শপথ ছাড়াই নানা ‘নির্দেশনা’ ইশরাকের, সরকার নীরব
Published: 18th, June 2025 GMT
এবার ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের প্রায় ৭০ জন ওয়ার্ড সচিবের সঙ্গে নগর ভবনে বৈঠক করেছেন ইশরাক হোসেন। শপথ না নিয়েই নিজেকে মেয়র দাবি করা বিএনপির এই নেতা গতকাল মঙ্গলবার দুপুরে ঢাকা দক্ষিণ সিটির প্রধান কার্যালয় নগর ভবনের নিচতলায় একটি মিলনায়তনে সভা করেন। এই সভায় ঢাকা দক্ষিণ সিটির ১০ প্রশাসনিক অঞ্চলের কর্মকর্তারাও অংশ নেন।
নগর ভবন মিলনায়তনে গতকালের সভার ব্যানারে লেখা ছিল, ‘ওয়ার্ড পর্যায়ে নাগরিক সেবা নিশ্চিতকল্পে প্রশাসনিক কর্মকর্তা এবং ওয়ার্ড সচিবদের সঙ্গে মতবিনিময় সভা। প্রধান অতিথি ইঞ্জিনিয়ার ইশরাক হোসেন। মাননীয় মেয়র, ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন।’
সভা সূত্র জানায়, প্রতিটি ওয়ার্ডে বিএনপিপন্থী সাবেক কাউন্সিলর ও বিশিষ্ট ব্যক্তিদের নিয়ে পাঁচ সদস্যের কমিটি গঠনের ‘নির্দেশনা’ দিয়েছেন ইশরাক। এ ছাড়া কাউন্সিলরদের কার্যালয় থেকে নাগরিকেরা যেসব সেবা পেতেন, সেসব সেবা এই কমিটির মাধ্যমে দিতে বলেছেন তিনি। একই সঙ্গে প্রতিটি ওয়ার্ডের সচিবদের নিয়মিত অফিস করার পাশাপাশি নাগরিক সেবা তথা জন্ম-মৃত্যুনিবন্ধন, ওয়ারিশ সনদ, চারিত্রিক সনদসহ অন্যান্য সেবা দেওয়ারও নির্দেশনা দিয়েছেন তিনি।
ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনে ওয়ার্ড রয়েছে ৭৫টি। প্রতিটি ওয়ার্ডে একজন করে ওয়ার্ড সচিব থাকেন। তাঁদের মাধ্যমেই জন্ম ও মৃত্যুনিবন্ধনসহ নাগরিক সেবার কাজটি করতে হয়।
স্থানীয় সরকারবিশেষজ্ঞ ও নগর–পরিকল্পনাবিদেরা বলছেন, শপথ না নিয়ে আইনকানুন ও নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করে ইশরাক হোসেন যেভাবে ঢাকা দক্ষিণ সিটির নিয়ন্ত্রণ নিয়েছেন, এটি বাজে দৃষ্টান্ত হয়ে থাকবে। গায়ের জোরে এভাবে নগর ভবনের নিয়ন্ত্রণ নেওয়ার বিষয়টি নজিরবিহীন। এ ক্ষেত্রে অন্তর্বর্তী সরকার বিশেষ করে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের নীরবতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন তাঁরা।
ইশরাককে মেয়রের দায়িত্ব বুঝিয়ে দেওয়ার দাবিতে শুরু হওয়া আন্দোলনের কারণে এক মাসের বেশি সময় ধরে নগর ভবনে অচলাবস্থা চলছে। এর মধ্যেই গত সোমবার থেকে তিনি ‘মেয়রের দায়িত্ব পালন’ শুরু করেছেন। সেদিন নগর ভবন মিলনায়তনে প্রায় ৭০ জন পরিচ্ছন্নতা পরিদর্শকের সঙ্গে বৈঠক করে ডেঙ্গু পরিস্থিতি মোকাবিলায় বিভিন্ন নির্দেশনা দিয়েছেন তিনি। এ নিয়ে নানা মহলে তীব্র সমালোচনা হলেও গতকাল ওয়ার্ড সচিব ও প্রশাসনিক কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করলেন তিনি।
নগর ভবন সূত্র বলছে, আজ বুধবার ঢাকা দক্ষিণ সিটির প্রতিটি ওয়ার্ডের মশক সুপারভাইজারদের সঙ্গেও বৈঠক করবেন ইশরাক। পর্যায়ক্রমে প্রতিটি বিভাগের সঙ্গে তিনি বৈঠক করবেন বলে তাঁর ঘনিষ্ঠরা প্রথম আলোকে জানিয়েছেন।
স্থানীয় সরকার উপদেষ্টার পদত্যাগ দাবিনগর ভবন মিলনায়তনে ওয়ার্ড সচিব ও প্রশাসনিক কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠকের আগে গণমাধ্যমের সঙ্গে কথা বলেন ইশরাক। এ সময় তিনি স্থানীয় সরকার উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভুঁইয়ার পদত্যাগ দাবি করেন। তিনি অভিযোগ করেন, ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র হিসেবে তাঁর শপথ নিয়ে ‘অসত্য এবং বিভ্রান্তিমূলক’ তথ্য গণমাধ্যমে তুলে ধরেছেন স্থানীয় সরকার উপদেষ্টা। পাশাপাশি এই উপদেষ্টার বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ তদন্ত করতে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) প্রতিও আহ্বান জানান তিনি।
ইশরাক বলেন, ‘অসত্য এবং বিভ্রান্তিমূলক তথ্য গণমাধ্যমে উপস্থাপন করায় স্থানীয় সরকার উপদেষ্টা পদে থাকার নৈতিক অধিকার হারিয়েছেন। তিনি শপথ ভঙ্গ করেছেন। শপথ ভঙ্গ করার জন্য আমরা তাঁর পদত্যাগ দাবি করছি।’
বিএনপি নেতা ইশরাক অভিযোগ করেন, বিজয়ী প্রার্থীর নামে গেজেট প্রকাশিত হলে পরাজিত প্রার্থী অথবা যেকোনো একজন নাগরিককে সজীব ভুঁইয়ার মতো ব্যক্তি ইন্ধন দিয়ে শপথ না পড়ানোর জন্য হাইকোর্টে রিট মামলা দায়ের করাবেন। ওই রিট মামলাটি অনিষ্পন্ন থাকলে গেজেটে উল্লিখিত ৩০ দিন মেয়াদ শেষ হয়ে গেলে ভবিষ্যতে কোনো জনপ্রতিনিধি শপথ পড়ার সুযোগ পাবেন না।
শপথ না নিয়ে নগর ভবনে বৈঠক করে বিভিন্ন বিভাগকে নির্দেশনা দেওয়ার মাধ্যমে কার্যত অন্তর্বর্তী সরকারের নিয়ন্ত্রণকে চ্যালেঞ্জ করা হচ্ছে। আদিল মুহাম্মদ খান, নগর–পরিকল্পনাবিদইশরাকের করা বিভিন্ন অভিযোগের বিষয়ে উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভুঁইয়ার বক্তব্য জানতে গতকাল রাতে মুঠোফোনে তাঁর সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করেছে প্রথম আলো; কিন্তু তিনি ফোন ধরেননি। অবশ্য সোমবার তিনি প্রথম আলোকে বলেছিলেন, ‘সিটি করপোরেশনের মেয়াদ শেষ হয়ে যাওয়ার পর সেখানে নির্বাচন করেই নতুন একজনকে মেয়র দেওয়ার সুযোগ আছে। এ ছাড়া শপথ পাঠ করানোর সুযোগ নেই।’
ঢাকা দক্ষিণ সিটির মেয়র পদে নির্বাচন হয় ২০২০ সালের ১ ফেব্রুয়ারি। সেই নির্বাচনে ব্যাপক অনিয়ম ও জালিয়াতির অভিযোগ ওঠে। নির্বাচনে বিএনপির প্রার্থী ছিলেন ইশরাক হোসেন। গত বছরের ৫ আগস্ট গণ-অভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর দক্ষিণ সিটির মেয়র পদ থেকে শেখ ফজলে নূর তাপসকে অপসারণ করে সরকার। চলতি বছরের ২৭ মার্চ একটি নির্বাচনী ট্রাইব্যুনাল ইশরাক হোসেনকে গত সিটি নির্বাচনে বিজয়ী ঘোষণা করেন। এরপর ইশরাককে মেয়র ঘোষণা করে ২৭ এপ্রিল গেজেট প্রকাশ করে ইসি।
ইশরাক হোসেনকে মেয়র ঘোষণা করে নির্বাচনী ট্রাইব্যুনালের রায় ও গেজেটের কার্যক্রম স্থগিত চেয়ে করা লিভ টু আপিল গত ২৯ মে পর্যবেক্ষণসহ নিষ্পত্তি করেন আপিল বিভাগ। আদেশের পর ইশরাকের আইনজীবী এ এম মাহবুব উদ্দিন খোকন সাংবাদিকদের বলেছিলেন, আদালত পর্যবেক্ষণ দিয়েছেন যে নির্বাচন কমিশন স্বাধীন সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান। তারাই এ ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেবে।
উচ্চ আদালতের পর্যবেক্ষণ পর্যালোচনা করে ৪ জুন নির্বাচন কমিশনার আবুল ফজল মো.
ইশরাককে মেয়রের দায়িত্ব বুঝিয়ে দেওয়ার দাবিতে তাঁর সমর্থকেরা ১৪ মে থেকে নগর ভবনে অবস্থান নিয়ে টানা কর্মসূচি পালন করছেন। ‘ঢাকাবাসী’র ব্যানারে এই কর্মসূচি পালন করা হচ্ছে। কর্মসূচির দ্বিতীয় দিনেই নগর ভবনে তালা ঝুলিয়ে দেওয়া হয়। এর পর থেকে নগর ভবনে সব ধরনের দাপ্তরিক কাজ বন্ধ রয়েছে। শুধু মশকনিধন ও পরিচ্ছন্নতা অভিযানের কাজ চলছে। কর্মকর্তারা অফিস করতে পারছেন না।
ইশরাক গতকাল সাংবাদিকদের বলেন, সরকারের কাছ থেকে বিষয়টি সুরাহা (মেয়র পদে তাঁর শপথের ববস্থা) হবে এমন একটি বার্তা পেয়েছিলেন। কিন্তু সংকটের সুরাহা না হলে আন্দোলন আবার রাজপথে গড়াবে। তিনি বলেন, ‘আজকের অবস্থার জন্য দায়ী বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকার এবং উপদেষ্টারা। প্রধান উপদেষ্টা এটিকে এড়িয়ে যেতে পারেন না। আমি উনার উদ্দেশ্যে বলতে চাই বিষয়টি আপনার নজরে আনুন। যৌক্তিক সমাধান করে ঢাকাবাসীকে মুক্তি দিন। ’
গতকালও বেলা ১১টা থেকে ১টা পর্যন্ত নগর ভবনের নিচতলায় অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ করে ইশরাকের সমর্থক ও ঢাকা দক্ষিণ সিটির কর্মচারীদের একটি অংশ।
বাজে দৃষ্টান্ত, ব্যবস্থা নেওয়া উচিতদলবল নিয়ে নগর ভবন দখল করে সরকারি ব্যবস্থাপনাকেই ইশরাক চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিয়েছেন বলে মনে করেন নগর–পরিকল্পনাবিদদের সংগঠন বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব প্ল্যানার্সের সভাপতি আদিল মুহাম্মদ খান। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, শপথ না নিয়ে নগর ভবনে বৈঠক করে বিভিন্ন বিভাগকে নির্দেশনা দেওয়ার মাধ্যমে কার্যত অন্তর্বর্তী সরকারের নিয়ন্ত্রণকে চ্যালেঞ্জ করা হচ্ছে। নির্বাচন কমিশনের সিদ্ধান্ত এবং উচ্চ আদালতের রায়ের মাধ্যমে অচলাবস্থার সমাধান হওয়া উচিত ছিল। বর্তমান পরিস্থিতিতে সরকারকে অবশ্যই বিধি অনুযায়ী ব্যবস্থা নিতে হবে।
জোর করে নিজের তত্ত্বাবধানে নগর ভবন পরিচালনার দায়িত্ব নেওয়াকে বাজে দৃষ্টান্ত বলেও উল্লেখ করেন অধ্যাপক আদিল মুহাম্মদ খান। তিনি বলেন, বড় রাজনৈতিক দল হিসেবে বিএনপিকে বিষয়টি গুরুত্ব দিয়ে দেখা দরকার। তরুণ রাজনৈতিক নেতা হিসেবে ইশরাক হোসেনেরও বোধোদয় হওয়া উচিত।
উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: স থ ন য় সরক র উপদ ষ ট ইশর ক হ স ন কর মকর ত প রথম আল নগর ভবন সরক র র ইশর ক র ন ইশর ক ব এনপ গতক ল শপথ ন ব ষয়ট
এছাড়াও পড়ুন:
১৩ বছরের বড় মডেলের প্রেমে মজেছেন ইয়ামাল
ফুটবল দুনিয়ায় নতুন সম্ভাবনার নাম লামিনে ইয়ামাল। বার্সেলোনার এই স্প্যানিশ তারকা ইতোমধ্যেই নিজের দক্ষতায় মুগ্ধ করেছেন সবাইকে। ব্যস্ত মৌসুম শেষে ১৭ বছর বয়সী ইয়ামাল লম্বা ছুটিতে আছেন। স্প্যানিশ দৈনিক ‘মুন্দো দেপোর্তিভো’ দাবি করেছে, ১৩ বছরের বড় প্রেমিকা স্প্যানিশ মডেল, ইনফ্লুয়েন্সার ও বিমান ক্রু ফাতি ভাজকেজের সাথেই নাকি তার এই লম্বা ছুটি কাটছে। আসলেই ঘটনা কতটা সত্যি?
ছুটি কাটাতে ইতালিতে অবস্থান করছেন ইয়ামাল। সেখানে একটি রিসোর্টের সুইমিংপুলের পাশে বিশ্রামরত একটি ছবি তিনি প্রকাশ করেন ইনস্টাগ্রামে। এরই মধ্যে স্প্যানিশ মডেল, ইনফ্লুয়েন্সার ও বিমানকর্মী ফাতি ভাজকেজও একটি ছবি প্রকাশ করেন ইনস্টাগ্রামে. একই জায়গা, একই সুইমিংপুল। এতেই শুরু হয় আলোচনা।
মুন্দো দেপোর্তিভো জানিয়েছে, ইয়ামাল ও ৩০ বছর বয়সী ফাতি ভাজকেজ একই রিসোর্টে সময় কাটিয়েছেন এবং দুজন প্রেমের সম্পর্কে রয়েছেন বলে ধারণা করা হচ্ছে। দুজনের বয়সের ব্যবধান ১৩ বছর হলেও তা যেন বাধা নয় ভালোবাসায়। আরেক স্প্যানিশ সাময়িকী লেকচারাস একটি ছবি প্রকাশ করেছে, যেখানে ইয়ামাল ও ফাতিকে একসঙ্গে স্পিডবোটে দেখা যায়। ইয়ামাল চালাচ্ছেন, আর পেছনে বসে তাঁকে জড়িয়ে ধরে আছেন ফাতি। এতে সম্পর্কের গুঞ্জন আরও জোরালো হয়েছে।
তবে এ বিষয়ে ভিন্ন মত দিয়েছেন ইনফ্লুয়েন্সার জাভি দে ওইয়োস। তিনি দাবি করেছেন, ইয়ামাল ও ফাতির মধ্যে কোনো প্রেমের সম্পর্ক নেই। তিনি নিজেও ওই রিসোর্টে ছিলেন এবং জানিয়েছেন, ইয়ামালের সঙ্গে বার্সেলোনার আরও কয়েকজন সতীর্থও সেখানে ছিলেন।
তবে প্রেমের গুঞ্জন ছড়ানোর পর থেকেই নানা হুমকির মুখে পড়েছেন ফাতি। এ নিয়ে ইনস্টাগ্রামে ক্ষোভ প্রকাশ করে তিনি বলেন, ‘এটা খুবই দুঃখজনক যে কিছু মানুষ এমন অন্ধভাবে ঘৃণা করে যে, তারা এমন একজন মানুষের মৃত্যুকামনা করে যাকে তারা চিনেই না। আমি তাদের আরোগ্য কামনা করি, যেন তারা আর কাউকে ধ্বংস করতে না চায়।’
পেশায় এয়ারলাইন্সের ফ্লাইট অ্যাটেনডেন্ট ফাতি ভাজকেজ একজন জনপ্রিয় ইনফ্লুয়েন্সারও। ইউটিউবে তার অনুসারী ১০ লাখের বেশি, ইনস্টাগ্রামে প্রায় ৪ লাখ ও টিকটকে ৩ লাখ ২০ হাজারেরও বেশি অনুসারী রয়েছে।