চাটমোহরের ডিবিগ্রাম ইউনিয়নের খৈরাশ গ্রামে হামলার ঘটনায় মামলা করে বিপদে পড়েছেন বাদী। হামলাকারী রাশেদুল ইসলাম রবির স্বজনেরা রীতিমতো টিকটক করে হুমকি দিচ্ছে বলে অভিযোগ ভুক্তভোগী পরিবারের।
অভিযোগে জানা গেছে, গত ২৬ মে রাত ১১টার দিকে খৈরাশ দক্ষিণপাড়ার নাজিম উদ্দীনের মুদি দোকানের সামনে বাঁশের মাচার ওপর বসেছিলেন শান্ত মোল্লা ও রাহুল মোল্লা। এ সময় একই গ্রামের রাশেদুল ইসলাম রবি তাদের সেখান থেকে উঠে যেতে বলেন। শান্ত না ওঠায় রবি গালাগাল শুরু করেন। চিৎকার চেঁচামেচি শুনে শান্তর বড় ভাই ফরিদ মোল্লা সেখানে যান। এ সময় উভয়পক্ষের মধ্যে ধাক্কাধাক্কি হয়। একপর্যায়ে রবি কাছে থাকা ধারালো ছুরি দিয়ে শান্ত, রাহুল ও ফরিদকে এলোপাতাড়ি আঘাত করে।
গুরুতর আহত তিনজনকে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়। পরে অবস্থার অবনতি হলে তাদের রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে স্থানান্তর করেন চিকিৎসক। ছুরিকাঘাত করে পালানোর সময় রবিকে এলাকাবাসী আটক করে। পরে ৯৯৯ ফোন দিলে পুলিশ গিয়ে তাকে আটক করে থানায় নিয়ে যায়। এ ঘটনায় আহত শান্তর বাবা পলাশ মোল্লা বাদী হয়ে ২৭ মে থানায় রবিকে আসামি করে মামলা করেন। ওই মামলায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে রবিকে আদালতে সোপর্দ করে পুলিশ।
হুমকি দেওয়ার অভিযোগ অস্বীকার করেছেন রবির মামা হেলাল উদ্দিন ও চাচা রোজিম প্রামানিক।
টিকটক করে হুমকি দেওয়ার বিষয়ে কথা বলতে রবির চাচাত ভাই সাগরের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করা হয়। তাঁকে পাওয়া যায়নি। তাঁর ব্যবহৃত মোবাইল ফোনে কল দিয়ে বন্ধ পাওয়া যায়।
থানার পরিদর্শক (তদন্ত) নয়ন কুমার সরকার বলেন, আসামিকে গ্রেপ্তার করে জেলহাজতে পাঠানো হয়েছে। হুমকির বিষয়টি কেউ জানায়নি। ভুক্তভোগীরা জিডি করলে আইনগত সহায়তা দেব।
.উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: প বন
এছাড়াও পড়ুন:
দ্বিজাতিতত্ত্বের কবর দিয়েই বাংলাদেশের জন্ম, এখানে সাম্প্রদায়িকতার জায়গা নেই: জেড আই খান পান্না
মোহাম্মদ আলী জিন্নাহর দ্বিজাতিতত্ত্বের কবর দিয়েই বাংলাদেশের জন্ম হয়েছে মন্তব্য করে সুপ্রিম কোর্টের জ্যেষ্ঠ আইনজীবী জেড আই খান পান্না বলেছেন, এই দেশে সাম্প্রদায়িকতার কোনো স্থান নেই।
আজ শুক্রবার সুপ্রিম কোর্ট বারের হলরুমে ‘বাংলাদেশে মানবাধিকার সংকট ও আইনি প্রতিকার পাওয়ার পথ’ শীর্ষক এক সেমিনারে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন জেড আই খান পান্না। সেমিনারটির আয়োজন করে আন্তর্জাতিক সংস্থা হিউম্যান রাইটস কংগ্রেস ফর বাংলাদেশ মাইনোরিটিস (এইচআরসিবিএম), বাংলাদেশ চ্যাপ্টার।
বক্তব্যে জেড আই খান পান্না বলেন, ‘এখানে সংখ্যালঘুর কথা বলা হচ্ছে। একজন মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে এখন আমি সবচেয়ে বেশি সংখ্যালঘু। আজ মুক্তিযোদ্ধার গলায় জুতার মালা দেখি, জুতা দিয়ে বাড়ি দিতে দেখি, কিন্তু কিছু করতে পারি না। তাই আমি সবচেয়ে বড় অসহায়।’
এসব কথা বলতে বলতে সুপ্রিম কোর্টের জ্যেষ্ঠ আইনজীবী জেড আই খান পান্না কেঁদে ফেলেন। কান্নাজড়িত কণ্ঠে তিনি বলেন, জীবনে কখনো জেনে-বুঝে অন্যায়ের সঙ্গে আপস করেননি। যাঁরা মুক্তিযুদ্ধকে ধারণ করেন, তাঁদের অন্যায়ের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানোর আহ্বান জানান তিনি।
জেড আই খান পান্না আরও বলেন, ৩০ লাখ শহীদ আর ২ লাখ মা-বোনের ইজ্জতের বিনিময়ে বাংলাদেশ স্বাধীন হয়েছে, কারও সঙ্গে এর তুলনা চলে না। এটা সাম্প্রদায়িকতার দেশ না। সংবিধানে যেন কেউ হাত না দেয়। সরকারের অনেকেই বিদেশি হয়েও স্বদেশি ভাব দেখাচ্ছেন।
সেমিনারে বিশেষ অতিথির বক্তব্যে সুপ্রিম কোর্টের জ্যেষ্ঠ আইনজীবী সুব্রত চৌধুরী বলেন, বাংলাদেশে সংখ্যালঘুদের মৌলিক অধিকার ও মানবাধিকার যেন নিঃশেষ হয়ে গেছে। সমাজে ন্যায়বিচার বা সুবিচার পাওয়ার কথা থাকলেও তা মিলছে না। সংখ্যালঘুদের ওপর হামলার বিচার হয় না। কেউ কেউ ধরা পড়লেও পরে বেরিয়ে যায়।
সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী সুমন কুমার রায় বলেন, সব সরকারের আমলেই বাংলাদেশের সংখ্যালঘুরা নির্যাতিত। বর্তমান নিরপেক্ষ অন্তর্বর্তী সরকারের আমলেও সবচেয়ে বেশি উপেক্ষিত সংখ্যালঘু জনগোষ্ঠী। সংস্কার কমিশনে সংখ্যালঘুদের কোনো প্রতিনিধিত্ব নেই। রংপুরসহ বিভিন্ন এলাকায় হামলা হলেও সরকারের কোনো প্রতিক্রিয়া আসে না, এমনকি দুঃখও প্রকাশ করে না।
গত বছরের ৫ আগস্টের পর সংখ্যালঘুদের ওপর নির্যাতনের প্রেক্ষিতে প্রতিবাদ শুরু হলে তা দমন করতেই ষড়যন্ত্র শুরু হয়েছে উল্লেখ করে সুমন কুমার দাবি করেন, বাংলাদেশ সম্মিলিত সনাতনী জাগরণ জোটের মুখপাত্র চিন্ময় কৃষ্ণ দাস ব্রহ্মচারীকে মিথ্যা মামলায় গ্রেপ্তার করা হয়েছে। সনাতনী সম্প্রদায়ের বাক্স্বাধীনতা বন্ধ করতে, নেতৃত্ব দমন করতে এসব করা হচ্ছে।
সেমিনারে সভাপতিত্ব করেন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী জে কে পাল। সঞ্চালনায় ছিলেন এইচআরসিবিএমের বাংলাদেশ চ্যাপটারের আহ্বায়ক লাকি বাছাড়। সেমিনারে আরও বক্তব্য দেন সুপ্রিম কোর্টের জ্যেষ্ঠ আইনজীবী মনজিল মোরশেদ ও মো. গোলাম মোস্তফা।