‘রেইন গজ মিটার’ স্থাপনে দুর্নীতির অভিযোগে দুদকের অভিযান
Published: 17th, June 2025 GMT
প্রায় দুই কোটি টাকার রেইন গজ মিটার স্থাপনে অনিয়মের অভিযোগে মাদারীপুরে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরে অভিযান চালিয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।
মঙ্গলবার (১৭ জুন) দুপুরে দুদকের জেলা কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক মো. আক্তারুজ্জামানের নেতৃত্বে অভিযান চালানো হয়। পরে তারা কয়েকটি ইউনিয়নে স্থপিত রেইন গজ মিটার পরিদর্শন করেন।
দুদক জানায়, কৃষকদের আগাম তিন দিনের আবহাওয়ার বার্তা দিতে মাদারীপুরের ৬০টির মধ্যে ৫৬টি ইউনিয়নে বসানো হয়েছিল একটি করে রেইন গজ মিটার। বিশ্ব ব্যাংকের অর্থায়নে বসানো এই রেইন গজ মিটার অনেক জায়গা থেকে উধাও হয়ে গেছে। কোথাও নষ্ট হয়ে গেছে সব যন্ত্রপাতি।
আরো পড়ুন:
দুদকের অনুসন্ধানের সিদ্ধান্ত
সাবেক হাইকমিশনার সাঈদা মুনা দম্পতি পাচার করেছেন ২ হাজার কোটি টাকা
যবিপ্রবির সাবেক উপাচার্য ড.
তদারকির অভাব এবং স্থাপনে অনিয়নের কারণে দুই কোটি টাকা ব্যয়ের এই প্রকল্প কৃষকদের কোনো কাজেই আসেনি। প্রান্তিক চাষিদের অভিযোগের প্রেক্ষিতে দুদক মাদারীপুর জেলা কার্যালয়ের মাধ্যমে অভিযান চালানো হয়।
অভিযান চলাকালে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক সন্তোষ চন্দ চন্দ্রের কাছে প্রয়োজনীয় তথ্য চাওয়া হয়। তিনি কোনো কাগজপত্র দেখাতে পারেনি। সময় নিয়ে কাগজপত্র দেখাবেন বলে জানিয়েছেন। পরে সদর উপজেলার মস্তফাপুর, ঘটমাঝি, কালকিনির কয়েকটি ইউনিয়নে বসানো রেইন গজ মিটার পরিদর্শন করেন দুদক সদস্যরা।
দুদক মাদারীপুর কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক মো. আক্তারুজ্জামান বলেন, ২০১৮-১৯ অর্থ বছরে জেলার ৬০টি ইউনিয়নের মধ্যে ৫৬টি ইউনিয়নে বসানো হয় আগাম পূর্বাভাসের যন্ত্রটি। তাপমাত্রা, আর্দ্রতা, বায়ুপ্রবাহ, বৃষ্টিপাত, ঝড়ের পূর্বাভাস, আলোকঘণ্টাসহ ১০টি বিষয়ে তথ্য সংগ্রহ ও তা কৃষকদের কাছে পৌঁছে দিতে প্রতিটি ইউনিয়নে একজন করে উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তাকে দায়িত্ব দেওয়া হয়।”
তিনি আরো বলেন, “জেলার সবগুলো যন্ত্রই এখন বিকল। এই ঘটনার জন্য দায়ী ব্যক্তিদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তিরর দাবি তুলেছেন প্রান্তিক চাষিরা। অভিযোগ প্রমাণিত হলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
ঢাকা/বেলাল/মাসুদ
উৎস: Risingbd
এছাড়াও পড়ুন:
সঞ্চয়পত্র কেনায় ১০ পরামর্শ
মধ্যবিত্তদের জন্য সঞ্চয়পত্রে বিনিয়োগ একটি ভালো উপায় হতে পারে। তবে বুঝেশুনে পরিকল্পনা করে সঞ্চয়পত্রে বিনিয়োগ করা উচিত। সুদের হার বেশি হলেই সঞ্চয়পত্রে বিনিয়োগ করা ঠিক নয়। সার্বিকভাবে নিজের প্রয়োজন, সময়, করহার ও ভবিষ্যৎ পরিকল্পনার কথা ভেবে সঞ্চয়পত্রে বিনিয়োগ করতে হবে। এতে আপনার বিনিয়োগ হবে নিরাপদ।
মধ্যবিত্ত ও অবসরপ্রাপ্ত ব্যক্তিদের জন্য সঞ্চয়পত্রে বিনিয়োগ যেমন নিরাপদ ও নির্ভরযোগ্য, তেমনি রাষ্ট্রীয় নিশ্চয়তাও আছে। তবে সঞ্চয়পত্র কেনার আগে কিছু গুরুত্বপূর্ণ বিষয় ভালোভাবে বিবেচনা করা উচিত। এ জন্য ১০টি পরামর্শ বা টিপস দেওয়া হলো—
১. দ্রুত টাকা তুলতে চাইলে সঞ্চয়পত্র নয়
এখানে প্রথমেই আপনাকে ভাবতে হবে, আপনি কত দিনের জন্য টাকা বিনিয়োগ করতে চান? সঞ্চয়পত্রের মেয়াদ সাধারণত ৩ থেকে ৫ বছরের জন্য হয়। যদি আপনি দ্রুত টাকা তুলতে চান, তবে সঞ্চয়পত্র উপযুক্ত নয়। কারণ, নির্দিষ্ট সময়ের আগে ভাঙালে মুনাফা কমে যায়।
২. সাড়ে সাত লাখ টাকার বেশি হলে মুনাফা কমে
বর্তমানে বাংলাদেশে সঞ্চয়পত্রের মুনাফার হার বিনিয়োগ ও মেয়াদভেদে ১১ থেকে সাড়ে ১২ শতাংশের মধ্যে। সাড়ে সাত লাখ টাকার বেশি বিনিয়োগে ধাপে ধাপে সুদের হার কমে যেতে পারে। অন্যদিকে মুনাফার ওপর ১০ শতাংশ হারে উৎসে কর কাটা হয়। কর শনাক্তকরণ নম্বর (টিআইএন) না থাকলে এই হার ১৫ শতাংশ। পাঁচ লাখ টাকা পর্যন্ত কোনো উৎসে কর কাটা হয় না।
৩. সঞ্চয়পত্রের মুনাফা খেয়ে ফেলতে পারে উচ্চ মূল্যস্ফীতি
বর্তমান দেশে উচ্চ মূল্যস্ফীতি বিরাজমান। এক বছর ধরে গড় মূল্যস্ফীতি ১০ শতাংশের বেশি আছে। সঞ্চয়পত্র কিনে যে মুনাফা পাওয়া যাবে, তা এই উচ্চ মূল্যস্ফীতির সময়ে খুব বেশি লাভবান হওয়া সম্ভব নয়। উচ্চ মূল্যস্ফীতির সময়ে সঞ্চয়পত্রের নির্দিষ্ট সুদের হার প্রকৃত অর্থে আপনার ক্রয়ক্ষমতা কমিয়ে দিতে পারে। তাই সঞ্চয়পত্রে বিনিয়োগ পুরোপুরি ঝুঁকিমুক্ত হলেও দীর্ঘ মেয়াদে সব সময় লাভজনক না–ও হতে পারে। তাই সঞ্চয়পত্র কেনার আগে মূল্যস্ফীতির বিষয়টি বিবেচনায় রাখুন।
৪. কত টাকা পর্যন্ত কেনা যাবে
আপনি চাইলে কোটি কোটি টাকার সঞ্চয়পত্র কিনতে পারবেন না। একজন ব্যক্তি সর্বোচ্চ নির্দিষ্ট পরিমাণ টাকা পর্যন্ত সঞ্চয়পত্র কিনতে পারেন। যেমন পরিবার সঞ্চয়পত্র সর্বোচ্চ ৪৫ লাখ টাকা (নারীদের জন্য); ৫ বছর মেয়াদি বাংলাদেশ সঞ্চয়পত্র সর্বোচ্চ ৩০ লাখ টাকা এবং যৌথ নামে ৬০ লাখ টাকা; পেনশনার সঞ্চয়পত্র সর্বোচ্চ ৫০ লাখ টাকা (সরকারি অবসরপ্রাপ্তদের জন্য); তিন মাস অন্তর মুনাফাভিত্তিক সঞ্চয়পত্র সর্বোচ্চ ৩০ লাখ টাকা এবং যৌথ নামে ৬০ লাখ টাকা।
৫. কারা কিনতে পারবেন
বাংলাদেশি নাগরিক, অভিবাসী বাংলাদেশি এবং নির্দিষ্ট শর্তে অবসরপ্রাপ্ত সরকারি কর্মচারীরা। বিদেশে অবস্থানরত প্রবাসীরাও নির্ধারিত নিয়মে সঞ্চয়পত্র কিনতে পারেন। মনে রাখবেন, পরিবার সঞ্চয়পত্র শুধু নারীরা কিনতে পারেন।
৬. পাঁচ ধরনের কাগজপত্র প্রস্তুত রাখুন
সঞ্চয়পত্র কিনতে হলে পাঁচ ধরনের কাগজপত্র প্রয়োজন হয়। এগুলো হলো, জাতীয় পরিচয়পত্র; পাসপোর্ট সাইজ ছবি; ব্যাংক হিসাব নম্বর; টিআইএন সার্টিফিকেট (যদি থাকে); অর্থের উৎসের প্রমাণ (আয়কর বিবরণী বা বেতন স্লিপ)। তাই সঞ্চয়পত্রে বিনিয়োগের আগে এসব কাগজপত্র জোগাড় করুন।
৭. অনলাইন নিবন্ধন ছাড়া কেনা যাবে না
অনলাইন নিবন্ধন ছাড়া সঞ্চয়পত্র কেনা যাবে না। তাই অনলাইন নিবন্ধন বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। ২০২১ সাল থেকে অনলাইনে সঞ্চয়পত্র ম্যানেজমেন্ট সিস্টেমে (ডিএনএসএস) নিবন্ধন ছাড়া কেউ সঞ্চয়পত্র কিনতে পারছেন না।
৮. অগ্রিম পরিকল্পনা ছাড়া বিনিয়োগ নয়
আপনার জরুরি প্রয়োজনে টাকা প্রয়োজন হতে পারে। কিন্তু আপনার সব সঞ্চয় সঞ্চয়পত্রে বিনিয়োগ করা আছে। আপনি বিপাকে পড়বেন। কারণ, সঞ্চয়পত্র তাৎক্ষণিকভাবে ভাঙালে মুনাফা কমে যায়। তাই আপনার ভবিষ্যৎ প্রয়োজন বিবেচনা করে সঞ্চয়পত্রে বিনিয়োগ করুন। তাই সঞ্চয়পত্রে বিনিয়োগের পর কিছু নগদ টাকা নিজের কাছে রাখতে পারেন।
৯. প্রতারণা এড়াতে অফিসে গিয়ে কিনুন
সঞ্চয়পত্র কিনতে দালাল বা ব্যক্তিপর্যায়ে লেনদেন একদম করবেন না। এটি করলে আপনার টাকা ঝুঁকির মুখে পড়তে পারে। তাই ডাকঘর, বাংলাদেশ ব্যাংক বা নির্ধারিত বাণিজ্যিক ব্যাংকের মাধ্যমে সঞ্চয়পত্র কিনুন।
১০. ব্যাংক হিসাব খুলে ঘরে বসেই মুনাফার টাকা নিন
সঞ্চয়পত্র কেনার আগে নিজের ব্যাংক হিসাব খুলে রাখুন। কারণ, সঞ্চয়পত্র কেনার সময়ই আপনাকে একটি ব্যাংক হিসাব নম্বর দিতে হয়। সেই হিসাবেই মুনাফার টাকা স্বয়ংক্রিয়ভাবে জমা হয়।