ডার্ক ম্যাটার এক রহস্যময় ও অদৃশ্য পদার্থ, যা মহাবিশ্বের মোট ভরের প্রায় ২৭ ভাগ গঠন করে আছে বলে ধারণা করা হয়। ডার্ক ম্যাটার আলো বা অন্য কোনো তড়িৎ চুম্বকীয় বিকিরণ শোষণ, প্রতিফলিত বা নির্গত করে না। আর তাই ডার্ক ম্যাটার সরাসরি দেখা যায় না। বিজ্ঞানীরা এর অস্তিত্ব অনুমান করতে নানা ধরনের পরীক্ষা করছেন। বিজ্ঞানীরা কীভাবে ডার্ক ম্যাটারের অদৃশ্য উপস্থিতি অনুমান করেন, তা জানাতে গতকাল বৃহস্পতিবার রাজধানীর ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ে হয়ে গেল বিজ্ঞানবিষয়ক এক সেমিনার। ‘মেরুল বাড্ডা টকস ইন ম্যাথ অ্যান্ড ফিজিকস’ সেশনের অংশ হিসেবে আয়োজিত এই সেমিনারে ডার্ক ম্যাটার নিয়ে আলোচনা করেন যুক্তরাষ্ট্রের রাইস ইউনিভার্সিটির পদার্থবিজ্ঞান ও জ্যোতির্বিজ্ঞান বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক মোস্তফা আমিন। সেমিনারে ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়সহ দেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা অংশ নেন।

অধ্যাপক মোস্তফা আমিন তাঁর বক্তব্যে ডার্ক ম্যাটারের ধারণা দেন। ডার্ক ম্যাটারের অস্তিত্বের প্রমাণ ও আধুনিক জ্যোতির্বিজ্ঞানে এর ভূমিকা নিয়ে আলোচনা পাশাপাশি তিনি ব্যাখ্যা করেন কীভাবে বিজ্ঞানীরা মহাবিশ্বের বিভিন্ন গ্যালাক্সি, গ্যালাক্সি ক্লাস্টার ও কসমিক মাইক্রোওয়েভ ব্যাকগ্রাউন্ডের পর্যবেক্ষণের মাধ্যমে ডার্ক ম্যাটারের অদৃশ্য উপস্থিতি অনুমান করেন। তিনি গবেষণার বিভিন্ন ফলাফল ও ডার্ক ম্যাটার শনাক্তকরণের জন্য চলমান বিভিন্ন পরীক্ষামূলক প্রচেষ্টা সম্পর্কেও আলোকপাত করেন।

সেমিনারে শিক্ষার্থীরা ডার্ক ম্যাটারের প্রকৃতি, ভবিষ্যৎ গবেষণা ও মহাবিশ্বের গঠন–সম্পর্কিত বিভিন্ন প্রশ্ন করেন। জবাবে অধ্যাপক মোস্তফা আমিন বলেন, ‘বর্তমানে ডার্ক ম্যাটারের অস্তিত্ব প্রমাণিত। আমরা এখন ডার্ক ম্যাটার আসলে কী নিয়ে গঠিত, তা জানার চেষ্টা করছি।’

সেমিনারে ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সৈয়দা তাসনুভা বলেন, ‘একজন আন্তর্জাতিক মানের গবেষকের কাছ থেকে সরাসরি ডার্ক ম্যাটার সম্পর্কে জানতে পারা আমাদের শিক্ষার্থীদের জন্য অসাধারণ অভিজ্ঞতা। এই ধরনের সেমিনার শিক্ষার্থীদের মধ্যে বৈজ্ঞানিক কৌতূহল বাড়াতে এবং গবেষণার প্রতি আগ্রহী করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।’

সেমিনারের আয়োজক ও ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের গণিত প্রোগ্রামের পরিচালক অধ্যাপক সৈয়দ হাসিবুল হাসান চৌধুরী বলেন, ‘অধ্যাপক আমিন ডার্ক ম্যাটারের ওপর একটি অসাধারণ বক্তৃতা দিয়েছেন আমাদের শিক্ষার্থীদের জন্য। ভবিষ্যতে ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের এ রকম আয়োজন আরও করা হবে।’

.

উৎস: Prothomalo

এছাড়াও পড়ুন:

জলবায়ু অর্থায়নের ৮৯১ প্রকল্পে ২ হাজার কোটি টাকার দুর্নীতি: টিআইবি

জলবায়ু অর্থায়নে জাতীয় তহবিলের (বিসিসিটি) বরাদ্দের ৫৪ শতাংশে দুর্নীতি হয়েছে বলে জানিয়েছে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি)।

টিআইবি জানায়, ২০১০ থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত সময়ে ৮৯১টি প্রকল্পে সংঘটিত দুর্নীতির প্রাক্কলিত পরিমাণ ২৪৮.৪ মিলিয়ন ডলার, যা প্রায় ২ হাজার ১১০.৬ কোটি টাকা।
মঙ্গলবার (৩ নভেম্বর) রাজধানীর টিআইবি কার্যালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে ‘বাংলাদেশে জলবায়ু অর্থায়নে সুশাসনের চ্যালেঞ্জ ও উত্তরণের উপায়’ শীর্ষক গবেষণা প্রতিবেদন প্রকাশ করে এসব তথ্য জানানো হয়।

আরো পড়ুন:

এনসিটিবির কার্যকর স্বায়ত্তশাসন, জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে হবে: টিআইবি

খাগড়াছড়িতে হতাহতের ঘটনায় দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চায় টিআইবি

গবেষণায় বলা হয়, ২০১০ থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত বিসিসিটি থেকে মোট ৪৫৮.৫ মিলিয়ন ডলার বরাদ্দ অনুমোদিত হয়। এর মধ্যে ৫৪ শতাংশ বরাদ্দ দুর্নীতিগ্রস্ত হয়েছে বলে প্রাক্কলন করা হয়েছে। প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, ট্রাস্টি বোর্ড ও কারিগরি কমিটির সদস্যদের যোগসাজশে এবং রাজনৈতিক বিবেচনায় প্রকল্প অনুমোদনের প্রবণতা দেখা গেছে। অথচ তহবিল ব্যবস্থাপক হিসেবে বিসিসিটির কর্মকর্তারা দুর্নীতি প্রতিরোধে কার্যকর পদক্ষেপ নেননি।

প্রতিবেদনে আরো বলা হয়, জলবায়ু অভিঘাত মোকাবিলায় প্রতিবছর বাংলাদেশের প্রয়োজন ১২ হাজার ৫০০ মিলিয়ন ডলার। কিন্তু ২০১৫ থেকে ২০২৩ সাল পর্যন্ত জাতীয় ও আন্তর্জাতিক তহবিল মিলিয়ে বছরে গড়ে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে মাত্র ৮৬.২ মিলিয়ন ডলার—যা প্রয়োজনের মাত্র ০.৭ শতাংশ।
জাতীয় তহবিল থেকে বরাদ্দ বছরে গড়ে ৮.২ শতাংশ হারে কমেছে, যদিও আন্তর্জাতিক তহবিল থেকে বরাদ্দ ৪৩.৮ শতাংশ হারে বেড়েছে। তবুও বরাদ্দকৃত অর্থ প্রয়োজনের তুলনায় অত্যন্ত সীমিত বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়।

জাতীয় তহবিলের প্রকল্প বাস্তবায়নে দীর্ঘসূত্রতা ও ব্যর্থতার কথাও প্রতিবেদনে উঠে এসেছে। ৮৯১টি প্রকল্পের মধ্যে ৫৪৯টির (৬১.৬ শতাংশ) মেয়াদ বৃদ্ধি করা হয়েছে। গড়ে প্রকল্পের মেয়াদ ৬৪৮ দিন থেকে বেড়ে ১,৫১৫ দিনে পৌঁছেছে; অর্থাৎ ১৩৩.৮ শতাংশ বৃদ্ধি। কোনো কোনো ক্ষেত্রে ৪ বছরের প্রকল্প বাস্তবায়নে সময় লেগেছে ১৪ বছর।

একইভাবে আন্তর্জাতিক তহবিলের প্রকল্পেও বিলম্বের চিত্র পাওয়া গেছে। ৫১টি প্রকল্পের মধ্যে ২১টির (৪১.২ শতাংশ) মেয়াদ বৃদ্ধি করা হয়েছে। গড়ে মেয়াদ ১,৯৫৮ দিন থেকে বেড়ে ২,৯৭৮ দিনে দাঁড়িয়েছে; ৫২.১ শতাংশ বৃদ্ধি।

সংবাদ সম্মেলনে টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, “বাংলাদেশের প্রতি বছর জলবায়ু ক্ষতিপূরণ হিসেবে ১০-১২ বিলিয়ন ডলার প্রয়োজন। কিন্তু ২০০৩ থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত আমরা পেয়েছি মাত্র ১.২ বিলিয়ন ডলার, যা অত্যন্ত নগণ্য।”

তিনি আরো বলেন, “দুর্নীতির কারণে জাতীয় তহবিলের ৫৪ শতাংশ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এ অর্থের সুবিধা পাওয়ার কথা থাকলেও তা দুর্নীতির কারণে পাওয়া যায়নি। রাজনৈতিক ব্যক্তিবর্গ ও প্রভাবশালীরা এ অর্থ লুটপাট করেছে। জবাবদিহিতা ও সুশাসনের অভাব, রাজনৈতিক প্রভাব, বাস্তবায়নকারী সংস্থাগুলোর অদক্ষতা ও অনিয়মের কারণেই এ দুর্নীতি ঘটেছে। আমরা এ অবস্থার পরিবর্তন চাই।” 
গবেষণা প্রতিবেদনে জলবায়ু অর্থায়নে সুশাসন নিশ্চিতের জন্য নয়টি সুপারিশ তুলে ধরা হয়। এর মধ্যে রয়েছে—

জলবায়ু পরিবর্তন ট্রাস্ট আইন, ২০১০ সংশোধন করে ট্রাস্টি বোর্ডে বিষয়ভিত্তিক বিশেষজ্ঞ অন্তর্ভুক্তি এবং কর্মকর্তাদের দায়িত্ব নির্ধারণ; ট্রাস্ট আইনে জবাবদিহি, নিরীক্ষা ও তথ্য উন্মুক্তকরণের বাধ্যবাধকতা যুক্ত করা; রাজস্ব বাজেটের বাইরে আন্তর্জাতিক তহবিল, কার্বন ট্রেডিং ও বেসরকারি উৎস থেকে অর্থ সংগ্রহে উদ্যোগ নেওয়া; স্বল্পমেয়াদি ক্ষুদ্র প্রকল্প বাদ দিয়ে প্রান্তিক ও ঝুঁকিপূর্ণ অঞ্চলে মধ্য ও দীর্ঘমেয়াদি প্রকল্পে অগ্রাধিকার দেওয়া; একটি স্বাধীন তদারকি প্রতিষ্ঠান গঠন করে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক প্রকল্পগুলোর নিয়মিত নিরীক্ষা; এবং অবকাঠামো ও সৌর সড়ক বাতি প্রকল্পের অনিয়মে জড়িতদের স্বাধীন তদন্তের মাধ্যমে বিচার নিশ্চিত করা।

ঢাকা/রায়হান/ইভা 

সম্পর্কিত নিবন্ধ