আগামী ২০২৫-২৬ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে প্লাস্টিকের তৈরি টেবিলওয়্যার, কিচেনওয়্যারসহ সব ধরনের গৃহস্থালি পণ্যের উৎপাদন পর্যায়ে ভ্যাট সাড়ে ৭ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ১৫ শতাংশ নির্ধারণ হয়েছে। এর ফলে এসব পণ্যের দাম বেড়ে যাবে। এতে দরিদ্র ও মধ্যবিত্তের খরচ বাড়বে। এ পরিস্থিতিতে ভ্যাট কমিয়ে ৫ শতাংশ করা দরকার।

গতকাল বুধবার রাজধানীর পল্টনে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন প্লাস্টিক পণ্য প্রস্তুতকারক ও রপ্তানিকারকদের সংগঠন বিপিজিএমইএর সভাপতি সামিম আহমেদ। এ সময় তিনি বাজেটে অন্তর্ভুক্তির জন্য ১৫টি সংশোধনী প্রস্তাব তুলে ধরেন। সংবাদ সম্মেলনে সংগঠনের অন্যান্য নেতা ও এই খাতের উদ্যোক্তারা উপস্থিত ছিলেন।

প্রস্তাবিত বাজেটে প্লাস্টিক খাতের জন্য করা গুরুত্বপূর্ণ প্রস্তাবগুলো বিবেচনা করা হয়নি– এমন অভিযোগ করে সামিম আহমেদ বলেন, প্রস্তাবিত বাজেটে প্লাস্টিক খাত বেশ উপেক্ষিত হয়েছে। প্লাস্টিক খেলনাশিল্প উদীয়মান খাত। এখানে নতুন নতুন কর্মসংস্থান হচ্ছে। অথচ সব মিলিয়ে এ খাতে ৮৭ শতাংশের বেশি শুল্ক-কর রয়েছে। এ ছাড়া এখনও প্লাস্টিক শিল্পের মৌলিক কাঁচামালের ৮০ থেকে ৯০ শতাংশই আমদানি করতে হয়। এসব কাঁচামালের আমদানিতে ৫ শতাংশ শুল্ক আরোপ করা হয়েছে। স্থানীয় শিল্পের বিকাশে এটি কমানো জরুরি। বস্ত্র ও পোশাকসহ কয়েকটি রপ্তানিমুখী শিল্প খাতে যন্ত্রপাতি, যন্ত্রাংশ ও উপকরণ ইত্যাদি আমদানিতে মূসক, সম্পূরক শুল্ক, নিয়ন্ত্রণমূলক শুল্ক অব্যাহতির সুবিধা পচ্ছে। প্লাস্টিক খাতকেও এই সুবিধা দেওয়ার দাবি জানান তিনি।

বিপিজিএমইএ সভাপতি বলেন, দেশে ছয়-সাত হাজার প্লাস্টিক পণ্য উৎপাদনের কারখানা রয়েছে। কিন্তু বিদ্যুৎ ও জ্বালানির উচ্চমূল্যের পাশাপাশি সরবরাহ সংকট ও ব্যাংকের উচ্চ সুদহারের গত দেড় বছরে প্রায় ২০ শতাংশ; অর্থাৎ ১২০০ থেকে ১৪০০ কারখানা বন্ধ হয়েছে বা বন্ধের পথে রয়েছে। তবে সাংবাদিকরা জানতে চাইলে সুনির্দিষ্টভাবে কোনো কারখানার নাম বলেননি তিনি।

সামিম আহমেদ বলেন, করোনার মহামারির সময়ে ব্যাপক ক্ষতির মুখে পড়ে প্লাস্টিক খাত। তখনও অনেক কারখানা বন্ধ হয়েছিল। রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণেও পড়তে হয় ক্ষতির মুখে। বর্তমানে ইরান-ইসরায়েল যুদ্ধ আবারও শঙ্কা তৈরি করেছে। এলএনজিসহ অন্যান্য কাঁচামাল আমদানির খরচ বাড়বে। এতে আবারও ক্ষতির মুখে পড়বে প্লাস্টিক খাত।

বিদ্যুৎ সংকট পরিস্থিতি তুলে ধরে বিপিজিএমইএর সহসভাপতি এনামুল হক বলেন, গাজীপুর শিল্প এলাকার কারখানাগুলোতে ব্যাপকভাবে উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে। সেখানে দৈনিক ৮ থেকে ১০ বার বিদ্যুৎ চলে যায়। অথচ আড়াই ঘণ্টা সময় লাগে একটি মেশিন গরম হতে। গ্যাস-বিদ্যুতের দাম বাড়ছে; কিন্তু নিরবচ্ছিন্ন সরবরাহ দেওয়া হচ্ছে না।

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: প রস ত ব ত আমদ ন

এছাড়াও পড়ুন:

প্রথম চালানে ৩৭ হাজার ৪৬০ কেজি ইলিশ গেল ভারতে

দুর্গাপূজা উপলক্ষে যশোরের বেনাপোল স্থলবন্দর দিয়ে প্রথম চালানে ৩৭ হাজার ৪৬০ কেজি ইলিশ মাছ ভারতে রপ্তানি হয়েছে। আজ বুধবার দেশের ছয়টি প্রতিষ্ঠান ১২ দশমিক ৫০ ডলার কেজিতে এই ইলিশ রপ্তানি করা হয়েছে, যা বাংলাদেশি টাকায় ১ হাজার ৫২৫ টাকা।

অথচ এদিন যশোর শহরের মাছের আড়তে ৫০০ থেকে ৬০০ গ্রাম আকারের প্রতি কেজি ইলিশ মাছ ১ হাজার ৪৫০ থেকে ১ হাজার ৫৫০ টাকায় পাইকারি বেচা–কেনা হয়েছে। খুচরা বাজারে সেই ইলিশ কেজিতে ৫০ থেকে ১০০ টাকা বেশি দরে ভোক্তাকে কিনতে হচ্ছে; অর্থাৎ দেশের খুচরা বাজারের দামের চেয়ে কম দামে ইলিশ ভারতে রপ্তানি হচ্ছে।

দেশের চেয়ে কম দামে ইলিশ মাছ রপ্তানি কীভাবে সম্ভব হচ্ছে, এমন প্রশ্নের জবাবে রপ্তানিকারকদের ক্লিয়ারিং অ্যান্ড ফরওয়ার্ডিং (সিএন্ডএফ) এজেন্ট জুয়েল এন্টারপ্রাইজের স্বত্বাধিকারী শহিদুল ইসলাম বলেন, ‘রপ্তানিকারকেরা ইলিশের জাহাজ থেকে সরাসরি মাছ কেনেন।‌ ছোট–বড় মিলিয়ে যখন কেনেন, তখন একটু কম দামে তাঁরা কিনতে পারেন। এ কারণে তাঁদের পুষিয়ে যায়। এর চেয়ে বেশি কিছু আমার জানা নেই।’

যশোর শহরের বড় বাজারের মাছ বাজার ঘুরে দেখা গেছে, ইলিশ মাছের সরবরাহ কম। যে কারণে ৫০০ থেকে ৬০০ গ্রাম ওজনের ইলিশ মাছ ১ হাজার ৪০০ থেকে ১ হাজার ৫০০ টাকা কেজি দরে বেচাকেনা হচ্ছে। খুচরা ইলিশ বিক্রেতা লিয়াকত আলী বলেন, ‘গত বছরের তুলনায় এ বছর ইলিশ মাছের দাম বাড়তি। বাজারে সরবরাহ কম। যে কারণে এ বছর ইলিশ মাছের দাম কমার সম্ভাবনা আর দেখছি না।’

যশোর বড় বাজার মৎস্যজীবী আড়তদার সমিতির সাধারণ সম্পাদক শেখ পিয়ার মোহাম্মদ জানান, আজ যশোরের বাজারে ৫০০ থেকে ৬০০ গ্রাম আকারের ইলিশ মাছ ১ হাজার ৪৫০ থেকে ১ হাজার ৫৫০ টাকা কেজি দরে পাইকারি কেনাবেচা হয়েছে। আর কেজি আকারের ইলিশ প্রতি কেজি ৩ হাজার টাকার ওপরে বেচাকেনা হয়েছে। ভারতের রপ্তানির কারণে স্থানীয় বাজারে এখন ইলিশ মাছ সরবরাহে ঘাটতি রয়েছে, যে কারণে দাম বেশি। অথচ গত বছর এই সময়ে কেজি আকারের ইলিশ মাছের দাম ছিল সর্বোচ্চ ১ হাজার ৬০০ টাকা কেজি। এবার প্রায় দ্বিগুণ দামে সেই ইলিশ কেনাবেচা হচ্ছে।

বেনাপোল স্থলবন্দরের মৎস্য পরিদর্শন ও মাননিয়ন্ত্রণ কেন্দ্র সূত্রে জানা গেছে, এ বছর সরকার ৩৭টি প্রতিষ্ঠানের অনুকূলে ১ হাজার ২০০ টন ইলিশ ভারতে রপ্তানির অনুমতি দিয়েছে। আজ থেকে ইলিশ মাছ রপ্তানি শুরু হলো। গত বছর ইলিশ রপ্তানির অনুমতি ছিল ২ হাজার ৪২০ টন। বেনাপোল বন্দর দিয়ে রপ্তানি হয়েছিল মাত্র ৫৩২ টন। এবারও অনুমোদনকৃত ইলিশ রপ্তানির কোটা পূরণ হবে কি না, তা নিয়ে সন্দেহ রয়েছে। ৫ অক্টোবরের মধ্যে ইলিশ রপ্তানি শেষ করতে নির্দেশ দিয়েছে মৎস্য অধিদপ্তর।

জানতে চাইলে বেনাপোল স্থলবন্দরের মৎস্য পরিদর্শন ও মাননিয়ন্ত্রণ কেন্দ্রের ফিশারিজ কোয়ারেন্টিন সজীব সাহা বলেন, দুর্গাপূজা উপলক্ষে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় অনুমোদিত ইলিশ রপ্তানির প্রথম চালানে বেনাপোল স্থলবন্দর দিয়ে ১২ দশমিক ৫০ ডলার মূল্যে ৩৭ দশমিক ৪৬০ টন ইলিশ রপ্তানি হয়েছে। ছয়টি প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে এই ইলিশ ভারতে পাঠানো হয়েছে। রপ্তানি করা ইলিশের একটি বাক্স খুলে দেখা গেছে, ৩৮টি ইলিশ মাছের ওজন ২১ কেজি; অর্থাৎ প্রতিটি ইলিশের ওজন ছিল ৫৫০ গ্রাম। এ ছাড়া ৭০০ থেকে ৮৫০ গ্রাম ওজনের ইলিশ মাছও রপ্তানি হয়েছে। ৫৫০ গ্রাম থেকে ৮৫০ গ্রাম আকারের মধ্যে ইলিশ মাছ রপ্তানি হচ্ছে।

পদ্মার রুপালি ইলিশ স্বাদ আর গন্ধে অতুলনীয় হওয়ায় দুই বাংলায় এ মাছ বেশ জনপ্রিয়। বিশেষ করে দুর্গাপূজায় অতিথি আপ্যায়নে খাবারের প্রধান তালিকায় ইলিশ রাখেন কলকাতার বাঙালিরা। আগে ইলিশ সাধারণ রপ্তানি পণ্যের তালিকায় উন্মুক্ত থাকলেও উৎপাদন সংকট দেখিয়ে ২০১২ সালে দেশের বাইরে ইলিশ রপ্তানি বন্ধ করে দেয় তৎকালীন সরকার। তবে ২০১৯ সাল থেকে বিশেষ বিবেচনায় কেবল দুর্গাপূজা উপলক্ষে আবারও ইলিশ রপ্তানির সুযোগ দেয় সরকার।

আরও পড়ুনদুর্গাপূজা উপলক্ষে ভারতের ‘বিশেষ অনুরোধে’ ইলিশ রপ্তানির অনুমতি: মৎস্য উপদেষ্টা২২ সেপ্টেম্বর ২০২৪

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • প্রথম চালানে ৩৭ হাজার ৪৬০ কেজি ইলিশ গেল ভারতে
  • গুদামে খাওয়ার অনুপযোগী চাল নিয়ে রাজশাহী খাদ্য বিভাগে তোলপাড়, ৮ তদন্ত কমিটি
  • ‘কেনতো পারমু না, হেইতে ইলশার সুরতটা দেইখ্যা যাই’
  • বাংলাদেশ ব্যাংক এক দিনে ২৬ ব্যাংক থেকে ৩৫ কোটি ডলার কিনল কেন
  • নিলামে ৩৫৩ মিলিয়ন ডলার কিনেছে বাংলাদেশ ব্যাংক
  • যুক্তরাজ্য থেকে আসছে মাদক এমডিএমএ, গ্রেপ্তার ৫
  • শ্রম আইন সংশোধন দ্রুত শেষ করতে বলেছে মার্কিন প্রতিনিধিদল
  • চাপে পড়ে নয়, অনুরোধে ভারতে ইলিশ পাঠানোর অনুমোদন: ফরিদা আখতার
  • ভোটের সরঞ্জাম আসছে ইসিতে
  • জামায়াত আমিরের সঙ্গে শিল্প মালিক‌দের সৌজন্য সাক্ষাৎ