রংপুরে গৃহবধূকে পুড়িয়ে হত্যার অভিযোগ, মামলা করতে ১২ ঘণ্টা ধরে থানায় পরিবার
Published: 14th, June 2025 GMT
রংপুরে যৌতুকের টাকার জন্য এক গৃহবধূর শরীরে আগুন দিয়ে হত্যার অভিযোগ উঠেছে স্বামীর বিরুদ্ধে। রাজধানীর জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে চার দিন চিকিৎসাধীন থাকার পর গতকাল শুক্রবার সকালে ওই গৃহবধূ মারা যান।
নিহত গৃহবধূর নাম রেজওয়ানা দিল আফরোজ। তাঁর বাবার নাম রেজাউল করিম। বাবার বাড়ি রংপুরের হারাগাছ থানার মধ্য কাচু বকুলতলায়। গৃহবধূর বাবার অভিযোগ, যৌতুক না দেওয়ায় তাঁর মেয়ের শরীরে আগুন দেন জামাতা। মেয়ের মৃত্যুর ২৪ ঘণ্টা পেরিয়ে গেলেও পুলিশ মামলা নেয়নি। লাশ বাড়িতে রেখে এখন থানায় থানায় ধরনা দিচ্ছেন। তবে ১২ ঘণ্টা পর পুলিশ বলছে, মামলা প্রক্রিয়াধীন।
গৃহবধূর বাবা রেজাউল করিম বলেন, তাঁর মেয়ে রেজওয়ানার (২২) সঙ্গে রংপুরের ৩৩ নম্বর ওয়ার্ডের সরেয়ার তলের আব্দুল করিমের তিন বছর আগে বিয়ে হয়। বিয়ের পর থেকে জামাতা যৌতুক দাবি করে আসছেন। ৮ জুন বিকেলে তাঁকে হত্যার জন্য জামাতা ঘরের দরজা বন্ধ করে মেয়ের শরীরে আগুন ধরিয়ে দেন। স্থানীয় লোকজন তাঁকে উদ্ধার করে রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে নিলে চিকিৎসকেরা তাৎক্ষণিকভাবে তাঁকে ঢাকায় নিতে বলেন। চার দিন চিকিৎসাধীন থেকে গতকাল সকালে তাঁর মেয়ে মারা যান।
রেজাউলের অভিযোগ, ঘটনার দিন তিনি তাঁর জামাতার বাড়িতে ছিলেন। তাঁর জামাতা একটি ট্রাক কিনেছিলেন। এ জন্য পাঁচ লাখ টাকা দাবি করেন। এ নিয়ে দ্বন্দ্বের জেরে ঘরের দরজা বন্ধ করে তাঁর মেয়ের শরীরে আগুন দেওয়া হয়।
রেজওয়ানার মামা হেলাল মিয়া অভিযোগ করেন, গতকাল রাত ১২টায় অ্যাম্বুলেন্সে লাশ নিয়ে আসার সময় নগরের মাহীগঞ্জ থানা থেকে ফোন করে লাশ থানায় নিয়ে আসতে বলা হয়। লাশের অ্যাম্বুলেন্সে অভিযুক্ত আব্দুল করিম, তাঁর বোন পারভীন ও ভগ্নিপতি ফখরুলকে তাঁরা পুলিশে দিলে থানা-পুলিশ পারভীন ও ফখরুলকে ছেড়ে দেয়। পরে তাঁরা দুজনকে থানার সামনে থেকে আটকে আবার পুলিশের সোপর্দ করেন।
স্বজনদের অভিযোগ, পুলিশ মামলা নিতে গড়িমসি করছিল। পরে তাঁরা লাশ নিয়ে থানায় অবস্থান করলে পুলিশ অভিযোগ নিয়ে তদন্তসাপেক্ষে ব্যবস্থা নেওয়ার কথা জানায়। এ আশ্বাসে লাশ বাড়িতে নিলেও আজ দুপুর ১২টা পর্যন্ত থানায় মামলা হয়নি। মামলা না নেওয়া পর্যন্ত তাঁরা লাশ দাফন করবেন না।
শনিবার বেলা ১১টার দিকে মাহীগঞ্জ থানায় দিয়ে দেখা যায়, নিহতের স্বজনেরা থানার সামনে অপেক্ষা করছেন। নিহত রেজওয়ানার চাচা মুকুল মিয়া অভিযোগ করেন, তাঁর ভাতিজি মারা যাওয়ার খবর পেয়ে গতকাল বেলা ১১টার দিকে তিনি মাহীগঞ্জ থানায় আসেন। ওসির সাক্ষাৎ না পেয়ে ফোন করলে ওসি জানান, ভাতিজি আত্মহত্যা করেছেন, তাঁরা মামলা নিতে পারবেন না। তাঁদের আদালতে মামলা করতে বলেন।
তবে মাহীগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আব্দুল কুদ্দুস অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, এজাহারে বাদীর ঠিকানায় ভুল ছিল। সে কারণে মামলা নিতে দেরি হচ্ছে।
রংপুর মহানগর পুলিশের সহকারী কমিশনার মারুফ আহমেদ প্রথম আলোকে বলেন, তিনি ঘটনা জানতে পেরে সকালে থানায় যান। এ ঘটনায় মামলা প্রক্রিয়াধীন। আটক তিনজনকে মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো হবে। ওসির বিরুদ্ধে মামলা না নেওয়ার অভিযোগ প্রসঙ্গে মারুফ আহমেদ বলেন, বিষয়টি তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: র জওয় ন গ হবধ র ল কর ম গতক ল
এছাড়াও পড়ুন:
ট্রাম্পবিরোধী স্লোগান দিয়ে উড়োজাহাজে গ্রেপ্তার ভারতীয় বংশোদ্ভূত যুক্তরাজ্যের নাগরিক
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের পতন চেয়ে স্লোগান দেওয়ার অভিযোগে যুক্তরাজ্যে ৪১ বছর বয়সী এক ভারতীয় বংশোদ্ভূত নাগরিককে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। গত রোববার লন্ডনের লুটন বিমানবন্দর থেকে গ্লাসগোগামী একটি ফ্লাইটে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির অভিযোগে তাঁকে গ্রেপ্তার করা হয়।
বিবিসির এক প্রতিবেদনে বলা হয়, ওই ব্যক্তির নাম অভয় নায়েক। তিনি লন্ডনের কাছে বেডফোর্ডশায়ারের লুটন শহরের বাসিন্দা।
অভয় নায়েক ইজিজেট ফ্লাইটে হামলা ও যাত্রীদের নিরাপত্তাঝুঁকিতে ফেলার মতো আচরণ করেছেন। তিনি উড়োজাহাজে বোমা ফাটানোর হুমকি দিয়েছিলেন। তিনি মাঝ আকাশে রাজনৈতিক ও ধর্মীয় স্লোগান দিয়ে চিৎকার করেছিলেন, যা যাত্রীদের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে দেয়।
ওই ঘটনার একটি ভিডিও এখন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে। সেখানে দেখা যায়, অভয় নায়েক স্লোগান দিচ্ছেন, ‘আমেরিকার পতন হোক’, ‘ট্রাম্পের পতন হোক’। এরপরই তিনি ‘আল্লাহু আকবর’ (যার অর্থ ‘আল্লাহ সর্বশ্রেষ্ঠ’) বলে স্লোগান দেন। পরে দুজন ব্যক্তি তাঁকে কাবু করে উড়োজাহাজের মেঝেতে ফেলে দেন।
ওই ব্যক্তির নাম অভয় নায়েক। তিনি কোন ধর্মের অনুসারী, সে ব্যাপারে তাৎক্ষিণক কিছু জানা যায়নি।
ওই ব্যক্তির এমন আচরণের পর পাইলটরা বাধ্য হয়ে গ্লাসগোতে জরুরি অবতরণ করেন। সেখানেই স্কটিশ পুলিশ এসে অভয় নায়েককে গ্রেপ্তার করে।
স্কটল্যান্ডের পুলিশ এক বিবৃতিতে জানায়, ‘গত রোববার স্থানীয় সময় সকাল ৮টা ২০ মিনিটের দিকে গ্লাসগোতে পৌঁছানো ইজিজেটের একটি ফ্লাইটে এক ব্যক্তি বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করছেন এমন খবর পেয়ে আমরা সেখানে যাই।’
বিবৃতিতে আরও বলা হয়, ‘আমরা মনে করি, ঘটনাটি এককভাবে ওই ব্যক্তির, অন্য কেউ জড়িত নন। যেসব ভিডিও অনলাইনে ছড়িয়েছে, সেগুলো সন্ত্রাসবিরোধী কর্মকর্তারা খতিয়ে দেখছেন।’
উড়োজাহাজ অবতরণের পরই অভয় নায়েককে গ্রেপ্তার করা হয়। তাঁর বিরুদ্ধে আক্রমণ ও যাত্রীদের নিরাপত্তাঝুঁকিতে ফেলার অভিযোগ আনা হয়েছে। তবে তাঁর বিরুদ্ধে সন্ত্রাসবাদের কোনো অভিযোগ আনা হয়নি।
ইজিজেট এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, ‘বেপরোয়া আচরণের কারণে একজন যাত্রীকে পুলিশের হাতে তুলে দেওয়া হয়েছে। আমরা কর্তৃপক্ষকে তদন্তে সহযোগিতা করছি।’
পাইসলি শেরিফ আদালতে হাজিরার সময় অভয় নায়েক কোনো বক্তব্য দেননি। তাঁকে বিচারিক হেফাজতে পাঠানো হয়েছে এবং আগামী সপ্তাহে তাঁকে আবার আদালতে হাজির করা হবে।