অসত্য ও বিভ্রান্তিমূলক তথ্য গণমাধ্যমে উপস্থাপনের জন্য স্থানীয় সরকার উপদেষ্টা পদে আসিফ মাহমুদ সজীব ভুঁইয়া বহাল থাকার নৈতিক অধিকার হারিয়েছেন বলে মনে করেন বিএনপি নেতা ইশরাক হোসেন। তিনি বলেন, সজীব ভুঁইয়া শপথ ভঙ্গ করেছেন। শপথ ভঙ্গ করার জন্য তাঁর পদত্যাগ দাবি করেছেন ইশরাক।

আজ মঙ্গলবার দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের প্রধান কার্যালয় নগর ভবনে এসে এ কথা বলেন ইশরাক হোসেন।

শপথের মাধ্যমে দায়িত্ব বুঝে না পেলেও আজও নগর ভবনের একটি মিলনায়তনে সংস্থাটির প্রায় ৭০টি ওয়ার্ডের সচিবদের নিয়ে বৈঠকে বসেছেন ইশরাক হোসেন। বেলা ১টার দিকে বৈঠকটি শুরু হয়। এর আগে গতকাল ৭০ জনের বেশি পরিচ্ছন্নতা পরিদর্শককে নিয়ে বৈঠক করেছিলেন তিনি।

ইশরাক হোসেন বলেন, ‘উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ বয়সে খুবই তরুণ। সামনে তাঁকে অনেক পথ পাড়ি দিতে হবে। কাজেই জনগণের প্রতি শ্রদ্ধাশীল আচরণ, আদালতের রায়ের প্রতি সম্মান প্রদর্শন তাঁর কাছ খেকে কাম্য। অসত্য তথ্য দিয়ে জনগণকে বিভ্রান্ত করা তাঁর কাজ নয়। কারণ, এত অত্যাচার, নির্যাতন সহ্য করে যেসব জনগণ তাঁদের নির্দিষ্ট লক্ষ্য থেকে বিচ্যুত হননি, তাঁদের তিনি বিভ্রান্ত করতে পারবেন না।’

বিএনপির এই নেতা বলেন, নির্বাচনী ট্রাইব্যুনাল আগের গেজেট বাতিল করে ইশরাক হোসেনকে মেয়র হিসেবে গেজেট প্রকাশের জন্য বাংলাদেশ নির্বাচন কমিশন সচিবালয়কে নির্দেশ দিয়েছে। এই নির্দেশনা অনুযায়ী নির্বাচন কমিশন ১০ দিনের মধ্যে ২৭ এপ্রিল সংশোধিত গেজেট প্রকাশ করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে স্থানীয় সরকার বিভাগে পাঠিয়ে দিয়েছে।

এই সংশোধিত গেজেট পেয়ে শপথ অনুষ্ঠানের আয়োজন ছাড়া স্থানীয় সরকার বিভাগের কিছুই করণীয় নেই বলেন ইশরাক। তিনি অভিযোগ করেন, ট্রাইব্যুনালের রায়ের বিরুদ্ধে নির্বাচন কমিশন আপিল করবে কি না, নির্বাচনী ট্রাইব্যুনালে আরজি সংশোধনের সুযোগ নেই ইত্যাদি বিষয়ে প্রশ্ন তুলে শপথ অনুষ্ঠানের আয়োজনে দেরি করা হচ্ছে।

গতকাল স্থানীয় সরকার উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভুঁইয়া বলেছেন, শপথ গ্রহণের বিষয়টি বিবেচনাধীন থাকা অবস্থায় গেজেটের মেয়াদ শেষ হওয়ায় শপথ পড়ানো যায়নি।

উপদেষ্টার এই বক্তব্য উল্লেখ করে ইশরাক বলেন, ‘এ কথা সত্য হলে ভবিষ্যতে কোনো নির্বাচিত প্রতিনিধি আর শপথ পড়ার সুযোগ পাবেন না।’

এর আগে বেলা ১১টা থেকে নগর ভবন প্রাঙ্গণে অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ শুরু করেন ইশরাকের সমর্থক ও ঢাকা দক্ষিণ সিটির কর্মচারীরা। পূর্বঘোষণা অনুযায়ী, তাঁরা বেলা ১টা পর্যন্ত অবস্থান কর্মসূচি পালন করেন। ইশরাক হোসেনকে ঢাকা দক্ষিণ সিটির মেয়রের দায়িত্ব বুঝিয়ে দেওয়ার দাবিতে ১৪ মে থেকে নগর ভবনের সামনে অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ করছেন তাঁর সমর্থকেরা। পরদিন ১৫ মে থেকে তাঁরা নগর ভবনের সব ফটকে তালা ঝুলিয়ে দেন। ঢাকাবাসীর ব্যানারে তাঁরা এ কর্মসূচি পালন করছেন। সেদিন থেকে এখন পর্যন্ত নগর ভবনের সব ফটকে তালা ঝুলছে।

আরও পড়ুনশপথ না নিয়েই মেয়রের ‘দায়িত্ব’ পালন ইশরাকের১৩ ঘণ্টা আগে

তবে শপথ না নিয়ে ইশরাক হোসেন কীভাবে নগর ভবনে সভা করছেন এবং কর্মকর্তা-কর্মচারীদের নির্দেশনা দিচ্ছেন, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ইশর ক হ স ন নগর ভবন র ন ইশর ক উপদ ষ ট সরক র অবস থ

এছাড়াও পড়ুন:

অধ্যাপক ইউনূসের সংস্কারের অঙ্গীকারের এক বছর পরেও কারাগারে সাংবাদিকেরা: সিপিজে

সাংবাদিক ফারজানা রুপা চলতি বছরের ৫ মার্চ ঢাকার একটি জনাকীর্ণ আদালতে আইনজীবী ছাড়াই দাঁড়িয়েছিলেন। বিচারক তাঁর বিরুদ্ধে আরেকটি হত্যা মামলা নথিভুক্ত করার প্রক্রিয়া শুরু করছিলেন। ইতিমধ্যে অন্য মামলায় কারাগারে থাকা এই সাংবাদিক শান্তভাবে জামিনের আবেদন জানান। ফারজানা বলেন, ‘ইতিমধ্যে আমার বিরুদ্ধে এক ডজন মামলা দেওয়া হয়েছে। আমি একজন সাংবাদিক। আমাকে ফাঁসানোর জন্য একটি মামলাই যথেষ্ট।’

বিশ্বজুড়ে সাংবাদিকদের অধিকার রক্ষায় কাজ করা আন্তর্জাতিক সংগঠন কমিটি টু প্রটেক্ট জার্নালিস্টসের (সিপিজে) এক নিবন্ধে এসব কথা বলা হয়েছে। এতে বলা হয়, বেসরকারি একাত্তর টেলিভিশনের সাবেক প্রধান প্রতিবেদক ফারজানা রুপার বিরুদ্ধে ৯টি হত্যা মামলা রয়েছে। আর তাঁর স্বামী চ্যানেলটির সাবেক বার্তাপ্রধান শাকিল আহমেদের নামে রয়েছে আটটি হত্যা মামলা।

এক বছর আগে ছাত্রদের নেতৃত্বে কয়েক সপ্তাহের বিক্ষোভের পর পদত্যাগ করে দেশ থেকে পালিয়ে যান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ওই বিক্ষোভ চলাকালে দুজন সাংবাদিক নিহত হন। শেখ হাসিনার পদত্যাগ ও দেশ ছাড়ার পর বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের দায়িত্ব নেন নোবেল বিজয়ী অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস।

অধ্যাপক ইউনূস গণমাধ্যম সংস্কারের প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। শেখ হাসিনা সরকারের অধীন সাংবাদিকদের লক্ষ্যবস্তু করতে ব্যবহৃত সাইবার নিরাপত্তা আইন বাতিল করা হয়েছে। কিন্তু ২০২৪ সালের নভেম্বরে ডেইলি স্টার পত্রিকাকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে অধ্যাপক ইউনূস বলেছিলেন, সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে তাড়াহুড়ো করে হত্যার অভিযোগ আনা হচ্ছে। তিনি আরও বলেছিলেন, সরকার তখন থেকে এ ধরনের পদক্ষেপ বন্ধ করে দিয়েছে। মামলাগুলো পর্যালোচনা করার জন্য একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে।

কিন্তু প্রায় এক বছর পর এখনো সাংবাদিক ফারজানা রুপা, শাকিল আহমেদ, শ্যামল দত্ত ও মোজাম্মেল হক বাবু কারাগারে আছেন। হত্যায় উসকানি দেওয়ার অভিযোগে পৃথক মামলায় তাঁদের গ্রেপ্তার করা হয়েছিল। বিগত সরকারের প্রতি সহানুভূতিশীল হিসেবে ব্যাপকভাবে পরিচিত সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে এ ধরনের অভিযোগের বারবার ব্যবহারকে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত সেন্সরশিপ বলেই মনে হচ্ছে।

এ ধরনের আইনি অভিযোগ ছাড়াও সিপিজে সাংবাদিকদের ওপর শারীরিক হামলা, রাজনৈতিক কর্মীদের কাছ থেকে হুমকি এবং নির্বাসনের ঘটনা নথিভুক্ত করেছে। বাংলাদেশের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল কমপক্ষে ২৫ জন সাংবাদিকের বিরুদ্ধে গণহত্যার অভিযোগে তদন্ত করছে। এই অভিযোগ সাবেক শেখ হাসিনা সরকারের সঙ্গে যুক্ত ব্যক্তিদের লক্ষ্যবস্তু করতে ব্যবহৃত হয়ে আসছে।

সিপিজের আঞ্চলিক পরিচালক বেহ লিহ ই বলেন, ‘চারজন সাংবাদিককে বিশ্বাসযোগ্য প্রমাণ ছাড়াই এক বছর ধরে কারাগারে আটকে রাখা অন্তর্বর্তী সরকারের সংবাদপত্রের স্বাধীনতা রক্ষার ঘোষিত প্রতিশ্রুতিকে দুর্বল করে।’ তিনি আরও বলেন, ‘প্রকৃত সংস্কার মানে অতীত থেকে বেরিয়ে আসা, এর অপব্যবহারের পুনরাবৃত্তি নয়। যেহেতু আগামী মাসগুলোতে দেশে নির্বাচন হতে চলেছে, তাই সব রাজনৈতিক দলকে সাংবাদিকদের খবর প্রকাশের অধিকারকে অবশ্যই সম্মান জানাতে হবে।’

আইনি নথি ও প্রতিবেদন নিয়ে সিপিজের এক পর্যালোচনায় দেখা গেছে, এফআইআর নথিভুক্ত হওয়ার অনেক পর সাংবাদিকদের নাম প্রায়ই এতে যুক্ত করা হয়। মে মাসে জাতিসংঘের বিশেষজ্ঞরা উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন, গত বছরের বিক্ষোভের পর ১৪০ জনের বেশি সাংবাদিকের বিরুদ্ধে হত্যার অভিযোগ আনা হয়েছে।

শ্যামল দত্তের মেয়ে শশী সিপিজেকে বলেন, তাঁর বাবার বিরুদ্ধে এখন কতগুলো মামলা চলছে, পরিবার তার হিসাব রাখতে পারেনি। তাঁরা অন্তত ছয়টি হত্যা মামলার কথা জানেন, যেখানে শ্যামল দত্তের নাম আছে। মোজাম্মেল বাবুর পরিবার ১০টি মামলার কথা জানে। ফারজানা রুপা ও শাকিল আহমেদের পরিবার সিপিজেকে জানিয়েছে, তারা পাঁচটি মামলার এফআইআর পাননি, যেখানে একজন বা অন্য সাংবাদিকের নাম উল্লেখ করা হয়েছে। এর মানে হলো তাঁদের কেউই জামিনের আবেদন করতে পারছেন না।

এ বিষয়ে বক্তব্য জানতে প্রধান উপদেষ্টার প্রেসসচিব শফিকুল আলম ও পুলিশের মুখপাত্র এনামুল হক সাগরকে ই–মেইল করে সিপিজে। তবে তাঁরা সাড়া দেননি বলে সিপিজের নিবন্ধে উল্লেখ করা হয়।

সম্পর্কিত নিবন্ধ