ফেসবুকে মহানবীকে কটূক্তির অভিযোগে বাড়িতে গিয়ে হুমকি, মধ্যরাতে ঢাবি ছাত্রের আত্মহত্যা
Published: 10th, June 2025 GMT
মানিকগঞ্জের সিঙ্গাইর উপজেলায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদের শিক্ষার্থী শাকিল আহমেদ (২৪) আত্মহত্যা করেছেন বলে তাঁর পরিবার জানিয়েছে। আজ মঙ্গলবার সকালে উপজেলার দক্ষিণ জামশা গ্রামের নিজ বাড়ি থেকে তাঁর লাশ উদ্ধার করে পুলিশ।
শাকিল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদের শেষ বর্ষের শিক্ষার্থী ছিলেন। তিনি দক্ষিণ জামশা গ্রামের নাসিরুদ্দিন আহমেদের ছেলে।
স্বজনেরা জানিয়েছেন, ফেসবুকে মহানবী হজরত মুহাম্মদকে (সা.
তবে পুলিশ বলছে, শাকিল ফেসবুকে কটূক্তিমূলক মন্তব্য করেছিলেন। পরে সেটি ভাইরাল হলে পারিবারিক মানসম্মান ও আত্মোপলব্ধির কারণে আত্মহত্যা করেছেন।
সিঙ্গাইর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) তৌফিক আজম বলেন, ওই শিক্ষার্থী তাঁর নিজ ফেসবুক আইডি থেকে হজরত মুহাম্মদ (সা.) ও তাঁর স্ত্রীদের নিয়ে কটূক্তির মন্তব্য করেন। পুরোনো ওই মন্তব্য সম্প্রতি ভাইরাল হয়। প্রাথমিক তদন্তে দেখা গেছে, তিনি আত্মোপলব্ধি ও পারিবারিক মানসম্মানের কারণে আত্মহত্যা করেছেন। ওসি জানান, আজ সকালে তাঁর লাশ উদ্ধার করে মানিকগঞ্জ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গে পাঠানো হয়েছে। এ ঘটনায় একটি অপমৃত্যুর মামলা হয়েছে।
আত্মহত্যার আগে গতকাল সোমবার রাতে ফেসবুকে চারটি পোস্ট দিয়েছিলেন শাকিল। সর্বশেষ পোস্টে তিনি লেখেন, ‘আমি নাস্তিক নই, গ্রামের সবাই আমাকে নাস্তিক বলছে। আমি জানি আর আমার আল্লাহ জানে, আমি নবী মুহাম্মদকে কোনো কটূক্তি করিনি। আমাকে নিয়ে আমার বাবা অনেক গর্ব করত, গ্রামের সবাই আমাকে অনেক সম্মান করত। আজ আমি আমার নিজের আপন মানুষের কাছে আমার সম্মান হারিয়েছি। আগামীকাল আমার বাবাকে সবাই গালি দিবে, আমার মাকে সবাই অসম্মান করবে, এই লজ্জা আমি কখনো সহ্য করতে পারব না। একটা ছেলে হয়ে নিজের বাবা মায়ের মানসম্মান আমি এভাবে নষ্ট করে দুনিয়ায় বেঁচে থাকতে পারব না। কোনো দিন আমি গ্রামে মাথা তুলে চলতে পারব না। আত্মহত্যা মহাপাপ আমি জানি। আমি অনেক পাপ করেছি, আজ আর একটা শেষ পাপের জন্য প্রস্তুত হচ্ছি।’
সিঙ্গাইর থানা ও স্থানীয় সূত্র জানায়, সাত-আট মাস আগে শাকিল ওই মন্তব্য করেন। পরে তা মুছে ফেলেন। গতকাল রাতে সেটি আবার ভাইরাল হয়। এরপর রাতে আশপাশের এলাকার কয়েকজন তাঁর বাড়িতে গিয়ে তাঁকে ও পরিবারকে হুমকি দেন। এরপর দিবাগত রাত দুইটার দিকে নিজ ঘরে গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করেন শাকিল।
দক্ষিণ জামশা বাজারের দোকানি ও শাকিলের প্রতিবেশী দিদার আলী বলেন, দীর্ঘদিন আগে মহানবী হজরত মুহাম্মদকে (সা.) নিয়ে শাকিল কটূক্তিকর মন্তব্য করেন। তবে ভুল বুঝতে পেরে কিছুদিন পর তা মুছে ফেলেন। পরে ফেসবুকে তাঁর এক বন্ধু ওই মন্তব্য আবার ভাইরাল করে দেন। এতে লোকজন তাঁদের হুমকি দিচ্ছিলেন।
ঘটনার বিষয়ে জানতে আজ দুপুরে শাকিলের বাবা নাসিরুদ্দিন আহমেদের মুঠোফোন নম্বরে কল করা হলে তা ধরেন শাকিলের খালাতো বোন মুক্তা আক্তার। তিনি বলেন, গতকাল রাত ৯টার দিকে ফেসবুকের ওই কমেন্টকে কেন্দ্র করে দক্ষিণ জামশা গ্রামসহ আশপাশের গ্রামের কয়েক শ লোক শাকিলদের বাড়িতে গিয়ে পরিবারের সদস্যদের বিভিন্ন হুমকি দেন। এরপর রাত দুইটার দিকে বাড়িতে নিজ ঘরের ভেতর ফাঁস নিয়ে শাকিল আত্মহত্যা করেন।
উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: পর ব র কর ছ ন ফ সব ক
এছাড়াও পড়ুন:
সাংবাদিক পরিচয়ে হোটেলে তল্লাশি চালানো যুবক গ্রেপ্তার
চট্টগ্রামে সাংবাদিক পরিচয়ে আবাসিক হোটেলে তল্লাশি চালানো যুবককে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। সোমবার রাত ১০টার দিকে নগরের কোতোয়ালি থানা এলাকা থেকে তাকে গ্রেপ্তার করে চান্দগাঁও থানা পুলিশ।
গ্রেপ্তার এম হান্নান রহিম তালুকদার তার ফেসবুক ওয়ালে নিজেকে কথিত দৈনিক চট্টগ্রাম সংবাদের সম্পাদক, সিএসটিভি২৪ চ্যানেলের চেয়ারম্যান ও চট্টগ্রাম প্রেসক্লাবের সদস্য পরিচয় দিয়েছেন। আরেকটি পোস্টারে তিনি চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা যুবদলের সদস্য সচিব প্রার্থী ও তারেক রহমান রাজনৈতিক দর্শন চর্চা ও গবেষণা কেন্দ্রের চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলার আহ্বায়ক। তবে সোমবার চট্টগ্রাম প্রেসক্লাবের সদস্য সচিব জাহিদুল করিম কচি বিবৃতি দিয়ে জানিয়েছেন, হান্নান রহিম তালুকদার প্রেসক্লাবের সদস্য নন।
চান্দগাঁও থানার ওসি আফতাব উদ্দিন জানান, ৫ জুন রাতে নগরের বহদ্দারহাট পপুলার গেস্ট হাউজ নামে একটি আবাসিক হোটেলে সাংবাদিক পরিচয়ে ঢুকে চাঁদা দাবি করে এবং হোটেল কক্ষে তল্লাশি চালায় হান্নান রহিম তালুকদার। চাঁদা না দিলে হোটেল ব্যবসা বন্ধ করে দেওয়ার হুমকি দেন তিনি। এ ঘটনায় সোমবার হোটেলটির কর্মচারী জাকির হুসেন বাদি হয়ে হান্নান রহিম তালুকদারের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেছেন। এরপর অভিযান চালিয়ে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তার বিরুদ্ধে এর আগেও বিভিন্ন অভিযোগে তিনটি মামলা রয়েছে।
শনিবার দুপুরে হান্নান রহিম তালুকদার নিজ ফেসবুক ওয়ালে আবাসিক হোটেলে তল্লাশি চালানোর একটি ভিডিও আপলোড করেন। সেটি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। সাংবাদিক পরিচয়ে এমন তল্লাশি চালানো নিয়ে প্রশ্ন তুলেন নেটিজেনরা। তা নিয়ে চলে সমালোচনা।
ভিডিওতে দেখা গেছে, হান্নান রহিম তালুকদার নগরের বহদ্দারহাট পপুলার গেস্ট হাউজে ভিডিও ক্যামেরা নিয়ে ঢোকেন। রিসেপশনে গিয়ে অতিথি কারা কারা আছেন হোটেলের রেজিস্টার দেখে যাচাই করেন। এরপর বিভিন্ন হোটেলের কক্ষে কক্ষে গিয়ে অবস্থানরত অতিথিদের নানা প্রশ্ন করে জেরা করেন। হোটেলে কেন অবস্থান করছেন? চট্টগ্রামে কেন এসেছেন? স্বামী-স্ত্রীর প্রমাণ আছেন কিনা? ১৫ মিনিট ৪৪ সেকেন্ডের এই ভিডিওতে এসব প্রশ্ন করতে দেখা যায়।