সিনেমা মুক্তির পর প্রচার-প্রচারণায় সামনে থেকে নেতৃত্ব দেন নির্মাতা। এটাই যুগ যুগ ধরে হয়ে আসছে। কিন্তু এবার ঈদে মুক্তি পাওয়া ‘এশা মার্ডার সিনেমার ক্ষেত্রে সেটা ঘটেনি। আট দিনে প্রচার-প্রচারণায় মুখই দেখা যায়নি নির্মাতা সানি সানোয়ারকে। কারণ, চাকরির সুবাদে তিনি ছিলেন অনেকটা দূরেই। তবে তার সেই জায়গা পূরণ করেছেন ‘এশা মার্ডার’  সিনেমা পুরো টিম। তাই টিমের সবার প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করতেও ভুললেন এই নির্মাতা।

এর আগে ‘ঢাকা অ্যাটাক’, ‘মিশন এক্সট্রিম’ ও ‘ব্ল্যাক ওয়ার’ সিনেমা নির্মাণ করেছেন তিনি। ‘এশা মার্ডার’ তার চতুর্থ সিনেমা।

মঙ্গলবার একটি পোস্টে সানি লিখেছেন, “আমি চতুর্থ সিনেমায় এসে একটা যুৎসই টিম পেলাম যারা কিনা পাগলের মত ‘পোস্ট-রিলিজ’ প্রমোশন নিয়ে ব্যাপক মাত্রায় কাজ করছে; কিছু বলার আগে নিজেরা সব করে বসে থাকছে। আমার আগের ৩টা ফিল্মে এতটা আন্তরিক, এতটা সমন্বিত, এত ত্যাগী টিম পাইনি।’

আজমেরী হক বাঁধনের কথা উল্লেখ করে তিনি লিখেছেন, “আজমেরী হক বাঁধনের কথাই ধরুন। প্রতিদিন নিজেই ড্রাইভ করে যথা সময়ের আগে হাজির হচ্ছে প্রমোশনস্থলে। এরপর ডাকাডাকি শুরু করে সবাইকে- ‘কে কোথায়? চলে আসো।’ মূলত সে ‘এশা মার্ডার’ সিনেমার ক্যারেক্টারের সাথে যেমন মিশে গেছে, তেমনি জড়িয়ে গেছে সিনেমার আমলনামার সাথেও। হল ভর্তি দর্শক দেখে সে যেমন হাসে, শো শেষে ক্রন্দনরত দর্শকদের জড়িয়ে ধরে সে আবার কাঁদে। তার আনন্দের আতিশয্যের অনেক কারণ, তার মধ্যে অন্যতম হচ্ছে- সবাই তাকে বলছে, ‘বাঁধন, এএসপি লিনা চরিত্রটা তোমার বেস্ট।”

তিনি আরও লিখেছেন, ‘এশা চরিত্রের এশাও কম কি! প্রতিদিন দূরের পথ ঠেলে জ্যাম ঠেলে ছুটে আসে টিমের প্রমোশনে। প্রথম সিনেমা হওয়ার পূজা এগনেস ক্রুজ সবার কাছে চরিত্রের নামে (এশা) পরিচিত হয়ে উঠেছে।

ইন্সপেক্টর শফি চরিত্রের সরকার রওনক রিপন আরেকটা জেম। কণ্যার ১০৩ ডিগ্রি জ্বর, তবুও ছুটে আসে। মেয়েকে হসপিটালে ভর্তি করেছে, তবুও সে আসে। এসে হলে হলে ঘুরে, দর্শক দেখে, কান্নার রোল রেকর্ড করে, নিজে কাঁদে আর অশ্রুসিক্ত হয়ে টিমের বাকিদেরও ডাকে।

এছাড়া ডাক্তার চরিত্রের সৈয়দ এজাজ আহমেদ, এস আই শামীম চরিত্রের হাসনাত রিপন, নাসির চরিত্রের শরীফ সিরাজ, ওসি সিরাজ চরিত্রের শ্রদ্ধেয় ফারুক আহমেদ ভাই প্রমুখ একই তালে তাল মিলিয়ে আন্তরিকতার গহীনে গিয়ে পুরো টিমের প্রাণ জুগিয়েছে। টিমের মজবুতি এবং প্রমোশনের শক্তি হয়ে নানামুখী কাজ চালিয়ে যাচ্ছে।

এছাড়াও আরো অনেকের অবদানে ‘এশা মার্ডার’ সিনেমার প্রমোশনাল কার্যক্রম এগিয়ে যাচ্ছে। দিন যত যাচ্ছে মানুষ সিনেমা সম্বন্ধে তত জানছে, দেখছে এবং আর আমরা কুড়াচ্ছি প্রশংসা। কৃতজ্ঞতা সবার প্রতি।

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: চর ত র র

এছাড়াও পড়ুন:

মাদ্রাসা ছাত্র হত্যার ঘটনায় দুই থানায় পৃথক মামলা, বাদী চিনেনা আসামিদের

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সময় নারায়ণগঞ্জে মাদরাসা ছাত্র মো. ইব্রাহিম (১৩) হত্যার ঘটনায় দুই থানায় পৃথক পৃথক মামলা হয়েছে। নিহতের বাবা-মাকে মৃত দেখিয়ে কথিত মামা বাদী হয়ে ফতুল্লা থানায় হত্যা মামলা দায়ের করেন।

এর কিছুদিন পর একই ঘটনায় নিহতের বাবা বাদী মো. হানিফ বাদী হয়ে সোনারগাঁ থানায় মামলা দায়ের করেন। এ নিয়ে বেশ চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে। 

মামলা সূত্রে জানা গেছে, বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সময়ে নিহত ইব্রাহিমের বাবা হানিফ মিয়া ও মা সখিনা বিবি কে মৃত দেখিয়ে তার মামা পরিচয়ে মো. সাইফুল ইসলাম নামে এক ব্যক্তি গত ২২ আগস্ট ফতুল্লা থানায় হত্যা মামলা দায়ের করেন।

এই মামলায় সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য একেএম শামীম ওসমান, মানবজমিন পত্রিকার স্টাফ রিপোর্টার ও  বেসরকারি টেলিভিশন এনটিভির জেলা প্রতিনিধি বিল্লাল হোসেন রবিন, আইনজীবী কামাল হোসেন সহ ৬১ জন নামীয় আসামি করা হয়। এছাড়া আরও অজ্ঞাত ১৫০-১৬০ জনকে আসামি করা হয়। 

মামলার এজাহারে উল্লেখ করা হয়, গত ১৯ জুলাই শুক্রবার বিকাল আনুমানিক ৩ টার দিকে কোটা বিরোধী দাবি আদায়ের লক্ষ্যে ছাত্র-জনতা ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ রোডের পাসপোর্ট অফিসের বিপরীত পাশে শান্তিপূর্ণভাবে সমাবেশ করতে সমবেত হলে আসামিরা আগ্নেয়াস্ত্র সহ বিভিন্ন দেশিয় অস্ত্র নিয়ে হত্যার উদ্দেশ্যে এলোপাথারি গুলি করে ও ককটেল বিস্ফোরণ করে।

এ সময় আমি ও আমার ভাগিনা মোহাম্মদ ইব্রাহিম (১৩) ভয়ে একটি দোকানের আড়ালে আশ্রয় নেই। হঠাৎ আমার ভাগিনা ইব্রাহিমের মাতায় ও বুকে গুলিবিদ্ধ হয়ে মাটিতে লুটিয়ে পড়ে। পরে তাকে উদ্ধার করে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসকরা তাকে মৃত ঘোষণা করেন। পরের দিন ২০ জুলাই মাগরিবের নামাজের পূর্বে মাতুআইল কবরস্থানে লাশ দাফন করা হয়। 

এ বিষয়ে জানতে চাইলে মামলার বাদী ও নিহত ইব্রাহিমের কথিত মামা সাইফুল ইসলাম বলেন, ‘নিহত ইব্রাহিম আমার বাড়ির পাশে কাজ করতো ও মাদ্রসায় পড়াশোনা করতো। তার বাবা-মায়ের সাথে তার সম্পর্ক নেই। আমি একটি সাইডের কন্ট্রাকটারি করি।

সম্প্রতি সে আমার সাথেও ওস্তাকারের সহকারী হিসেবে কাজ করেছে। সেই কাজের সুবাদে সে আমাকে মামা বলে ডাকতো। সে আমার আপন ভাগিনা না। তার হত্যার ঘটনার পর রাজনীতিক মামলা হয়েছে। যারা আন্দোলন করেছে তারা মামলার সবকিছু করেছে, আমি শুধু স্বাক্ষর দিয়েছি। আসামিদের কাউকে আমি চিনি না। 

মামলার এজাহারে ইব্রাহিমের বাবা-মাকে মৃত উল্লেখ করার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ইব্রাহিমের বাবা-মায়ের সংসার অনেক আগে বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে। কিন্তু মামলায় কেন মৃত লেখেছে তা জানা নেই। তাছাড়া এই মামলায় স্বাক্ষর করা ছাড়া আমি আর কিছু জানিনা। মামলার কাগজে কি লিখছে তা আমি জানিনা। 

এই ঘটনার নিহত ইব্রাহিমের বাবা সোনারগাঁ থানায় আরেকটি মামলা করেছে। এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে তিনি বলেন, মামলা কী আমারটা আগে হয়েছে নাকি পরে হয়েছে। আপনে ফোন রাখেন ভাই। 

এ বিষয়ে জানতে চাইলে ফতুল্লা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. শরিফুল ইসলাম বলেন, ‘এ ঘটনায় সোনারগাঁ থানায়ও মামলা হয়েছে। এক ঘটনায় দুই থানায় মামলা হতে পারেনা। এ কারণে উর্ধ্বতনদের নির্দেশে মামলার কার্যক্রম স্থগিত করা হয়েছে।

এদিকে একই ঘটনায় নিহত মো. ইব্রাহিম (১৩) এর বাবা মো. হানিফ (৬৫) বাদী হয়ে গত ২৪ আগস্ট সোনারগাঁ থানায় আরেকটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। এ মামলায় ইব্রাহিমের নিহত হওয়ার স্থান ভিন্ন দেখানো হয়েছে।

এই মামলার এজাহারে বলা হয়েছে, গত ১৯ জুলাই বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনকে পন্ড করার জন্য সোনারগাঁয়ের কাঁচপুর ব্রীজের পূর্ব ঢাল হতে ১৪ কিলোমিটার উত্তর-পশ্চিম দিকে অস্ত্র নিয়ে হামলা করে আওয়ামী লীগ ও তাদের সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মী হামলা চালিয়ে এলোপাথারি গুলি ছুড়ে ও ককটেল বিস্ফোরণ ঘটায়।

বিকেল আনুমানিক সাড়ে ৩ টার দিকে ইব্রাহিমের বাম চোখের ভেতরে দিয়ে মাথায় পেছনের অংশ দিয়ে গুলি বের হয়ে যায়। পরে তাকে উদ্ধার করে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসাপাতালে নেওয়া হলে তার মৃত্যু হয়। 

মামলার আসামি করা হয়েছে- সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, আইনজীবী, রাজনীতিবিদ সহ ২৩৫ জন নামীয় আসামি এবং অজ্ঞাত আরও ৫০-৬০ জনকে আসামি করা হয়। 

এ বিষয়ে জানতে সোনারগাঁ থানার মামলার বাদী ও নিহত ইব্রাহিমের বাবা মো. হানিফ কে একাধিকবার ফোন করেও পাওয়া যায়নি। 

সোনারগাঁ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. মফিজুর রহমান বলেন, এই মামলা আমাদের এখানে ফাইনাল হবে। এই ঘটনার প্রকৃত ঘটনাস্থল যেখানে সেই থানায় মামলা হবে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ