Samakal:
2025-07-31@07:27:16 GMT

নদী দখল করে ভবন নির্মাণ

Published: 14th, June 2025 GMT

নদী দখল করে ভবন নির্মাণ

সোনাভরি নদী দখল করে নির্মাণ করা হয়েছে ভবন। এতে বর্ষা মৌসুমে নদীর স্বাভাবিক পানিপ্রবাহ বাধাগ্রস্ত হবে। সওদাগর নামে একজনের বিরুদ্ধে এই অভিযোগ উঠেছে। এ ঘটনায় গত ১২ জানুয়ারি উপজেলা সহকারী কমিশনারের (ভূমি) কাছে অভিযোগ দিয়েছেন স্থানীয় এক বাসিন্দা। কিন্তু এখন পর্যন্ত মেলেনি কোনো প্রতিকার। ঘটনাটি রৌমারী উপজেলার বন্দবেড় ইউনিয়নের বাঞ্ছারচর বাজারসংলগ্ন এলাকায়।
স্থানীয়দের অভিযোগ, প্রকাশ্যে নদী দখল করে অবৈধভাবে দ্বিতল ভবন নির্মাণ করা হয়েছে। এভাবে নদী দখল করতে থাকলে বর্ষা মৌসুমে নদীর স্বাভাবিক গতিপ্রবাহ বাধাগ্রস্ত হবে। এমনকি, নদী রক্ষা করতে না পারলে এক সময় সোনাভরি নদীর চিহ্ন থাকবে না।
গত শুক্রবার সরেজমিন দেখা গেছে, বন্দবেড় ইউনিয়নের বাঞ্ছারচর বাজার এলাকায় সোনাভরি নদীর ওপর ১২০ মিটার দৈর্ঘ্যের একটি সেতু নির্মাণ করা হয়েছে। এই সেতু ঘেঁষে সোনাভরি নদী দখল করে পূর্বপাশে গড়ে তোলা হয়েছে দ্বিতল ভবন।
স্থানীয় মনছের আলী ও জামাল উদ্দিনসহ অনেকে অভিযোগ করেন, বাঞ্ছারচর বাজার এলাকায় সোনাভরি নদীর ওপর একটি সেতু নির্মাণ করা হয়েছে। এই সেতুর দুই পাশে গাইডওয়ালও নির্মাণ করা হয়। সেতুটির গাইডওয়ালের নিচে সোনাভারি নদী দখল করে দ্বিতল ভবন নির্মাণ করেছেন একই ইউনিয়নের তিনতেলী এলাকার প্রভাবশালী ব্যক্তি সওদাগর। তাদের অভিযোগ, নির্মাণাধীন সেতুর ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের নিয়োগ দেওয়া ম্যানেজার মনির হোসেন মোটা অঙ্কের উৎকোচ নিয়ে সওয়দাগর নামে ওই ব্যক্তিকে স্থাপনা নির্মাণের অনুমতি দিয়েছেন। বিষয়টি নিয়ে এলাকাবাসীর মধ্যে ব্যাপক ক্ষোভ তৈরি হয়েছে।
অভিযুক্ত সওদাগরের দাবি, প্রথমে ২০২৩ সালে এক শতাংশ জমি ও ২০১৬ সালে আরও তিন শতাংশ জমি কিনে নিয়েছেন ওই এলাকার সাবেক ইউপি সদস্য আব্দুর সালামের কাছ থেকে। তাঁর কাছ থেকে এক লাখ ১০ হাজার টাকায় কিনে নেওয়া হয়। তাই ক্রয়সূত্রে ওই জমির মালিক তিনি।
সাবেক ইউপি সদস্য আব্দুর সালাম বলেন, ‘আমার রেকর্ডীয় সম্পত্তি। তাই সওদাগর নামে এক ব্যক্তির কাছে জমি বিক্রি করে দেওয়া হয়েছে।’ অন্য এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, নদী হলেও খাস খতিয়ানে যায়নি।
স্থানীয় বাসিন্দা রমিজ উদ্দিন জানান, তিনিসহ গ্রামবাসী উপজেলা সাব রেজিস্ট্রার অফিস সূত্রে জানতে পেরেছেন, সওদাগরের ক্রয় করা ওই জমি, যা সেতু থেকে অনেকটা দূরে।
সংশ্লিষ্ট ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের ম্যানেজার মনির হোসেন বলেন, তাঁর বিরুদ্ধে যে অভিযোগ তোলা হয়েছে, তা মিথ্যা। এ ছাড়া ওই স্থাপনা নির্মাণের কোনো অনুমতি দেওয়া হয়নি।
উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) রাসেল দিও বলেন, দখলের বিষয়ে সরেজমিন পরিদর্শন করা হয়েছে। তাদের অফিসে ডাকা হয়েছে। কাগজপত্র দেখে তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: নদ ন র ম ণ কর স ন ভর উপজ ল

এছাড়াও পড়ুন:

মাঝরাতে সরকারি কর্মকাণ্ড কতটা স্বাভাবিক

বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারের রাতের কর্মকাণ্ড নিয়ে বোধকরি একটা মহাকাব্য লিখে ফেলা সম্ভব। তাঁরা যেভাবে গভীর কিংবা শেষ রাতে নানা সিদ্ধান্ত নিচ্ছেন, ফেসবুকে বার্তা দিচ্ছেন; তাতে তো মনে হচ্ছে সরকারের কর্তা-ব্যক্তিরা দিনে কাজ না করে রাতেই মনে হয় বেশি কাজ করেন! কয়েকটা উদাহরণ বরং দেওয়া যাক।

মাস কয়েক আগে যখন দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি অস্বাভাবিক ভাবে খারাপ হয়ে গেল, আমাদের স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা  মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী রাত তিনটার সময় সংবাদ সম্মেলন ডাকলেন! বাংলাদেশের ইতিহাসে রাত তিনটার সময় আর কোনো মন্ত্রী এ ধরনের সম্মেলনের আয়োজন করেছেন কি না, আমার অন্তত জানা নেই। আমরা সবাই ভাবলাম, তিনি হয়তো বড় কোনো ঘোষণা দেবেন। এরপর কী দেখলাম?

তিনি খুব সাধারণভাবে বললেন, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখার জন্য সরকার নিজেদের উদ্যোগকে কঠিন ও শক্তিশালী করার চেষ্টা করবে।

সপ্তাহখানেক আগে হঠাৎ আকাশ থেকে একটি  যুদ্ধবিমান ঢাকা শহরের উত্তরার মাইলস্টোন স্কুল বিল্ডিংয়ে ভেঙে পড়ল। আগুনে দগ্ধ শিশুরা ধ্বংসস্তূপের নিচ থেকে নিজেরা উঠে এসে হাঁটছে; এমন দৃশ্যও আমাদের দেখতে হয়েছে। যে দৃশ্য দেখলে যে কেউ হয়তো ট্রমায় চলে যাবে। ওই স্কুলের এইচএসসি পরীক্ষার্থীরা হয়তো সরাসরি সেই দৃশ্য দেখেছে। খুব স্বাভাবিকভাবেই চলতে থাকে—এইচএসসি পরীক্ষা পিছিয়ে দেওয়া সময়ের দাবি ছিল। এ সিদ্ধান্ত সরকার দিনের বেলাতেই নিতে পারত। অথচ আমরা কী দেখলাম?

সরকারের পক্ষ থেকে  রাত তিনটার দিকে ফেসবুকে এসে ঘোষণা করা হলো, পরের দিনের এইচএসসি পরীক্ষা পেছানো হয়েছে।

যখনই আপনি সরকারের অস্বাভাবিক আচরণ নিয়ে প্রশ্ন করবেন কিংবা আপনার মনে এই প্রশ্ন জাগবে; তখনই কিন্তু রাষ্ট্র ভালো আছে কি না; সেই প্রশ্নও সামনে আসবে।

দিন দু-এক আগে এ সরকারকেই যাঁরা চাকরি দিয়েছেন, এ কথা বলছি কারণ, সরকারের প্রধান উপদেষ্টা নিজেই বলেছিলেন, ‘ছাত্ররা আমার নিয়োগকর্তা’—সেই ছাত্রদের সংগঠন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সাবেক মুখপাত্র উমামা ফাতেমা গভীর রাতে ফেসবুক এসে লাইভ করেন প্রায় আড়াই ঘণ্টা।

এই আড়াই ঘণ্টার লাইভে মূল যে বক্তব্য তিনি তুলে ধরেছেন,  সারমর্ম করলে দাঁড়ায়: বৈষম্যবিরোধী প্ল্যাটফর্ম মানি মেকিং মেশিনে পরিণত হয়েছে এবং অনেকেই এর সঙ্গে জড়িত। তিনি এটাও বলেছেন, এই সংগঠনের সব সিদ্ধান্ত হেয়ার রোড থেকে আসে। অর্থাৎ উপদেষ্টারা যেখানে থাকেন।

এদিকে সোমবার দিবাগত রাত তিনটার দিকে উপদেষ্টা মাহফুজ আলম একটা ফেসবুক পোস্ট করেছেন। যদিও ফেসবুক স্ট্যাটাসটি তিনি বেশ কয়েকবার এডিট করেছেন। তবে প্রথমে যা লিখেছেন, সেটা হচ্ছে, নতুন একটি দলের মহারথীদের কয়েকজন দুর্নীতিতে জড়িত। এ ছাড়া তিনি এটাও বলেছেন, একটা সার্কেলের সবাই দুর্নীতিগ্রস্ত!

এখন প্রশ্ন হচ্ছে, তাহলে তাঁদের কেন প্রশ্রয় দেওয়া হলো? আপনারা যদি জানেনই কিছু মানুষ দুর্নীতিগ্রস্ত। তাহলে সরকারের অংশ হিসেবে আপনাদের তো দায়িত্ব তাঁদের আইনের আওতায় আনা। সেটা না করে ফেসবুকে পোস্ট করতে হচ্ছে কেন? তা–ও আবার রাত তিনটায়!

এই সরকার কি মাঝরাতের ফেসবুকীয় সরকারে পরিণত হয়েছে? পরীক্ষা পেছানোর মতো সিদ্ধান্ত যখন মাঝরাতে নিতে হয়, সংবাদ সম্মেলন যখন রাত তিনটায় করতে হয়, তখন তো প্রশ্ন জাগতেই পারে। কারণ এটা তো স্বাভাবিক কোনো বিষয় নয়।

যখনই আপনি সরকারের অস্বাভাবিক আচরণ নিয়ে প্রশ্ন করবেন কিংবা আপনার মনে এই প্রশ্ন জাগবে; তখনই কিন্তু রাষ্ট্র ভালো আছে কি না; সেই প্রশ্নও সামনে আসবে।
রাষ্ট্র যদি ভালো না থাকে তবে তার মাত্রা কতটুকু, সেটা নির্ণয় এবং সে অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া এখন জরুরি হয়ে পড়েছে।

আমিনুল ইসলাম প্রভাষক, এস্তোনিয়ান এন্ট্রাপ্রেনিউরশিপ ইউনিভার্সিটি
[email protected]

সম্পর্কিত নিবন্ধ