আ.লীগ নেতা সাইফুলের অবৈধ সম্পদের অনুসন্ধান শুরু
Published: 17th, June 2025 GMT
খুলনা সদর থানা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও জেলা আইনজীবী সমিতির সাবেক সভাপতি সাইফুল ইসলামের অবৈধ সম্পদের বিষয়ে অনুসন্ধান শুরু করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। এ জন্য কমিশনের সমন্বিত জেলা কার্যালয় খুলনার সহকারী পরিচালক রকিবুল ইসলামকে অনুসন্ধানকারী কর্মকর্তা নিয়োগ দেওয়া হয়েছে।
মঙ্গলবার অনুসন্ধান কার্যক্রম শুরু করেছেন দুদকের এ কর্মকর্তা। এর আগে গত ৯ এপ্রিল সাইফুলের সম্পদ অনুসন্ধানের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকাকালে জেলার প্রভাবশালী নেতাদের মধ্যে তিনি ছিলেন অন্যতম। জেলা আইনজীবী সমিতির মৃত সদস্যদের টাকা আত্মসাতের অভিযোগে তাঁর বিরুদ্ধে একাধিক মামলাও হয়েছে।
সাইফুল একাধিকবার খুলনা চেম্বার অব কমার্সের সহসভাপতি, অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন মালিক গ্রুপের মহাসচিব, জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি, ফুটবল অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতিসহ বিভিন্ন ‘লাভজনক’ পদে দায়িত্ব পালন করেন। এসব প্রতিষ্ঠানের বিপুল টাকা আত্মসাতের অভিযোগ রয়েছে তাঁর বিরুদ্ধে।
নৌপরিবহন মালিক গ্রুপের মহাসচিব থাকা অবস্থায় তাঁর বিরুদ্ধে সংগঠনের অর্থ দিয়ে ব্যক্তিগত প্রচার, লিফট কেনাসহ টাকা ব্যক্তিগত তহবিলে স্থানান্তর করে আত্মসাতের অভিযোগ রয়েছে। আইনজীবী সমিতির উন্নয়নকাজেও মোটা অঙ্কের অর্থ নয়ছয়ের অভিযোগ রয়েছে তাঁর বিরুদ্ধে।
দুদক থেকে জানা গেছে, সাইফুলের মালিকানাধীন আমিন-সামিন শিপিং লাইনস, আমিন-সামিন কনস্ট্রাকশন, আমিন-সামিন ট্রেডিং, এসএ বিল্ডার্স, নয়ন এন্টারপ্রাইজ, ইয়াহিয়া কনস্ট্রাকশন, ইউনিক আইস অ্যান্ড ফুডস এবং মুনমুন ট্রেড ইন্টারন্যাশনাল নামে আটটি কোম্পানি পাওয়া গেছে। এর বাইরে আর কোনো কোম্পানি আছে কিনা জানতে যৌথ মূলধন কোম্পানি পরিদপ্তরের নিবন্ধককে চিঠি দেওয়া হয়েছে।
এ ছাড়া খুলনা সিটি করপোরেশনে সাইফুলের নামে অন্য কোনো ট্রেড লাইসেন্স রয়েছে কিনা– তা জানতে চেয়েছে দুদক। অনুসন্ধানকারী কর্মকর্তা রকিবুল ইসলাম বলেন, সাইফুল নৌপরিবহন মালিক গ্রুপের মহাসচিব থাকাকালে আয়-ব্যয়ের হিসাব, জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি থাকা অবস্থায় বিভিন্ন খাতের আয়-ব্যয়ের রেকর্ড চাওয়া হয়েছে। বিশেষ করে কল্যাণ তহবিল, ভবন নির্মাণ ও বই কেনা বাবদ প্রাপ্ত টাকার ব্যয় বিবরণী, বিল-ভাউচার চাওয়া হয়েছে সংশ্লিষ্টদের কাছে।
দুদকের এ কর্মকর্তা আরও বলেন, আপাতত সাইফুলের নামে পাঁচটি নৌযানের (কার্গো) তথ্য পাওয়া গেছে। তাঁর নামে আর কোনো কার্গো বা ছোট জাহাজ রয়েছে কিনা– জানতে নৌপরিবহন অধিদপ্তরে চিঠি দেওয়া হয়েছে। তাঁর নামে দেশের কোথায় কোথায় জমি, ফ্ল্যাট ও প্লট রয়েছে এবং ব্যাংকসহ আর্থিক প্রতিষ্ঠানে কী পরিমাণ অর্থ জমা রয়েছে, সে তথ্যেরও অনুসন্ধান চলছে।
গত বছরের জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের পর থেকে আওয়ামী লীগ নেতা সাইফুল ইসলাম আত্মগোপনে রয়েছেন। ফলে এ বিষয়ে বক্তব্য জানতে তাঁর সঙ্গে যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি।
.উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: আওয় ম ল গ কর মকর ত ন পর বহন ল ইসল ম আইনজ ব
এছাড়াও পড়ুন:
লক্ষ্মীপুরে আইনজীবী-কর্মচারী হাতাহাতির ঘটনায় মামলা, পরোয়ানা জারি
লক্ষ্মীপুরের আদালতে আইনজীবী ও কর্মচারীদের মধ্যে হাতাহাতির ঘটনায় মামলা হয়েছে। আহত সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালত-৩ এর আহত স্টেনোগ্রাফার আশরাফুজ্জামান দুই আইনজীবীকে আসামি করে মামলাটি করেছেন।
রবিবার (১৫ জুন) সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেটের (সদর-আমলি আদালত) বিচারক আবু সুফিয়ান মোহাম্মদ নোমানের আদালতে মামলাটি হয়। বিচারক মামলাটি আমলে নিয়ে অভিযুক্ত আইনজীবী আশিকুর রহমান ও মিরাজ পলোয়ানের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেন।
সোমবার (১৬ জুন) সকালে আদালত পরিদর্শক মো. আবদুল জলিল মামলার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
আরো পড়ুন:
রাজবাড়ীতে ২ শিক্ষার্থীকে ধর্ষণ, গ্রেপ্তার ১
দৃষ্টিহীন বৃদ্ধকে পিটিয়ে হত্যার ঘটনায় গ্রেপ্তার ২
জেলা আইনজীবী সমিতির সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট মো. রফিক উল্যাহ আইনজীবীদের বিরুদ্ধে মামলার নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছেন। তিনি বলেন, “একজন আইনজীবীর বাসার গেট চুরির মামলায় আসামিদের জামিন দেন বিচারক। আসামিদের রিমান্ডের আবেদন ও জামিনের বিরোধিতা করলেও তা আমলে নেননি তিনি। ফলে ন্যায়বিচার পাননি আইনজীবীরা। বিষয়টি জেলা জজসহ সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছি এবং ওই বিচারকের অপসারণ না হওয়া পর্যন্ত আদালত বর্জনের সিদ্ধান্ত নিয়েছি।”
তিনি বলেন, “রবিবার আদালতের কার্যক্রম শুরু হলে শুধু এজলাসে গিয়ে, ওই আদালত বর্জনের সিদ্ধান্ত জানিয়ে দেই। কোনো হট্টগোল বা হামলা হয়নি।”
রায়পুর প্রিন্সিপাল কাজী ফারুকী স্কুল এন্ড কলেজের ইংরেজি বিভাগের প্রভাষক আহম্মেদ কাউসার উদ্দিন জামানের (৩৫) বিরুদ্ধে গত ৬ জুন সদর থানায় চুরির মামলা দায়ের করেন তারই প্রতিবেশী জেলা জজ আদালতের আইনজীবী আবু তৈয়ব। মামলায় আরো দুইজনকে আসামি করা হয়। আসামি কাউসার ও রুবেল গ্রেপ্তার হয়ে কারাগারে ছিলেন।
গত ১০ জুন সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালত-৩ এর বিচারক এম সাইফুল ইসলাম তাদের জামিন মঞ্জুর করেন। এ নিয়ে তাৎক্ষণিক ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানান আইনজীবী সমিতির নেতারা ও আইনজীবীরা।
আদালত সূত্র জানায়, ৯ জুন আসামিদের জামিন প্রার্থনা করা হয়। এতে আসামিপক্ষ উল্লেখ করেন, মামলার বাদী আইনজীবী হওয়ায় আদালতে তাদের পক্ষে কোনো আইনজীবী জামিন শুনানিতে অংশ নিতে ইচ্ছুক নন। আসামিরা তাদের পক্ষে আইনজীবী না পেয়ে জামিন শুনানির জন্য লক্ষ্মীপুর লিগ্যাল এইড অফিসে আইনি সহায়তা চান। সেখান থেকে দুইজন আইনজীবীকে শুনানি করতে বলা হলেও তারা হেনস্তার ভয়ে জামিন শুনানিতে অংশ নেননি।
অন্যদিকে, বাদীপক্ষের আইনজীবী আসামিদের বিরুদ্ধে জামিনের বিরোধিতা করেন। পরদিন ১০ জুন নথি প্রাপ্তি সাপেক্ষে জামিন শুনানির জন্য রাখা হয় এবং তদন্তকারী কর্মকর্তা আসামিদের পাঁচ দিনের রিমান্ডের আবেদন করেন। বিষয়টি নিয়ে আদালতের পর্যালোচনায় উঠে আসে, ঈদুল আজহার ছুটির কারণে আদালতের স্বাভাবিক কার্যক্রম বন্ধ ছিল। ৬ জুন আসামিদের গ্রেপ্তারের পর থেকে চার দিন তারা জামিন শুনানির সুযোগ পাননি।
বাদী একজন আইনজীবী হওয়ায় আসামিরা পক্ষে কোনো আইনজীবীও পাননি। ১৪ জুন পর্যন্ত আদালত বন্ধ থাকায় এবং মামলায় জামিন অযোগ্য কোনো গুরুতর অভিযোগ না থাকায় উভয় পক্ষের শুনানি শেষে দরখাস্ত নিষ্পত্তি করে আদালত।
বিচারক চার দিনের হাজতবাস ও ঈদ বিবেচনায় কাউসার ও রুবেলকে ১০০ টাকার মুচলেকায় একজন গণ্যমান্য ব্যক্তির জিম্মায় জামিন দেন।
এ নিয়ে আইনজীবীদের মধ্যে ক্ষোভ তৈরি হয়। রবিবার (১৫ জুন) ঈদের ছুটি শেষে আদালতের কার্যক্রম শুরু হলে আইনজীবী সমিতি বিচারক এম সাইফুল ইসলামের আদালত বর্জনের সিদ্ধান্ত নেয়। সকালেই সাত-আটজন আইনজীবী বিচারকের কক্ষে ঢুকে বর্জনের ঘোষণা দেন। এ সময় হট্টগোল ও উত্তেজনার সৃষ্টি হলে বিচারক আদালত কর্মচারীদের দরজা বন্ধ করে দিতে বলেন। এসময় আইনজীবী ও কর্মচারীদের মধ্যে হাতাহাতি হয়। এজলাসের স্টেনোগ্রাফার আশরাফুজ্জামান আহত হন এবং বিচারক বিচারকার্য শেষ না করেই এজলাস ত্যাগ করেন।
ঢাকা/জাহাঙ্গীর/মাসুদ