে তথ্য চাওয়া হবে। এরপরই নিশ্চিত হওয়া যাবে আসলে গাড়িটির মালিক আনার নাকি অন্য কেউ।

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: স ব ক এমপ ঝ ন ইদহ জ ন ইন ল ফ ক ম প ন ক গজপত র ঝ ন ইদহ এই গ ড় ন বল ন ব যবস ব ষয়ট

এছাড়াও পড়ুন:

ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় অটোরিকশা চলকদের ধর্মঘট চলছে, ভোগান্তি 

ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় দ্বিতীয় দিনের মতো চলছে সিএনজিচালিত অটোরিকশা মালিক ও চালকদের ডাকা ধর্মঘট। সোমবার (২৮ জুলাই) সকাল থেকে তারা গাড়ি চলাচল বন্ধ রেখে আন্দোলন করছেন। ফলে ভোগান্তিতে পড়েছেন সাধারণ যাত্রীরা।

গত শনিবার (২৬ জুলাই) জেলা সিএনজিচালিত অটোরিকশা পরিবহন মালিক সমিতির জরুরি বৈঠকে ধর্মঘটের ডাক দেওয়া হয়।

আরো পড়ুন: ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় অটোরিকশার চালকদের কর্মবিরতি, যাত্রীদের দুর্ভোগ

আরো পড়ুন:

জেলা প্রশাসকের হস্তক্ষেপে চলাচল উপযোগী হলো সখিপুর-ভালুকা সড়ক

সড়কে গর্ত, চলাচলে দুর্ভোগ

সড়কে ট্রাফিক পুলিশের লাগাতার হয়রানি, সিএনজি অটোরিকশা আটক এবং ছাড়ানোর জন্য মোটা অংকের টাকা দাবির প্রতিবাদে ধর্মঘটের ডাক দেওয়া হয় বলে জানান সংশ্লিষ্টরা।

পথচারীরা জানান, আজ সকাল থেকে জেলার সিএনজিচালিত অটোরিকশা স্ট্যান্ডগুলো থেকে কোনো অটোরিকশা চলছে না। চালক ও মালিকরা স্ট্যান্ডে বসে ধর্মঘট কর্মসূচি পালন করছেন। জেলার বিভিন্ন স্থানে সড়কে অবরোধ সৃষ্টি করে যান চলাচলে বাধা দিচ্ছেন অটোরিকশাচালক ও মালিকরা। এ কারণে ভোগান্তিতে পড়েছেন সাধারণ যাত্রীরা। উপায় না পেয়ে অনেকেই পায়ে হেঁটে গন্তব্যে ছুটছেন।  ব্যাটারিচালিত রিকশা ও ইজিবাইকে গন্তব্যে যেতে অতিরিক্ত ভাড়া দিতে হচ্ছে বলে অভিযোগ করেছেন যাত্রীরা।

জেলা সিএনজিচালিত অটোরিকশা শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি হেফজুল করিম জানান, দীর্ঘদিন ধরে অটোরিকশার লাইসেন্স দেওয়া বন্ধ রয়েছে। এ সুযোগে পুলিশ প্রতিনিয়ত গাড়ি আটকে হয়রানি করে। গাড়ি ছাড়ানোর জন্য মোটা অংকের টাকা দাবি করে ট্রাফিক পুলিশ। এ নিয়ে অভিযোগ জানিয়েও প্রতিকার পাওয়া যাচ্ছে না। এসব কারণে ধর্মঘটের ডাক দেওয়া হয়েছে। দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত ধর্মঘট চলবে।

গতকাল রবিবার ব্রাহ্মণবাড়িয়ার পুলিশ সুপার এহতেশামুল হক বলেছিলেন, ‘‘ট্রাফিক পুলিশ যানজট নিরসনে কাজ করে যাচ্ছে। যাদের কাগজপত্র নেই বা রেজিস্ট্রেশন ছাড়া চলছে, তাদের গাড়ি আটক করা হচ্ছে। কাগজপত্র আনলে ছেড়ে দেওয়া হচ্ছে। যাদের কাগজপত্র আছে, তারা নির্বিঘ্নে চলতে পারছেন।’’ 

তিনি আরো বলেন, ‘‘তারা চাচ্ছেন, তাদের কোনো গাড়ি যেন আমরা না ধরি। ট্রাফিক পুলিশ যেন কোনো ব্যবস্থা নিতে না পারে। এটা তো হয় না।’’ 

ঢাকা/মনিরুজ্জামান/মাসুদ

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • জমিজমার বিরোধে থানায় সালিসে গিয়ে ‘রাজনৈতিক মামলায়’ গ্রেপ্তার যুবক
  • মৎস্য অধিদপ্তরের দশম গ্রেডের মৌখিক পরীক্ষার সময়সূচি প্রকাশ
  • ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় অটোরিকশা চলকদের ধর্মঘট চলছে, ভোগান্তি