জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় শুধু উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠান নয়; দেশের প্রাকৃতিক দীক্ষাকেন্দ্রও বটে। ৭০০ একরের এই বিদ্যাপীঠে প্রাণ-প্রকৃতির সঙ্গে শিক্ষার্থীদের যে প্রগাঢ় বন্ধন, তা উচ্চশিক্ষার পরিবেশ নিশ্চিত করে। সম্প্রতি বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি লেকের ছবি সামাজিক মাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে। সুইজারল্যান্ড নামে পরিচিত এ লেকের ছবিতে দেখা যাচ্ছে, জলাশয় হলেও লেকটি ভরাট হয়ে পানিশূন্য হয়ে পড়েছে। লেকভর্তি সবুজ ঘাস। দু’পাশের জারুল বাগানে বেগুনি জারুল নুয়ে পড়ছে লেকের ওপর। নেটিজেনদের ভালোবাসা কুড়িয়েছে ছবিটি। 

এই একটি ছবিই বস্তুত বাংলাদেশের প্রাণ-প্রকৃতির ওপর নির্মম উন্নয়ন-করাঘাতের প্রতীকী চিত্র। জাহাঙ্গীরনগর এই অপরিকল্পিত উন্নয়ন প্রকল্পের প্রকৃষ্ট উদাহরণ। ২০ বছর আগেও ক্যাম্পাসটি ছিল প্রাকৃতিক পরিবেশে শিক্ষায়তনের দৃষ্টান্ত। পরিবেশের সঙ্গে মিশে গিয়ে শিক্ষার্থীদের সহাবস্থান ছিল পৃথিবীর যে কোনো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের জন্য অনুকরণীয়। বিগত সরকারের আমলে অবকাঠামোগত উন্নয়নের নামে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে নিষ্ঠুর নির্যাতনের শিকার হয়েছে প্রাকৃতিক পরিবেশ। দুঃখজনক হলেও সত্য, সেই ধারা অব্যাহত।

সম্প্রতি বিশ্ববিদ্যালয়ের গাণিতিক ও পদার্থবিষয়ক অনুষদের সম্প্রসারিত ভবন নির্মাণের জন্য ৫০টির বেশি গাছ উপড়ে ফেলা হয়েছে। দীর্ঘদিন মাস্টারপ্ল্যান ছাড়া এভাবে যত্রতত্র ভবন নির্মাণের বিরোধিতা করে আসছেন সেখানকার শিক্ষার্থীরা। তারা বলছেন, লেকচার থিয়েটারে সব একাডেমিক কার্যক্রম সম্পন্ন করার সুযোগ থাকা সত্ত্বেও গাছ কেটে সব বিভাগের আলাদা ভবন চাওয়া অযৌক্তিক। মাস্টারপ্ল্যান ছাড়া কোনো স্থাপনা নির্মাণ করা যাবে না। উপাচার্যের বক্তব্য অনুসারে, এত গাছ কাটা হয়েছে– তিনি আগে জানতেন না। কোনো অনুমতি ছাড়াই এটা করা হয়েছে। 

আমরা দেখেছি, বিরল তক্ষক, শেয়াল, গুইসাপ, কাঠবিড়ালিসহ শত শত অতিথি পাখির অভয়ারণ্য জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে রয়েছে ৪০টি লেক। অপ্রয়োজনীয় উন্নয়নের অংশ হিসেবে সেসব লেকের অনেকটিই ভরাট করা হয়েছে বা হচ্ছে। কেন্দ্রীয় লেকের বিশাল অংশ ভরাট করে গড়া হয়েছে নতুন কলাভবন। টারজান এলাকায়ও ভবন নির্মাণের নামে লেক ভরাটের অভিযোগ আছে। বনাঞ্চল এ বিশ্ববিদ্যালয়ে যত্রতত্র প্রশাসনিক ভবনের নামে দু-তিন বছরে কাটা হয়েছে আড়াই সহস্রাধিক গাছ। অথচ এগুলোর কোনো রূপরেখা বা পরিকল্পনা নেই; সবই হঠকারিতার বশবর্তী হয়ে করা। হাইওয়ে থেকে শহীদ মিনার দেখা যায় না– এই অজুহাতে ১ কিলোমিটার প্রবেশপথের সব গাছ কাটিয়েছিলেন ভূতপূর্ব উপাচার্য। 

সমাজবিজ্ঞান সংযুক্ত ভবন, ক্রীড়া কমপ্লেক্স, নতুন কলা সংযুক্ত ভবন, স্থানান্তরিত আইবিএ ভবনসহ একাধিক পরিকল্পনাহীন অবকাঠামো নির্মাণের নামে একের পর এক উজাড় করা হয়েছে বনাঞ্চল ও বন্যপ্রাণীর অভয়ারণ্য। এত সাজানো-গোছানো প্রাকৃতিক ক্যাম্পাস এ দেশে একেবারেই নগণ্য। সে ক্যাম্পাসের যেখানে পরিচর্যা, দেখভালের কথা স্বায়ত্তশাসিত জাবি প্রশাসনের; খোদ তারাই উদ্যোগ নিয়ে পরিবেশ ধ্বংস করছে। এর বিরুদ্ধে শিক্ষার্থীরা আন্দোলন গড়ে তুলেছেন। তারা জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে অবকাঠামোগত উন্নয়নের একটি পরিকল্পিত মাস্টারপ্ল্যান চেয়েছেন। এটি অবকাঠামোগত বিকাশে বাধা দেওয়া নয়, বরং যৌক্তিক করে তোলা। অথচ এ নিয়ে এত আন্দোলন, দাবিদাওয়া, মিছিল-সমাবেশ কি তাদের করার কথা? শিক্ষার্থীরা যে প্রকৃতির হত্যা চান না; তাদের স্বার্থের উসিলা করে প্রশাসন সে প্রকৃতির ওপর কুঠারাঘাত করেই বা কী করে? 

জাহাঙ্গীরনগরের এই ভয়াবহ পরিবেশ সংকটই আজ বাংলাদেশের সামগ্রিক চিত্র। একে লঘু করে দেখার সুযোগ নেই। আমাদের জলাশয়ে জল নেই, বনে নেই বনানী। পাহাড়-নদী-বিলের ছবিতে যা সুন্দর, আদতে তা নয়। নদী হত্যা, বন উজাড় মাত্রা ছাড়িয়েছে বহু আগে। যদি বেঁচে থাকার পরিবেশই না টিকে থাকল, তবে এই অবকাঠামো নির্মাণ কীসের এবং কার জন্য? 
সাহারা যদি মরুর জন্য পরিচিত হয়; হিমালয় হয় বরফের জন্য; তবে জাহাঙ্গীরনগরের প্রথম পরিচয় এর প্রাণ, প্রকৃতি, বন ও লেক।
কোনো সুউচ্চ শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত ভবন নয়। ভরাট হওয়া সুইজারল্যান্ড লেকের ছবি আর দেখতে চাই না। মনে রাখতে হবে, দিনশেষে এটি একটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান; করপোরেট এলাকা নয়। কাজেই জাবির প্রাকৃতিক ভারসাম্য রক্ষায় বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে এই নির্মাণ ম্যানিয়া থেকে মুক্ত হতেই হবে। পরিবেশের সব অংশীজনের কথা মাথায় রেখে, সর্বোপরি যাদের জন্য এত কর্মযজ্ঞ, সেই শিক্ষার্থীদের মতকে গুরুত্ব দিয়ে যৌক্তিক অবকাঠামোগত উন্নয়ন করতে হবে। জাহাঙ্গীরনগরের পরিবেশ রক্ষা আন্দোলন বিফল হলে বাংলাদেশের পরিবেশ রক্ষার দীর্ঘদিনের লড়াইও পিছিয়ে পড়বে। এ দেশের ভবিষ্যৎ রক্ষার জন্য হলেও তাই জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়কে প্রাকৃতিক উন্নয়ন ভারসাম্যের দৃষ্টান্ত স্থাপন করে দেখাতেই হবে।

শাফায়াত স্বচ্ছ: শিক্ষার্থী, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: র পর ব শ প রক ত র পর ব শ র র জন য ভবন ন ত ভবন

এছাড়াও পড়ুন:

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে আইটি প্রোগ্রামে ডিপ্লোমা, অনলাইন ও অফলাইনে আবেদন ফি ১০০০

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ইনস্টিটিউট অব ইনফরমেশন টেকনোলজিতে (আইআইটি–জেইউ) ফল–২০২৫ সেশনে পোস্টগ্র্যাজুয়েট ডিপ্লোমা ইন ইনফরমেশন টেকনোলজি (পিজিডিআইটি) প্রোগ্রামে ভর্তির প্রক্রিয়া চলছে।

দরকারি তথ্য

আবেদনের পদ্ধতি: অনলাইন ও অফলাইন

আবেদন ফি: এক হাজার টাকা

মোট ক্রেডিট ঘণ্টা: ৩৬ (৩০ ক্রেডিট তত্ত্ব + ৬ ক্রেডিট প্রকল্প)

//////মোট সময় ভর্তি পরীক্ষা তিন ত্রৈমাসিক, ১২ মাস।///////////

আরও পড়ুনমেডিকেল ও ডেন্টালে ভর্তির নীতিমালা প্রকাশ, নম্বর কাটাসহ যে যে পরিবর্তন৩০ অক্টোবর ২০২৫আবেদনের যোগ্যতা

যেকোনো স্নাতক ডিগ্রিতে ৪ স্কেলে কমপক্ষে ২.৫ সিজিপিএ অথবা দ্বিতীয় শ্রেণির সমমানের ডিগ্রিধারী আবেদনকারীরা ভর্তির প্রক্রিয়ার জন্য যোগ্য।

কোর্সের বিস্তারিত

শুক্রবার: পিজিডিআইটি (নিয়মিত) ও পিজিডিআইটি (সাইবার সিকিউরিটি)–এর প্রথম ও দ্বিতীয় সেমিস্টারের সব ক্লাস অনুষ্ঠিত হবে।

শনিবার: পিজিডিআইটি (সাইবার সিকিউরিটি)–এর তৃতীয় সেমিস্টার।

আরও পড়ুনহার্ভার্ডের গবেষণা বলছে, মূল্য হারাতে বসেছে ১০ ডিগ্রি২৮ অক্টোবর ২০২৫কোর্সের বিস্তারিত

১. ক্যাম্পাসের বাইরের শিক্ষার্থীদের জন্য পরিবহনের সুবিধা রয়েছে।

২. আধুনিক কম্পিউটার ল্যাবে ল্যাবভিত্তিক ক্লাস করানো হবে।

৩. সর্বনিম্ন খরচে কম সময়ে ডিপ্লোমা সম্পন্ন করা যাবে।

৪. জাবির পিএমআইটি প্রোগ্রামে ভর্তির জন্য পিজিডিআইটি স্নাতকদের জন্য কোটা আছে।

পরীক্ষার বিষয়

১. আইসিটির মৌলিক বিষয় ২৫ নম্বরের

২. মৌলিক গণিত ২৫ নম্বরের

৩. ইংরেজি ১০ নম্বরের

৪. এমসিকিউ ১ ঘণ্টার, মোট ৬০ নম্বরের পরীক্ষা হবে।

আরও পড়ুনজাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন পরীক্ষা ফি কমছে৩০ অক্টোবর ২০২৫ভর্তির দরকারি তারিখ

১. আবেদনের শেষ তারিখ: ১৯ নভেম্বর ২০২৫

২. ভর্তি পরীক্ষার তারিখ: ২১ নভেম্বর ২০২৫ বেলা তিনটায়, আইআইটি, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস

৩. ফলাফল প্রকাশ: ২৩ নভেম্বর ২০২৫

৪. ভর্তির সময়: ২৪ নভেম্বর থেকে ৪ ডিসেম্বর ২০২৫

৫. ওরিয়েন্টেশন ও ক্লাস শুরু: ৫ ডিসেম্বর ২০২৫

# বিস্তারিত তথ্য জানতে ওয়েবসাইট

আরও পড়ুনজগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম বর্ষের ভর্তি পরীক্ষা শুরু ১৩ ডিসেম্বর২৯ অক্টোবর ২০২৫

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • নির্মাণ শ্রমিকের মৃত্যু: ৩ দাবিতে জাহাঙ্গীরনগর বাঁচাও আন্দোলনের ব
  • খুলনায় ২২ বোতল মাদকসহ যুবক আটক
  • জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে আইটি প্রোগ্রামে ডিপ্লোমা, অনলাইন ও অফলাইনে আবেদন ফি ১০০০
  • অ্যাপে পরিচয়-প্রেম, বিয়ে করতে ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় এলেন চীনের যুবক
  • জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে নির্মাণাধীন ভবন থেকে পড়ে শ্রমিক নিহত