শরীয়তপুরের নড়িয়ায় আবু সিদ্দিক ঢালী (৫৫) নামের এক বিএনপি কর্মীকে কুপিয়ে হত্যার অভিযোগ উঠেছে। গত বৃহস্পতিবার রাত ৯টার দিকে উপজেলার চান্দনী গ্রামে এ হামলার ঘটনা ঘটে। গুরুতর অবস্থায় তাঁকে প্রথমে শরীয়তপুর সদর হাসপাতাল ও পরে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হয়। শুক্রবার সকালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তাঁর মৃত্যু হয়। 

নিহত আবু সিদ্দিক ঢালী বিএনপির রাজনীতির সঙ্গে জড়িত ছিলেন। ওই এলাকার মিন্টু ছৈয়াল ও তার অনুসারীদের সঙ্গে দীর্ঘদিন ধরে বিরোধ চলছিল সিদ্দিকের। মিন্টু সাবেক আইজিপি শহীদুল হক ও তাঁর ভাই সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান ইসমাইল হকের ঘনিষ্ঠ হিসেবে এলাকায় পরিচিত। 

স্থানীয়রা জানান, বৃহস্পতিবার রাতে নদীপার থেকে বাড়ি ফেরার পথে সিদ্দিক ঢালীর ওপর অতর্কিত হামলা চালায় মিন্টু ছৈয়াল ও তার সহযোগীরা। দেশীয় অস্ত্রের আঘাতে তিনি গুরুতর আহত হন। পরে স্থানীয়রা তাঁকে উদ্ধার করে শরীয়তপুর সদর হাসপাতালে নেন। উন্নত চিকিৎসার জন্য সেখান থেকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হলে শুক্রবার সকালে তাঁর মৃত্যু হয়।

ভোজেশ্বর ইউনিয়ন যুবদলের সভাপতি জুলহাস ঢালী বলেন, আমার ভাইকে মিন্টু ছৈয়াল ও তার লোকজন পরিকল্পিতভাবে হত্যা করেছে। আমরা হত্যাকারীদের ফাঁসি চাই। 
বগুড়ায় ব্যবসায়িক দ্বন্দ্বে বিদ্যুৎ শেখ (৩৮) নামে একজনকে ছুরিকাঘাতে হত্যা করা হয়েছে। শুক্রবার বিকেলে শহরের কাটনারপাড়া এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। নিহত বিদ্যুৎ বৃন্দাবন দক্ষিণপাড়া এলাকার দুলাল শেখের ছেলে এবং এলাকায় অটো গ্যারেজ ব্যবসায়ী ছিলেন।

পটুয়াখালীর বাউফলে জমি নিয়ে বিরোধকে কেন্দ্র করে দু’পক্ষের সংঘর্ষে আহত রহিম জোমাদ্দার (৫৫) চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা গেছেন। গত বৃহস্পতিবার রাতে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তাঁর মৃত্যু হয়। স্থানীয়রা জানান, চন্দ্রদ্বীপ ইউনিয়নের চর ওডেল গ্রামের কামাল হাওলাদার ও রহিম জোমাদ্দারের মধ্যে জমি নিয়ে বিরোধ চলে আসছে। গত বুধবার দুপুরে এ নিয়ে বাগ্‌বিতণ্ডার এক পর্যায়ে দু’পক্ষে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। 

নড়াইলের লোহাগড়ায় সালমা আক্তার (৩০) নামে এক গৃহবধূকে শ্বাসরোধে হত্যার অভিযোগ উঠেছে তাঁর স্বামীর বিরুদ্ধে। ঘটনার পর স্বামী শহিদুল পলাতক রয়েছেন। তিনি উপজেলার ডহরপাড়া গ্রামের সালাম মোল্যার ছেলে এবং সালমা আক্তার গাছবাড়িয়া গ্রামের সাইদুর রহমানের মেয়ে। নিহতের পরিবারের দাবি, পারিবারিক ও দাম্পত্য কলহের কারণে সালমাকে শ্বাসরোধে হত্যা করে স্বামী পালিয়ে গেছে। 

এ ছাড়া চট্টগ্রামের ফটিকছড়িতে তাসনুবা আকতার চাঁদনী (১৮) নামে এক নববধূর ঝুলন্ত মরদেহ উদ্ধার করেছে পুলিশ। এ ঘটনার পর থেকে তার স্বামীসহ শ্বশুরবাড়ির লোকজন পলাতক। গত বৃহস্পতিবার রাতে উপজেলার পাইন্দং ইউনিয়নের বদু তালুকদার বাড়ি থেকে মরদেহ উদ্ধার করা হয়। নিহত চাঁদনীর নানা আরিফুর রহমান মিয়া বলেন, বিয়ের পর থেকেই তাঁর স্বামী ও শ্বশুরবাড়ির লোকজন তাকে প্রায়ই মারধর করত। তারা আমার নাতনিকে মেরে লাশটি ওড়না দিয়ে ঝুলিয়ে পালিয়ে গেছে। 

এদিকে নোয়াখালী সদরে চার বছরের মেয়েকে নিয়ে গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করেছেন এক নারী। এ সময় পুলিশ ঘর থেকে একটি চিরকুট উদ্ধার করেছে। পারিবারিক কলহের জের ধরে এ ঘটনা ঘটেছে বলে জানিয়েছে পুলিশ। গত বৃহস্পতিবার বিকেলে উপজেলার কাদির হানিফ ইউনিয়নের ৯ নম্বর ওয়ার্ডের দরবেশপুর গ্রামের মান্নানের বাড়িতে এ ঘটনা ঘটে। 

নিহতরা হলেন– মো.

রুবেলের স্ত্রী রাবেয়া বসরী রাহী (২৭) ও তাঁর মেয়ে মাইশা (৪)। এ ঘটনায় নিহত গৃহবধূর মা বাদী হয়ে শুক্রবার রাবেয়ার স্বামীর বিরুদ্ধে সুধারাম মডেল থানায় মামলা করলে পুলিশ অভিযান চালিয়ে তাকে গ্রেপ্তার করে। 

(প্রতিবেদনে তথ্য দিয়েছেন সংশ্লিষ্ট ব্যুরো ও প্রতিনিধি)

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: শ ক রব র উপজ ল র অবস থ য় এ ঘটন

এছাড়াও পড়ুন:

অধ্যাপক ইউনূসের সংস্কারের অঙ্গীকারের এক বছর পরেও কারাগারে সাংবাদিকেরা: সিপিজে

সাংবাদিক ফারজানা রুপা চলতি বছরের ৫ মার্চ ঢাকার একটি জনাকীর্ণ আদালতে আইনজীবী ছাড়াই দাঁড়িয়েছিলেন। বিচারক তাঁর বিরুদ্ধে আরেকটি হত্যা মামলা নথিভুক্ত করার প্রক্রিয়া শুরু করছিলেন। ইতিমধ্যে অন্য মামলায় কারাগারে থাকা এই সাংবাদিক শান্তভাবে জামিনের আবেদন জানান। ফারজানা বলেন, ‘ইতিমধ্যে আমার বিরুদ্ধে এক ডজন মামলা দেওয়া হয়েছে। আমি একজন সাংবাদিক। আমাকে ফাঁসানোর জন্য একটি মামলাই যথেষ্ট।’

বিশ্বজুড়ে সাংবাদিকদের অধিকার রক্ষায় কাজ করা আন্তর্জাতিক সংগঠন কমিটি টু প্রটেক্ট জার্নালিস্টসের (সিপিজে) এক নিবন্ধে এসব কথা বলা হয়েছে। এতে বলা হয়, বেসরকারি একাত্তর টেলিভিশনের সাবেক প্রধান প্রতিবেদক ফারজানা রুপার বিরুদ্ধে ৯টি হত্যা মামলা রয়েছে। আর তাঁর স্বামী চ্যানেলটির সাবেক বার্তাপ্রধান শাকিল আহমেদের নামে রয়েছে আটটি হত্যা মামলা।

এক বছর আগে ছাত্রদের নেতৃত্বে কয়েক সপ্তাহের বিক্ষোভের পর পদত্যাগ করে দেশ থেকে পালিয়ে যান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ওই বিক্ষোভ চলাকালে দুজন সাংবাদিক নিহত হন। শেখ হাসিনার পদত্যাগ ও দেশ ছাড়ার পর বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের দায়িত্ব নেন নোবেল বিজয়ী অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস।

অধ্যাপক ইউনূস গণমাধ্যম সংস্কারের প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। শেখ হাসিনা সরকারের অধীন সাংবাদিকদের লক্ষ্যবস্তু করতে ব্যবহৃত সাইবার নিরাপত্তা আইন বাতিল করা হয়েছে। কিন্তু ২০২৪ সালের নভেম্বরে ডেইলি স্টার পত্রিকাকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে অধ্যাপক ইউনূস বলেছিলেন, সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে তাড়াহুড়ো করে হত্যার অভিযোগ আনা হচ্ছে। তিনি আরও বলেছিলেন, সরকার তখন থেকে এ ধরনের পদক্ষেপ বন্ধ করে দিয়েছে। মামলাগুলো পর্যালোচনা করার জন্য একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে।

কিন্তু প্রায় এক বছর পর এখনো সাংবাদিক ফারজানা রুপা, শাকিল আহমেদ, শ্যামল দত্ত ও মোজাম্মেল হক বাবু কারাগারে আছেন। হত্যায় উসকানি দেওয়ার অভিযোগে পৃথক মামলায় তাঁদের গ্রেপ্তার করা হয়েছিল। বিগত সরকারের প্রতি সহানুভূতিশীল হিসেবে ব্যাপকভাবে পরিচিত সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে এ ধরনের অভিযোগের বারবার ব্যবহারকে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত সেন্সরশিপ বলেই মনে হচ্ছে।

এ ধরনের আইনি অভিযোগ ছাড়াও সিপিজে সাংবাদিকদের ওপর শারীরিক হামলা, রাজনৈতিক কর্মীদের কাছ থেকে হুমকি এবং নির্বাসনের ঘটনা নথিভুক্ত করেছে। বাংলাদেশের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল কমপক্ষে ২৫ জন সাংবাদিকের বিরুদ্ধে গণহত্যার অভিযোগে তদন্ত করছে। এই অভিযোগ সাবেক শেখ হাসিনা সরকারের সঙ্গে যুক্ত ব্যক্তিদের লক্ষ্যবস্তু করতে ব্যবহৃত হয়ে আসছে।

সিপিজের আঞ্চলিক পরিচালক বেহ লিহ ই বলেন, ‘চারজন সাংবাদিককে বিশ্বাসযোগ্য প্রমাণ ছাড়াই এক বছর ধরে কারাগারে আটকে রাখা অন্তর্বর্তী সরকারের সংবাদপত্রের স্বাধীনতা রক্ষার ঘোষিত প্রতিশ্রুতিকে দুর্বল করে।’ তিনি আরও বলেন, ‘প্রকৃত সংস্কার মানে অতীত থেকে বেরিয়ে আসা, এর অপব্যবহারের পুনরাবৃত্তি নয়। যেহেতু আগামী মাসগুলোতে দেশে নির্বাচন হতে চলেছে, তাই সব রাজনৈতিক দলকে সাংবাদিকদের খবর প্রকাশের অধিকারকে অবশ্যই সম্মান জানাতে হবে।’

আইনি নথি ও প্রতিবেদন নিয়ে সিপিজের এক পর্যালোচনায় দেখা গেছে, এফআইআর নথিভুক্ত হওয়ার অনেক পর সাংবাদিকদের নাম প্রায়ই এতে যুক্ত করা হয়। মে মাসে জাতিসংঘের বিশেষজ্ঞরা উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন, গত বছরের বিক্ষোভের পর ১৪০ জনের বেশি সাংবাদিকের বিরুদ্ধে হত্যার অভিযোগ আনা হয়েছে।

শ্যামল দত্তের মেয়ে শশী সিপিজেকে বলেন, তাঁর বাবার বিরুদ্ধে এখন কতগুলো মামলা চলছে, পরিবার তার হিসাব রাখতে পারেনি। তাঁরা অন্তত ছয়টি হত্যা মামলার কথা জানেন, যেখানে শ্যামল দত্তের নাম আছে। মোজাম্মেল বাবুর পরিবার ১০টি মামলার কথা জানে। ফারজানা রুপা ও শাকিল আহমেদের পরিবার সিপিজেকে জানিয়েছে, তারা পাঁচটি মামলার এফআইআর পাননি, যেখানে একজন বা অন্য সাংবাদিকের নাম উল্লেখ করা হয়েছে। এর মানে হলো তাঁদের কেউই জামিনের আবেদন করতে পারছেন না।

এ বিষয়ে বক্তব্য জানতে প্রধান উপদেষ্টার প্রেসসচিব শফিকুল আলম ও পুলিশের মুখপাত্র এনামুল হক সাগরকে ই–মেইল করে সিপিজে। তবে তাঁরা সাড়া দেননি বলে সিপিজের নিবন্ধে উল্লেখ করা হয়।

সম্পর্কিত নিবন্ধ